Tuesday 08 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরকার সফট ল্যান্ডিং

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:৩৬ | আপডেট: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:২২
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে স্কুল কলেজ। ১৭ মাস বন্ধের পর এই খুলে যাওয়াটা আনন্দের বটে। কিন্তু সেই সাথে দরকার শারীরিক নিরাপত্তা আর মানসিক প্রস্তুতি। শারীরিক নিরাপত্তা আর সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর একটি নির্দেশনা প্রণয়ন করেছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের টিকা দেবার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এগুলো সবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু সমস্যাটা রয়ে গেছে মানসিক প্রস্তুতিতে।

অভিভাবক, শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের মাঝেও মানসিক প্রস্তুতির জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে তাদের উৎকন্ঠার প্রকাশ দেখে এটাই অনুমিত হয় যে স্কুল কলেজ খোলার সাথে সাথে উনারা ঝাপিয়ে পড়বেন ১৭ মাসের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিঁপূর্ণ। শিক্ষার্থীরাও অধীর আগ্রহে আছে তার বিদ্যায়তনের প্রিয় মুখগুলিকে আবার দেখবার জন্য। নিশ্চয়ই সব হবে, কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে , সময় নিয়ে। মনে রাখতে হবে ২ কোটি ৭৫ লাখ শিক্ষার্থী এই ১৭ মাস ঘরেই ছিল, হঠাৎ করে তাদের সেই পুরোনো স্কুলের নিয়মে ফিরে গেলে হোঁচট খেতে হবে, তাদের মনের উপর চাপ পড়বে। অভিভাবক, শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের অধীরতা আমরা বুঝতে পারি, কিন্তু তারাহুড়োর কোনো সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি যখন দেখি পত্রিকার প্রথম পাতায় বরেণ্য শিক্ষা গবেষক শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি প্রকাশ হয় যেখানে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরই শিক্ষার্থীদের “শিখন ঘাটতি” পূরণের দিকে জোর দিয়েছেন !
এই মুহূর্তে করোনা কিন্তু চলে যায়নি, স্কুল খুলছে ঠিকই কিন্তু তা শতভাগ আগের মত নয়। স্কুল কলেজ খোলার অর্থ এই নয় যে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট দৌড় দিয়ে সব শিখন ঘাটতি একবারে পুষিয়ে নিতে হবে। এমনটা করতে গেলে শিক্ষার্থীদের মনের উপর চাপ পড়বে, তারা তড়িঘড়ি করে সব কিছু একবারে পূরণ করতে চাইবে, যখন সেটা পারবেনা তখন উদ্বিগ্নতায় ভুগবে।বাবা-মায়েরা সব ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তাদের উপর টার্গেট চাপিয়ে দিবেন। স্কুল, কোচিং, আর ‘হতেই হবে’, ‘পেতেই হবে’র চাপে তাদের জীবন জেরবার হয়ে যাবে।

বাবা-মায়েরা ভাবছে ভাবুক।তাদের ভাবনার পরিবর্তন করতে আমাদের সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু শিক্ষা গবেষকগণ নিশ্চয়ই নিজেরাই সচেতন হবেন, আর গণমাধ্যম এই বিষয়ে কোনো মন্তব্যের একটি খন্ডিত অংশ প্রথম পাতায় বক্স করে ছাপানোর বিষয়ে আরো সতর্ক হবেন। শিক্ষা ঘাটতি পূরণের ডাক দিলে অভিভাবকেরা ভুল ডিরেকশন পাবেন। ঘাটতি পূরণে খেয়ে না খেয়ে দৌড় শুরু করবেন, যার পরিণতি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর।

আমাদের যেটা মনে রাখতে হবে-

১. স্কুল কলেজ খোলার প্রক্রিয়াটি সফট ল্যান্ডিং এ হতে হবে। তারাহুড়ো করা যাবেনা। এটি ১০০ মিটার দৌড় নয় এটা অনেক লম্বা ম্যারাথন।

২. প্রথম কয়েক মাস শিখন ঘাটতি পূরণের দিকে মনোযোগ না দিয়ে স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি, মাউশির নির্দেশনা পালন এগুলোর দিকে জোর দিতে হবে।

৩. একদিনে সব শিখিয়ে দিব, একদিনে সব পড়িয়ে ঘাটতি পূরণ করে দিব এই মনোভাব থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বের হয়ে আসতে হবে।

৪. আমার সন্তান পিছিয়ে পড়েছে, দ্বিগুণ গতিতে দৌড় দিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হবে এই মানসিকতা থেকে অভিভাবকদের সরে আসতে হবে।

৫. গণমাধ্যমকে জোর দিয়ে প্রচার করতে হবে- স্কুল খোলার প্রাথমিক উদ্দেশ্য এই মুহূর্তে শিখন ঘাটতি পূরণ নয়; এখন স্কুল খোলার মূল উদ্দেশ্য অতিমারির সময়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কিভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্কুল কলেজ চালু রাখা যায় সেটার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে।

করোনা ভাইরাসের অতিমারি কিন্তু চলে যায়নি। এটা আছে। কতদিন থাকবে সেটা অজানা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লাগসই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আর এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য কখনোই দ্রুত শিখন ঘাটতি পূরণ করা নয়।

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, ঢাকা

সারাবাংলা/এসবিডিই

খুলছে স্কুল : দরকার সফট ল্যান্ডিং ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর