Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গুজব নয়, সত্য প্রচার করি

অলোক আচার্য
১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৪:২৪

আমাদের দেশে গুজব শব্দটি নানা কারণে একটি আলোচিত বিষয়। আমরা মনে হয় গুজব ছড়াতে এবং তা বিশ্বাস করতে বেশ পছন্দ করি! আগে পিছে ভাবি না। সত্য মিথ্যার ধার ধারি না। মোটামোটিভাবে একটা কথা ছড়িয়ে দিতে পারলেই হলো! এই যেমন- ব্যাংকে টাকা রাখলে তা থাকবে না টাইপের মিথ্যা কথাগুলো ছড়ানো। কে কিভাবে এটা ছড়িয়েছে জানি না কিন্তু এটা যে একটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেটা বোঝা যায়। দেশের অর্থনীতি বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে সুগঠিত। এমনকি করোনার মধ্যেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। দেশে পদ্মা সেতু হয়েছে, মধুমতি সেতু হয়েছে আবার একশ সেতু একদিনে উদ্বোধন করা হয়েছে। এতকিছু অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করতে কতই না অবান্তর কথা ছড়ানো হচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে এসব গুজব ছড়ানো হয়। আমরাও যেমন! কে কি বললো, কেন বললো, তা যে অসম্ভব ব্যাপার এসব বিবেচনা না করেই আমরা ছুটতে থাকি। রসিয়ে রসিয়ে গল্প করি। গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটতেও আমরা ওস্তাদ। এমনকি সারা বিশ্ব যখন ক্রান্তিকাল তখন সবার স্বচ্ছ থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নানা ধরনের গুজব বাতাসে ভেসে বেড়ায়। যা রীতিমতো বিশ্বাস করাও কষ্টকর সেই গুজবে নানা অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড ঘটছে। মানুষের প্রাণ যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। সেসব গুজবে কান দিয়ে মানুষ ও দেশের ক্ষতি হচ্ছে। গুজব বলতে সাধারণত বোঝায় কোন ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠি বা কোন দলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যমূলক কোন অপপ্রচার যার পেছনে বেশিরভাগ সময়ই কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকে। কোন অসত্য তথ্য বা প্রচার যা কারও ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায়ও বিঘ্ন হতে পারে। আমরা খুব সহজেই গুজবে কান দেই। আমাদের শিক্ষা দীক্ষার কোনোকিছুর প্রয়োগ না করেই বিশ্বাস করে নিচ্ছি। কোনোকিছু শুনলেই বিশ্বাস করতে হবে? যেখানে চোখে দেখেও আজকাল বিশ্বাস করাটা বেশ কষ্টকর। সেখানে কারও কাছ থেকে কিছু শুনেই সেটা বিশ্বাস করা এবং তা নিজের মতো প্রচারের কাজে লেগে পরা! চিলে কান নিয়েছে শুনে কান উদ্ধারের জন্য সবাই চিলের পেছনে ছুটি। একবারও নিজের কানে হাত দিয়ে পরীক্ষা করার কথা মনে করি না।

বিজ্ঞাপন

এই যে গুজব ছড়ায় এরা কিন্তু আসলে শিক্ষিত এবং পরিকল্পিত। আর এটা যখন অল্পশিক্ষিত মানুষের কাছে পৌছে যায় তখন তা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পরে। আজকাল গুজব ছড়াতে ডিজিটাল মাধ্যমই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার করা হয় গুজব ছড়াতে। কারণ এসব মাধ্যমে কোন অসত্য তথ্য প্রচার করা দ্রুততর এবং তুলনামূলক গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সাময়িক নিরাপদে অবস্থান করতে পারে। গুজবের ক্ষেত্র আজকাল বিস্তৃত হয়েছে। রাজনীতি, ধর্মীয়, সামাজিক বা অন্য যেকোন ক্ষেত্রে গুজব ছড়ানো হয়। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে অপপ্রাচার কাজে লাগিয়ে হীন স্বার্থ উদ্ধার করা। গুজব ক্ষেত্রবিশেষে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে পারে। দাঙ্গা-হাঙ্গামার মতো পরিস্থিতিরও তৈরি হতে পারে। এটা হয়েছেও। গুজবের প্রধান মাধ্যম হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। কতৃপক্ষও এসব গুজব সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত যারা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে নিজে থেকেই আমরা সচেতন হতে পারি। একবার দেশের স্বার্থের কথা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলেই সব সম্ভব। যখন আমরা প্রত্যেকেই সমস্যা মুখোমুখি রয়েছি তখন গুজব ছড়িয়ে অন্যকে বিভ্রান্ত করার মতো খারাপ চিন্তা না করে একে অপরকে সাহায্য করার কথা ভাবি। সঠিক তথ্য দেই এবং নিজেও গ্রহণ করি। গুজবে কান না দিয়ে সামনে দিনগুলিতে নিজেদের সচেতন করি। কোন গুজব বিশ্বাস করার আগে প্রত্যেকের উচিত সেই ছড়ানো বিভ্রান্তি একবার হলেও ভালোভাবে যাচাই করে নেয়া। গুজব হয় মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

বিজ্ঞাপন

যার পেছনে ছোটা কেবল সময়ের অপচয়ই নয় বরং থাকে জীবনের ঝুঁকি। আজকাল ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি হচ্ছে খুব বেশি। যেহেতু আমাদের সবার হাতে হাতে এন্ড্রয়েড চালিত মোবাইল ফোন রয়েছে এবং শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট রয়েছে তাই কোন মিথ্যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য ছড়িয়ে দিতে বেশি সময় প্রয়োজন হয় না। খুব দ্রুত একজন থেকে অন্য জনে ছড়িয়ে পরে। তাই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া একটু সময়ের ব্যাপার। ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীরা প্রযুক্তির ব্যাবহারে দক্ষ হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট, কোন দুর্ঘটনা বা জনগণ বিভ্রান্ত হওয়া ছাড়া গুজব থেকে আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই গুজবকে ত্যাগ করে সত্যের পথ ধরি। আর আমরা যারা গুজবে সত্যে পরিণত করে আরও ছড়িয়ে দেই তারাও সচেতন হই। তা ছড়ানোর আগে একবার ভাবি এটা সম্ভব না অসম্ভব। নিজের বিবেক দিয়ে চিন্তা করি। তাহলেই কোনটি গুজব আর কোনটি সত্য তা বেরিয়ে আসবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

অলোক আচার্য গুজব নয়- সত্য প্রচার করি মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর