সিত্রাং: ভয় নয়, প্রস্তুতি ও মোকাবিলা জরুরি
২৪ অক্টোবর ২০২২ ২১:০৪
এই মূহুর্তে দেশে আলোচিত একটিই নাম- সিত্রাং। গতকাল মধ্যরাত থেকেই দেশের অধিকাংশ জেলায় শুরু হয়েছে তুমুল বৃষ্টি। অনুমিতভাবেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আজ সোমবার সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হেনেছে। এ ঝড়ের ব্যাস ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ফলে এর বর্ধিতাংশ ইতোমধ্যে স্থলভাগে তাণ্ডব চালাতে শুরু করেছে। আর এই তাণ্ডব চলবে আজ সারারাত এমনকি কাল দিনের অনেক সময় পর্যন্ত। সন্ধ্যায় উপকূল স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসাথে বিভিন্ন জেলা ও দ্বীপগুলোয় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে এবং চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকায় উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ আজ মধ্যরাতে বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূল অতিক্রম করবে।
‘সিত্রাং’ নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া। জানা যায়, এই শব্দটি ভিয়েতনামিজ। যার অর্থ ‘পাতা’। সিত্রাংয়ের পর যে ঘূর্ণিঝড় আসবে তার নাম হবে ‘মন্দোস’। এই নামটি দিয়েছে সৌদি আরব। তারপরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘মোচা’ যেটি দিয়েছে ইয়েমেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ম্যাপিং অনুযায়ী, গেল তিন বছর যেসব ঘূর্ণিঝড় হয়েছে সিত্রাং আঘাত হানার এলাকা তার চেয়ে বড়। যেহেতু এই সময়ে অমাবস্যা থাকবে, তাই জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা বেশি।
ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ দেশ। ঘূর্ণিঝড়, আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া; যা পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। যদিও উপকূলে আঘাত হানলে এটি দুর্যোগে পরিণত হয়। ইতিহাস থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণহানিও নেহাত কম নয়। প্রাণহানি ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়।
পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে যার অধিকাংশই সমুদ্রেই শেষ হয়ে যায়। অল্পসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। তার মধ্যে দুই একটি ভয়ংকর ক্ষতিসাধন করে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, বিশ্বের ইতিহাসে যে ১০টি ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী, তার আটটিরই উৎপত্তি বঙ্গোপসাগরে। যে ৩৬টি মারাত্মক ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের রেকর্ড রাখা সম্ভব হয়েছে, তার ২৬টিও এই অঞ্চলেরই। অথচ বিশ্বব্যাপী ঘটে যাওয়া মোট সাইক্লোনের মাত্র ৪ শতাংশের উৎপত্তি এখানে। আর এই অঞ্চলটি বিশ্বের মোট সমুদ্র অঞ্চলের মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার মতো ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ জনের চার জনই এখানকার।
সাম্প্রতিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন অনেক আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানী। ১৯৭০ সালের পর ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রের তাপমাত্রা এক ডিগ্রির ফারেনহাইটের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং বেশিসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ হিসেবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি দায়ী করেছেন আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানী।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণ হারিয়েছিল সাড়ে ৫ লাখ মানুষ। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘূর্ণিঝড়ে এত প্রাণহানি আর কখনো দেখা যায়নি। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ হাজার ৭০৮ জন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ১৯৯৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড ও এর আশেপাশের এলাকায় আরেকটি ঘূর্ণিঝড় হয়, যার ফলে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়।
কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ২৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় সিডর। ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার এই ঝড়ে কমপক্ষে ৩ হাজার ৪৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় পরবর্তী সময়ে। তীব্র পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৭০ হাজার ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয় ৩৭ হাজার একর জমির ফসল। রেড ক্রিসেন্টসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থাই এই ঘূর্ণিঝড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। প্রায় ২৩১ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়ে।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে এই অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের নাম আম্পান। গত বছরের ২০ মে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে এই সুপার সাইক্লোনটি। ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা ঘূর্ণিঝড়ের পর এটিই এই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এর আঘাতে ভারত ও বাংলাদেশে ১২৮ জন মারা যান। তবে এর প্রভাবে ১৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
আগে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও, কয়েক দশক ধরে ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ কমে এসেছে। তবে মাঝে মাঝেই অপ্রতিরোধ্য প্রকৃতির কাছে মানুষ হার মেনে যায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেকটাই সফলতা অর্জন করেছে বলে আমরা বিগত সময়গুলোয় দেখেছি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনেকগুলো বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাছাড়া ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফণী ও বুলবুল এবং ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলা করতে হয়েছে। এসব ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচিকে সুদৃঢ় করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আনা সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ সমাদৃত হয়েছে সারাবিশ্বে। দারিদ্র্যমোচনসহ সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
দুর্যোগ ঝুঁকি-হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক কার্যক্রমকে সমন্বিত, লক্ষ্যভিত্তিক ও শক্তিশালী করা এবং সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১১, মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা-২০১৬, দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) ২০১৯ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রণীত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রতিবন্ধী, নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুসহ দুর্গত জনগোষ্ঠীর চাহিদা নিরুপন ও বাস্তবায়ন। ২০১৫-২০৩০ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক। উল্লেখিত আইন, বিধি, পরিকল্পনা ও নীতিমালার আলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক এর লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাফল্যের মূলে রয়েছে স্থানীয়ভাবে বিন্যস্ত শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো। সরকার স্থানীয়ভাবে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ কার্যক্রমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ৫২ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব আনয়নের মাধ্যমে এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। এখানে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত ২২ হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দুর্যোগে সাড়াদান এবং আগাম সতর্কবার্তা প্রচারে সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ সাড়াদান কেন্দ্রগুলোর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দুর্যোগ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, আসন্ন দুর্যোগের কবল থেকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণের জন্য বেতার, টেলিভিশন এবং স্থানীয়ভাবে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি দ্রুত ও অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ১০৯০(টোল ফ্রি) নম্বরে ডায়াল করে দুর্যোগের আগাম বার্তা পেয়ে জনগণ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ মোকাবিলায় প্রস্তুতির বিষয়ে। সব ডিসিদের সঙ্গে মিটিং করে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোয় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জেনেছি। সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি নিতে এবং সতর্কবার্তা প্রচার করতে। তারা ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করছে। আর এই প্রত্যেকটি বিষয় নিজে তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং।
জেলা পর্যায়ের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার সময় মানবিক সহায়তার জন্য প্রত্যেক জেলায় ১ হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার, ২৫ টন চাল, ড্রাই কেক ও বিস্কুট সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের সম্মানজনক ‘জাতিসংঘ জনসেবা পদক-২০২১’ পেয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
এ তো গেলো দুর্যোগ মোকাবিলার কথা। সিত্রাং দুর্যোগের পর কী কী সংকট হতে পারে সেটি আগে ভাবি। নাজুক বেড়িবাঁধগুলো জোয়ারের তোড়ে ভেঙে গিয়ে আমন ফসলের সর্বনাশ করতে পারে। ভেসে যেতে পারে মাছের শত শত ঘের। সুন্দরবনের ল্যান্ডিং স্টেশনগুলো ভেসে যেতে পারে। নৌকা-লঞ্চ হারিয়ে যেতে পারে। কলাবাগানগুলো বিধ্বস্ত হতে পারে। শ্যামনগর উপজেলার পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপজেলাকে ঘিরে থাকা প্রায় ১২৭ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধের মধ্যে ৫০০ মিটারের মতো জায়গা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সময় থাকতে ঝুঁকিতে থাকা বাঁধ মেরামত করার কথা কেউ ভাবেননি। দীর্ঘদিন পশুর নদসংলগ্ন বাঁধ সংস্কার না করায় কয়েক হাজার বাসিন্দা ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। ঘূর্ণিঝড়ের খবরে তাদের ঘুম নেই।
আশংকা সত্যি হয়ে শেষ পর্যন্ত জোয়ারের পানি যদি লোকালয়ে ঢুকেই যায়, তাহলে সেটা কম সময়ের মধ্যে বের করে দেওয়ার প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমন বাঁচানোর একটাই উপায়—মাঠ থেকে জোয়ারে লোনাপানি দ্রুত বের করে দেওয়া। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে, শুধু দরকার সমন্বয়ের।
বর্ষার শেষে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়, তাই পুকুরগুলো থেকে লোনাপানি বের করে না দিলে শিশু ও বড়দের মধ্যে খোসপাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগ দেখা দেবে। তা ছাড়া, যারা পুকুরের পানি এসএসফি পদ্ধতিতে শোধন করে ব্যবহার করেন, তারাও বিপদে পড়বেন। এই দুর্যোগে দুর্যোগপরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচির কথা ভাবতে হবে, যার মূল লক্ষ্য হবে আমন রক্ষা।
কথায় নয় আমরা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় প্রস্তুতির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি সিত্রাং বড় ধরনের আঘাত হানবে না। তবে ঝুঁকিতে থাকা ১৯টি জেলার প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা বাঞ্ছনীয়।
লেখক: উন্নয়নকর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই