সাংবাদিকদের হাতে সংবাদমাধ্যম নেই!
৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:১১
একটি কার্যকর সংবাদমাধ্যম কার্যত একটি রাষ্ট্রের মুখপাত্র হতে পারার দৃষ্টান্তে চলে যায়। অথচ তেমন করে হচ্ছে না। অধুনা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির দলীয় ও আদর্শিক অবস্থান নিতে গিয়ে তারা বলছে, এভাবেই চলতে থাকুক। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষতার ধর্মকে সঙ্গী না করে রঙিন গ্লাস চোখে দিয়ে পথিকের মতো করে যেন তাদের এগিয়ে যাওয়া!
একজন বা একদল নির্দেশকদের তাই পথিক হয়ে নিত্য গন্তব্যের ঠিকানাটার নাম যেন থিয়েটার। সেই থিয়েটার থেকেই আজকের বিশ্বে গণমাধ্যমের অন্যতম তিন থেকে চার ধারার সংবাদমাধ্যম বলছে, ‘ক্ষমতা শুধু রাজনীতিকদের কাছে কেন থাকবে? কেন আমরা বৈষয়িক হব না? কেন নিজস্ব নীতি প্রণয়ন করে সংবাদকর্মীদের অভিনয়শিল্পীর মতো করে তৈরি করব না?’
অসঙ্গত কারণে তাদের এত ইচ্ছার ঘুড়ি আকাশে, তা উড়তে দেখেই জনশ্রেণির উদাসীনতা। পাঠক ও দর্শক হয়ে সংবাদমাধ্যমও এখন বিনোদনের অংশ। অথচ, তাদের প্রত্যেকের দাবি, আমাদের ঘরে বিনোদন সংবাদকর্মী রয়েছে তো! তাহলে দাঁড়াচ্ছে হলো— সাংবাদিকদের হাতে সংবাদমাধ্যম নেই। স্বার্থ ও অর্থ উদ্ধারকরত নির্দেশকদের আসল পরিচয় হলো— তারা বুর্জয়া শ্রেণিভুক্ত ব্যবসায়ীজন অথবা রাজনীতিকবর্গ।
বাংলাদেশে গেল ২০ বছরে থিয়েটাররুপী সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বাড়লেও জাত সংবাদকর্মী এবং সম্পাদকদের আকাল যাচ্ছে। মাসিক বেতন কত দেবেন— এমন জিজ্ঞাসা থেকে প্রতিবেদকদের সামাজিক নিরাপত্তা খুঁজতে যাওয়ার নেপথ্যে সবিশেষ কারণও রয়েছে। প্রতিবেদকেরা মনে করছেন, প্রকাশকদের কালো টাকা রয়েছে, অবৈধ ব্যবসা রয়েছে, তাহলে আমার কিংবা আমাদের জীবনের পথকে মসৃণ করার উদ্যোগে তারা কেন যাবেন না? খোদ সম্পাদক বা হেড অব নিউজ বলছেন, আমার ব্যক্তিগত যে ইমেজ সমাজে রয়েছে সেটিকে কাজে লাগাবেন, আর কয়েক লাখ টাকা সম্মানি রাখতে পারবেন না?
কোনো রাষ্ট্রের মুখপাত্রের মতো করে তাই নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে সংবাদমাধ্যমগুলো নিজেদের আলাদা করে চেনাতে পারছে না। উপরন্তু কনটেন্ট নেই! সারাদিন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা নেই। কেউ বলছে না, আজকের সমকাল পড়েছিস? আজকের যুগান্তর কিংবা কালের কণ্ঠ? গালভরা নাম আছে বাংলাদেশের দৈনিকগুলোর, কিন্তু মেধাবীদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। এক কথায় রিপোর্ট নেই। ওই ঘুরেফিরে দামি কাগজের ব্যবহার হচ্ছে। প্রথম পৃষ্ঠার আপার ফোল্ডারে চমক নেই। তবে সব বিভাগের সংবাদ পরিবেশনের হিড়িকে গিয়ে পাতায় পাতায় বলা হচ্ছে— এই তো দেশের খবর, এই তো খেলাধূলার খবর, আন্তর্জাতিক খবর। না, না, আমরা ভালোই করছি!
টেলিভিশনের ওপরের দিকে ডান-বামের লোগো আর বুম দৃষ্টিগোচরে না এলে বুঝবার উপায় নেই যে কোন চ্যানেলের নিউজ। সব একই ধরনের প্রতিবেদন। ঠিক যে কাজটি কয়েকটা অনলাইন মাধ্যম ছাড়া প্রায় সব অনলাইনই কপি আর পেস্ট করে বলছে, আমরা মূলধারার।
সারাবাংলা শুরু করেছিল। দুর্দান্ত ছিল। এখন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের একজন মেধাবী সম্পাদক লাগবে। সঙ্গে সম্পাদককে অ্যাসিস্ট করার মতো একদল সত্যিকারের গণমাধ্যমকর্মী দরকার। এই পোর্টালের দুয়েকজনকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। অসাধারণ পর্যায়ের তারা। আরেকটু বড়সড় দায়িত্ব নিয়ে তারা বিপ্লব করুক।
সারাবাংলার চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দেখতে দেখতে অর্ধ দশকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল। বিশ্বাস করি, দেশের পাঁচটি শ্রেষ্ঠ অনলাইন মাধ্যমের মধ্যে সারাবাংলা রয়েছে। আগামীবার যেন বলতে পারি, তিনের মধ্যে রয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে থাকা প্রকাশক ও সংবাদকর্মীদের প্রত্যেকের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইল। অভিনন্দন!
সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের মতবাদের প্রাসঙ্গিক ব্যাখায় গিয়ে লেখাটিকে আড়ষ্ট করবার উদ্যোগে যাওয়া শ্রেয়। যেমন কেউ বলছেন, সাংবাদিকতা হলো ইতিহাসের প্রথম খসড়া। ঈশ্বরমিত্র বলছেন, ইতিহাস হলো ক্ষমতাধর (সংবাদমাধ্যম) কিংবা শাসকশ্রেণির কাছেই বন্দি থাকা তাদেরই প্রয়োজনে জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিশেষ গদ্যরীতি।
কেউ বলছেন, সাংবাদিকতা কখনো নীরব থাকতে পারে না, এটাই তার সবচেয়ে বড় গুণ ও বড় দোষ। ঈশ্বরমিত্র বলছেন, সাংবাদিকতা অতি অবশ্যই সরব— যেখানে জনস্বার্থ নয়, প্রকাশকের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।
কেউ আবার বলছেন, সাংবাদিকতাই গণতন্ত্র রক্ষা করে। এটি প্রগতিশীল সামাজিক পরিবর্তনের শক্তি। ঈশ্বরমিত্র বলছেন, সংবাদমাধ্যম প্রকৃতিবাদী নয়, আপাতদৃষ্টিতে একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম হওয়ার উদাহরণে তারা পৌঁছালেও তথা সামাজিক ক্রমবিকাশের হাতিয়ার হয়ে উঠলেও দিনের শেষে সফলতা তাদের একদিন দানব করে তোলে।
প্রিয় সারাবাংলা ডটনেট-এর সঙ্গে থাকা প্রতিটি মানুষ জীব হোক এবং তারা সৃষ্টিকর্তার প্রশংসায় ভাসুক। শুভ কামনা!
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক, কবি, আবৃত্তিকার, রাজনীতিক
সারাবাংলা/টিআর
কামরুল হাসান নাসিম চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সারাবাংলার ৫-এ পা সারাবাংলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী