Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার কাছে সবার আগে দেশ

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:১৯

দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তির মহানায়ক, অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন উইফ্রে অপরাহ। ‘ও’ ম্যাগাজিনের ওই সাক্ষাৎকারে অপরাহ জিজ্ঞেস করেছিলেন আফ্রিকার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কী প্রয়োজন? ম্যান্ডেলা উত্তর দিলেন নেতৃত্ব। পরের প্রশ্ন, এ অঞ্চলের দারিদ্র্য, ক্ষুধা দূর করার জন্য কী দরকার? ‘নেতৃত্ব’। ম্যান্ডেলার উত্তর। তৃতীয় প্রশ্ন, বিভক্তি দূর করার জন্য কী করণীয়। ম্যান্ডেলার উত্তর ‘নেতৃত্ব’। একটি জাতির উত্থান, বিকাশ, উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা সবকিছুর জন্য সবার আগে দরকার একজন ভালো নেতা। বিচক্ষণ নেতা। দূরদর্শী নেতা, স্বপ্নচারী মানুষ। যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন।

বিজ্ঞাপন

এমন একজন নেতা বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছিলেন বলেই শত শত বছরের পরাধীনতার শৃংখল ছিন্ন করে বাঙালির কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। নিঃসন্দেহে সেই নেতা আমাদের জাতির পিতা ও আধুনিক কালের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ও প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্ম না হলে এদেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ ছিল। যার বিরল নেতৃত্বগুন, অপরিসীম ত্যাগ ও দেশপ্রেমের কারণে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ পেয়েছিলাম।

বিজ্ঞাপন

পিতা, মাতা, ভাই, ভাবি আত্মীয়-স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে এক অনিশ্চিত, অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে হায়েনাদের শাসন কবলিত বাংলাদেশে সেদিন ফিরে না আসলে এই বাংলাদেশ কি অবস্থায় থাকতো তা হয়তো কল্পনা করাও যায় না। শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাতেই নয়, ক্ষমতায় না থাকলেও শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন লড়াই করেছেন। সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের প্রধানত নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্যান্য রাজনৈতিক দল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন তার নেতৃত্বে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই সময়ের দিনগুলি এখনকার মত ছিল না। জিয়া এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে তাদের দিয়ে শেখ হাসিনাকে ও আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করার জন্য হেন কোন কর্মকাণ্ড নাই যে তৎকালীন স্বৈরশাসকরা করে নাই। যে সময়টা যে দুঃসময়টায় তিনি বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন ওই সময়টায় কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসে না। এমন সাহস সবার হয় না, সবাই এমন সাহস দেখতে পারে না। যা শেখ হাসিনা সেদিন দেখিয়েছিলেন। সেই যে সেদিন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু সুদীর্ঘ এই পথ সহজ ছিল না, ছিল কাঁটা বিছানো। পঁচাত্তরে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনার পিছনে সেই থেকে বুলেট ঘুর ঘুর করছে। ইতোমধ্যে একুশ বার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকারের সময় তারেক- বাবরের নেতৃত্বে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে সবার আগে দেশ। দেশের স্বার্থে নিজের জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের জন্য লড়াই করে চলেছেন।

বাংলাদেশের মুলধারার রাজনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মীয়, ক্রীড়া সব কিছুতেই আওয়ামী লীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা সেই দেশকে গড়ে তুলেছেন যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনের সাত দশক পেড়িয়ে বহু বাঁধা বিপত্তি, মৃত্যু পরোয়ানা সহ্য করে এখনো দেশের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তার সব চিন্তাভাবনা দেশকে ঘিরে, দেশের উন্নতি অগ্রগতি নিয়ে, দেশের মানুষের কল্যাণ নিয়ে। নিজের জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বলে কিছু নেই আর। দেশের মানুষের সুখই তার সুখ। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোতেই তার আনন্দ।

দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু দামি দামি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। বেশ আগেই জাতিসংঘের সাউথ–সাউথ এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। এই অতি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স’ তাদের প্রতিবেদনে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে মনোনীত করেছেন। নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড’ পদকে ভূষিত হয়েছেন। আর এসব অর্জন সহজ হয়েছে তার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই। তাই শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশ বা এই উপমহাদেশই নয় তিনি আজ সমগ্র বিশ্বের নেতা। তিনি আজ দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি সফল এবং অবশ্যই গর্ব করার মত সফল। তার সফলতা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আজ বিশ্বময় আলো ছড়াচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের সফল তিন নেতার একজন হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমনওয়েলভুক্ত ৫৪ দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে শীর্ষ তিন নেতৃত্বের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম রয়েছে।

শেখ হাসিনা ফুলটাইম রাজনীতি করেন। ঘুমানোর সময়টুকু বাদে দেশ নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে, দেশের উন্নতি অগ্রগতি নিয়ে ভাবেন কাজ করেন। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে রাজনীতিতে এসে তিনি যেরকম বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, যতবার তিনি প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেয়েছেন আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। এই যে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা, গরিব মানুষের কথা চিন্তা করা, তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করা, দেশের উন্নতি করা এটাই এখন তার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেলেও সময়ের অভাবে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। তার আগেই ঘাতকেরা তাকে স্বপরিবারে নির্মম- নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন তার কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে চলছেন।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করা শেখ হাসিনা চার দশক ধরে টানা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলকে চার বার ক্ষমতায় বসিয়ে এখনো সফলতার সাথে সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন। এই দীর্ঘ পথ চলতে কারাবরণ করেছেন ও গৃহবন্দী থেকেছেন বারবার। সব সময়ই ষড়যন্ত্রের বুলেট পিছু নিয়েছে তার চারপাশে। পঁচাত্তর বছরে পা দিয়ে মানুষের দোয়ায় আর পরম করুণাময়ের রহমতে এখনো সুস্থ সফলভাবে দেশের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু পঞ্চান্ন বছর বেঁচেছিলেন। তার থেকে এখন পর্যন্ত বিশ বছর বেশি এই দুনিয়ায় থেকে তার যোগ্য কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা তার পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যে কাজ হয়তো স্বাধীনতার পর পর বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে নিজেই করতেন। অনেক পরে হলেও সেই কাজ তারই কন্যা সুসম্পন্ন করছেন। পিতা হিসেবে শহীদ বঙ্গবন্ধুর আত্মা নিশ্চয়ই শান্তিতেই আছে। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন দেশের জন্যই কাজ করেছেন। জন্মদিনে তিনি বলতেন, ‘আমার আবার জন্মই কি, মৃত্যুই কি’। কিন্তু তার জন্মের কারণেই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আর তার কন্যার কারণে আমরা উন্নত, মর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে চলেছি। পিতা বঙ্গবন্ধু ও কন্যা শেখ হাসিনা দুজনের কাছেই ‘দেশ সবার আগে’। তারাও প্রমান করেছেন তাদের কাছে সবার আগে দেশ ও দেশের জনগণ। এখানেই তাদের জন্মের সার্থকতা। শুভ জন্মদিন বাংলার গণ-মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

মত-দ্বিমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার শেখ হাসিনার কাছে সবার আগে দেশ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর