করোনায় শিক্ষা ও মেয়েশিশুর সুরক্ষার কথা আগে ভাবতে হবে
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৫০
ফের করোনার থাবা দেশের শিক্ষাঙ্গনে। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের নতুর ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা শেষ হওয়ার মধ্যেই ওমিক্রনের আবির্ভাব। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ৩২ ভাগের বেশি আক্রান্ত। মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। দেশের শিক্ষাঙ্গন একটু স্বাভাবিক হওয়ার মধ্যেই আবারো বন্ধের ঘোষণাও শেষের পথে। বাস্তবতা বলছে, ছয় ফেব্রুয়ারির পরে হয়ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না। বন্ধ আরো বাড়তে পারে। করোনা শুরুর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল। এবারও তাই। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর আবারো প্রশ্ন উঠেছে এবারেও শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে না তো? শিক্ষার্থীদের যদি শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে ধরে রাখা না যায় তাহলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। যা ভবিষ্যতে এগিয়ে চলার বাংলাদেশের জন্য বিরুপ প্রভাব পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
করোনার প্রথম ধাক্কার পর প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বেসরকারী সংস্থা ব্রাকের হিসাবে এই সময়ে দেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। দরিদ্র সীমানার নীচে নেমেছে সমাজের একটা বড় অংশ। যার সরাসরি প্রভাব পরেছে শিক্ষাখাতে। আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের কাজে পাঠিয়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ মেয়ে। বাল্য বিবাহের শিকার হয়ে অনেকে শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে।
সারাদেশে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত? সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে বেসরকারী বিভিন্ন হিসাবে বিচ্ছিন্ন কিছু তথ্য ওঠে এসেছে। যা সত্যিই উদ্বেগজনক। এবারও যদি করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ দীর্ঘ হয়, তাহলে কিভাবে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা যাবে এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে স্পষ্ট কোন ঘোষণা নেই। তবে ধারণা করা হয় করোনার তৃতীয় ওয়েভ দীর্ঘ হলে ঝরে পড়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আরও হয়তো বাড়বে। কারণ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে মহাআক্রান্ত। এবারের পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠতে তাদের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরী করা ছাড়া হয়তো বিকল্প থাকবেনা। এজন্য সন্তানদের আর্থিক কাজে লাগাতে অনেক অভিভাবক হয়ত বাধ্য হবেন। এ বিষয়টিই হচ্ছে সবচেয়ে আতঙ্কের। যেসব শিশু কর্মের দিকে নিজেদের যুক্ত করে তাদের আর শিক্ষায় ফেরানো কঠিন হয়।
বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযান সম্প্রতি প্রকাশিত ‘এডুকেশন ওয়াচ’ রিপোর্টে বলেছে, ‘করোনার সময় দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শতকরা ৬৯ দশমিক ৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। টেলিভিশনে প্রদান করা ক্লাসেও অংশগ্রহণ করতে পারেনি অনেকে। অংশগ্রহণ না করার এই হার শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি। সামনের দিনে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া এবং অনুপস্থিতি বাড়বে’। এদিকে করোনার সময়ে দেশের অনেক কিন্ডারগার্টেন এবং নন-এমপিও স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ ঝরে পড়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল কোভিড শুরুর পর থেকেই। অথচ দেশে বাংলা মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন আছে ৪০ হাজার। এর বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কোভিড শুরুর এক বছরের মধ্যে আর্থিক দুরবস্থার কারণে ১০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জিএম জাহাঙ্গীর কবিরের সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যটি ছিল সবচেয়ে আতঙ্কের। তিনি জানান, বন্ধ হওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো ইংলিশ স্কুল নয়। নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং গরিব ঘরের সন্তানরাই এইসব কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করে। বন্ধ ১০ হাজার স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর স্কুলে ফিরবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। সবশেষ স্কুল চালুর পর দেখা গেছে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের আবারো স্কুলে ফেরাতে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, ‘করোনায় বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে। আগে যা ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে আছেন ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। করোনায় বাল্য বিয়েও বেড়েছে। এই সবগুলোর অভিঘাতই পড়েছে শিক্ষার ওপর। বাংলাদেশে সাধারণভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে ড্রপআউট শতকরা ১৭ ভাগ। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৭ ভাগ। করোনায় এটা বাড়বে। তাই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের ৭৭ লাখ বই কম ছাপিয়েছে’। তাহলে সরকারের ঘরেও শিক্ষার্থীদের ড্রপ আউট নিয়ে নিজ জরিপ আছে। যা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে দারিদ্র্যের কারণে ড্রপআউট তেমন বাড়বেনা। কারণ দরিদ্র হলেও বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
গত ২৫ অক্টোবর এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) পক্ষ থেকে ‘অতিমারি-উত্তর শিশুদের স্কুলে ফেরা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে হয়েছে, ‘করোনা মহামারিতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত আকারে খুলেছিল। কিন্তু স্কুল চালুর পর দেখা যাচ্ছে ‘ঝরে পড়া’ শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ঝড়ে পড়ার মূলে রয়েছে বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম। মহামারির সময় প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার। গত দুই বছরে শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিকভাবে এই সংখ্যা ৮৬ মিলিয়নেও পৌঁছাতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘অন্তত ১৫-২০ শতাংশ পরিবারে শিশু খাদ্যের ক্ষেত্রেও ব্যয় সঙ্কোচন করতে হয়েছে, যা শিশুদের পুষ্টিহীনতা অনেকাংশে বাড়িয়েছে। মহামারির কারণে শিশুশ্রম ও অল্পবেতনে শিশুশ্রমিক নিয়োগ বেড়েছে। ৯ম ও ১০ম শ্রেণির মেয়েরা স্কুলে ফিরছে না, কারণ তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। মোট ২১টি জেলায় জরিপ চালানো হয়’। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ‘১০ থেকে ১৭ বছর বয়সের প্রায় ১৩ হাজার মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে যা আশঙ্কাজনক। যৌন নির্যাতন ও শারীরিক সহিংসতাও এর মধ্যে বেড়েছে’।
গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ‘প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে করোনার কারণে ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে। একটি হলো পরিবারের আর্থিক অসংগতি আরেকটি বাল্যবিয়ে। অবশ্য বাল্যবিয়েও প্রথম কারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত’। কয়েকটি শিক্ষাবোর্ডের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সম্প্রতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ‘গত এসএসসিতে যে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশই ছাত্রী। আশঙ্কা করা হচ্ছে এদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার। একই সঙ্গে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক পরিবারই তাদের ছেলে ও মেয়েকে শিশুশ্রমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন’।
সম্প্রতি নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জে একটি জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিশুশ্রমিক। কম বেতনে এই কারখানায় শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যারা করোনার কারণে পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনতে স্কুল বাদ দিয়ে নিজেদের কাজে যুক্ত করতে বাধ্য হয়। দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিলেই দেখা যাবে আইন ভঙ্গ করে কি পরিমাণ শিশুশ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রামগঞ্জে ছোট ছোট শিল্প কারখানাতেও এখন শিশুদের কাজ করতে দেখা যায়। অর্থাৎ শিশুদের আয়ের পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
শেষ কথা হলো এবারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর যেন শিশুরা ঝরে না যায় সেদিকে সরকারের একটি বিশেষ প্রোগ্রাম নেওয়া উচিত। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা কেন্দ্রিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবকদের নিয়ে এ কর্মসূচী হতে পারে। যাদের মূল কাজ হবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রমের সঙ্গে ধরে রাখার পাশাপাশি ড্রপ-আউট শিশুদের শিক্ষাক্রমে ফিরিয়ে আনা। এজন্য অভাবগ্রস্থ পরিবারগুলোতে শিশুদের জন্য বাড়তি আর্থিক প্রনোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যে কোনো মূল্যে এই কমিটির মাধ্যমে বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হবে। বাল্যবিয়ের সঙ্গে যুক্ত উভয় পরিবারকে আনতে হবে আইনের আওতায়। সেইসঙ্গে কন্যা শিশুদের ওপর পাশবিক নির্যাতন বন্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। কোন নির্যাতনের ঘটনায় আপোস করা যাবে না। অপরাধীকে তুলে দিতে হবে আইনের আওতায়। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বাল্যবিয়ে ঠিক হলে কন্যাশিশুরা যেন জরুরী সেবায় দ্রুত ফোন করতে পারে এজন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি সাধারণত গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস থেকে বেশি বঞ্চিত। তাই স্কুলের আশপাশে প্রতিটি গ্রামে সরকারীভাবে খোলা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপ্তাহে অন্তত এক থেকে দুইদিন অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে মন থাকবে। সরকারি, বেসরকারিসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচীর আওতায় আনতে হবে। এজন্য কম দামে ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাড়াতে হবে নেটওয়ার্ক সুবিধাও। সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে কাজটি খুব একটা কঠিন হবে না।
সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে হোক বা সপ্তাহে এক থেকে দুইদিন স্বশরীরে হোক হাজিরা নিশ্চিত করা। এ কাজটি করা সম্ভব হলে ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। আরেকটি বড় বিষয় হলো, যেসব স্কুল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি প্রনোদনা দিয়ে সেইসব স্কুলগুলো আবারো সচল করা। ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীদের যদি আবারো ক্লাসে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে খুব ভালো হয়। এসব কিশোরী একদিকে পুষ্টিহীনতার শিকার অন্যদিকে অল্প বয়েসে মা হওয়ার কারণে তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়বে। তাদের সন্তানরাও অপুষ্টিতে ভুগে সমাজের বোঝা হবে। এ বিষয়টিকে সহজভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। এসব কিশোরীকে সরকারের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রমের আওতায় আনতে হবে।
মোট ১৫টি সামাজিক সেক্টর নির্ভর মন্ত্রণালয় আছে যাদের বাজেটের শতকরা ২০ ভাগ শিশুদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এই বাজেট কীভাবে করা হচ্ছে এবং এর বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কি-না তার সঠিক ফলোআপ করলে সমস্যা অনেকটা নিরসন করা সম্ভব। প্রয়োজনে শিশুদের সুরক্ষায় বাজেট আরো বাড়াতে হবে। সব মিলিয়ে সাহায্যের জন্য হেল্পলাইন নম্বর বাড়ানো এবং এই সঙ্কটকালিন সময়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধে জাতীয় ক্যাম্পেইন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরী।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই