Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমার একুশে’ ও কতিপয় জেলার নাম প্রসঙ্গ


৩ এপ্রিল ২০১৮ ১২:৪৮

এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির মাঠে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে ছিলেন বড় বড় বিদ্যানরা। পেছনে বিশাল ব্যানার। উপরে বাংলায় লেখা, নীচে ইংরেজিতে। দর্শক সারিতে আমার কাছেই বসেছিলেন এক বিদেশি কবি। মজা করার জন্য তাকে বললাম:

– তুমি কি বাংলা পড়তে পার?
-না।
-ইংরেজি?
-হ্যাঁ, আমার দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি।
– বলতো, প্রথম দুইটা শব্দে কী লেখা আছে?
তিনি বললেন, -‘আমার একুশে’।
আমি মুচকি হাসলাম। তিনি বললেন -এর ইংরেজি কী হবে?
আমি বলি -মাই টুইয়েন্টি ফার্স্ট (ফেব্রুয়ারি)
তিনিও মুচকি হাসেন। মাথা নাড়ান।

এবার আমি একটা কাগজে লিখি- Omor Ekushe. এটা লিখে তার সামনে ধরে বলি, এবার তুমি বলো এখানে কী লেখা আছে?
তিনি বলেন – অমর একুশে।
আমি বলি, আসলে এটাই লেখা রয়েছে, ইমমর্টাল টুয়েন্টি ফার্স্ট (ফেব্রুয়ারি)
তিনি বলেন- তাহলে এভাবে লেখা কেন?
আমি চুপ থাকি, জবাব দেই না।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সূত্রপাত সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতায় রাইটার্স বিল্ডিং বানিয়ে ইংল্যান্ড থেকে কেরানি নিয়ে আসে, নানারকম দাপ্তরিক কাজের জন্য। তারা বাঙ্গালীদের কাছ থেকে নাম শুনে ইংরেজি হরফে লিখতে থাকেন। এ সকল কেরানিরা খুব উচ্চ মেধার ছিলেন না। ভারতে পোস্টিং পাওয়াকে অনেকে নির্বাসনও মনে করতেন। সেই সকল কেরানির কলমের খোঁচায়, তাদের উচ্চারণের সুবিধায় তারা ইংরেজি হরফে নাম লিখেছে। সে সময়ে আমাদের বিদ্যানেরা আরবি, ফার্সি আর উর্দুতে ওস্তাদ ছিলেন, কিন্তু ইংরেজি জানতেন না। তাদের কাছ থেকে ইংরেজি শিখে তাদের বানানকেই অনুসরণ করেছেন। এমনকি ঠাকুর পরিবার যখন Tagore (ট্যাগর) হয়ে গেলেন, দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজি শেখার পরও তা বদলান নি।
তারা আ আ বেশি করে, যার নাম সমির, তাকে লিখা শুরু করলো Samir বলে। আমাদের বাবুরা শিখলেন – অ থাকলে এটা A হয়ে যাবে। সে কারণে ‘অমর’কে Omor নয়, ভুল্ভাবেই লিখতে হবে Amar .

বিজ্ঞাপন

ভিনদেশি বাংলা না জানা লোকেরা উচ্চারণের উপর নির্ভর করে আমাদের কুমিল্লাকে Comilla, সিলেটকে Sylhet, চট্টগ্রাম কে Chittagong, বগুড়াকে Bogra, যশোরকে jessore করে রেখেছিল প্রায় আড়াইশ’ বছর।

এর মধ্যে আমরা ইংরেজি শিখেছি, আমাদের সন্তানেরা ইংরেজের দেশেও প্রভাব প্রতিপত্তির সাথে বিচরণ করছে। কিন্তু সেই সব আনকোরা কেরানিদের নামায়নকে আমরা এখনো সিদ্ধ বলে মেনে নিচ্ছি, তার কোন সংস্কার করছি না, এটা খুবই পরিতাপের বিষয়।

নতুন করে কিছু অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে কিছুটা শুদ্ধ করা হচ্ছে, কিন্তু আ আ এর সঙ্কটটা রয়েই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারক মহলের কাছে আমার আবদার, আপনারা উচ্চারণের উপর জোর দিয়ে এর ইংরেজায়ন করুন। জানেন তো, ভাষা আগে, ব্যাকরণ পরে।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর