Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনৈতিক মেরুকরণ মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও কূটনৈতিক অস্থিরতা

দেলোয়ার জাহিদ
১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৫৫

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সংস্থাটির আরো ছয়জন বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা কূটনৈতিক অঙ্গনে এক নজিরবিহীন অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। ১১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তার কার্যালয়ে তলব করে ঢাকার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের জবাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক, ও ‘তথ্য-ভিত্তিক নয়’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, ঢাকা এটি কোনো ভূ-রাজনীতির প্রতিফল কি না তা পর্যালোচনা করে দেখবে।

বিজ্ঞাপন

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ১২ ডিসেম্বর জানিয়েছেন বাংলাদেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যা বা হত্যাকাণ্ড হয়নি। তিনি এও বলেছেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত। একই দিনে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দফতরে এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। …মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে।’

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬’শটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬’শর বেশি লোক অদৃশ্য (গুম) হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। এ সকল ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মোট সাত কর্মকর্তার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এদের মধ্যে একজন যিনি র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি)।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন রাজনৈতিক মেরুকরণের পথে বর্তমান মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ চীন বিরোধী অংশ বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক সহজভাবে নিচ্ছে না। মার্কিন-বাংলাদেশ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণের একটি ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন। চীন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল দেশকে ডিঙিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে। যা যুদ্ধপ্রিয় রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখছে না মোটেই। অন্যদিকে মার্কিন বাজারে গার্মেন্টস পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। চীনের বিপুল বিনিয়োগ বাংলাদেশে। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ মেগা প্রকল্পগুলোর অংশীদার চীন। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ চীন বিরোধী অংশ মোটেই সহজভাবে নিচ্ছে না। এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যকে বিপদ সংকেত হিসেবে দেখছে চার দেশকে নিয়ে কোয়াড জোট। এ জোটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে যেমন পাশে পেতে চায় চীন তেমনি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় তাদের দিকে। এসব নিয়ে চলছে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও কূটনৈতিক অস্থিরতা।

এদিকে এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে চীনের আধিপত্য ক্রমে বাড়ছে। সেই আধিপত্যকে খর্ব করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতসহ চারটি দেশকে নিয়ে কোয়াড জোট গঠন করেছে। সেই জোটে তারা চায় বাংলাদেশও যোগ দিক। আবার দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে বাইরের শক্তির এমন ‘সামরিক জোটের’ বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চায় চীন। এসব নিয়ে চলছে রাজনৈতিক মেরুকরণ।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ১১ই ডিসেম্বর এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি বরং তা রক্ষা করে চলেছে। এছাড়া এলিট ফোর্স র‌্যাব সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে জীবনকে বাজী রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

ক্রসফায়ারের বিষয়ে র‌্যাবের এ পরিচালক বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে গুলিবিনিময়ের অভিযোগ করা হয়। আপনারা জানেন রাষ্ট্রের আইনে প্রতিটি নাগরিকের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন অভিযানে যায়, তখন সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি বিনিময়ের অধিকার রাষ্ট্রের আইন আমাদের দিয়েছে। মাদক, জঙ্গি দমনের অভিযানে আমরা যখন প্রতিরোধের মুখে পড়েছি তখনই গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। র‌্যাব আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে। ক্রসফায়ারের প্রতিটি ঘটনার স্বাধীনভাবে তদন্ত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি গুলি বিনিময়ের ঘটনা নির্বাহী তদন্ত হয়। তারা দেখে গুলি বিনিময় যথাযথ ছিল কিনা। যারা আইন ভঙ্গ করে, নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব সবসময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’ (বাসস )

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন তার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মানবাধিকারই হচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্র। তাই বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক না কেনো, ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেন, কানাডার সঙ্গে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে সহিংসতা এবং নিষ্পেষণের জন্য দায়ী টার্গেটেড সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মিত্র-রাষ্ট্রদের এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। অ্যান্টনি ব্লিনকেন তার বিবৃতিতে বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং কানাডার সঙ্গে গত সপ্তাহে বেলারুশের বিরুদ্ধে এ যাবতকালের যে শক্তিশালী অবরোধ দেওয়ার বিষয়ে সমন্বয় হয়েছে তাকে স্বাগত জানাই। এই যৌথ উদ্যোগে বেলারুশের জনগণের বিরুদ্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো যে নিষ্ঠুরতা অব্যাহত রেখেছেন, তার মূল্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে মানবাধিকার রক্ষা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে মিত্র, অংশীদার ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘মহামারি থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ: অভিজ্ঞতা অর্জন ও নীতি প্রণয়ন’ শীর্ষক এক সম্মেলনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান একটি বিষয় তুলে ধরেন, তা হল— ‘সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য লুকানোর প্রবণতা’। একই সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সুলতানা কামাল বলেন, ‘তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে আমাদের ভীষণ নৈরাজ্য আছে। আমি সাধারণত সরকারের বিষয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাই, কিন্তু জবাব পাই না। যখন নীতিনির্ধারকরা কথা বলেন, কিসের ওপর দাঁড়িয়ে, কোন বাস্তবতার কথা বলেন, সেটা নিয়ে আমাদের একটু চিন্তা করতে হবে। বোদ্ধামহল মনে করেন প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলে সমাজের বাস্তব চিত্র এটাই।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি ২৫শে জুন পর্যন্ত, ২০২০ সালে ১৫৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। এটিও জানা যায় যে, দেশে কারাগারে ৬৯৫ জন মারা গেছে এবং গত দশ বছরে এবং ৬০১ জনেরও বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সাধারণত ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নামে চলে এসেছে। প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাখ্যা খুবই অভিন্ন মনে হয়, যেখানে পুলিশ হামলার পর আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। যদিও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এগুলোকে পরিকল্পিত হত্যা বলে বর্ণনা করেছে। ‘যেখানে কোন সূর্য প্রবেশ করতে পারে না’ বাংলাদেশে এক দশকের জোরপূর্বক অন্তর্ধান উপর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকেও এ চিত্র ফুটে উঠেছে। শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ‘ডেথ স্কোয়াড’ নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ ধরনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে বলেও মনে করছেন বোদ্ধামহল। এটা মনে করা মোটেই অসংগত হবে না যে, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বলপূর্বক গুমের এবং বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগগুলোর উপর আন্তর্জাতিক তদন্তেরও দাবি উঠতে পারে।

বাংলাদেশের মন্ত্রীদের অতিকথন ও অকুটনৈতিক ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেয়ায় বিষয়টি আরো জটিল হয়ে উঠছে। সরকার তার নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বলপূর্বক গুমের অভিযোগের বিষয়গুলো অর্থপূর্ণভাবে মোকাবেলা করার ইচ্ছা রাখে তা এখনই প্রমাণ করার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে সরকারের আশু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। মার্কিন বাংলাদেশ সম্পর্ক এর নেতিবাচক মেরুকরণ বাংলাদেশের বৈশ্বিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করবে।

চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি প্যারেড-২০২১ এর প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে। দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের সেবা করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি হিসেবে আমরা ‘শান্তিতে বিশ্বাস করি, এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি। তবে কখনো বাইরে থেকে শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার সক্ষমতা আমরা ইতোমধ্যেই অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ পররাষ্ট্রনীতিকে সমুন্নত করে তুলে ধরতে দেশে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নজির স্থাপন করতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ড নির্বাহী

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

দেলোয়ার জাহিদ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর