Saturday 19 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খাল-তাজুল-আতিকুল: সব কূলেই ট্রল

মোস্তফা কামাল
৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৩৫ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪২

এটা-ওটা সবকিছু নিয়েই কূলকিনারাহীন ট্রল। এগুলোকে একেবারে উপেক্ষা বা অগ্রাহ্যের সুযোগ নেই। ট্রলের বাজার বেশ গরম। তা কেবলই ট্রলবাজদের বাহাদুরি না বিকৃত মানসিকতা? নাকি আগে-পিছে আরো বিষয়-আশয় আছে? মূলধারার গণমাধ্যমকে কনুই মারার মতো অবস্থায় ফেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়ানো এসব ট্রল গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্রিয়া-বিক্রিয়া তৈরি করছে। অনলাইনে ইতি-নেতি যেই বাচকেই হোক ট্রলগুলো মানুষের ক্ষুধা মেটাচ্ছে।

দেশে-দেশে সরকারগুলো এ নিয়ে বিরক্ত-বিব্রত হলেও কিছু করতে পারছে না। ট্রলওয়ালারা মহামারি করোনাকেও ছাড়েনি। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ক্ষুব্ধ। এর মহাসচিব ডা. টেডরস আধানম বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রল বা ব্যঙ্গ করোনার বিরুদ্ধে তাদের পদক্ষেপকে দুর্বল করে তুলছে। কিন্তু, কে শোনে কার কথা! বাংলাদেশের ঢাকা শহরের খাল, মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বা মেয়র আতিকুল ইসলাম কি কোনো বিষয় হতে পারে এসব ট্রলবাজদের কাছে?

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর খাল উদ্ধার করে দৃষ্টিনন্দন করলে মানুষ ভেনিসে না গিয়ে ঢাকা আসবে-এমন একটি আশাবাদ প্রকাশে যেন মহাপাপ করে ফেলেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ঢাকায় এখনো ৫৩টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে জানিয়ে তিনি এসব খাল উদ্ধার করে নৌ-চলাচল ও দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা বলেছেন। ২৫ জানুয়ারি তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় রামচন্দ্রপুর খালের অবৈধ স্থাপনা উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। উদ্ধার করা খাল সংস্কার করা হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি আধুনিক-দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য নগর উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সংবাদটির সারাংশ এদ্দূরই। ট্রলিদের কাছে এটি পরিণত হয়েছে আচ্ছা রকমের সাবজেক্টে।  ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের দশা আরো বেগতিক। রাজধানীর একটি ড্রেনে নেমে নির্মাণকাজের খুঁটিনাটি পরিদর্শন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন তিনি। মেয়রের নালায় নামার বেশ কিছু স্থিরচিত্র ট্রলের ধুম। শেয়ার হাজারে-হাজার। মানুষ ভক্ষক হয়ে গিলছে। তাদের মন-মগজের ক্ষুধা মেটাতে ট্রল যেন উত্তম খাদ্য।

অড্রিয়াটিক সাগরের তীরে একটি উপহ্রদের মধ্যে শতাধিক ছোট দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত ভেনিস। ইতালির অন্যতম এই শহরটি আকর্ষনীয় করার পেছনে খালের ভূমিকাই মূখ্য। এই প্রজন্মের জানা নাও থাকতে পারে, সেই ১৯৬৮ সালে ঢাকাকে ভেনিসের আদলে তৈরি করার জন্য একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ঢাকার ভেতরের খালগুলো নিয়ে সেই দৃষ্টে কাজও শুরু হয়েছিল। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ভেনিসের কথা বাতকে বাত বলেননি। আবার ৬৮ সালে নেয়া প্রকল্পের কথাও স্মরণ করেননি। মূলধারার কিছু গণমাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর আশাবাদের খবরটিই এসেছে কিছুটা বাঁকা করে। বা বলা যায় ট্রলের উপযুক্ত করে। ইতালির ভেনিস ও ঢাকার খালগুলোর তুলনামূলক কিছু ছবি দিয়েছে দুয়েকটি পত্রিকায়। কিন্তু ট্রলে এসেছে হাজারো ব্যঙ্গ কথা।

মেয়রকে নিয়ে ব্যঙ্গ মন্ত্রীর তুলনায় আরো বেশি। ওই দিনই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার স্বপ্নধারা হাউজিং মূল সড়ক (বছিলা ৪০ ফুট সড়ক) এলাকায় একটি নালায় নেমেছিলেন তিনি। লাউতলা খালের উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শনের জন্য মেয়র সেখানে গিয়েছিলেন। রাতে উত্তর সিটি করপোরেশনের ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট হয়। সেখানে মেয়রের ড্রেনে নামার বেশ কয়েকটি ছবি দেখা যায়। ভাইরাল ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি খোলা স্ল্যাবের জায়গা দিয়ে নালায় নামলেন মেয়র। মাথা নিচু করে নালার ভেতরটা দেখছেন। সড়কটির বিপরীত পাশেও নির্মাণাধীন নালায় ঠিক একইভাবে নামেন তিনি। ব্যস আর যান কই? তার গোষ্ঠি উদ্ধার করে কর্ম সারা। ট্রলিরা তার ট্রাকে করে রাস্তায় ময়লা ফেলে আবার সেই ময়লা পরিষ্কারের কথাও টেনে এনেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ নেগেটিভ বিষয় এভাবে গিলছে কেন? এখন খাল বা নালা পরিদর্শণে অভিজ্ঞতার প্রকল্প সাজিয়ে আমলাদের ভেনিসে ট্যুর দেয়ার মওকা খোঁজার শঙ্কা ভর করেছে কেন?  মানুষের বিনোদনের এতো আকাল পড়ে গেছে কেন? বিনোদনের কনটেন্ট মেকাররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। ঘরে বসেই কাজ সেরে ফেলছে। এটা কি ভালো লক্ষণ? কাউকে বিনোদিত করতে গিয়ে কাউকে অপদস্ত করার এই ট্রল সামনে আরো কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে? এগুলো তথ্য প্রকাশে বাধা ও স্বাধীন চিন্তার পথ আটকানোর কুফল কি-না তা ভাবাও জরুরি।

 

মোস্তফা কামাল: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

সারাবাংলা/এসবিডিই

টপ নিউজ ট্রল মোস্তফা কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর