‘ভয়ের মাঝে অভয় বাজাও’
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:০২
এক.
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন করোনা উত্তর পৃথিবী আবার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষের এই চেষ্টার সামনে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘যুদ্ধ’। বিশ্ববাজারে যুদ্ধবিধ্বস্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জের টানতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। সঙ্গতভাবেই করোনার কারণে প্রগতি লেখক সংঘের জাতীয় সম্মেলনটিও অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে।
করোনাকালে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিতে সে দুরাবস্থা এখনও বহাল আছে। মুক্তচিন্তা আর বাকস্বাধীনতার পথের বাধাগুলো দূর হয়নি। বরং নানা কালাকানুনের নামে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থেকে মানুষের মুক্তচিন্তার অধিকারও হরণ করা হচ্ছে। ভীষণভাবে বৈরী এক রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় আমরা বসবাস করছি। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের শিকার বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের অন্যায় কারাবাস বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিনা দোষে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে বন্দী থাকা রসরাজ, ঝুমন দাসসহ অনেকের অবস্থাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি জোরালো সর্বব্যাপী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আর সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই দিনব্যাপী প্রগতির জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে—‘ভয়ের মাঝে অভয় বাজাও/সাহসী প্রাণে চিত্ত জাগাও’। বর্তমান বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি যেন এবারের জাতীয় সম্মেলনের স্লোগানটিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
দুই.
বর্তমান সময়ে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির মুখোশ খুলে গেছে। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে বৈষম্য, সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট। উগ্র জাতিবাদী, বর্ণবাদী, সাম্প্রদায়িক বয়ানের নামে, সারাবিশ্বে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নতুন চেহারায় হাজির হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই সমাজের ব্যাপকতর অংশকে শাসন করে না, বরং রাষ্ট্রের বাইরেও নাগরিক সমাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নাগরিক সমাজে তার মতাদর্শিক আধিপত্য বা হেজিমনি কায়েম করে থাকে। আধিপত্য কায়েম করার লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠী সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও অনুগত বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার করে এবং তাদের মাধ্যমে এক ধরনের ‘সামাজিক সম্মতি’ আদায় করে নেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের বহু লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিককর্মী সচেতন কিংবা অবচেতনে সেই সম্মতি উৎপাদন প্রক্রিয়ার অস্ত্র হয়ে উঠছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে প্রগতি লেখক সংঘ তার বিপরীতে গণমানুষের পক্ষের মতাদর্শিক আধিপত্য স্থাপন করতে চায়।
তিন.
সাহিত্যে গণমানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রগতি লেখক সংঘের তার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই করে আসছে। পঞ্চাশ-ষাট দশকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে প্রগতি লেখক সংঘের সঙ্গে যুক্ত থাকা অগ্রসর কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকরা গৌরবের ভূমিকা পালন করেছেন। তারা এবং তাদের উত্তরাধিকাররা এখনও সক্রিয়।
ফ্যাসিস্ট বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে সংগঠিত করতে বিশ্বের খ্যাতিমান শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হন ১৯৩৫ সালের ২১ জুন, প্যারিসে। এরই ধারাবাহিকতায় উজ্জীবিত হয় ভারতবর্ষের লেখক-শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা।
ভারতবর্ষে প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৩৬ সালে লখনৌয়ে। ওই বছর ১০ এপ্রিল জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন স্থলের পাশে সর্বভারতীয় এক সাহিত্যিক-সম্মেলনের মাধ্যমে মুন্সী প্রেমচন্দ-এর সভাপতিত্বে গঠিত হলো নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ। তৎকালে বামপন্থী রূপে পরিচিত কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহরুরও ছিল পরোক্ষ উৎসাহ। সদ্য ইউরোপ-প্রত্যাগত সাজ্জাদ জহীর, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়রা ছিলেন এর নেতৃত্বে। এই সংঘ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলনের যে সূচনা হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল পরাধীন দেশে এবং পরবর্তীতেও এর প্রভাব বিভিন্ন পর্যায়ে অনুঘটকের ভূমিকায় দেদীপ্যমান হয়ে থাকে।
প্রগতি লেখক সংঘের ঘোষণার কিছু অংশ, যা আজও প্রাসঙ্গিক, তা উল্লেখ করছি— ‘আমাদের দেশে নানা মূর্তিতে যে প্রগতিদ্রোহ আজ মাথা তুলেছে তাকে আমরা সহ্য করব না।… যা কিছু আমাদের নিশ্চেষ্টতা, অকর্মণ্যতা, যুক্তিহীনতার দিকে টানে, তাকে আমরা প্রগতিবিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করি। যা কিছু আমাদের বিচার-বুদ্ধিকে উদ্বুদ্ধ করে, সমাজব্যবস্থাকে যুক্তিসঙ্গতভাবে পরীক্ষা করে, আমাদের কর্মিষ্ঠ, শৃঙ্খলাপটু, সমাজের রূপান্তরক্ষম করে, তাকে আমরা প্রগতিশীল বলে গ্রহণ করব।’
১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘ’। ১৯৩৯ সালে ঢাকা জেলা প্রগতি লেখক সংঘের একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রণেশ দাশগুপ্ত, সোমেন চন্দ, কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, অমৃতকুমার দত্ত, জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত, সতীশচন্দ্র পাকড়াশী প্রমুখ। দক্ষিণ মৈশুন্ডির ‘প্রগতি পাঠাগার’ ছিল সংঘের কার্যালয়। সেখানে সংঘের নিয়মিত সাহিত্যের বৈঠক বসত। বৈঠকে পঠিত প্রবন্ধের একটি সংকলন ‘ক্রান্তি’ ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়। ওই বছরই গেন্ডারিয়া হাইস্কুল মাঠে প্রগতি লেখক সংঘ প্রথম সম্মেলন করে। কাজী আবদুল ওদুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদক এবং সোমেন চন্দ সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘ অবশ্য ১৯৪২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতায় তরুণ কমিউনিস্ট লেখক সোমেন চন্দ-র স্মরণসভা থেকে নাম বদল করে ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘে পরিণত হয়। লেখক সোমেন চন্দ ঢাকার রাজপথে নির্মমভাবে নিহত হন ওই বছর ৮ মার্চ। এর আগের বছর জ্যোতি বসু ও স্নেহাংশুকান্ত আচার্যের উদ্যোগে গঠিত হয় সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি। ১৯৪৩-এ প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ। সারা ভারতজুড়ে সৃষ্টি হয় এক মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিজাত জাগরণের। যুদ্ধ, মন্বন্তর, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রগতি লেখক সংঘ ছিল এই সাংস্কৃতিক জাগরণের মূল ও পথ-নির্দেশক শক্তি।
২০০৮ সালে দেশের কিছু প্রগতিশীল লেখকের প্রচেষ্টায় ‘বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ’ পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে। নব উদ্যমে চতুর্দশ বছরে দাঁড়িয়ে স্মরণ করতে হয় সোমেন চন্দ, রনেশ দাশ গুপ্ত, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, কবি হাসান হাফিজুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন, আলাউদ্দিন আল আজাদ, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অজিত গুহ, সরদার ফজলুল করিম, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে।
চার.
প্রগতি লেখক সংঘ একটি সাহিত্য সংগঠন। প্রগতি লেখক সংঘ কি শুধুমাত্র একটি সাহিত্য সংগঠন? প্রগতি লেখক সংঘের ইতিহাস তা বলে না। প্রগতি লেখক সংঘ কারা করেছে সেসব বিপ্লবী লেখকদের তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে— এ সংগঠন শুধুমাত্র কবিতা বা গল্প লিখে কাজ শেষ করার কোনো সংগঠন নয়। এ সংগঠনের পেছনে লেখকদের দায় আছে-দায়িত্ব আছে, আছে মতাদর্শ ও দার্শনিক চেতনা।
এই দার্শনিক চেতনাটা কি? তাও বোধকরি লেখকদের তালিকা দেখে যে কারো বোঝা সম্ভব। প্রগতির লেখকরা কেউ নিছক সাহিত্যচর্চা করেননি, তারা সাহিত্যে দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে বড় করে দেখেছেন। সাহিত্যের দর্শন যেমন আছে, তেমন দায়ও আছে। সাহিত্যের এই দায়বদ্ধতা যেসব লেখক শিল্পীদের স্পর্শ করে তারা সেভাবে সাহিত্যের দিক বলয় গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে প্রকাশের ভাষা ও মাধ্যম আলাদা হলেও দায়বদ্ধতার বিষয়টি একদম এক। যে কারণে আমরা দেখি সোমেন চন্দ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় যেমন প্রতিবাদের ভাষা রয়েছে, রয়েছে বেনিয়া সমাজের চিত্র, আবার রয়েছে সমাজের শোষিত নিষ্পেষিত মানুষদের টনটনে ব্যথার সুর। এখন দেখবার বিষয় হল, ‘পদ্মানদীর মাঝি’র কুবেরদের প্রতি আমরা কতোটা দায়বদ্ধতা অনুভব করি। আবার ‘ইঁদুর’ গল্পে একটি দরিদ্র পরিবারকে ইঁদুর যেভাবে বিপন্ন করে তোলে বাস্তবিকপক্ষে সে চিত্র আমাদের পীড়া দেয়। শিল্পের দায়বদ্ধতার বিষয়টি এখানেই। শিল্পের রূপ এমনই যে আমাদেরকে পরাজয়ে হাসতে শেখায়— ‘জীবনে হয়ত কিছুই হতে পারি না, তবু বেঁচে থাকতে আমাদের ভালো লাগে’। আমাদের সংগ্রামে উজ্জীবিত করে বা রাজনীতিক সংগ্রামে আমাদের লেখা বিপ্লবী স্লোগানের পরিপূরক হয়। জীবনের এই দায়বদ্ধ লেখক শিল্পীদের সংগঠন প্রগতি লেখক সংঘ। প্রগতি লেখক সংঘের ঘোষণাপত্রের কথা শুনলে বোঝা যাবে তারা কারা, কী চায়? কেন চায়? সেটা স্পষ্ট হবে।
সাহিত্যে চিরকালের লড়াই হচ্ছে মানুষকে সংঘবদ্ধ করা। অপরদিকে বর্তমান সময়ে পুঁজিবাদ আমাদের একে অন্যের থেকে আলাদা করে দিচ্ছে, কেননা তা বাস্তবতা। সাহিত্যের কাজ বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। আর বাস্তবতা কেবল দৃশ্যমান নয়, মানুষের স্বপ্ন আর আকাঙক্ষাও। সেগুলোও দৃশ্যমান বাস্তবতার থেকে কম বাস্তবতা নয়।
পাঁচ.
গণসংগীতের সুরে মানুষের অধিকারের কথা, নাটকের সংলাপে মানবমুক্তির ইশতেহার, কবিতার শাণিত পঙক্তিমালায় মনুষ্যত্বের অনির্বাণ দ্রোহ, সাহিত্যের পান্ডুলিপিতে সাম্যের শব্দ-বাক্য থেকে জন্ম নিয়েছিল প্রগতি।
বিশ্বব্যাপী প্রগতি লেখক আন্দোলনের জন্ম হয়েছিলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। যেকোনো ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতার লড়াই, সমাজে ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির লড়াই, মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ গড়বার লড়াইয়ে প্রগতি লেখক সংঘ তাই অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতিটি মানুষের আদর্শ, ত্যাগ আর সংগ্রামের ইতিহাস প্রগতি লেখক সংঘের কর্মী হিসেবে আমাদের প্রতিদিনের পাঠ্য, আমাদের নিত্যপ্রেরণা। আজ যখন মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে কারারুদ্ধ করে নেমে আসে সাম্প্রদায়িক হায়েনাদের বিষাক্ত পদচারণ, যখন ঘরে-বাইরে নারীর ওপর চলে নির্মম নির্যাতন; তখন সাহিত্যে গণমানসে ঐক্যই হয়ে উঠতে পারে মূল শক্তি। আর সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ সাহিত্য আন্দোলন। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন আমাদের পূর্বসূরিরা, অনাবাদে তা আজ বেহাত হতে চলেছে। প্রতিমুহূর্তে আমাদের সাহিত্যের নানা উৎসবের ওপর নেমে আসছে সাম্প্রদায়িক ফতোয়া। সাম্রাজ্যবাদের অন্ধকার আগ্রাসন। রাষ্ট্র যেন কখনও কখনও তা দেখেও দেখছে না। আজ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে যোজন যোজন ফারাক। অথচ আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সেই দিনগুলোয় রাজনীতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি হাতে হাত রেখে পথ চলেছে। এই সংস্কৃতিবিবর্জিত রাজনীতি তাই হয়ে উঠেছে কতোগুলো দানবের পিঠ বাঁচানোর পথ আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবিহীন সংস্কৃতি কেবল পরিবেশনায় সীমাবদ্ধ হয়ে থাকছে।
প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন চলছে আজ। উদ্বোধন হয়েছে আজ শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, সকাল এগারটায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে। এবারের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন এমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রগতি লেখক সংঘ বিশ্বাস করে, যে মৌল চেতনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার প্রধান স্তম্ভই হলো অসাম্প্রদায়িক ও শোষণহীন বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়েও সে লক্ষ্য কার্যকর নয়। বেনিয়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমাদের হয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। এ সামঞ্জস্যহীন উন্নয়নে আদতে মুখ থুবড়ে পড়ছে মানুষের মূল্যবোধ, রাজনীতি হয়ে পড়ছে আদর্শহীন আর সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে তার প্রকৃত অর্থ। পূর্বসূরীদের আঁকা পদচিহ্ন ধরেই সংস্কৃতির সেই গণমুখী অর্থের কাছে ফিরে যেতে হবে। এ উপলব্ধিটুকুই প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের মূল প্রেরণা।
আমরা যখন লেখকদের সংঘ করি, তখন এই প্রশ্নটা আমাদের মনের মধ্যে থাকে যে লেখা কী সংঘবদ্ধভাবে সৃষ্টি করা যায়? প্রত্যেক লেখক তো একজন মানুষ, বিশিষ্ট মানুষ এবং তিনিই লেখেন। কিন্তু সংঘ ছাড়া, সম্মিলিত হওয়া ছাড়া লেখা সম্ভব নয়—এটাও সত্য। এই যে সংঘবদ্ধ হওয়া, এর প্রয়োজন আছে অনেকদিক থেকে। একটা দিক হচ্ছে লেখকদের যে অধিকার, লেখকদের যে স্বাধীনতা, মত প্রকাশের ভাবনাগুলো —সেগুলো সংঘবদ্ধ না হলে অর্জন করা এবং রক্ষা করা সম্ভব নয়। আরেকটা দিক হচ্ছে আমরা পরস্পরে সংঘবদ্ধ হয়ে যাব, সম্মিলিত হয়ে যাব, তবেই আমারা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারব, লেখকদের সমৃদ্ধ করতে পারব। প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক ধারার বিরুদ্ধে সমাজের দায়বদ্ধ লেখক গোষ্ঠীর যে গণসংগ্রাম তৈরি হচ্ছে-মননশীলতার মধ্য দিয়ে এসব দেশ, মাটি, মনুষ্যত্ব বিরোধী অপশক্তি নির্মূল হবেই।
তথ্যসূত্র : প্রগতি লেখক সংঘ ও লেখক-শিল্পীদের ধারাবাহিক ভূমিকা, গোলাম কিবরিযা পিনু এবং প্রগতি লেখক সংঘ ও লেখকের দায়, দীপংকর গৌতম
লেখক: সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদ
সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই