পৃথিবীতে খুব কম জাতিরই নিজস্ব নববর্ষ আছে, বাঙালির আছে…
১৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:২৮
বাঙালি! নাম উচ্চারণের সাথে সাথে শরীরে শিহরণ জাগে- রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি- গর্বে বুক ভরে যায় এই বলে- আমি একজন বাঙালি। বাঙালিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যময় জাতি- আর কেনই বা শ্রেষ্ঠ বলবো না- কী নেই আমাদের! কী ছিল না আমাদের! ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত গিয়েছিল তার ঠিক ২১৪ বছর পরে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরের আরেক আম্রকাননে বাংলার সেই অস্তমিত স্বাধীনতার সূর্য পুনরায় উদিত হয়।
‘বাঙালির বাঙলা’য় কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “এতো ফুল, এত পাখি, এতো গান, এত সুর, এতো কুঞ্জ, এতো ছায়া, এতো মায়া, এতো আনন্দ, এতো হুল্লোড়, এতো আত্মীয়তাবোধ, এতো ধর্মবোধ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। … বাংলার আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতামন্ত্রের সঞ্জীবনী শক্তি। আমাদের বাংলা নিত্য মহিমাময়ী, নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসভায় বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন- আর শতাব্দীর মহানায়ক বাঙালির অবিসংবাদিত সংগ্রামী নেতা রূপকথার প্রবাদ পুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে-নির্দেশে বাঙালি জাতি ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হানাদার বর্বর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও চার লক্ষাধিক মা-বোনের লাঞ্ছিত হওয়ার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাঙালি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তার সাহস ও স্বাধীনতা-প্রিয়তার জন্য। অসভ্য পাকিস্তানিরা শ্যামল বাংলার বুক থেকে হাজার বছরের শাশ্বত ‘বাংলা’ কথাটার শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলে নাম রেখেছিল এক আজব নাম তথাকথিত ‘পূর্ব পাকিস্তান’! অথচ এই আজব নামটা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের পাতায় কোথাও ছিল না। আমার ‘দুধেভাতে বাঙালি’ আমার ‘মাছেভাতে বাঙালি’র দুঃখিনী বাংলা মা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল! একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া ‘বাংলা’ নামের আর কোন অস্তিত্বই থাকলো না- পারলে বর্বর পাকিস্তানিরা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বঙ্গোপসাগরের নামও বদলিয়ে দিতো। একাত্তরে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান-এর মাধ্যমে যুদ্ধ করে বিজয়ের বেশে আমরা বাঙালিরা পেয়েছি একটি মানচিত্র- একটি লালসবুজ পতাকা- একটি জাতীয় সংগীত।
পৃথিবীতে খুব কম জাতিরই নিজস্ব নববর্ষ আছে- বাঙালিরা সেই ঐতিহ্যবাহী গর্বিত জাতি যাদের নিজস্ব নববর্ষ, নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব শক্তিশালী বর্ণমালা, নিজস্ব ষড়ঋতু, নিজস্ব উঁচুমানের সংস্কৃতি রয়েছে- সারা বিশ্বে একমাত্র বাঙালিরাই তাদের নিজস্ব ষড়ঋতুকে আলাদা আলাদা করে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় এবং বিদায়ও জানায়। বাংলাদেশ তথা বাংলা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ষড়ঋতু নেই। বাঙালির এই ঐতিহাসিক বিস্ময়কর যাদুকরী নিজস্ব সংস্কৃতি দেখে হিংসায় উন্মত্ত হয়ে নববর্ষবিহীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৫৮ সালে বাঙালির বাংলা নববর্ষের সরকারি ছুটি নিষিদ্ধ করে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়েছিল- স্তম্ভিত হতবাক হয়ে গিয়েছিল বাঙালি! ১৯৬০-এর দশকে অশিক্ষিত পাকিস্তানিরা নিরীহ বাঙালিদের উপর চালায় অমানুষিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস- যা পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি। পাকিস্তানিদের এই অন্যায় নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ‘ছায়ানট’ ঢাকার রমনা বটমূলে সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন করে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু করে। গ্রামীণ আবহে জন্ম নিলেও শহরও এর সুধা পান করতে থাকে। ঢাকায় বাংলা নববর্ষ উৎসবে বৈশাখি মেলা ছাড়াও একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়- যাতে গ্রামীণ জীবন ও আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। পয়লা বৈশাখের এই আনন্দধারা সমগ্র বাংলায় এবং বিশ্বের সব বাঙালির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা নববর্ষ উৎসব এখন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের প্রধান অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক উৎসবে এবং বাঙালি এর মাঝে খুঁজে পেয়েছে তার প্রকৃত ঠিকানা। পাকিস্তানি আমলে ঢাকায় কোনো বৈশাখি মেলা অনুষ্ঠিত হতো না অর্থাৎ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেটা হতে দিতো না- এখন তা ভাবলেও অবাক লাগে! বর্বর কুখ্যাত নিষ্ঠুর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ঠিকই বুঝে ফেলেছিল বাঙালিরা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি গর্বিত জাতি- তাই তারা বাঙালির আবহমান সংস্কৃতিকে সময়মতই গলাচিপে ধরেছিল- কারণ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এভাবে সগৌরবে চর্চা হতে থাকলে পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির কাছে অসহায় এতিম হয়ে যায় এবং বাঙালিদের কাছে ও বিশ্ববাসীর কাছে নগ্নভাবে ধরা পড়ে যায় যে তারা একটা ঐতিহ্যহীন বর্বর জাতি। কারণ পাকিস্তানিদের নেই কোনো নিজস্ব নববর্ষ, নেই কোনো নিজস্ব বর্ণমালা- এমন কি যে রাষ্ট্রভাষা তাদের উর্দু সে উর্দু ভাষা পাকিস্তানিদের কারো মায়ের ভাষাও নয়- এমন কি উর্দুভাষা তাদের কোনো প্রদেশেরও ভাষা নয় এবং এই আজব উর্দু ভাষার সম্পূর্ণ নিজস্ব কোনো বর্ণমালাও নেই- হায়! দুর্ভাগা পাকিস্তানি জাতি যাদের জন্মই আজন্ম পাপ! আজ ভাবতেই অবাক লাগে এই বর্বর জাতিরাই সংস্কৃতিমনা বাঙালিদের উপর স্টিমরোলার চালাতো!
বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি! বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। ২৮ নভেম্বর ২০১৬ থেকে শুরু হওয়া ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় ৩০ নভেম্বর ২০১৬ বুধবার ইউনেস্কোর ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অর্থাৎ বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটির ১১তম সেশনে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ২০১৭-এর বর্ষবরণের আয়োজনে বাংলাদেশে এ শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব স্কুল ও কলেজে আড়ম্বরপূর্ণভাবে বর্ষবরণ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১৬ মার্চ ২০১৭ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ আয়োজন উপলক্ষে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পহেলা বৈশাখে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও আড়ম্বরের সঙ্গে বাংলা বর্ষবরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করায় বিষয়টি গুরুত্বসহ উদযাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভাষার নামে একটি দেশ- বাংলা নামে যে দেশ নাম তার বাংলাদেশ এবং ভাষার নামে যে জাতির পরিচয় সে জাতির নাম বাঙালি। সেই ঐতিহ্যবাহী বাঙালিরই একান্ত নিজস্ব উৎসব বাংলা বর্ষবরণ বা নববর্ষ উৎসব- এই উৎসব বিশ্বের ত্রিশ কোটি বাঙালির একটি সর্বজনীন নিজস্ব উৎসব। বাংলা সনের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ বাংলা শুভ নববর্ষ। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা(আগরতলা), ঈষাণ বাংলা তথা আসামের বাঙালি অধ্যুষিত শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি এলাকা এবং বিশ্বের সব প্রান্তে থাকা সকল বাঙালি এদিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়- ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি এবং সব বাঙালিরই কামনা থাকে নতুন বছরটি যেন সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়।
বাংলা নববর্ষের মতো ধর্মনিরপেক্ষ সর্বজনীন উৎসব বিশ্বে বিরল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বলেছেন- “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।” কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- “ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখির ঝড়!”
মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন এবং তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় অর্থাৎ ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন এবং পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। তাই হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি বা খ্রিস্টীয় দিন শুরু হয় মধ্যরাতে আর বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে- অর্থাৎ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের উৎসব- যা পৃথিবীর অন্যান্য জাতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা- এটাই বাঙালির একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য- যা সারা পৃথিবী অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়।
বিশ্ববিখ্যাত জ্যোর্তিপদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহা ১৯৫২ সালে ভারতে প্রচলিত প্রাচীন জ্যোর্তিবিদ্যাভিত্তিক বিভিন্ন বর্ষপঞ্জির আমূল সংস্কার প্রস্তাব করেন। তাঁর প্রস্তাব অনুসারে বৈশাখ থেকে ভাদ্র এ পাঁচ মাস হবে ৩১ দিন করে এবং পরবর্তী আশ্বিন থেকে ফাল্গুন এ ছয় মাস হবে ৩০ দিন করে। সে হিসাবে চৈত্র মাস হবে ৩০ দিন এবং অধিবর্ষে বা লিপইয়ারে চৈত্র মাস হবে ৩১ দিনে। তাঁর এ প্রস্তাব অনুসারে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ বা নববর্ষ হওয়ার কথা।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করে ১৯৬৩ সালে। ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সুপারিশ সামনে রেখে বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কার করা হয় এবং বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সংস্কার প্রস্তাব কার্যকর করে। সে অনুযায়ী বৈশাখ থেকে ভাদ্র প্রতি মাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত সাত মাস ৩০ দিনে গণনা করা হচ্ছে। লিপইয়ারের ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে প্রতিবছর ৩০ চৈত্র বা ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি এবং ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ নববর্ষ বা বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘটা করে পালন করা হচ্ছে।
তবে খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব বর্ষবরণ বা বাংলা নববর্ষের তারিখ নিয়ে দুই বাংলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে- বাংলাদেশের বাঙালিরা পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালন করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল- আর পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা কখনো ১৫ এপ্রিল আবার কখনো ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালন করে। বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রশ্ন দুই বাংলায় একই দিনে বর্ষবরণ করতে অসুবিধা কোথায়- বাঙালি সংস্কৃতির একটি প্রধান উৎসব দুই দিনে হওয়া কি উচিত?
সবচেয়ে অবাক লাগে ভারতের সনাতনপন্থী পঞ্জিকাকাররা এবং পশ্চিমবাংলার বাঙালিরা ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সুপারিস গ্রহণ করেনি এবং সংস্কারে আচ্ছন্ন থাকার কারণে তারা এ ব্যাপারে সোচ্চারও হচ্ছে না। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতের ত্রিপুরা(আগরতলা) রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করার সময় শুধু সীমান্ত পিলার দেখেছিলাম- সীমান্তে আর কিছুই ছিল না- কিন্তু এখন তারা সীমান্তে শক্ত কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে- কিন্তু বাংলা বর্ষবরণ বা নববর্ষকে কেন কাঁটাতারের বেড়ার মতো করে ভাগ করে দেওয়া হলো? তবে এটাও চিরসত্য- সবকিছু ভাগ করে দিলেও একটা জিনিস এখানো ভাগ করতে পারেনি এবং কোনো দিন পারবেও না- সেটা হলো বাঙালি পরিচয়- মাছেভাতে বাঙালি, দুধেভাতে বাঙালি।
বাংলা নববর্ষের শুভলগ্নে নতুন বছরটি বাঙালিদের সবসময় হোক শান্তি, সম্প্রীতি, সম্ভাবনার এবং আমরাও আশা করবো বাংলাদেশসহ বিশ্বের ত্রিশ কোটি বাঙালির ঐতিহ্যের দৃঢ় বন্ধন পরিচয় যেন চির অটুট থাকে। বাংলা শুভ নববর্ষে আরো প্রার্থনা থাকবে- কবি ভারতচন্দ্র রায়ের অমর উক্তি ধ্বনিত হোক সারা বাংলায়- “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।” বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক। জয়বাংলা।
[লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা; ২নং সেক্টর বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া]
সারাবাংলা/এমএমকে