Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বামপন্থীদের হুঁশ ফিরবে কবে?

সজীব ওয়াফি
১৮ মে ২০২২ ১৬:৪৮

বামপন্থী দলগুলোর সদস্যরা হঠাৎ করেই তাদের জোটের শরিকদের উপর ক্ষেপেছেন। পত্রপত্রিকা ও নানা সূত্রে খবর, জোট ভাঙ্গনের সুর উঠেছে। একটু ভাবনায় পরে গেলাম— কি হয়েছে, হঠাৎ তারা ক্ষ্যাপলো কেন? তাদের নানাজনের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বুঝলাম বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দুই দল সামনে আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে সাত দলীয় মঞ্চের নেপথ্যে নায়ক। সে মঞ্চের দাবি আবার সম্ভবত এক দফার। বামপন্থীদের বক্তব্য দাঁড়ালো, রাজনৈতিক জোট বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক হয়ে অন্য কোন জোট বা মঞ্চ, অর্থাৎ দ্বিতীয় কোন মঞ্চ-টঞ্চে থাকা যাবে না; এই হলো হেতু। অথচ বরাবরের মতো বাস্তবতার সাথে গড়মিল এনালাইসিস, নেতৃত্ব এবং বেঠিক কর্মসূচিতে যে নিজেরাই ডুবুডুবু অবস্থা সেদিকে হুঁশ নাই। তাদের সময় নষ্ট হয় কেবল অন্যদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে!

বিজ্ঞাপন

মঞ্চ গঠনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে কেন বামপন্থীরা? তাদের যুক্তি কি? যুক্তি হচ্ছে ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষ্যে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, আমিনা আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ (মোজাফফর) এবং নুরুল ইসলামের গণতন্ত্রী পার্টি ১৪ দলীয় মহাজোটে অংশগ্রহণ করে। মহাজোটের শরিক হওয়ার পূর্বে তারা ঐ সময়কার সর্বাধিক কার্যকর ও সম্ভাবনাময় ১১ দলীয় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের জোটে ছিলো। এরও অনেক আগে, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করলে সে সময়ের ১৫ দল, ৭ দল, ৫ দল, এমনকি জামায়াতে ইসলামিও এর বিরোধীতা করে রাস্তায় নামে। কিন্তু এরশাদ সরকার পতনের পরবর্তী ক্ষমতায় এসে উক্ত সকলেই তাদের পূর্ববর্তী ভূমিকার কথা যায় ভুলে। বরং তারা প্রত্যেকে রাজনীতির খেলা খেলতে থাকে ধর্মকেন্দ্রিক।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আবদুর রবও দলের জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেছেন এবং সোচ্চার ছিলেন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে। সেই তিনি এরশাদের একতরফা নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ বিরোধীদলের নেতা হয়েছেন; পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে হয়েছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভার সদস্য। মেনন-ইনু-বড়ুয়ারা যখন মহাজোটে উঠেন ঐ সময়েও বামপন্থী দলগুলোর বক্তব্য ছিলো, বিশেষ করে সিপিবি-বাসদের যে, ভবিষ্যতে জোটের অংশীদার কেউ ক্ষমতায় গেলে দেশ এবং জনগণের জন্য মঙ্গলজনক কি কি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকবে তার সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য লিখিত ঘোষণা থাকতে হবে। ইনু-মেনন-দিলীপরা সে কথা শুনেননি। ফলে পরিণতিও ভালো হয়নি বলে অভিযোগ আছে।

বর্তমানে মঞ্চ গঠন বিষয়েও বামপন্থী বন্ধুরা এই পয়েন্টটিতেই ঝুঁকি আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন এটা স্রেফ বিএনপির সাথে দরকষাকষি, একই যুক্তির পুনরাবৃত্তি। তারা আর ক্ষমতার পালা বদলের হাতিয়ার হতে চাচ্ছেন না। চাচ্ছেন চিরস্থায়ী সমাধান। উল্লেখ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠনের প্রাক্কালে উক্ত বিষয়গুলো আলোচনা ও বিবেচনায় আনা হয়েছিলো। সেই ঘোষণায় বলা হয়েছিল জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণকে সংগঠিত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং উক্ত লক্ষ্যে জোটের নেতৃত্ব অপরাপর প্রকৃত দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সমাবেশ ঘটিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী অসৎ রাজনৈতিক শক্তিধারার বিপরীতে থাকবে একটি সুষ্ঠু ও সৎ রাজনৈতিক বিকল্প শক্তিধারা তৈরি করার প্রচেষ্টা।

২০১৩ সালের দিকে বামপন্থী এবং গণতান্ত্রিক পতাকাবাহী দল নিয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার শরিক ছিলো ৬ টি রাজনৈতিক দল; গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)। মোর্চার ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই, ২০১৮ সালে সিপিবি-বাসদকে সাথে নিয়ে নতুনভাবে যাত্রা করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। দলগুলোর সাথে যুক্ত আছে তাদের নিজস্ব ছাত্র সংগঠন। ছাত্র রাজনীতিতে বামপন্থী এই ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা অস্বীকার্য।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের বামপন্থী দলগুলো বরাবরের মতো বিচার-বিবেচনাহীন; ঐতিহাসিকভাবেই দলগুলো উপযুক্ত সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সময়ক্ষেপণ করেছে, তাত্ত্বিক এবং মতাদর্শগত কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। ফলাফলে সফলতা গিয়ে উঠেছে অন্যের ঘরে। যেমন, সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের দিকেই যদি তাকানো যায়— আমাদের বামপন্থীরা প্রথমে গণমানুষের এই দাবিকে পাত্তাই দিলেন না। তারা এটাকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। কেউ কেউ বললেন স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামির উস্কানিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিপরীতে এই চালবাজি। অথচ কোটার অযৌক্তিক হিসাবের কারণে চাকরি প্রার্থী মেধাবী তরুণদের ভিতরে হাপিত্যেশ উঠেছিলো। বামপন্থী শক্তিগুলো তরুণদের এই ক্ষোভটাকে ধরতেই পারেননি, তারা বুঝতে পারেনি যে অতবড় বৃহৎ আন্দোলনের সৃষ্টি হয়ে যাবে। এক সময়ে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণদের একটা অংশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিয়ে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। তখন কিন্তু আমাদের বামপন্থীরা বিবৃতি দিয়ে সেই তরুণদের সাথে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। ততদিনে যা হওয়ার তা হয়ে গেল। নেতৃত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন উপকূলের অবহেলিত চরাঞ্চলের অজপাড়াগাঁয়ের খেটে খাওয়া গরিব বাবার সন্তান রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ নুরুল হক। কোটার সংস্কার চাইতে গিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাই বাতিল; বামপন্থী সংগঠনগুলোর নির্বুদ্ধিতার জন্য সাম্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। ডাকসু নির্বাচনেও একেই পরিস্থিতি আমরা দেখলাম। আমরা দেখলাম বামপন্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে আসা নেতৃত্বের সাথে আদর্শের বুলি আউড়ে জোটগত নির্বাচন করতে নারাজ। উল্টো নাক সিটকানো! সময় যখন উপেক্ষিত হলো তখন এই সংগঠনগুলোই একসাথে মিলে আবার ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করলো। তখন আর কারো গায়ে আদর্শের কাদা-পানি লাগেনি!

এই তো গেলো কেবল বর্তমান সময়ের দুটো মাত্র উদাহরণ। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে তাকালে দেখা যাবে বামপন্থীদের নেতৃত্ব কেমন? সেদিকে একটু চোখ বুলানো যাক। দুঃখজনক! সেখানেও একেই অবস্থা বলা যায়। ভৌগোলিক বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে তারা রাজনীতি নির্ধারণ করেন নাই। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি ঘোষণা করলেন। মওলানা ভাসানীর পর নতুন করে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুললেন। কিন্তু আমাদের বামপন্থীরা ৬ দফাকে পরীক্ষাগারে নিয়ে কেটেকুটে পরীক্ষা করে দেখলেন এখানে কৃষক-শ্রমিকের মুক্তির কোন কথা নাই। সুতরাং শেখ মুজিবের ৬ দফাকে তারা গুরুত্ব দিলেন না। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন একটা শব্দকে কেন্দ্র করে মস্কোপন্থী আর পিকিংপন্থী হওয়ার ভিতরে। মস্কোতে বৃষ্টি নামলে বাংলাদেশে ছাতা টানিয়ে ধরতে পারলেই যেন তারা জানে বাঁচে এমন অবস্থা। অথচ তারা ধরতে পারলেন না যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিটাই ছিলো তখন মূখ্য।

এমনকি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও বামপন্থীদের একটা গ্রুপ হাজির করলো ‘দুই কুকুরের লড়াই’ তত্ত্ব। এভাবে এ ভূখন্ডের সমস্ত বামপন্থীরা কখনোই এক বিন্দুতে মিলিত হতে পারেননি। অতীত কি বর্তমানে বিভিন্ন আকাশকুসুম তত্ত্ব নিয়েই তারা ব্যতিব্যস্ত ছিলো। ফলে তারা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন বিস্তার ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই ভূখন্ডই ছিলো সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার মতো সম্ভাব্য উর্বর ভূমি। তত্ত্বকে আশ্রয় করে তারা করেছেন মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন। কথা হচ্ছে মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এমন সব বিষয়াদি হাজির করেছেন যে সেই বিষয়গুলো ধর্মের কোন প্রতিনিধিত্ব করছে না। সত্যি বলতে সেগুলো সাম্প্রদায়িকতা ছিলো না, ছিলো সম্পত্তি দখলের কুচক্রীয় মহলের হিসাব-নিকাশ। মাঝখানে পড়ে বামপন্থীরা গণমানুষের কাছে তার চরিত্র হারালো। তারা যদি মৌলবাদ বিরোধী হৈচৈ না করে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন করতো তাহলে সমাজতন্ত্রের যেমন বিস্তার ঘটতো, আবার মৌলবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না।

প্রশ্ন উঠতে পারে রাজনীতিতে সাধারণ মানুষ ধর্মের দিকে ঝুঁকলো কেন? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না। মোটা দাগে বললে একটা সময়ে মানুষ যখন দেখলো সমাজতন্ত্রের সমাজতন্ত্রীরা তাদের মুক্তি দিতে পারছেন না, তারা আছেন দল ভাঙ্গাভাঙ্গির হিসাবে; তখন মানুষজন গণতন্ত্রের দিকে ঝুঁকলো। গণতন্ত্রেও যখন মুক্তি মিলছে না, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি এবং ভেজাল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে; তখন তারা ধর্মের দিকে ঝুঁকেছে। বাধ্য হয়ে ধর্মকে আঁকড়ে ধরেছে। আর এই সময়ে বামপন্থীরা মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন করে নিজেদের হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি ঘটিয়ে অঘোষিতভাবে ধর্মবিরোধী নাস্তিক স্বীকৃতি নিয়ে হাজির হলো, যতটা না হাজির হলো বামপন্থী সমাজতন্ত্রিক আদর্শে। ধর্মকে আঁকড়ে ধরে সেখানেও মানুষ ঠকতেছে, যোগ্য নেতৃত্ব পাচ্ছে না। আবার রাজনীতি এবং সরকারেও যাচ্ছেতাই অবস্থা! এমতাবস্থায় মানুষ যাবে কই? সমাজতন্ত্রে ফিরবে? কখনোই না। বরঞ্চ এমন একটা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ উদ্ভ্রান্তের মতো তাদের নেতৃত্ব খুঁজতেছে। আর আমাদের বামপন্থীরা সুশীল হয়ে বসে আছেন! নামসর্বস্ব কর্মসূচি করছেন। ঘর থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে বের হন যে, মিছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে ঘোষিত হলে প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগে গিয়েই সমাপ্তি ঘটবে। কেউ যদি আরেকটু সামনে আগানোর সাহস দেখায় পিছন থেকে ওর জামা টেনে ধরো!

সাম্প্রতিক ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে সাতদলীয় মঞ্চ গঠনের যে আলোচনা সামনে এসেছে সেটি কোন রাজনৈতিক জোট নয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমে আন্দোলন-সংগ্রামের একটি মঞ্চ মাত্র। তারা বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছে। বিএনপিকে এই মঞ্চে নেওয়া হবে না স্পষ্ট করেই উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। অঘোষিতভাবে পরিহার করা হয়েছে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে। তবে কেউ চাইলে যার যার জায়গা থেকে আন্দোলন করতে পারে, যুগপৎ হিসেবে রাস্তায় একত্রিত হতে পারে। বিপরীতে বাম-প্রগতিশীল দলগুলোকে আহ্বান করা হয়েছে মঞ্চের শরিক হওয়ার জন্য। আর আমাদের বামপন্থীরা জো বেঁধেছেন, এটা নাকি বিএনপি-জামাতের মঞ্চ। বলুন তো, যেখানে বিএনপিকে নেওয়া হচ্ছে না স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে, সেখানে বিএনপি আসলো কোথা থেকে! বামপন্থীদের কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে মঞ্চের নিউজ প্রমোট করা হয়েছে; কাজেই এই মঞ্চ সরকারের পাতানো খেলা। এই যখন বক্তব্য, নিজেদের ভিতরে কতটা সমন্বয়হীন পরিস্থিতি বুঝুন তাহলে! যা হোক বিগত এক দশকে বামপন্থীরা কেন প্রভাব ফেলতে পারছেন না এর কোন পর্যবেক্ষণ কি তারা করেছে? নাকি ভোট এবং ভাতের লাড়াইয়ের আহ্বান করে তারা আন্দোলন বিমুখ? আবার বাম জোটের শরিক হলেই কেন কেউ পাশাপাশি অন্য কোন মঞ্চ গঠন করতে পারবে না? আন্দোলন সংগ্রাম করতে কেন তাদের বিশেষ দুইটি দলের অনুমতির প্রয়োজন পরবে! তারা কি জোটের অভ্যন্তরে সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করেছে? নাকি বিশেষ পাতানো রাজনৈতিক খেলা খেলছেন? দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বৃহত্তর ঐক্য এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা তো বহুদূর, এমন আচরণ করলে বাম বিকল্প শক্তিই বা গঠন হবে কিভাবে! বৃহত্তর ঐক্য নাকি বাম ঐক্য এই সার্কেলেই বামপন্থীরা আটকা পড়ে গেছেন। সত্যি বলতে ভৌগোলিক রাজনীতি এবং বাস্তবতা পরিহার করে তাদের ভিতরে বাম সংকীর্ণতা এতোটাই ভর করেছে যে তারা বাম আদর্শের বাইরে আর যেতে চাচ্ছেন না।

ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়; আমাদের বামপন্থীদের হয়েছে ঠিক একেই পরিণতি। আন্দোলন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যে পূর্বের খারাপ লোকটিও সম্বিৎ ফিরে পেতে পারে এই চিন্তার নূন্যতম লেশ তাদের ভিতরে নাই। ভৌগোলিক বিচারে বাস্তবতার নিরিখে নাই কোন পর্যবেক্ষণ। আছে নেতৃত্ব জটিলতা। সেই নেতৃত্বের ভিতরে ভর করেছে সংকীর্ণতা, তত্ত্ব কপচানোর ভূত। এই ভূত জনগণের হাতে তাদের মৃত্যু দেখিয়ে ছাড়বে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অন্যকে নিয়ে সময় ব্যয় না করে সমাজতান্ত্রিক বিস্তারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিস্তার ঘটাতে সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয়। আশা করি বামপন্থীরাও সেটা করবে যখন নেতৃত্বটা আর নিজেদের কব্জায় না থাকবে তখন। বরাবরের মতোই সময়কে কেবল উপেক্ষা করা হলো। তাদের বোধোদয় হোক।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বামপন্থীদের হুঁশ ফিরবে কবে? মত-দ্বিমত সজীব ওয়াফি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর