শেখ রেহানা, এক নিভৃতচারী মহীয়সী
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:০৮
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে, আমাদের ছোট আপা শেখ রেহানার ৬৭তম জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ রেহানা জন্মগ্রহণ করেন। এক আশ্চর্য নিভৃত, আড়ালচারী জীবন বেছে নিয়েছেন তিনি। বিশাল পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয় থাকার পরও পালন করেছেন ঐতিহাসিক দায়িত্ব। শেখ রেহানা, আপন বলয়ে যিনি নিজেকে গড়েছেন সম্পূর্ণ আলাদাভাবে। আশ্চর্য নির্মোহ স্বভাবগুণে বাইরের কোলাহল থেকে সব সময় নিজেকে বিমুক্ত রেখেছেন।
বাবা রাষ্ট্রপ্রধান কিন্তু তার ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে দেখে তা বোঝার উপায় নাই। বাবার পতাকাবাহী গাড়িতে করে কখনও স্কুলে আসেননি। শেখ রেহানার মেট্রিক পরীক্ষা সময় পরীক্ষাকেন্দ্র ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমার অফিসে যাওয়ার পথেই পরীক্ষাকেন্দ্র, তোকে আমি নামিয়ে দেবো। শেখ রেহানা তাতে নারাজ। তিনি বাবার গাড়িতে করে পরীক্ষা দিতে যাবেন না। সে বছর মেট্রিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় মেয়েদের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেন তিনি। অত্যান্ত মেধাবী শেখ রেহানাকে নিয়ে ছিল সবার আশা, ইন্টারমিডিয়েটে আরও ভালো করবেন। প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন সেভাবে। কিন্তু তার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেওয়া হলনা বাংলাদেশে। তার আগেই ১৫ আগস্টের কালরাতে বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন নিহত হন। সে সময় তিনি বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। শেখ রেহানা এখন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন। তবে বিভিন্ন সময় তিনি জন্মভূমি বাংলাদেশেও অবস্থান করেন।
১৫ আগস্টের কালরাতের পর জীবনের এক একটি ধাপ পেরিয়ে আসার পথটি মোটেও সহজ ছিল না শেখ রেহানার জন্য। বলতে গেলে জীবনের শুরুতেই জীবনযুদ্ধের সৈনিক তিনি। কৈশোরে হারিয়েছেন মা-বাবা-ভাইদের। হারিয়েছেন প্রিয় স্বদেশের আশ্রয়। আশ্রয়হীন হয়ে দেশে দেশে ঘুরেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল না কোথাও। দীর্ঘদিন দুই বোন ভারতে থাকতে বাধ্য হন। পরে লন্ডনে স্থায়ী হন শেখ রেহানা। বড়বোন শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে বাবার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে বলে, নেপথ্যে বড়বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিতে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন তার দুই সন্তান জয় ও পুতুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শেখ রেহানা। সংসারের চাপে ভুলে যাননি রাজনৈতিক দায়িত্ব।
১৯৭৯ সালের ১০ মে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত সর্ব ইউরোপিয়ান বাকশালের সম্মেলনে বিশ্ববাসীর কাছে শেখ রেহানাই সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের কলঙ্কজনক ও অমানবিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন শেখ রেহানা।
শেখ রেহানা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে চলছেন। জনহিতৈষী কাজে সবসময়ই ভূমিকা রেখে চলছেন শেখ রেহানা। একাধিকবার সুযোগ আসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার। কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাকে ছুঁতে পারেনি। বড়বোন চারবার প্রধানমন্ত্রী; মেয়ে ব্রিটেনের সংসদ সদস্য; তারপরেও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে সাধারণের কাতারে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি সাধারণ থেকে, অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শেখ রেহানা, ছোট আপার জন্মদিনে তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। দেশে ও প্রবাসে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস যুগিয়ে যান আপনি। বাংলার মানুষ আপনাকে সব সময় শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, জার্মান আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান মত-দ্বিমত শেখ রেহানা- এক নিভৃতচারী মহীয়সী