Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলোকময় শেখ হাসিনা

কবীর চৌধুরী তন্ময়
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:৫৬

একটি দেশ তখনই শক্তিশালী হয় যখন সেদেশের মানুষের মাঝে দেশাত্মবোধ গভীরভাবে কাজ করে। আর দেশাত্মবোধ বা দেশপ্রেম তখনই মন-মগজে মর্যাদা পায় যখন সেদেশের জনগণ তার জন্মভূমির সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে জানাশোনা ও চর্চা করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পঁচাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম বার-বার একটি জায়গায় প্রতিনিয়ত প্রত্যারণার শিকার হয়েছে, বিকৃতি ইতিহাস পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসর মহল পরিকল্পিতভাবেই দেশ ও দেশের মানুষকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে, মানুষের মাঝে মানুষের ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে এবং সর্বপরি দেশাত্মবোধ থেকে দূরে রাখতেই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছে, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে ভ্রান্ত পথে রীতিমত ঠেলে দিয়েছে!

বিজ্ঞাপন

একটাই কারণ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে বাঁধা প্রদান করা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝগড়া’র মিমাংসার মিথ্যাচার বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীল-নকশা; বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে পারলে, বিকৃতি ইতিহাস মন-মগজে স্থাপন করে বিভ্রান্ত আর বিভাজন সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে-ঘুরে দাঁড়ানোর বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

ষড়যন্ত্রকারীরা জানে বঙ্গবন্ধুর ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল বাঙালির জন্য, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য। পৃথিবীর যেখানে মানুষ শোষণ হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর শোষিতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। মানুষ-মানবতা যেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু তাদের একজন হয়ে অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। শত লোভ-লালসা আর মৃত্যুর কবর দেখিয়েও বঙ্গবন্ধুকে মা-মাটি ও মানুষ থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়নি। পরাশক্তি আমেরিকা-পাকিস্তান মিলেও মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন বঙ্গবন্ধু ও বাঙালিকে ধ্বংস করতে পারেনি, তখন পরিকল্পিতভাবে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতধারা ‘অসাম্প্রদায়িক’ ও ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ছায়া সরকারের আদলে পরিচালিত করতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের পথে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করে শুধু খুনীদের বিচারকাজই বন্ধ করেনি বরং খুনের মহা পরিকল্পনারকারীদেরও দায়মুক্তি দিয়েছিল। রাতারাতি ‘জয় বাংলা’ হয়ে যায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। ‘বাংলাদেশ বেতার’ রেডিও পাকিস্তানের আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ করে। পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংবিধান কেটে খণ্ড-বিখণ্ড করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদেরও এদেশে ফিরিয়ে এনে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে ‘অসাম্প্রদায়িক’ স্বাধীন-সার্বভৌমত্বকে ‘সাম্প্রদায়িক’ রাষ্ট্র গঠনে চুড়ান্ত ষড়যন্ত্রের নীল-নকশা প্রণয়ন করে জিয়াউর রহমান।

এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষ আর মানবতা ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেদিন তার জীবনের ন্যায় প্রকৃতিও একাকার হয়েছিল। চারপাশে ঝড়-বৃষ্টি। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখ লাখ মানুষের মিছিলের সাথে একাকার হয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন সারা বাংলাদেশের মানুষের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, আবারও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- পিতৃহত্যার বদলা নেব’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

শুরু হয় শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলুম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি। শত-সহস্র প্রতিকূলতাতেও হতদ্যোম হননি তিনি। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার ‘অসাম্প্রদায়িক’ ও ‘গণতন্ত্র’ পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন, আবির্ভূত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে।

দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাষ্ট্রীয়ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের উন্নয়নের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের ইতিহাস রচনা শুরু হয়। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্বয়ম্ভর বিদু্যুৎ উৎপাদনকারীদের মাধ্যমে এই সেক্টরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ চালু করা এবং ১৯৯৮ সালে শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মূল্যস্ফীতি ১৯৯৬ সালের ৮.৯ শতাংশ থেকে ২০০১ সালে ১.৯ শতাংশে নেমে এসেছিল, জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আগের সরকারের ৪.৫ শতাংশের তুলনায় প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশ হারে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪,৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়, খাদ্যশস্য উৎপাদন ২ কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছিল।

প্রথমবারের মতো ১৯৯৮ সালে দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষাকল্পে শেখ হাসিনা সেইফটি নেট কার্যক্রম শুরু করেন। গ্রহণ করা হয় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’-এর মতো দারিদ্র্যবিমোচনে যুগান্তকারী কর্মসূচি। বয়স্কভাতা ও বিধবাভাতার মতো উদ্ভাবনী কর্মসূচিগুলোর সূচনাও ঘটে ওই সময়ে। প্রান্তিক কৃষকের কথা চিন্তা করে শেখ হাসিনা দেশে প্রথমবারের মতো কৃষকের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করেন। নাগরিকের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে সরকারি উদ্যোগে প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছিল। মোবাইল ফোন খাতের একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটিয়ে স্বল্পমূল্যে সবার কাছে মোবাইল ফোন সহজলভ্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে সরকার তথ্যপ্রযুক্তিকে জনগণের কাছে সহজলভ্য করে তোলেন যার ফলে দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সুযোগ পায়। পরিবহন খাতের বিকেন্দ্রীকরণ বেসরকারি উদ্যোগে আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচন বিশ্ব আঙিনায় বাংলাদেশকে মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন, সেই তিনিই ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনাকে ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাফল্যের স্তুতি বর্ণনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেখানে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে প্রথম আখ্যায়িত করেছিলেন দুজন অর্থনীতিবিদ। তারা বইতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অবজ্ঞা করে বলেছিলেন, ‘যদি বাংলাদেশ উন্নতি করতে পারে তাহলে পৃথিবীর যে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারবে।’ তাদের কথা ভুল প্রমাণিত করে ১৯৯৬-২০০১ সালে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য মর্যাদা পুনরায় ফিরে পেয়েছিল শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে।

এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আর গত দশ বছর বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জন সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

পৃথিবীর অনেক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিস্ময়কর ও অনুকরণীয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামকে আগামী দিনে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যেই পরিণত হবে পৃথিবীর ২৩তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশে এবং পেছনে ফেলবে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মত দেশকেও।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গও বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাপানিদের কাছে দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘আরব নিউজ’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরবর্তী কেন্দ্রস্থল হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে এটি ৩২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বাজারে পরিণত হবে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকার নিবন্ধে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও তাইওয়ানের পর বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের পঞ্চম এশিয়ান টাইগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণায় এই বক্তব্যের সপক্ষে বলেছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে তাইওয়ানকেও ছাড়িয়ে যাবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফ্রিল্যান্স’ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ দেশের মধ্যে ৩৯তম, যা ২০১৬ সালেও ছিল ৪৪তম। বিশ্বের ৭৪টি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির ওপর সমীক্ষা করে, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-বিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম এবং ভারতের অবস্থান ৬২তম, পাকিস্তান ৪৭তম, শ্রীলঙ্কা ৪০তম ও চীন ২৬তম।

আবার একই ফোরামে বৈশ্বিক প্রতযোগিতায় সক্ষমতা সূচকেও বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে আগের বছরের চেয়ে ৭ ধাপ এগিয়ে ৯৯তম অবস্থানে এসেছে। তা ছাড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে আগের বছরের চেয়ে ৯ ধাপ এগিয়ে ১২৮তম অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। লিঙ্গসমতার দিক থেকে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং টানা তিন বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। উপমহাদেশের আরেক নোবেলবিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সফলতার বিষয়টি তার বইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উল্লেখ করেছেন। তবে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উড়ন্ত সূচনার পর্যায়ে রয়েছে। তার ভাষায় প্রবৃদ্ধি ‘তরতর’ করে বাড়ছে। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘আজকের বাংলাদেশ পুরোটাই সাফল্যের গল্প, যা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই দৃষ্টান্ত।’

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ হচ্ছে অর্থনীতির এলাকায় একটি রোল মডেল।’ বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ং জিমও বাংলাদেশের প্রশংসায় পিছিয়ে থাকেননি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিঁনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ২০১৫ সালে কেনিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘সব দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা, তারা কীভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করছে তা শেখা উচিত’-এইসব ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি’ আর বিশ্বদরবারে ‘মর্যাদাশীল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ হাসিনার অর্থনীতির মুক্তির সংগ্রামের কারণে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতো, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ, গৌরবময় হয়েছেন বাঙালি যা অর্জনে সংগ্রাম করেছেন শেখ হাসিনা।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংকটের এই ক্রান্তিলগ্নেও শেখ হাসিনা জনগণের ‘জীবন’ ও ‘জীবিকার’ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিঃস্বার্থভাবে নিরলস পরিশ্রম করেছেন, করে যাচ্ছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট সংকটের শুরু থেকেই তিনি এ ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে জাতির অভিভাবক হিসেবে ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন বার বার।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের এ পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না- ছিল কণ্ঠকাপূর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করার অপরাধে তাকে বারবার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন পিতা মুজিবের মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী। জনগণের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প ২০২১’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রতীয়মান।

গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেযোগ্য। এছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিও প্রদান করেন।

দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর চীনপন্থী, রাশিয়াপন্থী, আমেরিকাপন্থী, ভারতপন্থী, সৌদি-আরবপন্থীসহ নানানপন্থী রাজনীতি ও রাজনীতিবিদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর পরে একমাত্র শেখ হাসিনাই বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র বানাতে সক্ষম হয়েছেন। চার দশকেরও বেশি সময়ের পথচলায় জেল-জুলুমের সঙ্গে যার দিকে বার বার বন্দুক তাক করা হয়েছে, যার দিকে বার বার সন্ত্রাসীর বোমা-গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে, যাকে রক্তাক্ত ও কণ্টকাকীর্ণ পথেও দমাতে পারেনি; তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, অবিরাম ছুটে চলেছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্য অর্জনে। মুক্তিযুদ্ধের মুল স্রোতধারা’ ও ‘অসাম্প্রদায়িক’ ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার সংগ্রামে তিনি অবিচল ছুটে চলা সাহসী যোদ্ধা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে-সজীব ওয়াজেদ জয় ও এক মেয়ে-সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। শেখ হাসিনা তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন।

পাকিস্তানের জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে, বার বার মৃতুর মুখে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে অধিকারবঞ্চিত বাঙালিদের যেভাবে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যেখানেই মানুষ তার অধিকারবঞ্চিত হবে, যেখানেই শোষণ আর নির্যাতনের শিকার হবে, নিষ্পেষিত হবে মানুষ আর মানবতা; সেখানেই আলোকময় হয়ে আবির্ভূত হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা-এই শুভ কামনায় শুভ জন্মদিন।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

আলোকময় শেখ হাসিনা কবীর চৌধুরী তন্ময় মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর