Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলাদা করে নারী দিবস, কেন?

হাবীব ইমন
৮ মার্চ ২০২২ ২০:১৮

এক.

নারী দিবসে অনেক আয়োজন। অনেক জায়গায় নানা আয়োজন হচ্ছে। আয়োজনগুলোতে ভিন্নতা আছে কোথাও কোথাও। কিন্তু কথাগুলোতে ভিন্নতা নেই। বরং উচ্চকিত হচ্ছে সমঅধিকারের কথা। আরও অনেক কথা। অনেক জোরালো হবে কথাগুলো। বছরের পর বছর এগুলো সবই পুনরুক্তি। নতুন কোনো কথা নেই। দিনশেষে সব কথাই কথার কথা-ই থাকে। আমাদের কথা থেকে বাস্তবে ফিরতে পারি না।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস এমন একটি দিন যা সমাজে, রাজনীতিতে আর অর্থনীতিতে নারীর অসম অবস্থানের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহবান করে আর নারীর সমতার দিকে এগিয়ে চলাকে বাতলে দেয়। বাহারি কর্মসূচি আর নানা ধরনের প্রকল্পের ভেতর দিয়ে বছর পার হলেও নারী নির্যাতন কমছে না। নারীর দারিদ্র্য হ্রাস পায় না প্রত্যাশিত মাত্রায়। এরপরও চলে প্রকল্প, বছর শেষে মূল্যায়নে পায় সাফল্যের সনদ। বাস্তবায়নকারীরা অপেক্ষা করে প্রকল্পের পরবর্তী মেয়াদের জন্য। আর নারী নির্যাতনের সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতেই থাকে।
পুরুষ হোক বা নারী, বছরের এই বিশেষ দিনের উদ্যাপনে এক দল মানুষ ডুব দেন প্রান্তিকতায়।

দুই.

প্রশ্ন ওঠে, বার বার। বলা হয়, মেয়েরা তো সব সুযোগই পাচ্ছে। নিজের ইচ্ছামতো সাজছে। বাইরে যাচ্ছে। কাজ করছে। আয় করছে। খাচ্ছে-দাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে আবার ‘নারী দিবস’ আলাদা করে কেন? এবার তো পুরুষ দিবসে জোর দিতে হবে, নাকি! কখনও খেলার ছলে, কখনও গম্ভীর স্বরে এসব প্রসঙ্গ উঠতেই থাকে। নারী দিবসের উচ্চারণ বিকৃত করে ব্যঙ্গ করা হয় ‘নারী দি বস্’ হতে চায় বলে। মেয়েদের চাহিদার বুঝি শেষ নেই, এমনও প্রসঙ্গ ওঠে।

এমন সব কথার মাঝে হয়তো বা কোনও কোনও নারীও নিজেকে হারিয়েও ফেলতে বাধ্য হন। নারী দিবসের প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে বেড়ান। সত্যি কি তবে এখন আর প্রয়োজন নেই নারী দিবস পালন করার, মনে মনে হয়তো বা প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু এ কথা কি ভুললে চলে যে, যতদিন এসব ব্যঙ্গ, টিপ্পনী উড়ে আসতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত কোনও ভাবেই প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারবে না ‘নারী দিবস’। বরং রোজ নতুন নতুনভাবে প্রয়োজন পড়ে এই দিনটির। কেননা, এমন ব্যঙ্গের আড়ালে যে লুকিয়ে থাকে বৈষম্যের বীজ।

বিজ্ঞাপন

তিন.

নারীর অধিকার নিশ্চিত করা লক্ষ্যে আইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আইন সবসময় যুগোপযোগী রাখতে ব্যবস্থা করতে হয়। বেইজিং চতুর্থ নারী সম্মেলনের (১৯৯৫) নীতিমালায় সিডও সনদ ও তিউনিসিয়াসহ অন্য কয়েকটি মুসলিম দেশে নারীর অধিকার রক্ষায় বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অথচ দেশের প্রচলিত আইনে নারীর অধিকার এখনও বৈষম্য ও বঞ্চনাকেই প্রতিফলিত করেছে।

চার.

স্বাধীনতা, সম্মান আর অধিকার পুরুষ পায় সহজেই। আর এভাবেই সহজে জিতে যাওয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে পুরুষ। হয়ে ওঠে নিজেরে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বেপরোয়া। হয়ে ওঠে কৌশলী। এতে হাওয়া দিয়ে যায় মগজহীন কিছু নারী। তাই তো কখনও-সখনও নারীই হয়ে ওঠে নারীর পথের বাধা। নারীকে তাই লড়তে হয় পুরুষের পাশাপাশি নিজ গোত্রের বিরুদ্ধেও। যাত্রাটা তাই হয়ে ওঠে কঠিন থেকে কঠিনতর। অন্যদিকে, ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে জিতে যাওয়া পুরুষ অভ্যস্ত হয়ে ওঠে আধিপত্যে। আনন্দে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাই কষতে থাকে যতশত কূটচাল। ধর্মের লেবাসে সেসব চাল দেওয়ার সহজ কৌশল রপ্ত করে পুরুষ তাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আর যুগের পর যুগ পুরুষ তাই এগিয়ে চলছে যতটা বুদ্ধিতে ততটাই কূটকৌশলে। নারীকে পেছন থেকে টেনে নামানোর ঝা-া নারীর হাতে দিয়ে নিশ্চিন্তে পুরুষ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার কৌশল তাই একমুখী। একা।
বদলাতে হবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। পালটাতে হবে আমাদের মানসিকতা।

পাঁচ.

নারীর প্রতি আমাদের সম্মান, মর্যাদা অনেক বেশি জাগিয়ে জাগিয়ে উঠা উচিত। বস্তুগত জায়গায় সেই মূল্যায়ন করা দরকার। কাজের ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার যেমন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, পরিবারেও তাঁর অংশগ্রহণ সেই চোখে দেখা উচিত। পরিবার বা সংসারে তাঁদের অংশগ্রহণকে আমরা কতোটা মজুরি দিতে পারছি, সেই প্রশ্ন আমাদের সমরে থাকা উচিত। মজুরি কথাটা এখানে আপেক্ষিক বিষয়। দিন তাঁদের শুরু হয় কাকভোরে। সকালে ঘরদোর পরিষ্কার, সবার জন্য খাবারের আয়োজন-রোজকার বাঁধা এসব কাজে চলে যায় অনেকটা সময়। সকাল আটটার আগেই বাগানে কাজের জন্য ছুটতে হয়। টানা আট ঘণ্টা কাজ। তবে কাজ সেরে বাসায় ফিরতে ১০ ঘণ্টা পার হয়। ঘরে ফিরে আবার সংসারের কাজ। সেখানেও তাকে শ্রম দিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

একজন নারী মানে অনেক কিছু। আমাদের মা, আমাদের বোন নারী। প্রতিদিনই তারা আমার। আমার জীবনের অন্তরঙ্গ সারথি।

সকল নারীর প্রতি আমার কুর্নিশ। আমার শ্রদ্ধা।

লেখক: রাজনীতিবিদ, সংগঠক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আলাদা করে নারী দিবস কেন? মত-দ্বিমত হাবীব ইমন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর