Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইদযাত্রা সহজ করতে হবে

মোঃ আসাদ উল্লাহ তুষার
২৫ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৫২

বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনা মহামারীর পর প্রায় স্বাভাবিক হতে চলেছে পৃথিবী, বাংলাদেশেও এর বাইরে নয় । জীবন-মরনের এক সমস্যা থেকে বের হয়ে মানুষ আবার আগের মত মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এখনও পুরোপুরি মরণঘাতী ভাইরাস এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়নি। তারপরও মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাচ্ছে। আমাদের দেশেও এর ব্যাতিক্রম নয়।

বিজ্ঞাপন

সামনে পবিত্র ইদুল ফিতর, মুসলমানদের পবিত্র দুটি উৎসবের অন্যতম একটি উৎসব হচ্ছে ইদুল ফিতর। একমাস সিয়াম সাধনার পরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে এই ইদ উদযাপন মুসলমানদের হাজার হাজার বছরের ধর্মীয় রীতি ও ঐতিহ্য ও অবশ্য পালনীয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ ইদ পার্বনে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এই উৎসব পালন করে আসছে। কভিডের কারণে বিগত দুই বছর চারটি ইদ মানুষ আনন্দ নিয়ে উদযাপন করতে পারেনি। অনেকটা ঘর বন্দী অবস্থায় থাকতে হয়েছিল। এবার হয়তো সেটা হবে না। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জানা যায় এবার ইদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় দেড় কোটি মানুষ রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাবে। কারণ বিগত দুই বছর তারা গ্রামে ইদ করতে পারে নাই । এছাড়াও এবার ইদে ঘটনাক্রমে বেশ কয়েকদিন ছুটি পড়েছে। মাঝে একদিন ছুটি নিলে সরকারি-বেসরকারি অফিসে অনেকেই টানা নয় দিন ছুটি ভোগ করে আসতে পারবে। সবকিছু মিলিয়ে এবার মানুষের গ্রামে ইদ করার একটি ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু প্রতিবারই দেখা যায় এই ইদ যাত্রায় বাড়ি যাওয়ার উৎসাহ উদ্দীপনায় যাতায়াতে একটা বিরাট বিরম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যানজট। অবশ্য প্রথম বিড়ম্বনা শুরু হয় টিকিট পাওয়া নিয়ে।বিশেষ করে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ! দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ মূলত সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে যাতায়াত করে থাকেন। অল্পকিছু বিত্তবান মানুষ বিমান পথে যাতায়াত করে থাকেন। ট্রেনের যাতায়াত যদিও বিরম্বনা বা যানজটের আশংকা অনেক কম থাকে কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত টিকিট পাওয়া নিয়ে একটা ভোগান্তি দেখা দেয়। নৌপথেও পাল্লাপাল্লি দিয়ে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নৌপথে দুর্ঘটনার শিকার হতে দেখা যায়। লঞ্চ স্টিমারে দুর্ঘটনার কারণে প্রাণহানি ঘটে এবং অনেক সময় ইদযাত্রা শোক যাত্রায় পরিণত হয়। অন্তত একটু সতর্কতার সাথে চললে একটু দায়িত্ব নিয়ে নৌপথে চলাচল করলে বিশেষ করে লঞ্চ মালিকরা যদি একটু সতর্ক থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা যদি একটু বেশি তৎপর থাকে তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। নৌপথে ইদ যাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়া খুবই সহজ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট সংখ্যক মানুষ এই নৌ পথে যাতায়াত করে থাকেন। ইদে সংখ্যাটা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি হয়। নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্ঘটনা মুক্ত নির্বিঘ্নে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ যাতে আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ইদ উদযাপন করে সুস্থভাবে আবার রাজধানীতে ফিরে আসতে পারে।

যাত্রাপথে ইদে সবচেয়ে খারাপ যোগাযোগব্যবস্থা এখন বোধহয় সড়ক পথ। সড়ক পথে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে রাজধানী থেকে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম প্রায় ৬৪ টি জেলা এবং পাঁচ শতাধিক উপজেলায় রাজধানী থেকে সড়ক পথে যাতায়াত করে থাকে। সড়ক পথে যাতায়াতের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা দুর্ঘটনা হলেও বেশকিছু কাল যাবত সড়কে দীর্ঘ যানজট ইদযাত্রার বিড়ম্বনার প্রধান কারণ। এর প্রধান কারন রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়ছে। রাস্তায় গাড়িও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই ইদে ও ছুটিছাটাতে যানজট বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যানবহন সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা যানজটে আটকা থাকে। একই অবস্থা কুমিল্লা হয়ে চিটাগাং এবং ঢাকা থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং সিলেটে যাতায়াতে যানজট দেখা যায়। কিন্তু আগে থেকে সতর্ক হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়, বাস মালিকরা যদি সচেতন হয় সড়ক নির্মাণের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট যদি সচেষ্ট থাকে ইদকে সামনে রেখে রাস্তার পুনর্নির্মাণ ও সংস্করণ কাজ যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করে তাহলে এই ইদযাত্রার যানজটের বিরম্বনা বা ঝামেলা অনেকাংশে কমে আসবে।

অন্যদিকে দক্ষিণ অঞ্চলে যাতায়াতের আরেক বিড়ম্বনা ফেরি পারাপার। ফেরি পারাপারের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, বিশেষ করে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পরিবহনে বেশি সংখ্যক বাস এবং ট্রাক একসাথে চলাচলের কারণে ইদযাত্রায় বিরাট বিরম্বনা দেখা দেয় । তাই ইদ উপলক্ষে ফেরি চলাচল আরো বাড়াতে হবে এবং ফেরি ঘাটের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাওয়ার যোগাযোগব্যবস্থা আগের চেয়ে বহুগুণে ভালো হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে রাস্তাগুলো প্রায় চার লেন হয়েছে কোথাও কোথাও হচ্ছে। চট্টগ্রামের রাস্তা আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। একইভাবে ময়মনসিংহ, সিলেটের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হয়েছে। দক্ষিণ অঞ্চলে রাস্তাঘাট আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু বেশি যানজট দেখা যায় যে এলাকায় সেখানে সরকার থেকে আগেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মানুষ যেন সহজে এই তিন চার দিনের ছুটিতে যাতে দুদিন রাস্তায় না থাকতে হয় নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে বাড়ি গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে সে ব্যাপারে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

যানজটের কারণে মানুষের যে অবর্ণনীয় কষ্ট হয় বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের, নারীদের,বাচ্চাদের সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেনা। মানুষের সমস্ত আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয় যানজটের কারণে। সময় ও অর্থের অপচয় হয়। তখন স্বভাবতই সরকারকে দোষারোপ করে, পুলিশ বাহিনীকে সড়ক যোগাযোগের অন্যান্য সংস্থাকে দোষারোপ করে। সঠিক কি কারণে যানজট হয় অনেক সময় তা বুঝাই যায়না। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়, আবার এলোপাথাড়ি গাড়ি চালানোর কারণেও এটা হয়ে থাকে। কিন্তু খুব বেশি বড় কোন কারণে যে এই যানজট হয়, সেটা কোন সময় বোঝা যায় না। খুবই ছোট্ট কারণে একটু অসতর্কতার কারণে বিরাট যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে প্রধানত ভূমিকা রাখতে পারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরে সড়ক সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা। আর গাড়িচালকদের এই ব্যাপারে খুবই সতর্ক হওয়া জরুরী। খুব তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে যানজট বাধানোর চাইতে সুশৃঙ্খল ভাবে যদি রাস্তায় চলা যায় তাহলে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।

প্রায়ই তো দেখা যায় সড়ক পথে অসতর্কভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বেশিরভাগ সময় ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। পরিবারের যারা দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা বোঝে এর কি যন্ত্রণা। এ ব্যাপারে মালিক ও চালকদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এখন প্রচুর সংখ্যক মানুষ রাস্তায় মোটরসাইকেলে চলাফেরা করে। রাস্তায় বের হলে দেখা যায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীরা যানজট এড়াতে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করে। হাইওয়েতে মোটর সাইকেলে যাতায়াতে সবাইকে আরো সর্তকতা অবলম্বন করা দরকার। একসাথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রাজধানী থেকে একই পথে যান চলাচল শুরু হলে গাবতলী, মহাখালী আব্দুল্লাহপুর থেকে যানজট শুরু হয়। আবার বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে পশ্চিম দিকের রাস্তাগুলোতে ইদানীং বেশ জ্যাম হয়। নির্মাণাধীন ওভারপাস ও সেতুর কারণে এ জ্যাম লেগে থাকে। ইদ যাত্রাকে সামনে রেখে রাস্তার কাজ কয়েকদিন বন্ধ রাখা যেতে পারে। আর হাইওয়ে পুলিশকে শক্ত ও অবস্থান নিতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রাস্তায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে এই যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। সেনাবাহিনী ও এলিট ফোর্স র্যাবের প্রতি এখনো প্রবল আস্থা আছে মানুষের।

ইদের এক সপ্তাহ আগেই সড়ক পথে যাতায়াত সহজ করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মিলে বৈঠক করে যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে হবে। যাত্রাপথের অবর্ণনীয় কষ্টের কারণে ভুক্তভুগিরা সরকারকে দোষারোপ করে। তাই ইদ যাত্রা সহজ করতে দুর্ঘটনা ও যানজট মুক্ত নির্বিঘ্নভাবে যেন মানুষ প্রিয়জনের সাথে ইদ করে কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ঈদযাত্রা সহজ করতে হবে মত-দ্বিমত মোঃ আসাদ উল্লাহ তুষার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর