Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যন্ত্রণাময় ভর্তিযুদ্ধের অবসান কবে?

ড. এমএলআর সরকার
২৩ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৫১

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক কারণে ভর্তি-ইচ্ছুক ও অভিভাবকদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যন্ত্রণা কমানোর জন্য ইতোমধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। ফলে ছোটাছুটি ও ভোগান্তিও যথেষ্ট লাঘব হয়েছে, যদিও নানা জটিলতার কারণে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া একটু বিলম্বিত হচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয়, দেশের প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নানা কারণে গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে অনিচ্ছুক। এগুলো হচ্ছে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজ্ঞাপন

গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত না হয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভোগান্তি লাঘবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঢাবির এ সিদ্ধান্ত শুধু পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তিই দূর করেনি, অধিকন্তু যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অন্য চারটি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট, রাবি, চবি ও জাবি একদিকে যেমন গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে ইচ্ছুক নয়, অন্যদিকে ঢাবির মতো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিতেও অনিচ্ছুক। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তি ও অসমতা কোনোভাবেই দূর হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত বলার চেয়ে আমি আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে লেখাই সমীচীন মনে করছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বছরের ভর্তি পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগ করেছে। যাতায়াত এবং থাকার জন্য পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সেই কষ্টের কথা অনেকেরই মনে আছে। অবর্ণনীয় সেই দুর্দশা নিয়ে সেসময় পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে। যদ্দূর মনে পড়ে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় সেই সময় বলেছিলেন, এরকম সমস্যা ভবিষ্যতে আর হবে না।

কিন্তু এবারের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তাতে এটি স্পষ্ট যে, গত বছরের সেই ভোগান্তির কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেমালুম ভুলে গেছে। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি এবং পরীক্ষায় অসমতা/বৈষম্য কোনোভাবেই কমবে না, বরং বাড়বে। পরীক্ষায় ভোগান্তি এবং অসমতা বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই জানা প্রয়োজন ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো কী। এগুলো হচ্ছে-ক. পরীক্ষার তারিখ : ২৫, ২৬ ও ২৭ জুলাই, খ) পরীক্ষার স্থান : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, গ. পদ্ধতি : এমসিকিউ, ঘ. ইউনিট : ৩টি, এবং ঙ. ইউনিটের প্রতি পরীক্ষার্থী : চারটি গ্রুপে ৭২ হাজার। যে ৫টি সিদ্ধান্তের কথা এখানে উল্লেখ রয়েছে, তন্মধ্যে ইউনিট সংখ্যা ছাড়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো ভোগান্তি বৃদ্ধি এবং বৈষম্য সৃষ্টির জন্য দায়ী।

ভোগান্তির সঙ্গে জড়িত সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার তারিখ, স্থান এবং পরীক্ষার মধ্যবর্তী সময়। গত বছর একদিনে তিন গ্রুপে পরীক্ষা দিয়েছিল ৪৫ হাজার পরীক্ষার্থী। প্রয়োজনের তাগিদেই এ বছর একদিনে ৭২ হাজার পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি একবারও ভেবে দেখেছেন তিন দিনের এই পরীক্ষায় এত বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা কোথায় থাকবে এবং কীভাবে যাতায়াত করবে? গত বছর অনেক পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবক আগে থেকে উচ্চমূল্যে হোটেল বুকিং দেওয়ার পরও হোটেলে রুম পায়নি অথবা পেলেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে।

পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছর আশপাশের মেস মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হয়তো ভেবেছিল তারা কথা বললেই সব সমস্যা এক নিমিষেই মিলিয়ে যাবে। কিন্তু কষ্ট যা হওয়ার হয়েছে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের। আসলে সমস্যাটা হচ্ছে একদিনে লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকের থাকার ব্যবস্থা করা আশপাশের মেসে বা হোটেল মালিকদের নেই। আবাসনের অভাবে ৪৫ হাজার পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকে আমরা গতবার কষ্ট দিয়েছি, আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা-কোন বিবেচনায় আমরা এবার একদিনে ৭২ হাজার পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকে রাজশাহীতে এনে কষ্ট দিতে চাচ্ছি?

পরীক্ষার্থীদের শুধু থাকার বিষয়টি নয়, যাতায়াতের বিষয়টিও বিবেচনা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা হবে ২৫ জুলাই ২০২২ থেকে অর্থাৎ শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। এ ভরা বর্ষাকালে প্রতিদিন লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকের দূর-দূরান্ত থেকে রাজশাহীতে যাতায়াত করা সত্যিই কি সহজ ব্যাপার? ভারি বৃষ্টিপাত হলে একদিনে ৭২ হাজার পরীক্ষার্থী তার সঙ্গে অভিভাবকদের অবস্থাটা কী হবে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তারা? নির্মাণকাজের জন্য ক্যাম্পাসের অনেক রাস্তা এমনিতেই বেহাল। তার ওপর এত লোক সমাগম হলে কাদা-পানি মেখে সব যে একাকার হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?

যাতায়াত ছাড়া পরীক্ষার হলে প্রবেশের ক্ষেত্রেও আছে এক কঠিন ঝামেলা। লম্বা লাইন দিয়ে পরীক্ষার্থীদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ধরুন এক গ্রুপের পরীক্ষা হচ্ছে, অন্য গ্রুপের পরীক্ষার্থীরা বাইরে অপেক্ষা করছে। এ মুহূর্তে মুষলধারে বৃষ্টি নামল। এখন বলুন তো অন্য গ্রুপের পরীক্ষার্থীরা কি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে, নাকি একাডেমিক ভবনগুলোয় প্রবেশ করবে? যদি ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে এত পরীক্ষার্থী দাঁড়াবে কোথায়? পরীক্ষার হলের পরিবেশই বা কেমন হবে? এমনিতেই এক গ্রুপের পরীক্ষা শেষ হলে গেট দিয়ে বের হওয়া খুবই কষ্টকর। তারপর যদি অন্য গ্রুপের পরীক্ষার্থীরা বৃষ্টির কারণে আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে, তাহলে যারা পরীক্ষা শেষ করবে তারা গেট দিয়ে কীভাবে বের হবে? বের হয়ে তারা দাঁড়াবেই বা কোথায়? যদি বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে পরবর্তী গ্রুপের কী হবে?

গতবার পরীক্ষার বিরতি ছিল ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এবার বিরতি দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ ঘণ্টা। ১ ঘণ্টার ভেতর এক গ্রুপের শত শত পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষে তাদের যাবতীয় জিনিসপত্র (তাদের জমাকৃত ব্যাগ, মোবাইল, ঘড়ি) নিয়ে চতুর্থ তলা থেকে নামা এবং পরবর্তী গ্রুপের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে পৌঁছানো হবে খুবই কষ্টকর! শুধু তাই নয়, ১ ঘণ্টার ভেতর বড় পরীক্ষার হলগুলোর পরিদর্শকদের জন্য পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র সংগ্রহ, গণনা এবং ক্রমানুসারে সাজিয়ে কন্ট্রোল রুমে ফেরত দেওয়া এবং আবার অন্য একটি কন্ট্রোল রুমে গিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য যাবতীয় পরীক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করে পরীক্ষার হলে যথাসময়ে পৌঁছানো শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া হবে যথেষ্ট কষ্টকর। এ ক্লান্তিকর অবস্থা মোটেই পরীক্ষার কাজ ত্রুটিহীনভাবে করার জন্য সহায়ক নয় বরং এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষার জন্য খুবই ক্ষতিকর।

ভোগান্তি ছাড়াও যে বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে পরীক্ষায় বৈষম্য। প্রতিটি ইউনিটের ৪টি গ্রুপে হবে ভর্তি পরীক্ষা এবং তৈরি হবে ৪ সেট প্রশ্নপত্র। স্বাভাবিকভাবেই চার সেট প্রশ্নপত্রের মাঝে তৈরি হবে এক ধরনের অসমতা। ফলে অনেক পরীক্ষার্থীই হতে পারে বৈষম্যের শিকার, যা কোনোভাবেই কাম্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু প্রশ্নপত্রের অসমতা/বৈষম্যই নয়, এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়। এমসিকিউ পদ্ধতির রয়েছে প্রথাগত (generic) ত্রুটি এবং এ পদ্ধতিতে অসদুপায় অলম্বন করা সহজ। অনেক পরীক্ষার্থী আছে, যারা দলবেঁধে পরীক্ষা দিতে এসে নানা উপায়ে অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করে, যা বন্ধ করা বেশ কঠিন।

এমসিকিউ পদ্ধতিতে অসদুপায় অবলম্বন প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন পরীক্ষার্থীদের দূরে দূরে বসানো এবং কঠোর ভিজিল্যান্স। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রতি গ্রুপে ১৮ হাজার পরীক্ষার্থী থাকায় দূরে দূরে সিট বসানোর চিন্তা একটি স্বপ্নবিলাস মাত্র। অনেক শিক্ষক কঠোর হলেও কিছু শিক্ষক আছেন, যাদের চোখ অতি স্বল্প সময়ের জন্য ফাঁকি দেওয়া ধূর্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য কঠিন নয়। অধিকন্তু শিক্ষকরা বিচক্ষণতার সঙ্গে চেষ্টা করলেও কোনো কোনো পরীক্ষার হলের পরিবেশ এমন যে ফ্যানের শব্দে মাথা নিচু করে থাকা মাস্ক পরা পরীক্ষার্থীদের ফিস ফিস কথা বোঝার উপায় থাকে না। তারপর পরীক্ষার সময় যদি শুরু হয় শ্রাবণের ঢল, তাহলে ফ্যান এবং বৃষ্টির শব্দে সবকিছুই হবে একাকার।

এমসিকিউ পদ্ধতিতে যে পরীক্ষার্থী বাছাই করা যুক্তিসংগত নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের ভর্তি পরীক্ষায়। সেসময় ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার (সংক্ষিপ্ত লিখিত প্রশ্নপত্রে) সমন্বয়ে। আমি ছিলাম একজন উত্তরপত্র নিরীক্ষক। নিরীক্ষায় দেখেছি, এমসিকিউ পরীক্ষায় ভালো নম্বরপ্রাপ্ত অনেক পরীক্ষার্থীই নিউটনের সূত্রও সঠিকভাবে লিখতে পারেনি। আবার অনেকে সূত্রটি লেখেইনি। অনেক ছাত্র লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতেই পারেনি। অনেকেই কোনো কোনো অংশে (যেমন: গণিত বা রসায়নে) শূন্য পেয়েছে। আবার অনেকেই বেশ ভালো লিখেছে। যেসব পরীক্ষার্থী এমসিকিউ এবং লিখিত উভয় পরীক্ষায় সম্মিলিতভাবে ভালো করেছে, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

২০১৯ সালের সেই ফলাফল বিচার-বিশ্লেষণ না করে করোনার অজুহাত দেখিয়ে ২০২০ সালে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে শুধু এমসিকিউ পদ্ধতিতে। যার ফলে আমরা এমনও কিছু ছাত্রছাত্রী পেয়েছি যাদের হাতের লেখা পড়া দুষ্কর। অনেকে একটি ইংরেজি বাক্যও শুদ্ধভাবে লিখতে পারে না। এমনিতেই ছাত্রছাত্রীরা ঢাকামুখী। তার উপর এ রকম যন্ত্রণাদায়ক এবং ক্রটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি থাকলে যত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ই হোক না কেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই ভালো ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতে পারবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সুন্দর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুকরা যেন হয়রানি ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারে এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যেন ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কোনো অজুহাতেই এ রকম হযবরল প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা সমীচীন নয়। একটি বৈষম্যহীন এবং ভোগান্তিমুক্ত ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন দুটি পদক্ষেপ-ক. এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা এবং খ. ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট-এ তিন বিভাগীয় শহরে ভর্তি কেন্দ্র স্থাপন করা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার দুটি সবিনয় জিজ্ঞাসা-১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে, তাহলে আমরা কেন এ সুন্দর ব্যবস্থাটি গ্রহণ করতে পারছি না? ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে, তাহলে আমরা কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কেন্দ্র স্থাপন না করে লাখ লাখ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবককে হয়রানি এবং ভোগান্তিতে ফেলছি?

গতবারের ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন অনেক বিতর্কিত পূর্বতন উপাচার্য। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচলিত হচ্ছে একদল অত্যন্ত মেধাবী, উদ্যমী, কর্মঠ ও হৃদয়বান শিক্ষক দ্বারা, যার নেতৃত্বে আছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। ইতোমধ্যে অনেক সাহসী ও সুন্দর সিদ্ধান্ত এ প্রশাসন নিয়েছে। কিন্তু কেন যে এ রকম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, তা অনেকেরই বোধগোম্য নয়।

গত বছরও আমি এ সমস্যা নিয়ে লিখেছিলাম, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তবে নতুন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি এবং তাদের কাছে আমি বা আমার মতো শিক্ষকদের প্রত্যাশা একটু বেশি। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবারও একটু ভেবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভর্তি-ইচ্ছুকরা ভোগান্তি ও বৈষম্যের শিকার হবে না এবং আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা প্রশাসনের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

লেখক : অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ড. এমএলআর সরকার মত-দ্বিমত যন্ত্রণাময় ভর্তিযুদ্ধের অবসান কবে?

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর