Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা ও উদ্যোগ

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন
১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৩৩

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই ঘটনার পরে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট রাখাইন রাজ্যে ভয়ঙ্কর হামলা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া সহ মিয়ানমারে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য রাখাইন রাজ্যে মানবিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যার খবরে মার্কিন সরকারের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার চায় এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন আশা করে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালানোর জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ‘ভয়ানক’ উল্লেখ করে দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জাতিসঙ্ঘ তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের আহ্বান জানায়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এসব ঘটনার সাথে জড়িত মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীসহ সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর অং সান সুচির দফতরের ইউনিয়নমন্ত্রী টিন্ট সোয়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক দাতা হিসেবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে এবং তাদের জন্য ২০১৭ সালে প্রায় ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছিল। পরবর্তীতে মে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র আরও ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ২৫৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। জাতিসংঘ ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ৯২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন বলে ঘোষণা দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র রো‌হিঙ্গা‌দের জন্য ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়। রো‌হিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৪৯ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।এর মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় খরচ করা হয় ৪০৬ মিলিয়ন ডলার।

রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে মানবিক সহায়তা দিয়ে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জন্য ইউএন জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র আর ৫০৪ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এই তহবিল রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন মেটাতে এবং ক্যাম্প এলাকার স্থানীয় বাংলাদেশিদের ক্ষতি পুরনে ব্যয় করা হয়েছে। রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার সাহায্য দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রাখাইনে চালানো নৃশংস নির্যাতনকে সুস্পষ্ট জাতিগত নিধন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করে। ২০১৯ সালে, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির শীর্ষ চারজন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম কোন দেশ যারা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে হত্যা ও সহিংসতার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লাইং, ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে কঠোর। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্র প্রধান দাতা হিসেবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য ২০১৯ সালে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের উদারতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি এবং সহায়তা প্রয়োজন এ ধরনের মানুষের কাছে নির্বিঘ্নে ও অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে ২০২০ সালেও যুক্তরাষ্ট্র অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এবং আরও ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। এই নতুন তহবিল সহ ২০১৭ সালের পর দেওয়া মোট মানবিক সহায়তার পরিমান দাঁড়ায় ৮২ কোটি ডলার। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য আরো প্রায় ১৮ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তার পরিমান হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে অবস্থানরত নয় লাখ রোহিঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্ত পৌনে পাঁচ লাখ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ১২০ কোটি ডলারের বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

২০২১ সালে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহনের পর গণতন্ত্রপন্থীদর ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণনৃশংসতার দায় সেনাপ্রধানকে নিতে হবে মর্মে আইসিসির রায়ের পর মিয়ানমার সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালের ২১ মার্চ আরাকান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো হত্যা, নির্যাতন ও সহিংসতাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিল।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাজি করানোর জন্য আসিয়ানের ওপর প্রভাব খাটানো এবং মিয়ানমারে নিজস্ব জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান নৃশংসতা বন্ধ করতে আসিয়ানের মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের জেআরপি তে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়টি জেআরপির অধীনে মোট অনুদান এসেছে ৩২২ কোটি ১১ লাখ ডলার এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য দিয়েছে ১৭০ কোটি ডলার, যা একক দেশ হিসাবে সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৯ বিলিয়ন ডলার। কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সহায়তায় জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজারের উপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসানচরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, জাতিসংঘ শুরুতে এর বিরোধিতা করেছিল। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও জাপান এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতিসংঘ ও জাপানের পর ভাসানচর প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে বসবাস করছে।

বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। প্রথম দেশ হিসেবে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অত্যন্ত আনন্দিত। প্রথম দফায় ৬০ জনের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা নিয়ে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে ২৪ জন রোহিঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হলে যাচাইবাছাইয়ের পর আরও রোহিঙ্গাকে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র একটা বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের নেবে, এই সংখ্যাটা হাজারের। বাংলাদেশ এর আগে অন্য কোনো রাষ্ট্র থেকে এধরনের প্রস্তাব পায়নি। চলমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রোহিঙ্গা পুনর্বাসন করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা দেখাবে এবং বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশসহ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের প্রতি সংহতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র মানবিক কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং সহিংসতার কারণে বিপদগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সহায়তা বাড়াতে অন্যান্য দাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে বাংলাদেশ সরকার, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থাকা জনগণের সঙ্গেও কাজ করছে দেশটি। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা বাংলাদেশীদের চাহিদা পূরণে সবসময় পাশে আছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধীরে ধীরে মিয়ানমারের নতুন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে সরে যাওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হলে বিশ্ববাসীর সামনে রোহিঙ্গা সমস্যার গুরুত্ব নতুনভাবে উপস্থাপিত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমস্যা নয়- এটি মানবিক এবং বৈশ্বিক এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করেছে এবং একইভাবে বাংলাদেশ থেকেও রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে চাচ্ছে। এই অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকারকে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং শর্তাবলী সহজতর করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে রাখাইন রাজ্যে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় জাতিগোষ্ঠী এর সুফল পারে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর রোহিঙ্গা নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনার ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে তা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে। এই সমস্যা সমাধানে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, রাখাইনে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকার ও স্থানীয়দের সাথে কাজ করছে। মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যাতে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে, সহিংসতা বন্ধ করে এবং রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যায় জড়িত অপরাধীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হচ্ছে তাদেরকে নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও সম্মানজনকভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। এই সঙ্কট সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগকে উদ্বুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যা আশার আলো দেখবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন মত-দ্বিমত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা ও উদ্যোগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর