Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সময় হয়েছে গোষ্ঠিগত পর্যায়ে দায়িত্ব নেয়ার

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৬

সংসদীয় গণতন্ত্রের আসল সৌন্দর্য জনমানুষের অংশগ্রহণে তাদের মত রাখার দৃষ্টান্ত। একটি দেশের শাসন ক্ষমতা কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর অর্পিত হবে, তা জনগণই নির্ধারণ করবে— এমন চিরন্তন সূত্রের ওপর দাঁড়িয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের মুলত বিকাশ সাধিত হয়। বাংলাদেশে এমন শাসনরীতির বয়স প্রায় বত্রিশ বছর। প্রাসঙ্গিক আলোচনার খোরাকে যেয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে ভোট চাইতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে কিনা, তা নিয়ে তর্ক বিদ্যমান।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বাস্তবতায় এখনো স্বাধীনতাবিরুদ্ধ শক্তির পক্ষে ছোট্ট করে হলেও জনসমর্থন রয়েছে। যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবী করা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাও বটে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো তেমন কোন সাংস্কৃতিক উদাহরণ প্রদর্শন করতে পারে নাই, যেখানে বাংলাদেশের জন্ম চায়নি যারা, তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। বরং তাদেরকে ক্ষমতার অংশীদারিত্বের রাজনীতিতে মনযোগী হতে দেখা যায়। তারা যদি জনসচেতনতা তৈরি করে মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব তুলে ধরে রাজনীতি করতে পারত, তবে দেশে জামায়াতে ইসলামীসহ কথিত জাতীয়তবাদী শক্তির আস্ফালন সে অর্থে জমতো না।

বিজ্ঞাপন

দায় আমার বা আমাদের দলেরও আছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় হতে বারবার করে দেশের নেতিবাচক শক্তি বা অপশক্তি সম্পর্কে ধারাভাষ্য রাখা হলেও কোটি কোটি সমর্থক সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জায়গায় যায় নাই। ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় পার হয়ে গেলেও, এখোনো পর্যন্ত জনশ্রেণির একটি অংশ আছে, যারা সাম্প্রদায়িক খোলসে ফলত বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাদের কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল শেখ মুজিব আর এক বিশ্ব সেরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে যা খুশী বলতে থাকে।

লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, শেখ হাসিনার তার রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো ভাষণ বা বক্তব্য রেখেছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি নিয়ে বলেই গিয়েছেন। কিন্তু আমি ও আমরা তা ধারণ করে তার সত্যিকারের অনুসারী হতে পারিনি। তার আদর্শকে গুরুত্ব দিতে পারিনি।

সময় হয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক গন্ডি পার হয়ে গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে আমলে নিয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে জানান দেয়া যে, দেশের জন্য তোমার কাছে আওয়ামী লীগের বাইরে আর কয়টি জনস্বার্থের রাজনীতি করা দল রয়েছে? প্রশ্ন ছুঁড়েই মানুষগুলোকে বোঝাতে হবে। অর্থাৎ বলতে চাইছি, রাজনৈতিক অপশক্তি, স্বাধীনতা বিরুদ্ধ শক্তি, রাজনৈতিক পর্যায়ে অশিক্ষিত শক্তি সম্যক ধারণা না দিলে তো সংকটের উপস্থিতি বাংলাদেশে রয়ে যাবে। এমন কী আদর্শিক রাজনীতি এবং মেধাভিত্তিক রাজনীতির সুসমন্বয় না থাকলে একটি জাতির ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধও হয়ে পড়ে।

যেমন, আজকের বাস্তবতায় একজন আলোচিত বা সমালোচিত যা তা মানুষকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতায় থাকলেও তো হবে না। যদি তার রাজনৈতিক লেখাপড়াটা না থাকে। কিংবা দেশকে দেয়ার তার কোনো ক্ষমতা যদি না থাকে। একজন সাংসদের কাজ হল ফলত আইন প্রণয়ন করা। সেই আইন তৈরির জন্য তার বুঝতে পারার সক্ষমতা আছে কিনা—এমন ব্যক্তিকে কি সংসদে পাঠানোর দায়িত্ব জনগণ নিতে পারে ? কিন্তু নেয়া হচ্ছে তো। মানুষ মনে করে একজন সাংসদ নিজ এলাকার উন্নয়নে থাকবে। আসলে কী তাই ? এই কাজ স্থানীয় সরকারের। মানুষ তাহলে এখানেও অজানার মধ্যে থেকে যাচ্ছে।

আমরা কোনো এলাকায় গেলে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে জানতে পারি যে, অমুক এমপি খুব উন্নয়ন করেছে বা তমুক একদমই করেন নি। এই আলাপচারিতার ধর্মটাই কিন্তু বেঠিক কিন্তু উন্নয়ন-সাংসদ পারস্পরিক চাওয়া পাওয়ার সমীকরণে দাঁড়িয়ে গেছে, যার নেপথ্য শক্তি জনগণ। তাহলে জনশ্রেণিকে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারা যাচ্ছে না। তারা জানে না যে, দেশের সংবিধানে কী লেখা আছে, জাতীয়তা কী, দেশে কয়টি রাজনৈতিক দল আছে, তাদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য, দেশের শাসনরীতি—কিছুই জানা নেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের। এসকল দিক সম্পর্কে পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের দূতেরা জানে কি? তারা তো বলার জন্য বসে থাকে যে, তোমার দেশে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন হতে পারছে কি?

কার্যকর সংসদ হওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশের সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে ভূমিকা রাখতে হবে। শুধুমাত্র দলীয় কর্মসূচী দিয়ে নয়, দলের প্রত্যেকটি সদস্যকে সত্যিকারের কর্মী হতে হবে। আমি তো অবাক হই, যখন দেখি যে, টানা তিন মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের যে অর্জন তাও তুলে ধরতে সময় নেই কর্মীদের। তিনশত সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের কর্মীরুপি ভোটারেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এলাকার উন্নয়ন নিয়ে যদি প্রতিদিন লিখত, তাহলেও তো আম জনতা বুঝতে পারত।

শেখ হাসিনার বৈপ্লবিক পথচলা সম্পর্কে দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় বুঝতে পারে, জানতে পারে। দেশ যে নিদেনপক্ষে সময়ের চেয়ে ত্রিশ বছর এগিয়ে গেছে, তা জানা দরকার। কিন্তু সাধারণ মানুষকেও তো তা জানতে হবে। এমনিতেই মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তির দল হয়ে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়, তবে কর্মীরা সময় নিয়ে দেশের কথা, দলের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে, দেশে চল্লিশটির মত রাজনৈতিক দলও থাকত না। তা দশে নেমে আসত। যদিও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বজায় রাখতে দেশে পঞ্চাশটি রাজনৈতিক দল থাকুক, সেটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হল, মানুষের পছন্দ। পছন্দ, ধনী হতে হবে। গরীব পছন্দে অশিক্ষিতদের জায়গা জাতীয় সংসদ হতে দেয়া যায় না। কাজেই মানুষের পছন্দটি শ্রেষ্ঠ হোক, সে লক্ষ্যে তাদের মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে। বোঝাতে হবে কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ! গোষ্ঠিগত পর্যায়ে ভুমিকা রেখে তাই জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার সময়ও এখনই।

লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/এজেডএস

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন গোষ্ঠীগত দায়িত্ব

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর