Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরাও পারবো, জয়তু বাংলাদেশ!


১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২২:০১

 

‘বিজয়’ শব্দটি লিখতে গেলেই প্রথমে একটি দীর্ঘশ্বাস এসে জমাট বাঁধে- আমিতো বিজয় দেখিনি। বাংলাদেশ যখন সেই স্বাদ পেয়েছিল, তখন এই ভূমিতে আমি কিংবা আমরা, অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম নেই।

প্রকৃতির কাছে প্রশ্ন করি- অঙ্কুরোদগম যদি ঘটলোই, তবে বিজয়ের আগে ফুটলে কি ক্ষতি ছিল? তবে প্রবোধ দেই নিজেকেই- বাঙালির বিজয়তো কেবল একাত্তরে আসেনি। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে বাঙলাকে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল লড়াই করে। এমন অনেক লড়াইয়ে বাঙালির জয়ের ইতিহাস আছে। সেই বিজয় মূহূর্ত গুলোতেওতো আমরা উপস্থিত থাকতে পারিনি।

বাস্তবতা হলো বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের লড়াই পরম্পরায় চলে আসছে। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে লড়াই হস্তান্তরিত হয়েছে। কোন প্রজন্ম লড়া্‌ই শুরু করে দিয়েছে, পরের প্রজন্ম পৌঁছেছে বিজয়ের গন্তব্যে।
একাত্তর পরবর্তী যেই প্রজন্মে আছি আমিও, আমরা কি লড়াইয়ের বাইরে? একাত্তরের বিজয় শুধু উপভোগ বা উদযাপন করে যাচ্ছি?

আমরা যদি ছেচল্লিশ বছরের বাংলাদেশকে দেখি, দেখতে পাবো আমরা আরো তীব্র এক লড়াইর মধ্যে ঢুকে পড়েছি।
একাত্তরে আমাদের প্রতিপক্ষ চিহ্নিত ছিল। এখন রণক্ষেত্রের মানুষগুলো মুখোশ পরে আছে। ফলে চেনা কঠিন।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের যারা তাদের মাঝেই কী তারা নেই? মানবিক, সাম্য এবং অসাম্প্রদায়িক যে বাংলাদেশের স্বপ্ন তারা সেই বাংলাদেশকে কী হতে দিচ্ছে? বরং দেখা যাচ্ছে- মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়ে যাওয়া, অসাম্প্রদায়িকতা তৈরির পেছনে এদেরই মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে।

উদ্বেগের দিক হচ্ছে- এই মানুষেরা সংখ্যায় বেড়ে যাচ্ছে। তাদের জন্যই সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন সম্‌ভব হয়নি। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অঙ্কের শুভঙ্করের ফাঁকির কুশীলবও তারা।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ থেকে ২০১৭-মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এই গড় আয়ের সিংহভাগ সম্পদ বা আয় চলে গেছে কতিপয়ের পকেটে। তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনীতি থেকে প্রকৃত রাজনীতিবিদ হটানোর অভিযান চলছে। তারাই আবার ধর্মকে রাজনীতিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে।

একাত্তরে বাঙলার সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে যে নৈকট্য ছিল, সেখানে আজ দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা তৈরি করা হচ্ছে।
ছেচল্লিশ বছরে সামাজিক ক্ষেত্রে শ্রেণিগুলো ভেঙ্গেচুড়ে খান খান হয়েছে। কোন শ্রেণিই তার অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। ঠিকাদার, ডিলার বা পারমিট ব্যবসায়ীদের মধ্য দিয়ে পুঁজির যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা পরবর্তীতে ফটকাবাজীর ব্যবসা ও অবৈধ আয়ের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়েছে।

নিম্নবিত্ত উপরে উঠতে বিস্কুট দৌঁড়ের মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। মধ্যবিত্ত লাফিয়ে উচ্চবিত্তের চৌকাঠে গিয়ে দাঁড়াতে চাইছে। উচ্চবিত্ত তার বিত্তের কথা দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে পৃথিবীকে জানাতে ব্যস্ত। তাই সে কেবল দেশে বিত্ত বৈভব করে তুষ্ট থাকতে পারছেনা। বিশ্ব মানচিত্রের নানা জায়গায় নিজেকে খাপখাওয়াতে চাইছে।

আর এই ছেচল্লিশ বছরে দেশে বাম্পার ফলন হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বা ভিআইপি-র। ফলে সকলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আর গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলতে বোঝা হচ্ছে-তিনি কোন নিয়ম নীতির মধ্যে বাঁধা পড়বেননা। যা খুশি করবার অধিকার তার রয়েছে। ফলে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে, কিংবা করাই যায়নি। সুশাসন কোন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানেই কার্যকর নেই। একারণে সমাজে, রাষ্ট্রে অস্থিরতা বাড়ছে।

এই অস্থির সময়ের যোদ্ধা হিসেবে আমাদের লড়া্‌ই করতে হবে আইনের শাসনের জন্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।
আমাদের লড়াই পরিবার থেকে রাষ্ট্রকে নৈতিকতার শুদ্ধতায় বিশুদ্ধ করার। লড়াই চলছে- নিজের সংস্কৃতিতে আত্ত্ববিশ্বাসী হওয়ারও।

বিজ্ঞাপন

এই লড়াই ছোট পরিসরের নয়। একরাত্রি বা এক প্রজন্মে এই লড়াইয়ের অবসান হবেনা। পর্বে পর্বে বিভক্ত এর রণক্ষেত্র।
সেই বিভক্তি থেকে সকলকে এক রণক্ষেত্রে এনে ঐক্য ও সামষ্টিক লড়াইয়ের ময়দানে হাজির করাটাই এই সময়ের চ্যালেঞ্জ।
একাত্তরে সামষ্টিক লড়াই সম্ভব হয়েছিল যেমন, আমরাও পারবো বাংলাদেশের সকল ভূমিপুত্রকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ঐক্যের ডাকের অপেক্ষায় কোটি তরুণ যোদ্ধা। খেয়াল করে দেখুন সকলেই ময়দান মুখি। লড়াই চলছে। লড়াই চলবে। আমরাও পারবো। জয়তু বাংলাদেশ।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর