বিএনপি যেন লাশ পেলেই খুশি
২৪ অক্টোবর ২০২২ ২০:১৩
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা লাশ নিয়ে রাজনীতি করি না। এমন বক্তব্য হাসায় আবার কাঁদায়। বাংলার রাখাল রাজা জাতির জনক কে হত্যা করেই তো আপনাদের রাজনীতির শুরু। সামরিক শাসক হওয়ার আগে আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতার রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা কি ছিল? ছাত্র রাজনীতি করেছিলেন? জাতীয় রাজনীতি? তিনি সামরিক পোশাক পরিধানের মাধ্যমে সুযোগ নিয়েছিলেন। শাসক হতে যে বড় ইচ্ছে ছিল তার! শর্টকার্ট রাস্তা খুঁজছিলেন।
ইতিহাস অবশ্য জবাব দিয়ে দেয়। তার প্রস্থানও হয়েছিল দ্রুত। যদিও তা অযাচিত প্রয়াসে! কারোরই এমন মৃত্যু প্রত্যাশা করি না। প্রত্যুৎপন্নমতি হয়ে তাই সাময়িকভাবে সাঁকো পার করা যায়। কিন্তু, রাজনীতিতে জনশ্রেণীর অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদী বুদ্ধিনির্ভর আয়োজন না থাকলে খেসারত দিতেই হবে, তা মনে রাখাও জরুরী।
জিয়ার সেই কথিত দলটি আজ সুখে নেই। আদর্শিক অবস্থান নিশ্চিত করে মানুষকে তারা বোঝাতে সক্ষম হয়নি যে, আমরা জনগণের দল। কেউ তাই তাদের কথা আর শুনে না। একটা সমাবেশে টাকা দিয়ে এক লাখ মানুষকে একত্রিত করার অর্থও এই নয় যে, জনগণ তাদের সাথে আছে। মানুষ তাদেরকে চাইলে আওয়ামী লীগ কেন টানা তিন মেয়াদে সরকারের দায়িত্বে বহাল আছে? বলবেন, ভোট নিরপেক্ষ হয়নি। তাহলে গেল ১৪ বছরে কেন মানুষকে নিয়ে আমাদেরকে বিতাড়িত করতে পারলেন না? এর অর্থ হল, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক পথচলায় তাদের সেরাটা দিচ্ছে। কিছু জায়গায় ব্যর্থতা থাকলেও এক শেখ হাসিনার বুদ্ধিবৃত্তিক হস্তক্ষেপ ও জনশ্রেণীর জন্য চিন্তায় ব্যকুল হয়ে পড়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এতে করে হিংসায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন আপনারা। বঙ্গবন্ধু হত্যা করার পর শুধুই লাশের সন্ধান করে গেছেন।
লাশ দেখলেই বিএনপি খুশী হয়ে যায়। তারা আহসানউল্লাহ মাষ্টারকে হত্যা করল। তারা খুলনার মঞ্জুরুল ইমামকে মারল। তারা নাটোরের মমতাজ সাহেবকে মারল, মারল মেধাবী সত্ত্বা শাহ এম এস কিবরিয়ার মত নেতাকেও। তারা মোট বিশ বার শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করে গেছে। এখন বিএনপির লক্ষ্য হল, আন্দোলনের নামে নিজ দলের কেউ লাশ হোক। কী অদ্ভুত রকমের কদর্যের রাজনীতি!
একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। তা হলো, ‘রাজনীতি সমাজকে একটা মাত্রা দেয়, ভালো রাজনীতি ভালো সমাজ তৈরি করে আর খারাপ রাজনীতি খারাপ সমাজ তৈরি করে।’
বিএনপির কথাই বলা যাক। এই দলটিও বাংলাদেশে একটি খারাপ সমাজ তৈরি করতে পেরেছে। যারা রক্ত দেখলে প্রীত হয়, কেহ অগ্নিদগ্ধ হলে মনে করে, যাক আন্দোলন তবে এগোচ্ছে! তাদের সাথে ধর্মান্ধ শক্তির অতি সখ্যতা কী রায় দেয়? তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে যুগের পর যুগ মিত্র হিসাবে রেখে কি জানাতে চায়? তারা বলতে চায়, জাতীয়তাবাদ হলো আমাদের খোলস, ফলত আমরা পাকিস্তানকে আদর্শ মনে করেই এগুতে চাই। এমন না হলে কেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলবেন, আমরা পাকিস্তান আমলে ভাল ছিলাম!
রাজনীতিবিদদের কাজ কী? অতি অবশ্যই সবার আগে সামাজিক স্বার্থ উদ্ধার করা। অথচ, গেল এক যুগে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির উদাহরণ হয়ে কোন একটি চরিত্র বিএনপির তাঁবুতে পাওয়া যায়নি। যার প্রতি দলমত নির্বিশেষে শ্রদ্ধা করা যায়! আস্থা রাখা যায়। গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে তাদের রাজনীতি জনস্বার্থ সংরক্ষণ করেনি। সারাদিন বলতে থাকে, গণতন্ত্র ও জাতীয় ভোট দাও— কথিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে। পুরো দেশবাসীকে বলতে চাই বা প্রশ্ন রাখতে চাই, আচ্ছা আমরা কি খাব, কিভাবে চলব— এসবের চেয়ে কি এদের কথিত গণতন্ত্র ও ভোট
কোন বড় ইস্যু? বরং, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে সকল জায়গাগুলোয় পেরে উঠছে না, সে সকল ইস্যু নিয়ে কথা বললেও তো মানুষ বুঝতে পারে যে, তারা জনগনের পক্ষে কথা বলছে। তখন দুর্বল জায়গাগুলো নিয়ে সরকার অধিকতর মনোযোগ দিতে পারে। আর তখনই দেশ এগিয়ে যেতে পারে।
বিএনপি, বাংলাদেশের দল বলেও তো নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নাই। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা দিলো বা দিলো না— তা নিয়ে তাদের রাজনীতি। এমন কিছু নিয়েও কথা বলতে হবে! পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলোর কাছে নালিশ আর নালিশ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার নাম তো রাজনীতি নয়। জাতীয় ঐক্য তো দরকার। যে যখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকুক না কেন, নিজ ঘর তথা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন সংস্কৃতি কি প্রমাণ করে?
বেগম জিয়া বলেছিলেন, পদ্মা সেতু হবে না। আরেকবার বলেছিলেন, জোড়াতালি দিয়ে হচ্ছে। আবার বললেন, ক্ষমতায় গেলে দুইটা পদ্মা সেতু করবেন। এগুলো যে বলার দরকার তাই বলেন, বোঝাই যায়। বিএনপি হলো অশিক্ষিতদের দল। সেই বিখ্যাত হাস্যকর উক্তির মত করে কথা বলে। ‘যেখানে নদী নেই, সেখানেও সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন রাজনীতিকেরা।’ বিএনপির অবস্থা হলো এমনই। বিএনপি এখন মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসুক। সমাবেশ-মহাসমাবেশ করছে। খারাপ নয়। এমনই হওয়া উচিত। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
আওয়ামী লীগ আগামী ডিসেম্বরে সম্মেলন করতে যাচ্ছে। দলের কাউন্সিল হবে। বিএনপির তো কোনো খবর নেই। তারাও করুক। নতুন নেতৃত্ব আসুক সেখানে। আবারো আরেকটি উক্তির কথা লিখতে হচ্ছে। তা হলো, ‘বুদ্ধিহীন ও ক্ষমতাহীন নেতাকে বেছে নেওয়ার চেয়ে কোনো নেতা ছাড়া থাকাই ভালো, এরা সমাজের কল্যাণে কিছু করতে পারে না।’ অর্থাৎ তারা অন্তত জাতীয় রাজনীতি করার সামর্থ্য রাখেন, এমন কাউকে দলের চেয়ারপারসন করুক। অতঃপর তারা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিক। এর বাইরে কোনো মন্দ চিন্তাকে বরাবরের মতো আলিঙ্গন করতে চাইলেই তারা বিপদে পড়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের হয়ে আমার ভাইদের কেউ বলছেন, ‘খেলা হবে’। কেউ বলছেন, ‘ডিসেম্বরে দেখা হবে’। কেউ বলছেন, ‘ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ’। যুবলীগ থেকে বলা হয়েছে, ‘যুবলীগ মোকাবিলা করবে বিএনপিকে’। আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে, একজন শেখ হাসিনার অসাধারণ পর্যায়ের নেতৃত্বের কদর করতে বাংলার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিএনপির মতো রাজনৈতিক অপশক্তিকে বলতে যাচ্ছে যে, ‘তোমরা জনগণের দল নও, ঘরে ফিরে যাও। আর কোনো নাশকতা বরদাশত করা হবে না।’
লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই