ঢাকা ব্রাহ্ম বিদ্যালয় থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
১৭ অক্টোবর ২০২২ ১৭:২০
সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে প্রগতিশীলধারায় পরিচালিত করার লক্ষ্যে আজ থেকে ১৫৯ বছর ২ মাস ১৫ দিন পূর্বে ঢাকা ব্রাহ্ম বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করেছিল যা আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির জন্য বাংলা ১২৬৯ সালের ১২ ফাল্গুন, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘ঢাকা প্রকাশ’-এ যে বিজ্ঞাপনটি ছাপা হয়েছিল সেটি ছিল নিম্নরূপ:
“এতদ্বারা জ্ঞাপন করা যাইতেছে ঢাকা আরমানিটোলা ব্রাহ্মসমাজ গৃহে ১২ই ফাল্গুন একটি ব্রাহ্মবিদ্যালয় সংস্থাপিত হইতেছে। এই বিদ্যালয়ে বাঙ্গালা ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার পাঠ্যপুস্তকাদি অর্থাৎ অন্যান্য বাঙ্গালা বিদ্যালয়ে যে যে বিষয়ের শিক্ষা হইয়া থাকে তাহা এবং তদতিরিক্ত ব্রাহ্মধর্ম্ম ও ধর্মনীতি শিক্ষা দেওয়া হইবে। অত্রত্য ছাত্রেরও ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারিবেন। পঠনেচ্ছুগণ আরমানিটোলা ব্রাহ্মসমাজ গৃহে উপস্থিত হইলে এই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিতে পারিবেন। সকল জাতীয় ছাত্রেরই ইহাতে প্রবেশাধিকার আছে। ছাত্রদিগের নিকট হইতে বেতন লওয়া হইবে না। ১৩ই ফাল্গুন ১২৬৯।” [সূত্র : শ্রীবঙ্কবিহারী কর(২০১৪).পূর্ব্ব বাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজের ইতিবৃত্ত.পৃষ্ঠা৩০]
বিজ্ঞাপনটির নীচে শ্রী দীননাথ সেন, সম্পাদক এবং শ্রীগোবিন্দপ্রসাদ রায়, শিক্ষক এই দু’টি নাম লেখা ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের পিছনের ঘটনা কী ছিল? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা লগ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের অগ্রসর চিন্তা-চেতনা এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চিন্তা-চেতনার মধ্যে কোন মিল আছে কী না তা উপলব্ধি করার জন্য এই প্রশ্নটির উত্তর জানা দরকার।
১৮৬৩ সালে স্থাপিত ঢাকা ব্রাহ্মস্কুল প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে আছে ১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত ‘ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুল’ যা পরবর্তীকালে ১৮৪১ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজে এবং আরো পরে ঢাকা কলেজে রূপান্তরিত হয়েছিল। বাংলাপিডিয়ায় প্রকাশিত ঢাকা কলেজ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ্ শরীফ উদ্দীন আহমদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুলটির জন্য সদরঘাটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পুরানো দোতলা বানিজ্য কুঠি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা ঢাকা শহরের সামাজিক ও সাস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক নবযুগের সূচনা করে। ১৮৪১ সালে স্কুলটি কলেজের মর্যাদায় উন্নীত হয় এবং এর নাম হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর কোলকাতার বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল সদরঘাটে কলেজের মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৪৪ সালে।
ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে ছিল প্রধানত মুসলমান, হিন্দু, আর্মেনীয় এবং পর্তুগীজ। ব্যবসায়িক কারণে তখন ঢাকায় অনেক আর্মেনীয় ও পর্তুগীজ বাস করতেন। ১৮৭৩ সালে স্থান সঙ্কুলানের অভাবে ভিক্টোরিয়া পার্কের পূর্বে (লক্ষীবাজারে) একটি প্রশস্ত দালানে কলেজটি সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আবার ১৯০৮ সালে বর্তমান কার্জন হলে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজকে ছোটলাটের বাসভবনে (বর্তমান ল’ কমিশন এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) স্থানান্তর করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আহত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জন্য ভবনটি ছেড়ে দিতে হয় এবং আবার ঢাকা কলেজ লক্ষীবাজারে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ বর্তমান মিরপুর রোডের জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। ১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে ১৮৭৩ সাল এর মধ্যবর্তী সময়ে ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুলটি ঢাকা কলেজ নামে আত্ম প্রকাশ করে। ঠিক এরই মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের নৈতিক আচরণগত পরিবর্তণে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৮৬৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের পরিচালনাধীন ব্রাহ্মগণ ব্রাহ্মবিদ্যালয় নামে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়টিই কালের বিবর্তনের ধারায় বর্তমানের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
শ্রীবঙ্কবিহারী কর কর্তৃক লিখিত এবং বাংলাদেশ ব্রাহ্মসমাজ কর্তৃক প্রকাশিত “পূর্ব্ব বাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজের ইতিবৃত্ত” শীর্ষক গ্রন্থের ৩০ পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে ‘ঢাকার ছাত্রগণের চরিত্র ও ধর্ম্মোন্নতি সম্বন্ধে কি করিতে পারেন তাহা (ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম সদস্য) ব্রজসুন্দর মিত্র দূর হতেও সর্বদা চিন্তা করিতেন।’ ঢাকার ছাত্র বলতে মূলত তখনকার সদরঘাটস্থ ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজের ছাত্রদের কথা বলা হচ্ছে। ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের আর একজন প্রভাবশালী সদস্য দীননাথ সেন ‘ছাত্রগণের মধ্যে দুর্নীতির প্রবল স্রোত দেখিয়া তাহাদের চরিত্র অনুসন্ধান করিয়া তাহা সংশোধনের চেষ্টা করিতেন।. . .ছাত্রদের চরিত্রের অনুসন্ধানের ফলে একবার কতগুলি দুশ্চরিত্র ছাত্রের এফ.এ.পরীক্ষা বন্ধ হইয়াছিল।’ যদিও তখন পোগোজ স্কুল ছিল কিন্তু স্কুলের তুলনায় কলেজের বয়স্ক ছাত্রদের মধ্যে দুর্নীতির বিষয়টি সেসময়ের সমাজ সংস্কারক ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের নজরে এসেছিল। এই ছাত্ররা ছিল সেসময়ে সদরঘাটে অবস্থিত ঢাকা কলেজের ছাত্র। ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ব্রেনেন্ড সাহেব ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করেছিলেন। ধারণা করা যায় তখন ঢাকা কলেজের শিক্ষা কারিক্যুলামে নৈতিক বা ধর্মশিক্ষার কোন কিছু ছিল না। “ব্রাহ্ম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা” শিরোনামে শ্রী বঙ্কবিহারী কর লিখেছেন, “. . .অনুসন্ধানের ফলে একবার কতগুলি দুশ্চরিত্র ছাত্রের এফ.এ. পরীক্ষা বন্ধ হইয়া যায়।” ‘ছাত্রগণের মধ্যে দুর্নীতির স্রোত দেখিয়া দীননাথ সেন তাহাদের চরিত্রের সংশোধনের উপায় করিতেন। কলেজের অধ্যক্ষ ব্রেনেন্ড সাহেব একাজে তাকে সহায়তা দেওয়ার ফলে তা ফলপ্রসূ হয়।’
বস্তুতপক্ষে তৎকালীন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ব্রেনেন্ড সাহেব এব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। দীননাথ সেন এরপর সাধারণ শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষার প্রবর্তনে প্রয়াসী হন। ব্রজসুন্দর মিত্রের সাথে এবিষয়ে পরামর্শ করে এজন্য তারা একটি বিদ্যালয় স্থাপনে উদ্যোগী হন। বিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্রজসুন্দর বাবু মাসিক ৩০ টাকা সাহায্য করতে ও বিদ্যালয়ের ব্যবহারের জন্য আরমানিটোলার গৃহের নীচের কয়েকটি ঘর ছেড়ে দিতে প্রস্তুত হন। এভাবে ঢাকা ব্রাহ্মস্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর বাংলা ১২৬৯ সালের ১২ ফাল্গুন অনুযায়ী ১৮৬৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের পরিচালনাধীন অবৈতনিক ব্রাহ্ম বিদ্যালয় স্থাপিত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরদিন তৎকালে “ঢাকা প্রকাশ” নামের সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা প্রকাশ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের পর্যবেক্ষণ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলছেন, ১৮৬১ সালের ৭ মার্চ বাবু বাজারের “বাঙ্গালা যন্ত্র” থেকে ঢাকা প্রকাশ প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকাটি ছিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র। ‘ঢাকা প্রকাশ’ ১০০ বছর যাত ঢাকা শহরের প্রভাবশালী সংবাদপত্র হিসাবে প্রকাশিত হত। মুনতাসির মামুনের মতে, “ঢাকাসহ পূর্ব বঙ্গের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস ‘ঢাকা প্রকাশ’ ছাড়া রচনা করা সম্ভব নয়।”
১৮৬৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ঢাকা ব্রাহ্মস্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্যকল্পে বাঙ্গালা গভর্নমেন্ট মাসিক ২৩ টাকা সাহায্য মঞ্জুর করেন। ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের সম্মানিত সদস্য ব্রজসুন্দর মিত্র ১০০ টাকা, অভয়কুমার দত্ত ৫০ টাকা, রামকুমার বসু ৩৬ টাকা, গঙ্গাচরণ সোম ১৮ টাকা, কালীকান্ত মুখোপাধ্যয় ১৫ টাকা, দীননাথ সেন ১৫ টাকা, রামশঙ্কর সেন ২৪ টাকা, হারাণচন্দ্র ৫ টাকা, প্রভাবচন্দ্র সেন ৫ টাকা, অক্ষয়কুমার সেন ৩ টাকা। কালক্রমে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ঢাকা ব্রাহ্মস্কুল ক্রমান্বয়ে আরও উন্নতি করে। পরবর্তীকালে এখানে এন্ট্রেন্স পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে প্রায় দশ বছর চলার পর এটি ব্রাহ্মগণের হস্তচ্যুত হয়ে জগন্নাথ স্কুলে পরিণত হয়। ব্রাহ্মগণের হস্তচ্যুত হওয়ার কারণ সম্ভবত ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল। এসম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। এসময় বালিয়াটির জমিদার জগন্নাথ বাবুর মধ্যম পুত্র কিশোরীবাবু পিতার নামে বিদ্যালয়ের নামকরণে ইচ্ছুক এবং বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য অগ্রসর হওয়ায় পরিচালকগণ সম্মত হন। পরে কলেজ বিভাগ খুললে জগন্নাথ কলেজ নাম হয়। শিক্ষা বিভাগ পরে কলেজ হতে স্কুল স্বতন্ত্র করলে কিশোরীবাবুর নামে কিশোরী লাল জুবিলি স্কুল হয় (কর ২০১৪, ৫৬)। যা বর্তমানে সদরঘাটের নিকট কে এল জুবিলি স্কুল নামে পরিচিত।
ইতোমধ্যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়েছে। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জগন্নাথ কলেজে ক্রমান্বয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। জগন্নাথ কলেজ এভাবে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে দীর্ঘকাল চলার পর এক পর্যায়ে ২০০৫ সালে এটি বিশ^বিদ্যালয় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় আইন ২০০৫ এর ২৭ এর ৪ ধারায় সরকারি অর্থায়নে পাঁচ বছর চলার পর নিজস্ব আয় থেকে ব্যায় করার বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। সেই বিধানটি মূলত বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংযোজিত করেছিল ২০০৫ সালের বিএনপি-জামাত সরকার। কিন্তু দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর নির্বাচনে জয় লাভের পর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে। ২০১১ সালের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭(৪) ধারা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে আমরা কয়েকজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি উত্থাপন করার পরই তিনি সাথে সাথে এই ধারাটি বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমদ এসময় ছিলেন প্রক্টর এবং ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। যারা এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীয় সাথে সাক্ষাতের সময় গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমদ, প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী, প্রফেসর ড. আশরাফ উল আলম, প্রফেসর ড. জাকারিয়া মিয়া, এবং প্রফেসর ড. রুহুল মোমেন প্রমুখ। এসময় উপাচার্য ছিলেন প্রফেসর ড. মেসবাহ্ উদ্দিন আহমেদ। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পর পর দুই মেয়াদে মোট আট বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, গবেষণা এবং ভৌত-অবকাঠামো ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা লক্ষ্য করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বের জগন্নাথ কলেজে কর্মরত শিক্ষকগণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বদলি আদেশ প্রাপ্ত হন ২০১৩ সালের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা কর্ম যথাযথভাবে পীয়ার রিভিউ-য়ের পরে প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এপর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণা কর্ম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের জন্য কেরানীগঞ্জে ২৫০ একর জমির উপর জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজও ইতোমধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ একটি অত্যন্ত জটিল ও কঠিন প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য এটি নি:সন্দেহে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আন্তরিকতা এবং সেসময়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মীজানুর রহমানের উদ্যোগে সম্পাদিত হয়েছে। বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইমদাদুল হক দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন ক্যাম্পাসের জায়গার বিষয়ে সুচিন্তিত প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজটিকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ গবেষণা কর্মে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যয়ে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুবিধার্থে সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে খোলা জায়গায় “মুজিব মঞ্চ” নামে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মিতভাবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের বিতার্কিক শিক্ষার্থীরা অনেকেই বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করছে। নতুন ভবনের নীচ তলায় টেবিল টেনিস, কেরাম বোর্ড, দাবা প্রভৃতি ইনডোর গেইমের ব্যবস্থা হয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল প্রতিযোগিতা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী নিবাস বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমান ক্যাম্পাসে একটি সুদৃশ্য মসজিদ আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুর্গোৎসব ২০১৯ সালে উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে আমরা পালন করেছিলাম। এভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল পরিবেশ গড়ে উঠছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ভাইস-চ্যান্সেলর হিসাবে প্রফেসর ড. মো. ইমদাদুল হক এবং ট্রেজারার হিসাবে প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমদ দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তনের জন্য উপাচার্য মহোদয় বেশকিছু সফল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর ও মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজও যথাযথভাবে এগিয়ে চলছে। এভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর ১৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভ লগ্নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা জগতের ক্রমোন্নতি কামনা করি।
লেখক: সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অরুণ কুমার গোস্বামী ঢাকা ব্রাহ্ম বিদ্যালয় থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মত-দ্বিমত