Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেনা ও ধর্মীয় সংঘের সমঝোতা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে?

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন
১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৯

ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে মিয়ানমারের সুদীর্ঘ পথচলা কখনই মসৃণ ছিল না। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী গঠন করা হয়। এর আগে তিনটা যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশরা ধাপে ধাপে মিয়ানমার দখল করে ও রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে, এতে রাজকীয় বর্মী সেনবাহিনী বিলুপ্ত হয়। ব্রিটিশদের মিয়ানমার দখলের বহু আগে থেকে বার্মিজ সংঘ এবং বার্মার রাজারা একটি পারস্পরিক সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। রাজারা সংঘকে সুরক্ষা এবং সমর্থন দিত এবং এর ফলে গ্রামবাসীরা শাসকদের প্রতি অনুগত থাকত। মিয়ানমারে একই গ্রাম থেকে তরুণরা সৈনিক এবং ভিক্ষু হিসেবে যোগ দেয়। বৌদ্ধধর্ম ও সামরিক শাসনের এই সহবস্থান বহু যুগ ধরে চলমান রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্মিজরা অং সান এবং তার দলকে তাদের প্রথম সংসদীয় গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করে। ১৯৪৭ সালে অং সানকে হত্যা করা হয়, পরবর্তীতে অং সানের উত্তরসূরি, উ নু ১৪ বছর বার্মা শাসন করেছিলেন। ২ মার্চ ১৯৬২ সালে নে উইন এবং তার মিত্ররা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উ নু-এর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ‘ইউনিয়ন রেভুলুশনারী কাউন্সিল (ইউআরসি)’ এর মাধ্যমে বার্মিজ ওয়ে অব সোশ্যালিজম চালু করে। নে উইন ‘বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি (বিএসপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন। নে উইনের শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে বিদ্রোহ হয় এবং এই সময় জনগণ ও ভিক্ষুরা রাজপথে নামে। মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সামরিক একনায়কত্ব পতনের আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় ছিল। এই আন্দোলনে নে উইনের একচ্ছত্র ক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং অং সান সু চি মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রবেশ করেন। নে উইন পদত্যাগ করেন এবং সামরিক জান্তা ‘স্টেট ল অ্যান্ড অর্ডার রিস্টোরেশন কাউন্সিল (এসএলওআরসি)’ প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতা দখল করে।

১৯৯০ সালে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে অং সান সুচির নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)’ ৮০ শতাংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়। এনএলডির প্রতিপক্ষ ‘বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি (বিএসপিপি)’ থেকে নতুন ভাবে সংগঠিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টি (এনইউপি)’ সেই সময়ে মাত্র ২ শতাংশ আসন জিতেছিল। ১৯৯০ সালের নির্বাচনের পর, সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে এবং একটি নতুন সংবিধান প্রনয়নের কাজ শুরু করে। নতুন সংবিধানটি ২০০৮ সালের মে মাসে গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। ২০০৭ সালের ‘সেফ্রন বিপ্লবে’ ভিক্ষুরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনের পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা চাপের মুখে পড়ে ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচন ২০০৮ সালের সংবিধানের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি ক্ষমতায় আসে এবং বহু বছর পর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের নির্বাচনে একই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সেনাবাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালে সামরিক অভুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে।

ক্ষমতা গ্রহনের পর মিন অং হ্লাইং নিজেকে যোদ্ধা-রাজাদের মত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বৌদ্ধধর্মের রক্ষক হিসাবে নিজের একটি ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করে। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি সামরিক সমর্থন প্রদর্শনকারী রাষ্ট্রীয় সংবাদ সম্প্রচার বহুগুনে বেড়ে যায়। সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মিয়ানমারের সেনাশাসন তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিয়ানমার সামরিকবাহিনী বর্তমানে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের পাশাপাশি এনইউজি এর সশস্ত্র শাখা পিডিএফ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মার জনগোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।

২০২১ সালে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে বৌদ্ধভিক্ষুরা অনেকাংশে অনুপস্থিত ছিল। সামরিকবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেনাবাহিনী এবং সেনাশাসকদের সমর্থনকারী ভিক্ষুদের অনুসারী সশস্ত্র মিলিশিয়ারা গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধাদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সামরিক শাসকরা সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে জাতিগত সংখ্যালঘু এবং অনেক ভিক্ষুদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ব্যবহার করছে। চলমান প্রেক্ষাপটে ভিক্ষুরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে, জেলে যাচ্ছে, সামরিক বাহিনী থেকে ভিক্ষা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে, তাদের নিজস্ব অহিংস প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এবং বার্মার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে ছাত্রদের সাথে ‘অল বার্মা ইয়াং মঙ্কস ইউনিয়ন’ নামে সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধে অংশ নিচ্ছে। সামরিক বাহিনী তার বিরোধীদের বৈধতা নষ্ট করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছে এবং প্রতিরোধ আন্দোলন এবং এর নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভিক্ষুরা জানায়, তারা রাস্তায় সেনাদের মুখোমুখি হলে তাদের উপরও গুলি চালানো হয় এবং অনেককে গ্রেফতারও করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সামরিক সরকার তাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গঠনের দিকে মনযোগ দিয়েছে। সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়ার জন্য সামরিক সরকার বৌদ্ধ ভিক্ষু সংগঠন ও কট্টর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের শরণাপন্ন হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

বর্তমানে অনেক ভিক্ষু সামরিক সরকারের সমর্থক। সামরিক শাসকরা পরিকল্পিতভাবে ও সক্রিয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে মূল্যবান উপহার দিয়ে, উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার জন্য বৌদ্ধ নেতাদের একাংশের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে। অতি-জাতীয়তাবাদী ভিক্ষুরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উস্কে দিয়ে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে হামলা পরিচালনা সমর্থন করেছিল। সামরিক বাহিনী প্রভাবশালী ভিক্ষুদের একটি অংশের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে। ভিক্ষুরা বিক্ষোভে যোগদানের পর সামরিক বাহিনী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় এবং এরপর তারা ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করে। সামরিক অভুত্থানের পর সামরিক বাহিনীর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করা ভিক্ষুদেরকে জমি, গাড়ি এবং মঠের মত মূল্যবান উপহার দেওয়া হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে যারা জান্তাকে সমর্থন করছে সিতাগু সায়াদাও তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মিয়ানমারে বেশ জনপ্রিয় একজন ভিক্ষু ছিলেন এবং ১৯৮৮ সালের বিদ্রোহে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমান জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংকে তিনি হিতৈষী রাজা মনে করেন। ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের সময় তিনি একটি ‘ধর্মোপদেশে’ ‘অবৌদ্ধদের জীবনের মূল্য কম এবং তাদেরকে হত্যা করার বিষয়ে মত’ দিয়েছিলেন। সিতাগু মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তাতে গভীরভাবে দুঃখিত, তিনি কোনো দলের পক্ষে নন এবং জনগণ ও জাতির উন্নতিই তার কাম্য বলে জানান।

মিয়ানমারের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য আলোচিত–সমালোচিত বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথুকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘থাইরি পিয়ানছি’ পদক প্রদান করে। ভিক্ষু উইরাথু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঘৃণা ছড়িয়ে আসছিল। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মালিকানায় থাকা ব্যবসা বর্জন করা এবং মুসলিমদের সঙ্গে বৌদ্ধদের বিয়ে নিষিদ্ধ করার দাবি উত্থাপন করে উইরাথু আলোচনায় আসেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো উইরাথুকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি সাধারণ জনগণের ঘৃণা ও বিদ্বেষ বাড়াতে জান্তাকে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করে। তারা জানায় যে উইরাথুর মুসলিমবিদ্বেষী ভূমিকা ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর জান্তার দমনপীড়ন চালাতে সহায়তা করেছে।

অপরদিকে এনএলডি মিয়ানমারের জাতিগত সহিংসতা বন্ধে আগে থেকেই কাজ করছিল। উগ্রবাদী বৌদ্ধ সংগঠনের কাছে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এনএলডির সহ-প্রতিষ্ঠাতা উইন টিন ২০১৪ সালে মান্দালে শহরে অসিন উইরাথুর মঠে এসে তার সাথে দেখা করেন, তবে তাদের আলোচনায় সমস্যা সমাধানে কোন অগ্রগতি হয়নি। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা নির্মূলের সময় সু চি তাদের পাশে দাঁড়ালেও পরবর্তীতে তার সরকার প্রকাশ্যে সহিংসতাকে সমর্থনকারী অতি-জাতীয়তাবাদী ‘মাবাথা’ ভিক্ষুদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেছিল। ‘মাবাথা’ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উস্কে দেয়া ভিক্ষু উইরাথু কে জেলে পাঠিয়েছিল। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর উইরাথুসহ ‘মাবাথা’ ভিক্ষুদেরকে সামরিক সরকার মুক্তি দেয়।

মিয়ানমারের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস ও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে জানায়। একইসাথে চাপ প্রয়োগ, সমালোচনা ও আক্রমণ সত্ত্বেও যে সব আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক দেশ, সংগঠন ও ব্যক্তিরা মিয়ানমারকে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানায়। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ এবং আশা করছে যে মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করবে।

মিয়ানমারের সব ভিক্ষু সেনাশাসন সমর্থন করে না। নজরদারি এবং ক্র্যাকডাউন সত্ত্বেও, মান্দালয়ের বৌদ্ধ মঠগুলিতে প্রতিবাদের সময় অনেক মানুষ জড়ো হয় এবং সেখান থেকে অনেকে সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। সেফ্রন বিপ্লবের বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী নির্বাসিত এক ভিক্ষু জানায়, যেসব ভিক্ষুরা জান্তাবিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় অংশ নিয়েছিল তারা তাদের ধর্মের প্রথম নীতি লঙ্ঘন করছে। তিনি জানান যে, জীবন্ত বস্তুকে হত্যা করা বৌদ্ধ ধর্মে একটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। ‘মাবাথা’ ভিক্ষুরা উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ঘৃণা না ছড়িয়ে রাখাইনের উন্নয়নের জন্য সক্রিয় হলে জনগণের জীবনমানের উন্নতি হতো ও দেশে শান্তি বিরাজ করত যা বৌদ্ধধর্মের লক্ষ্য। মিয়ানমারের শীর্ষ বৌদ্ধ কর্তৃপক্ষ, ‘মাহানা’ নামে পরিচিত। অভ্যুত্থানের পরপরই এর চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তবে তারা এই সঙ্কটের বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করছে।

কয়েক শতাব্দী ধরে মিয়ানমারের ভিক্ষুরা সাহসী রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছে। ব্রিটেন থেকে মিয়ানমারের স্বাধীনতার দাবিতে অনশন থেকে শুরু করে ১৯৮৮ সাল এবং ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় তারা বিক্ষোভ করে। অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলন রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সামরিক বাহিনীকে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে এসেছে। ধর্মীয় নেতারা এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন যা মিয়ানমারে টেকসই শান্তির ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করবে।

প্রায় ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত ও নৃশংস দমন পীড়নের মুখে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে ও এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থার সাথে একত্রে তাদের মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে। মিয়ানমার কর্তৃক সৃষ্ট এই সমস্যা চলমান থাকা স্বত্বেও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরন দেখিয়েছে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের সমস্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমারের ইসলাম ভীতির স্বপক্ষে বাংলাদেশের দিক থেকে কোন ধরনের যে সমর্থন নেই তা এই দীর্ঘ সময়ে দৃশ্যমান ও প্রমাণিত। বাংলাদেশ মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ যে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার আগামীতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়। বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী মিয়ানমারের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরার পথ সুগম করার উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ তাকে অবশ্যই স্বাগত জানাবে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার কাজ সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ভিক্ষুরা সংঘাত ও সংঘর্ষের পক্ষে না থেকে শান্তি ও ঐক্য গড়ে তুললে মিয়ানমারের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এতে সাধারণ জনগণের ভাগ্যন্নোয়নের পাশাপাশি চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ সুগম করবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর