সিনহা হত্যার বিচার: শেখ হাসিনাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৩৭
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির স্থলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে বাংলাদেশে বহু বছর খুন-রাহাজানির কোনো বিচার হতো না, সেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই বাংলাদেশে খুনিরা বছরের পর বছর প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াত। কোনো মানুষ খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে সাহস পেত না। রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতার অভাবে মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকত। সেই বাংলাদেশে আজ প্রতিটি খুনের বিচার হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারের আন্তরিকতার কারণে। শেখ হাসিনার সরকারে খুন করে কেউই রেহাই পায়নি। খুনি যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তার ক্ষমা নেই। জিয়া-মোশতাকরাই বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল। খুনিরা শুধু বিচার থেকেই রেহাই পায়নি, তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, পুরস্কৃতও করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকেও জাতির পিতা ক্ষমা করেননি। তার বিচার হয়েছিল। অথচ অবৈধ শাসক জেনারেল জিয়া তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জেল থেকে মুক্ত করেছিল।
সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার জিয়া-মোশতাক আইন করে বন্ধ রেখেছিল। তারা দু’জনেই এই হত্যাকাণ্ডের মূল মন্ত্রণাদাতা ছিল। জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধে জারি করা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নামে নির্মম ও অসভ্য আইন বাতিলের অনেক আন্দোলন হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকার এই আইন বাতিল করতে দেয়নি। যারা আজ বাংলাদেশে আইনের শাসন আর ন্যায় বিচার নিয়ে কথা বলেন, তারা কি ভুলে গেছে এ দেশে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করা যায়নি দীর্ঘ ২১ বছর?
জিয়ার শাসনামলে সেনা অফিসার ও সৈনিক হত্যার মহৌৎসব চলেছিল। অসংখ্য সেনা সদস্যকে প্রহসনমূলক বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। অসংখ্য মানুষকে গুম করা হলো। সেই হত্যা ও গুমের বিচার করা হয়নি। তাদের পরিবার স্বজন আজও কাঁদেন। সংবিধান স্থগিত করে দেশের প্রচলিতআদালত স্থগিত রেখে জেলায় জেলায় মার্শাল ল কোর্ট স্থাপন করে বিচারের নামে প্রহসন করা হলো। পরে পঞ্চম সংশোধনীতে তাদের এসব অবৈধ ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতাও দেওয়া হলো।
জেনারেল এরশাদের আমলেও সত্যিকার অর্থে ন্যায় বিচার ছিল না। তবে জিয়ার আমলের মতো এত নির্মম অবস্থা ছিল না। খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে সারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গে ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার ওই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো খুনের উৎসবে পরিণত হয়েছিল। চুন্নু, রাজু, মামুন, মাহমুদ, গালিব, লিটন, মাহবুব, মিজান, আলোকসহ আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হয়েছিল। এসব হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার সরকারের লোকজন জড়িত ছিল। এসবের কোনো বিচার হয়নি।
খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যার অভিযান শুরু হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, গাজীপুরের আহসানুল্লাহ মাস্টার, নাটোরের নেতা মমতাজসহ সারাদেশে অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষকে বিএনপি- জামায়াতের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল। ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছিলেন। অসংখ্য মানুষ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার ওই আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টে অসংখ্য মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। পরে বিশেষ আইনের মাধ্যমে ওই অপারেশনে যুক্ত সবাইকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। বুয়েট ছাত্রী সনিকে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসে গুলি করে মারে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার খালেদা জিয়া সরকার করেনি। এসব হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার সরকারের নগ্ন পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।
শেখ হাসিনার সরকারের সময় সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোনো খুনি ও অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে মাদরাসার অধ্যক্ষ, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের আট জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকারের সময় সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক, তার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আসতেই হবে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনে অপরাধীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তার একমাত্র পরিচয়— সে অপরাধী, খুনি। তার বিচার হবেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী, আইনের শাসনে বিশ্বাসী। সবশেষ মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়ে এটি আবার প্রতিষ্ঠিত হলো। খুনের দায়ে কর্মরত একজন ওসি এবং পুলিশ পরিদর্শককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। বাংলাদেশের আইনের শাসনের ইতিহাসে এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সারাবাংলা/টিআর