বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কারিগর হয়ে উঠুক তরুণ প্রজন্ম
১ আগস্ট ২০২২ ১৮:২৮
১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বিশ্বের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল। বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এই মাসেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই কলংকজনক অধ্যায়ের আগে বাঙালী জাতির মহানায়ক হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের মুখপত্র হিসেবে। আর এই সফলতায় ভীত হয়ে একশ্রেণির বিপদগামীর নীলনকশায় হারাতে হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রায় সবাইকে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর আদর্শকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জেগে উঠেছে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জাতির জনকের আদর্শকে লালনের মাধ্যমে।
এই তরুণ প্রজন্মের দায় আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ প্রতিষ্ঠার। যে বঙ্গবন্ধু তার জীবনের প্রতিটি পর্বে অন্যায়, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা ও স্বর্থপরতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন, সেটিকে মনে প্রাণে ধারণ করা এই প্রাত্যাহিক জীবনে প্রয়োগ করা এই প্রজন্মের প্রত্যেকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
বাঙালি জাতির কাছে সবচেয়ে গৌরবৌজ্জ্বল ঘটনা হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যতদিন পৃথিবীর বুকে এই বাংলাদেশ এবং বাঙালি থাকবে ততদির থাকবে এই মুক্তিযেুদ্ধের বীরত্ব ইতিহাস। আর যতদিন এই ইতিহাস থাকবে ততদিন থাকবে জাতির জনক সবার হৃদয়ে। কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ড স্থান পেতনা।
একজন নেতা কিভাবে একটি জাতিকে, একটি দেশকে একত্রিত করতে পারেন, একই ছাতার নিচে, একই দাবিতে সোচ্চার করতে পারেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম দ্বিতীয় আর নজির নেই। আর সেজন্যই বঙ্গবন্ধু আদর্শ তরুণ প্রজন্মকে অনুরণিত করে, প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে, এগিয়ে যাবার শক্তি যোগায়।
জাতির জনকের ভাষনগুলো বর্তমান প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদী হতে হয়, কিভাবে মাথানত না করে অবিচল থাকতে হয়, কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এই মুক্তির সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ বাঙালি জাতির অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, ততদিনই থাকবে এই মুক্তির সংগ্রাম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যেভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড যেভাবে তরুণ সমাজের মধ্যে রক্তক্ষরণ তৈরী করে, সেটাকে শক্তিতে রূপান্তর করে যেতে হবে এগিয়ে, জাতির জনকের আদর্শকে লালনের মধ্য দিয়ে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের তরুণ হতে হলে মানসিকভাবে আমাদের সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। মানসিক দৃঢ়তাই নিয়ে যাবে মুক্তির সংগ্রামে নিজেদের সামিল করতে। প্রজন্ম যখন নিজের মধ্যে আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখবে তখনই জাতির জনকের আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথ প্রসারিত হবে।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি বাঙালি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন একটি ঐক্যবদ্ধ, দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। দেশের প্রতি ছিল বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন আবেগ, অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা। সেই গুণাবলী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধাবমান না হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয়ে উঠবেনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সম্মূখসারিতে এসে কাজ করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে, তাহলেই একটি শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সহজতর হবে।
ইতিহাস বিকৃতি ও নানা কূটকৌশলে হত্যাকারী ও তাদের বিদেশি দোসররা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে চেয়েছিল। একটি প্রজন্মকে তারা বিভ্রান্ত করতে কিছুটা সফলও হয়েছিল। কিন্তু এদেশের তরুণরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বার বার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে সেই প্রমাণ দিয়েছে। এইসব ষড়যন্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করতে এই প্রজন্ম রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে জনগণের সংগঠন হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ। যেখানে তরুণদের ভূমিকা ছিল অনেক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত হয়ে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলী ধারণ করে একটি পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের মহান দীক্ষায় এগিয়ে যেতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রাখা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সমাজ বিনির্মানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে কেউ কখনই যাতে বিকৃতির মোড়কে আবদ্ধ করতে না পারে সেই বিষয়ে কাজ করতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। বাঙালি জাতি গৌরবগাঁথা ইতিহাস সকলের কাছে তুলে ধরার মহান কাজটি করতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। ইতিহাস বিকৃতির সকল চেষ্টাকেই প্রতিহত করার দৃঢ় সংকল্প রাখতে হবে প্রজন্মের এই প্রতিনিধিদের।
বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন করতে চেয়েছিলেন। তার বিভিন্নি লেখনিতে তা স্পষ্ট হয়। তিনি বলেছেন- নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, অভয় মানো। তিনি তরুণদের আরো বলছেন- যেখানে অন্যায়, অবিচার সেখানে প্রতিবাদ করো; মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষমতার এবং স্বার্থের ঘর বড় করে, তাদের প্রতিরোধ করো। আর সেজন্যেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বঙ্গবন্ধুর জীবনকে বিশ্লেষণ করতে হবে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। দেশ ও দশের জন্য ইতিবাচক কিছু করে যেতে হবে তরুণ সমাজকেই।
একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বার্থপরতা, বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্নীতিপরায়ণতা- এ সকল নেতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। সকল ইতিবাচক, সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু এখন আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার কর্ম ও সংগ্রাম আমাদের পাথেয়। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান হয়ে এই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কারিগর হয়ে উঠুক। দেশকে বিশ্বের বুকে একটি একটি রোল মডেল হিসেবে স্থান করে নিতে তরুণ প্রজন্ম অবদান রাখবে এটাই শোকের মাসের প্রত্যাশা।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কারিগর হয়ে উঠুক তরুণ প্রজন্ম মত-দ্বিমত সফিউল আযম