Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাওরের রাজনীতিতে মেরুকরণ

রফিকুল ইসলাম
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:২২

‘এমনই মহান তুমি / ছাড়া সদগতি / স্বীয় স্বার্থসিদ্ধিতে / করোনা কারও ক্ষতি, / কুর্নিশ রাষ্ট্রপতি / জিইয়ো তুমি।’

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদকাল শেষ হবার প্রাক্কালে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জন্মভূমি কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চল সফরে রয়েছেন তিনি। এ মাসের ২৭ তারিখ ফের আসার কথা রয়েছে। এর পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাও আসবেন বলে জানা গেছে, যা হবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় সফর। তিনি বিগত ১৯৯৮ সালে প্রথমবার এসেছিলেন। তখন মো. আবদুল হামিদ মহানুভব ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার।

বিজ্ঞাপন

ইতোমধ্যে আদর্শিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর ভর করে দিনেদিনে নেতৃত্বের ভেতর নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়ে ফণা তুলছে। ব্যক্তি অনুগামীদের আস্ফালনে দলীয় ত্যাগী নেতা-কমী ও অনুগামীরা মাঠ ছাড়ছে। কেউবা কুমির বাচ্চার ভাগ্যবরণ করছে।

কুমির মা তার সাত কুমির বাচ্চাকে শেয়াল পণ্ডিতের কাছে গচ্ছিত রাখে। আর শেয়ালপণ্ডিত একে একে ছয়টিকে খেয়ে একটিকে বাঁচিয়ে রাখে এবং কুমির মা সন্তানের খুঁজ নিতে এলে ধূর্ত শেয়াল একটি কুমিরছানাকে বারবার দেখিয়ে ধোঁকা দেয় ও বোকা বানায় মাকে।

এটা বিখ্যাত একটা বিস্ট ফ্যাবল থেকে নেওয়া, যা দেশের বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাত সাতবার নির্বাচিত সাবেক সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ- ৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) এর নির্বাচনী মাঠের এহেন উপযোগীতাকে নির্দেশ করে।

এই দেশে কোনও দল রাজনীতি করতে চাইলে সবার আগে আদর্শের মূল দুটি ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। একটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, অন্যটি বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু দুটি নাম, একটি সত্তা। তাঁর ভাষণ যতই শুনি না কেন ততই যেন শেখার থাকে।

বিজ্ঞাপন

সংখ্যাগরিষ্ঠতার গণতন্ত্র নয়, চাই ন্যায্যতার গণতন্ত্র। ন্যায্যতার গণতন্ত্রের শেষ কথা মানা যায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণকেই– ‘আমি বললাম, এ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবো; এমনকি আমি এ পর্যন্তও বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনও যদি সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।’

বঙ্গবন্ধু উপরিউক্ত বক্ত্যের প্রতিধ্বনি ও প্রয়োগ মিলে তাঁরই সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বস্ত সহচর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দুবারের রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের জীবনাচরণে ও কথায়। তাঁর কথার নির্যাস হলো- ‘সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু সবকিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা যায় না।’

তাঁর স্পষ্টবাদীতা, স্বদেশপ্রেম, মা মাটি ও মানুষের প্রতি ব্যাকুলতা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত এবং রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি অনুরাগ, অন্যদিকে শত জেল-জুলুম, সামরিক শাসকদের মন্ত্রীত্বের লোভনীয় টোপ ও রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে কতো যে একনিষ্ঠবান ছিলেন তাঁর স্পষ্ট সত্যবাকেই প্রতীয়মান হয়।

‘লাইগ্যা থাকলে মাইগ্যা খায় না’– তাঁর এই প্রিয় আপ্তবাক্যের প্রতি আজীবন অটুট থাকায় তিনি দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে সাফল্যের শীর্ষত্বে দেশীয় পরিধি পেরিয়ে বিশ্বসভায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তাঁর মতে, ‘রাজনীতি হচ্ছে মানুষের মনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা।’

‘ভাটির শার্দূল’ খ্যাত ‘স্বপ্নের হাওর’ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা আদর্শিক রাজনীতির সারথি সর্বজনগ্রহণযোগ্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ শহুরেদের ‘ভাইট্ট্যা গাবর উত্তইরা ভূত’ তুচ্ছতাচ্ছিল্যকে তুষ্টিসাধন করেছেন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আলোকিত হাওর গড়ে এবং ভাইট্টা ভাষাকে শৈল্পিক রূপ দিয়ে। তাঁর কাজের ধারা এখনও অপ্রাক্তন এবং স্বপ্ন আর অঙ্গীকারে অকুতোভয়।

এলাকায় বিভিন্ন সময়ে সফরকালে ও মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পল্লীতে অনুষ্ঠিত ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে এবং হাওরে বিগত বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় যেসব কথা বলেছেন তা হাওরবাসীরই কণ্ঠস্বর।

‘রাজনীতিতে জনগণই মুখ্য’ উল্লেখ করে তিনি রাষ্ট্রপতি হবার গোমর ফাঁস করে দিয়ে আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘লোকটি (আবদুল হামিদ) কারও উপকার করতে না পারুক কিন্তু কারও কোনো ক্ষতি করবে না’– এই বিশ্বাস ও ভরসা থেকে এবং বড় মায়া করে এলাকার মানুষ আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন। নীতিতে অটুট থাকায় হাওর থেকে বঙ্গভবনের বাসিন্দা হয়েছি। ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি হয়েছি ব্যাকব্যাঞ্চের এমপি থেকে। লোকেও কয়, আমি তাঁদের ‘স্যান্ডেলপড়া’ রাষ্ট্রপতি।

রাজনীতিতে নীতি, সততা ও নিষ্ঠা আদর্শের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, রাজনীতি হালে ‘পলিট্রিক্স’ হয়ে গেছে। রাজনীতিতে ‘বহুমুখী’ কৌশল থাকবে ঠিক আছে, কিন্তু ‘বহুরূপী’ কৌশলে রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, প্রায়ই দেখছি রাজনীতিকদের বাইরের রূপ এক আর ভেতরেরটা আরেক। এই কারণেই রাজনীতি-পলিটিক্স ও নেতাদেরকে এখন ঘৃণার চোখে দেখছে মানুষ। ফলে পলিটিশিয়ান বা রাজনীতিবিদদের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে বলে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি।

মানবসত্তার অধিকারী এই রাষ্ট্রনায়ক বিষয়টি খোলাসা করতে গিয়ে বলেন, কারও কথা ও কাজে গড়মিল দেখলে লোকে একজন আরেকজনকে বলছে আমার সাথে ‘রাজনীতি’ করছ? আর কৌশল পরিলক্ষিত হলে বলছে ‘পলিট্রিক্স’ করছ? তাছাড়া বেডাগিরি বা ক্ষমতা প্রকাশ পেলে বলছে ‘নেতাগিরি’ করছ?

তিনি অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেন, এতে নেতা ও রাজনীতি শব্দগুলা পরিণত হয়েছে গালিতে।
এই যেমন- রাজাকারী করা, মীর জাফরী করা এবং হিটলারী ও কিসিঞ্জারী বুদ্ধি বলে বিশেষণে সবিশেষ কহিবারে পারি।

এর জন্য রাজনীতির ভুল চর্চা ও অপপ্রয়োগকে দায়ী করেছেন রাষ্ট্রপতি। উত্তরণের পথে এগোতে লীগ নেতাকর্মীদের ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ছেড়ে কারোর ‘ক্ষতির চিন্তা’ ও কূটবুদ্ধি বাদ দিয়ে জনকল্যাণে ব্রত হয়ে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জোরালো তাগিদ দিয়ে গেছেন তিনি।

কার্যত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১৩ সাল থেকেই মাঠের রাজনীতির বাইরে। ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি তাঁর অজানা। যা বলেছেন তা দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা থেকে। তাঁর সাথে সাক্ষাৎপ্রার্থী যারা হন বা হচ্ছেন তারা ব্যক্তিস্বার্থে ‘বাইলের বৈঠা’ বাইয়া আসেন। আর যদি নেতা হয় তাহলে তো ‘পাল উড়ায়’ আর কি। অন্যদিকে তৃপ্তির উৎস থেকে ‘নি:নায়ের অনেক নাও’ হয়ে কিছুসংখ্যক স্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তি তোষামোদির প্রোপাগান্ডায় সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতৃত্বও অনেকটা ‘হেপ্নোটাইজড’ বা মোহাবিষ্ট হয়ে পরেছেন। গুণগানেই বেশি তুষ্ট থাকছেন। হজম হচ্ছে না নেতিবাচক কোনো কথা।

তাছাড়া সমাজের বাস্তবতা কিংবা নির্বাচনী মাঠ বড়ই কঠিন ও রূঢ়, যা ড্রোন ক্যামেরায় কিংবা গোটাকয়েক নেতা ও ব্যক্তি অনুগামীদের শিরগ্রিবায় ধরার পড়ার নয়। কতিপয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতার সাবোটাজ বা অন্তর্ঘাতে জনবিভাজন চলছে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক, অনুগামী, শুভার্থী ও শিক্ষকসহ পেশাজীবী-চাকরিজীবী চিন্তকদের ভিতরে। ব্যক্তি অনুগামীতার মেরুকরণে ‘ইগো-সেন্ট্রিক পলিটিক্স’ এমনি বলিয়ান হয়ে উঠেছে যে, যা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের একটা উদ্ধৃতি না টানলেই নয়। তিনি বলেছেন, ‘লিডার ইজ নেভার রং, লিডার ইজ অলওয়েজ কারেক্ট’– এ কনসেপ্টেরই হাওয়া বইছে হাওরের তৃণমূলে। এতে জনতার রাজনীতিতে অভিষেক না হয়ে, অভিষেক হচ্ছে ব্যক্তি কর্তৃত্বপরায়ণে ও প্রভুত্বে। ফলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জনগণের কাছে নির্ভরশীল থাকলেও হালে জনসাধারণ বহুরূপী কৌশলে ‘স্কেপগোট’ বা বলিরপাঁঠা, যা গড়াচ্ছে অভিশাপে।

রাজনীতি কিন্তু সম্ভাব্যতার শিল্প। রাজনৈতিক দল ও নেতারা যেকোনো পরিস্থিতিতে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারে। এক যুগের ব্যবধানে হাওর জনগোষ্ঠীর যথার্থ রাজনৈতিক শিক্ষার ঘাটতি ও চর্চাতে একটি বৃহত্তর এবং গভীরতর প্রশ্ন উঠেছে- রাজনীতি ও সমাজনীতিতে কোন্ সম্ভাব্যতা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওরে? এই নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষিত থেকে ঠিক কী অপেক্ষা করছে আমাদের ভবিষ্যদিনের জন্য? আমাদের ভাবতে হচ্ছে আগামীতে কারা রাজনীতিতে আসবে, তারা কোন্ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের রাজনৈতিক আচরণ কতটা রাজনৈতিক আর কতটা সুবিধা আহরককেন্দ্রিক হবে- এইসব।

রাজনৈতিক দল একটা করপোরেশন নয় যে কিছু দক্ষ মানুষ সেটা কর্পোরেট কায়দায় চালিয়ে নিয়ে যাবে। সবার আগে তাদের প্রয়োজন কিছু নীতি-আদর্শের। নতুবা তা দিয়ে আস্তাকুঁড় ভরা যাবে, কিন্তু রাজনৈতিক দল টিকিয়ে রাখা যাবে না।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাজনীতিতে নেতা হচ্ছে কাজ পরিচালনা করা, নিয়ন্ত্রণ করা ও কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার প্রক্রিয়া। অন্যদিকে নেতৃত্ব গড়ে উঠার জন্য আবশ্যক তিনটি উপাদান- নেতা, অনুগামী ও পরিস্থিতি। এখানে নেতার কাজ হচ্ছে অনুগামীদের দলের প্রতি অনুপ্রাণিত করা ও পরিস্থিতি অনুকূলে রাখা।

এক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিশ্বস্ত সেজে দলেরই কৃপা পেয়ে কতিপয় নেতা রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটি ও পঞ্চায়েতসহ হাওরোন্নয়ন সুবাদে বিভিন্ন সুবিধাজনক সেক্টরে কেষ্টবিষ্টু বনে শুধু নয়, মাকাল নেতৃত্বর অনুপ্রবেশ ঘটিয়েও পরিস্থিতি অনুকূলে রাখছেন বটে! কিন্তু দলীয় অনুগামী তৈরির ক্ষেত্রে নয়, তৎপর কেবল ব্যক্তি অনুগামী তৈরির মাধ্যমে ‘দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়’ ইমেজ গড়তে।

পুরো প্রক্রিয়াগুলোই সাবোটাজ বা অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা, যা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও লক্ষ্যভেদে অব্যর্থ। এর মাধ্যমেই পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নকে পর্যন্ত ভেঙে খানখান করতে পেরেছিল আমেরিকা, যা সম্ভব হতো না সাবভারশন বা নাশকতা দিয়ে।

গ্রামের সাধারণ মানুষটিও এখন একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার সাথে মিলিয়ে ‘জেনারেলাইজ’ করছে বা মিলিয়ে দেখছে। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দু-চারজন মিলে গিয়ে দেখাচ্ছেন ‘মুই এলাকা ধরে রাখছি’ অন্যদিকে এলাকায় ফিরে দেখাচ্ছেন ‘মুই হামিদ সাইবের লোক’–দুই জায়গায় দুই কথা বেচার ধূর্ততা লোকে ধরতে পারলেও করণে অসহায় সর্বসাধারণ। পরিণতি হিংস্র বাঘকে প্রশ্রয় দিলে নিরীহ হরিণের যা হয় আর কি। হাওরে হালে নেতৃত্ব নয়, কর্তৃত্ব চলছে।

আসনটি পাদপ্রদীপের নিচে হলেও দরদি প্রদীপটি নিভতে বসেছে। নৌকার কাণ্ডারি এখন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জ্যেষ্ঠপুত্র তিনবারের নির্বাচিত এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। বাবা রাষ্ট্রপতির মতো সাদাসিধে, জনমুখী ও কাজপাগল হওয়ায় প্রত্যন্ত হাওর এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় ও তীর্থ স্থানে পরিণত হলেও তা আর্দ্র করছে না দারোগার নায়ের মাঝিদের দৌরাত্ম্যে এবং ‘গাঁজার নাও পাহাড় ডিঙাতে দেখে’। কেননা, স্বপ্নের সাথে মনের যোগসূত্র অবিচ্ছেদ্য থাকায় রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলেও দিচ্ছে অশনি সংকেত, যা ফিনিশ না হয়ে ফিনিক্স হয়ে জ্বলছে।

আয় বৈষম্য, প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও জনমত একত্রে চলে না। এই উপলব্ধি থেকে চেনা বামনের অচেনা রূপটিও চিনে নিতে হবে। পাশাপাশি ‘আই হেটস্ পলিটিক্স’ ছাড়াও ‘ডিনিয়াল সিন্ড্রোম’ থেকেও বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রপতি বাবার লেগাসিতে ব্রতী হওয়ার বিকল্প নেই এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের। কেননা, দেবতার আড়ালে যে অসুর হাসছে।

উত্তরণ কীভাবে সম্ভব? পোড়খাওয়া দক্ষ রাজনীতিক-সংগঠক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বুঝতেন, নায়ের এক নাও, নি:নায়ের অনেক নাও। আর একমাত্র নেতাকর্মীরাই অনুগামী তৈরি করে না, একটি দেশে রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শকে এগিয়ে নিতে সকল শ্রেণি মানুষ-চিন্তকদের অংশগ্রহণ আবশ্যক। যে কারণে ‘ফেসভেলু’ রাজনীতি নয়, ‘বেস্টওয়ান’ও নয়, নেতাকর্মী-অনুগামী-শুভার্থী চিন্তকদের সমমূল্যায়ন করতেন এবং দেখতেন উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে। একই মোহনায় সবাইকে ধরে রাখতেন হ্যামিলনের বাঁশির সম্মোহনীর শক্তিতে। ‘কান কথায় কান’ দিতেন না যেমন, তেমনি কেউ সুযোগ পেতেন না ‘দারোগা নায়ের মাঝি’ সাজার।

তাঁর ‘মানুষ’ চেনার অভিজ্ঞা অসাধারণ। মানুষের মন, নাড়ি ও গতিবিধি বুঝতেন তিনি। বলতে গেলে প্রতিটি গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষকে নামে চিনতেন। গ্রামের কেউ তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে অন্যথা ফেলে আন্তরিকতায় নামধরে বলতেন, অমুক-তমুকদের তো লগে দেখছি না! তারা আইছেনা ক্যারে? ক্যামন আছে ওরা, ভালা-নি? বাড়িতে গিয়া আমার ছালাম/আদাব জানাইবা, আইতে বলবা। ব্যস, ‘মুই কি হনুরে’ ও ‘বেস্টওয়ান’ বনা এবং ‘ফেসভেলু’ তৈরির দুরভিসন্ধি ও ‘ইগো-সেন্ট্রিক পলিটিক্স’ যেত ফিনিশ হয়ে।

ভিলেজ পলিটিক্সে ছাড় পাচ্ছে না গ্রামের মানুষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নে অবস্থিত ‘শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা’ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নিজভূমে পরবাসী এবং বগাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজশে তারই নিকটাত্মীয়ের কাছে কাগজের ফাঁকফোকরে গোপনে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি ‘টক অব দ্য হাওরে’ পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সংকট সঠিক সুরাহা না হওয়ায় বৃহত্তর একটি এলাকার জনগোষ্ঠী ফুঁসে উঠছে।

মূলের উৎস তৃণমূল। ৩০০ জন এমপি’র মধ্যে প্রায় ২৬৫ জন এমপি নির্বাচিত হন তৃণমূল থেকে। ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সানাই বেজে উঠেছে। সেই সুর শিবরঞ্জনীর বেহাগের করুণ সুরে পরিণত হবার আগেই ফিরে তাকানো অত্যাবশ্যক কিশোরগঞ্জ হাওরের নির্বাচনী মাঠের উপযোগীতা বা পরিস্থিতির দিকে।

টানা তিনবার ক্ষমতায়নে উন্নয়নের অভিযাত্রায় ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ গড়ে উন্নত রাষ্ট্র গড়তে আওয়ামী লীগের স্বপ্ন রয়েছে ২০৪১ সাল নাগাদ দেশ পরিচালনা করার। স্বপ্ন ছুঁতে, ‘অন্তর হোক নৌকার নোঙর’।

লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা

সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই

রফিকুল ইসলাম হাওরের রাজনীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর