নতুন বাংলাদেশের অনন্য এক প্রকল্প
২১ মার্চ ২০২২ ১৫:১৭
ভার্চুয়ালে নয়, অ্যাকচুয়ালে পটুয়াখালীর পায়রায় সর্বাধুনিক আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে দিলেন দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও। করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই–আড়াই বছর ধরে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন তিনি ভার্চুয়ালেই করে আসছেন। অ্যাকচুয়ালে বা সশরীরে বের হয়েছেন খুব কম। ক’দিন আগে আরব আমিরাত সফর এবং টুঙ্গিপাড়ার বাইরে সোমবার সশরীরে গেলেন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন ও নাম ফলক উন্মোচনে। ওড়ালেন এক হাজার ৩২০টি পায়রা।
গোটা আয়োজনটির পরতে-পরতেই ছিল ভিন্নতা ছড়ানো। রাবনাবাদ নদীর মোহনায় ২২০টি নৌকার সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান এই অঞ্চলের জেলেরা। এর মধ্যে ১০০টি নৌকা ছিল পালতোলা। ১০০টিতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন। বাকি ২০ নৌকায় নিরাপত্তাকর্মীরা। প্রতিটি নৌকায় রংবেরঙের পোশাকে দুজন করে ৪০০ জেলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
নৌকায় উড়তে থাকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সঙ্গে বাজতে থাকে ‘ও মাঝি নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে’ গানের যন্ত্রসংগীত। প্রধানমন্ত্রী নিজে সেই প্রদর্শনীর দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এসব নৌকা তৈরি করা হয়েছে। উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নজীবপুর গ্রামের আন্ধারমানিক নদীর তীরে নৌকাগুলো তৈরি করেছেন বরিশাল চারুকলা বিদ্যালয়ের ১০ জন শিল্পী। চারদিনে ২৫ সহকারীর প্রচেষ্টায় নৌকাগুলো সাজসজ্জার কাজ শেষ করেছেন ১০ শিল্পী।
দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কম সময়ে এমন বড় অবকাঠামো নির্মাণ এটিই প্রথম। বাংলাদেশ ও চীনের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সমান অংশীদারত্বে গঠিত বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-বিসিপিসিএল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। পায়রায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর মধ্যদিয়ে ২০২০ সালেই বাংলাদেশ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল ক্লাবে অভিষেক হয়। বিশ্বেও এটি অনন্য। আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ; এশিয়ায় সপ্তম। দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে শুধু ভারতে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের উছিলায় বদলে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ, জঙ্গলাকীর্ণ রাঙ্গাবালিসহ আশপাশ। এখন সেখানে বড় বড় অবকাঠামো। নানা যন্ত্রপাতি ও জনসমাগমে কর্মমুখর। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকারের ওয়াদা ছিল সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের। বিশেষভাবে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করা। দফায়-দফায় সরকারি প্রকল্পে সময় ও খরচ বাড়ানোর প্রবণতার মধ্যে এটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। এর নির্মাণ ব্যয়ও প্রাক্কলিত পরিমাণের চেয়ে কম হয়েছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৭ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা)। কিন্তু, ব্যয় হয়েছে ২৩০ কোটি ডলার (প্রায় ১৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা)। যদিও দেশে উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পটি সরকারের ১০ অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল না। ওই তালিকায় থাকা দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল ও মাতারবাড়ী এখনও উৎপাদনে আসেনি।
এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে এন্তার অভিযোগ ছিল পরিবেশবাদীদের। প্রধান অভিযোগ, কয়লার ব্যবহারের কারণে এটি পরিবেশের সর্বনাশ করবে। বাস্তবটা ভিন্ন। সেখানে ব্যবহার হচ্ছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি। একে পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দাবি করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তির সঙ্গে তাদের তাদের অবস্থান এবং সরকারের গতিময় এগিয়ে যাওয়ায় এক পর্যায়ে থমকে যেতে হয় পরিবেশবাদীদের।
লেখক: সাংবাদিক–কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সারাবাংলা/এসবিডিই
টপ নিউজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র মোস্তফা কামাল