মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী
১৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:২৫
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাংলায় গ্রামভিত্তিক রাজনীতির প্রবর্তক মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ভারতীয় উপমহাদেশের স্বনামধন্য ধর্মগুরু এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন বাংলায় রাজনীতি ব্যাপারটাকে শুধুমাত্র শিক্ষিত এবং একটা নির্দিষ্ট মহলের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল। মাওলানা ভাসানী রাজনীতির আলোকবর্তিকা হাতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে এর আলো ছড়িয়ে দেন। গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। ইতিহাসে তাই তার নাম মজলুম জননেতা হিসেবেই অধিক পরিচিত।
উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলন, পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল প্রতিষ্ঠা, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী শাসকদের পতন নিশ্চিত করা, ৫৭’র কাগমারী সম্মেলনে মাধ্যমে বাঙ্গালীকে স্বাধীনতা স্বপ্নে উজ্জিবিত করা, ৬৯’র গণআন্দোলন, ৭০-এ স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭১’র মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রবাসী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা… আরো অনেক কিছু। আফ্রো-এশিয়া-লাতিন আমেরিকার নির্যাতিত নিপিড়ীত মানুষের মহান নেতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আজ (১৭ নভেম্বর) তার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯৭৩ সালের সর্বশেষ পাসপোর্ট অনুযায়ী মওলানা ভাসানীর জন্ম ১২ ডিসেম্বর, ১৮৮০ খৃস্টাব্দে। জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের সয়া-ধানগড়া গ্রামে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিবারে। পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খাঁ (মৃত্যু-১৮৮৬), মাতার নাম মজিরন বিবি (মৃত্যু-১৮৯১)। পিতা-মাতা আর তিন ভাই-এক বোনের সংসার। খেলুড়ে, ডানপিঠে আবদুল হামিদের ডাকনাম হলো বিষাক্ত এবং ছটফটে এক মাছের নামে- চ্যাকা। খুব প্রচলিত কথা- ভাসানীর জন্ম ‘নিন্ম মধ্যবিত্ত কৃষক’ পরিবারে।
কার্ল মার্ক্স যেমন নিজে শ্রমিক ছিলেন না, কিন্তু শ্রমিকদের মুক্তির পথ-প্রদর্শক ছিলেন। তেমনি মওলানা ভাসানীও কৃষক পরিবারে জন্ম নেননি, কিন্তু কৃষক মুক্তি আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেন। স্টিমার ঘাট থাকার কারণে সিরাজগঞ্জ তখন গুরুত্বপূর্ণ শহর। সে শহরে তার পিতার ছিল জুতার দোকান। ভাসানীর বাবা-চাচার ৭ বিঘা জমি ছিল। তাছাড়া সে সময় হজ করতে প্রয়োজন হতো ৮০-১০০ টাকা (স্বর্ণের ভরি ছিল ২৮ টাকা) এবং তিনি নিজ খরচেই হজ সম্পন্ন করেছিলেন। অর্থাৎ তারা স্বল্পবিত্তের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী একটি পরিবার ছিলেন।
হাজী শরাফত আলী খাঁ সম্ভবত ৪৫/৪৬ বছর বয়সেই মারা যান। মহামারী কলেরা শিশু আবদুল হামিদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় মা, দুই ভাই, একটি বোনকে। চাচার কাছে বড় হতে থাকেন তিনি। প্রচলিত আছে, তিনি যখন খেয়াল করেন যে তার চাচা সামজের বিত্তশালীদের আদরে আপ্যায়নে দাওয়াত খাওয়ান, কিন্তু নিম্নবিত্তদের আলাদা খাওয়ান তখন চাচার সাথে তার বাক-বিতন্ডা হয়। রাগ করে তিনি চলে যান এক বোনের শ্বশুরবাড়ি। অনুসারীদের কাছে স্মৃতিচারণ করার সময় মওলানা বলেছেন, কিছুদিন পর সে বোন তার হাতে এক আধুলি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ভাইরে, দুই চোখ যেদিকে যায় চলে যা।’
প্রখ্যাত সুফী সাধক হযরত সৈয়দ নাসিরউদ্দিন আহমদ (র.)’র কাছে খবর পৌঁছায়, যে ছেলেটির অভিভাবকত্ব তিনি নিতে চেয়েছেন সে আজ এতিম শিশু। তিনি আসলেন সিরাজগঞ্জ কিন্তু দুরন্ত চ্যাকা মিয়া ততদিনে উধাও। চারিদিকে পড়ল খোঁজ আর খোঁজ। অবশেষে কিশোর আবদুল হামিদ খাঁকে পাওয়া গেল কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে, একটি গানের দলে। ১৮৯৭ সাল থেকে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন আহমদ (র.) শিষ্য আবদুল হামিদ খাঁ’সহ আসামের ধুবরি মহকুমার জলেশ্বর গ্রামে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯০৭, দীর্ঘ ১০টি বছর নিজের সান্নিধ্যে রেখে তিনি তার শিষ্যটিকে বিভিন্নমুখী শিক্ষা দান করেন, যার মধ্যে ছিল উৎপাদনশীল জীবনযাপনের জন্য কঠোর পরিশ্রমী ও দুঃসাহসী হওয়ার শিক্ষা; ভাষা শিক্ষার মধ্যে অন্যতম ছিল আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজি; এছাড়া পড়িয়েছেন দর্শনতত্ত্ব, তর্কশাস্ত্র, রসায়ন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাবিদ্যা এবং আধ্যাত্মবিদ্যা।
১৯০৭ সালে সৈয়দ নাসির উদ্দিন বোগদাদী (রহ.) তরুণ আবদুল হামিদকে পাঠান উত্তর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে, তবে প্রথা মাফিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি করাননি। দেওবন্দের দুজন প্রখ্যাত শিক্ষক এবং বিপ্লবী নেতা সৈয়দ হোসেইন আহমদ মাদানী এবং শায়খুল হিন্দ মওলানা মাহমুদুল হাসান-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন ব্যাক্তিগত ভাবে তার শিষ্যকে রাজনীতি, অর্থনীতি ও মানবসভ্যতা শিখাতে, জানাতে ও বুঝাতে।
১৯২৪ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসানচরে বাঙালি কৃষকদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আবদুল হামিদ খান এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেন। এ সমাবেশেই সাধারণ কৃষকেরা তাকে ভাসানচরের মওলানা তথা মওলানা ভাসানী নামে আখ্যায়িত করেন। আর তখন থেকেই তিনি হলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পরবর্তী সময় তার নামের আগে যুক্ত হয়েছে আরো কত উপাধি। সেগুলো হলো মজলুম জননেতা, আপোষহীন নেতা ইত্যাদি।
১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ ভ্রমণ করেন। মাওলানা ভাসানীও তখন ময়মনসিংহেই ছিলেন। সেখানে তার ভাষণ শুনে মাওলানা ভাসানী ভীষণ অনুপ্রাণিত হন। এরপর ১৯১৯ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের অভিযোগে তাকে কারাভোগ করতে হয়। ১৭ মাস পর তিনি মুক্তি পান। এরপর ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে এক সভায় কৃষক সাধারণের ওপর জমিদারের শোষণ, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেন। এ সভায় ভাষণের জন্য তাকে নিজের জন্মভূমি ছাড়তে হয়। এবার তিনি চলে যান আসামের জলেশ্বরে।
১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাস ‘স্বরাজ্য পার্টি’ গঠন করলে মাওলানা ভাসানী সেই দলকে সংগঠিত করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে মাওলানা ভাসানী ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী এবং বিচক্ষণ চিন্তাধারার। রাজনীতি নিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও পাঁচবিবির জমিদার শাসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর অনুরোধে তার কন্যা আলেমা খাতুনকে তিনি বিয়ে করেন। তারপর ১৯২৬ সালে তিনি সহধর্মিণীকে সাথে নিয়েই তিনি আসাম চলে আসেন। বিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনে তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। সংসার এবং রাজনীতি উভয়ই সমান তালে চালিয়ে নিয়েছেন তিনি। তিনি আসাম গমনের কিছুদিনের মধ্যেই কৃষক-প্রজা আন্দোলনে সুত্রপাত হয়। এই আন্দোলনেও তিনি কৃষক-প্রজাদের হয়ে তাদের দাবী আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। আসাম এবং পূর্ব বাংলার কৃষক মজদুরদের স্বার্থ আদায়ে এবং জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্রতর করতে তিনি আত্মনিয়োগ করেন।
ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসাম থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ, তা প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন এবং মুসলিম লীগ সরকারের শোচনীয় পরাজয় ঘটান।
১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে তিনি প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এই সম্মেলনের পর তিনি সর্বমহলে ভাসানীর মাওলানা নামে পরিচিতি লাভ করেন। মূলত এরপর থেকেই তার নামের শেষে ‘ভাসানী’ উপাধি যুক্ত হয়। ভাসানচরের সফল সম্মেলনের পর কৃষক-মজদুর মহলে মাওলানা ভাসানী হয়ে উঠেন এক অবিসংবাদিত নেতা।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। সে সময় মওলানা ভাসানীই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের শাসকেরা ধর্ম ও জাতীয় সংহতির নামে পূর্ববাংলার মানুষকে শোষণ করছে। তাই তাদের সঙ্গে একই রাষ্ট্রের বাঁধনে অবস্থান করা আর সম্ভব নয়। সে কারণে ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনের মাধ্যমে সমগ্র জাতির অন্তরে স্বাধীনতার স্বপ্ন দিখিয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৭০ সালের নভেম্বরে পল্টন ময়দানে ভাষণ দানকালে এ কথাটিই বারবার উচ্চারণ করে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৫, ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালেও তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছে, যে বৈষম্যনীতি অনুসরণ করছে, তা চলতে থাকলে পূর্ব পাকিস্তান একদিন স্বাধীন হয়ে যাবে। তার এ কথা বাস্তব সত্যে পরিণত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে দেশব্যাপী পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইলের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সেনারা পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীর চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে মওলানা ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারী।
মওলানা ভাসানী এ দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিস্তার ও প্রসারে অনেক অবদান রাখেন। তিনি সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মহীপুরে হাজি মুহম্মদ মুহসীন কলেজ, ঢাকায় আবুজর গিফারি কলেজ ও টাঙ্গাইলে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কোনো পদমর্যাদা ও মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি সব সময় জনগণের পাশে থেকে বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত লংমার্চ পরিচালনা।
প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার আলোকবর্তিকা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
আজীবন মজলুম মানুষের মুক্তির জন্য যিনি লড়াই করেছেন তিনিই হলেন মওলানা ভাসানী। তার কাছে জালিমের যেমন কোনো জাত-ধর্ম থাকত না, তেমনি মজলুম মানুষ কোনো ধর্মের, দেশের, বর্ণের, পেশার সেটা তিনি বিন্দুমাত্র ভাবতেন না। তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে অনেক বড় হয়েছেন, ব্যতিক্রম হয়েছেন এইজন্যই যে, তিনি থাকতেন সর্বহারাদের মাঝে, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কাছে। তিনি চিরকাল শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন এ দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহ্বায়ক, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া মত-দ্বিমত মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী