সাধু সাবধান
৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:২৮
একটু আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবনে গিয়েছিলাম। যা দেখলাম, তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব না। বাসভবনের গেট থেকে শুরু করে বাসভবনের সামনে, ভিতরে- প্রথম তলা, দ্বিতীয় তলা; কোথাও কিছুই নেই, সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রীর ছবি। লুট করা হয়েছে বাসভবনের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। উপাচার্য মহোদয়ের বসার ঘরের বইগুলো ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে ভাঙা কাঁচ আর ভাঙা আসবাবপত্রের সাথে। শখের পেইন্টিংগুলোও! টিভি, ফ্রিজ, দরজা, জানালা কিছুই নাই! জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বাসার সামনে রাখা গাড়ি। বাড়িটিকে ধ্বংসস্তুপ বলতে পারেন। যা ছবি দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়! শত শত মানুষের ঢল উপাচার্যের বাসভবনে! কি দেখলো সবাই? ধ্বংসস্তূপ!
ভাংচুর করা হয়েছে চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণগুলো, চারুকলার স্থাপনাগুলো।
গত ১৫ মার্চ কোটা-সংক্রান্ত বিষয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। স্পষ্টই বলেছিলাম:
“কোটা প্রথা বিরোধী আন্দোলন আর কোটা সংস্কার আন্দোলন এই দু’য়ের ভিতর পার্থক্য কি স্পষ্ট নয়? যাদের অবস্থান সরাসরি ‘কোটা বিরোধী’র কাতারে, তারা কিন্তু সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। কেননা, সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদে সমাজের অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য (চাকরির ক্ষেত্রে) কোটা প্রথা প্রবর্তনের কথা উল্লেখ আছে।
আর যারা কোটা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের ভিতর অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের মনোভাব পোষণ করছেন। এটি খুবই দুঃখজনক।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা কি কার্যকর ছিল? ২১ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সবদিক থেকে বঞ্চিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের বা তাদের বংশধরদের এই সুযোগটুকু দিতে হবে। সরকার স্পষ্ট করেই বলেছে, ‘কোটাপূরণ না হলে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে মেধা তালিকা থেকে। এর পরেও আপত্তি কিসের?
লিখিত পরীক্ষায় যিনি পাশ করেন, আপনি তাকে মেধাবী বলবেন না? তারা কি অমেধাবী? প্রিলিমিনারী বা লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত কি কোটাপ্রথা আরোপ করা হয়? লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত কিন্তু সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে, নাকি? তাহলে যারা প্রিলি, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন- তারা কি মেধাবী নয়?
কোটা- সংস্কারের দাবী আপনি করতেই পারেন। এ দাবি আমি অযৌক্তিক মনে করছি না। সময় নির্ধারণ করে দিবে কখন কোটার সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে “ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” করতে আসছেন কিনা- ভেবে দেখবেন। কেননা এই আন্দোলনের ইতিবাচক লোকের পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের উপস্থিতিও দৃশ্যমান। আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে, এখানে সবাই প্রগতিশীল ঘরানার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে চায়- তারা কোনোভাবে এখন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। নির্বাচনের বছরে কোটা বিরোধী আন্দোলন বা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করছে না তো সেই প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী? ভেবে দেখবেন।
গতকাল কি দেখলাম? যা ভেবেছিলাম, তারচেয়েও বেশি না?
মনে আছে, ২০১৪ সালে একইভাবে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবন ভাংচুর করার জন্য ওই প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী হামলা করতে গিয়েছিল, সেদিন আমরা কি জবাব দিয়েছিলাম, আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়। সেদিনও শাহবাগকে ‘মেধাচত্বর’ নাম দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গালি দেয়া হয়েছিল। স্লোগান দেয়া হয়েছিল, “মুক্তিযোদ্ধাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে”! সেদিনও ভাংচুর করা হয়েছিল চারুকলার ভাস্কর্য। আমরা ওই প্রতিক্রিয়াশীলদেরকে সেদিন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
ওরা আবারও ঠিক নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে হাজির হলো। এবার ভিন্ন প্যাটার্ন-এ। এবার তারা জাতির পিতা ও শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে নেমে পড়লো! কেননা, ‘বিশিষ্টজনরা’ গ্রুপে নির্দেশনা দিয়েছেন, গতবার মুক্তিযোদ্ধাদের গালি দিয়ে আন্দোলন সফল হয়নি, এবার সেই ভুল করা যাবে না। পারলে শেখ মুজিব আর শেখ হাসিনার ছবি সাথে রাখবেন, তাহলে আন্দোলন জমবে।
কেউ কেউ বুঝে হোক আর না বুঝে হোক, এই আন্দোলনের সাথে সহমর্মী হয়ে উঠলেন। কত কিছুই না লিখলেন। প্রধানমন্ত্রীর স্পেসিফিক বেক্তব্যের পরেও আপনারা যুক্তির ডালি নিয়ে হাজির হলেন। গতকাল যা দেখলেন, এখন কি বলবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর হামলাকে আপনি কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন? আমাদের সংস্কৃতির উপর হামলাকে আপনি কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন?
শুধু এটুকুই বলবো, ভূত তাড়ানো তেলের ভিতর ভূত থাকলে কিন্তু ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। সাধু সাবধান!
লেখক : সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি।