১৪ই নভেম্বর জলবায়ু সম্মেলনের অষ্টম দিনকে জেন্ডার এবং পানি দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীদের ভূমিকা এবং টেকসই পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। তাই এদিন সম্মেলনে মূলত জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় নারীদের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ, বিশ্বজুড়ে এক্ষেত্রে তাদের সফলতা, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে নারীদের ভূমিকা, বিশ্বজুড়ে পানিসম্পদের ঘাটতি, বন্যা, খরা, আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা এবং দুর্যোগের পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতি আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। সারাবিশ্বে নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে বহন করে চলছে কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আলোচনায়, বাস্তবায়নে এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই অপ্রতুল। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা অগ্রগতি হলেও এখনো জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলার কার্যক্রমে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার জন্য অনেক বেশি কাজ করতে হবে।
সম্মেলনের অষ্টম দিনে জেন্ডার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উপর মোট সাতটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার হয়েছে। প্রথম অধিবেশনে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা নেতৃস্থানীয় নারীদের একত্রিত করে জলবায়ু নিয়ে আলোচনা এবং বাস্তবায়নে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়, দ্বিতীয় অধিবেশনে UNFCCC এর সকল সদস্য দেশগুলোর নারীদের কাছ থেকে WECC এর বাস্তবায়ন এবং UNFCCC এর উদ্দেশ্যসমূহের গ্যাপ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা শোনা হয়। তৃতীয় অধিবেশনে নারীদের বিভিন্ন বিষয় জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থায়নে অন্তর্ভুক্তিকরণের উপর আলোচনা হয়। চতুর্থ অধিবেশনের আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং পলিসি নিয়ে আফ্রিকান নারীদের অভিজ্ঞতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পঞ্চম অধিবেশনে নারীদের ওপর কোভিড ১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এই প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য সর্বোত্তম উপায় বের করার জন্য পলিসি পরিকল্পনার উপর আলোচনা হয়। ষষ্ঠ অধিবেশনে বিভিন্ন এলাকা যেমন, শহর, গ্রাম এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী নারীদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাদের সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। শেষ অধিবেশনে জেন্ডার দিবসের সব অধিবেশনের সুপারিশগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও শিশু ও নারীদের লিঙ্গ সমতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পানি জীবন ও জীবিকার উৎস। পানি সম্পদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যেই আইপিসিসি-সহ অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাই আজ কপ-২৭ সম্মেলনে AWARE নামের একটি উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়, যার লক্ষ্য হচ্ছে কিভাবে পানি সম্পদের ক্ষতি হ্রাস করা, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ উন্নত করা, পানি ও জলবায়ু কর্মের মধ্যে আন্তঃ সম্পর্ককে উন্নতি করা। এছাড়া, আজ পানি সম্পদ সেক্টরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসে প্রাথমিক সর্তকতা এবং প্রাথমিক অভিযোজন কর্মকান্ড, নদীর অববাহিকা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য রিমোট সেনসিং প্রযুক্তির গুরুত্ব, পানি সম্পদের নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়ন, আফ্রিকায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব ও সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া, আজ কপ-২৭ এর প্রেসিডেন্ট সামেহ্ শুকরীর নেতৃত্বে কপ-২৬ গ্লাসগো সম্মেলনে ২০৩০ সালের পূর্বে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার উপর মন্ত্রি পর্যায়ের একটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে রাখতে সবার একসাথে কাজ করার এবং ইতিমধ্যে নেওয়া এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান