রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের হাওর সফর এবং ৪৫টি প্রস্তাবনা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৭
রাষ্ট্রীয় এক সফরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি হাওর কেন্দ্রবিন্দু কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন সফরে আসবেন। তিনি এর আগে বিগত ১৯৯৮ সালে এসেছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও জন্মভূমিতে আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ফের আসছেন। একই সাথে একই উপজেলায় রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের সফর সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ ও নজিরবিহীন। এ নিয়ে হাওরাঞ্চজুড়ে চলছে সাজ সাজ রব। বইছে আনন্দের বন্যা। স্বাগত জানাতে লাখো জনতার ঢল নামবে এ দিন। আর চিন্তকদের কথায় ওঠে আসছে হাওরাঞ্চল উন্নয়ন ভাবনা।
ইতিহাস ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশের উত্তর-পূর্বাংশের এক-পঞ্চমাংশ ভূ-খণ্ড কিশোরগঞ্জ জেলাসহ সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ৪৮ উপজেলা হাওর বা ভাটি অঞ্চল নামে খ্যাত। বর্তমানে হাওরাঞ্চলে প্রায় দু’কোটি লোকের বসবাস। যা মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশ। আর প্রায় এক পঞ্চমাংশ ভৌগোলিক সীমানা।
সম্ভাবনাময় অঞ্চল হাওর
ব্লু ইকোনমিক অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতির উর্বরক্ষেত্র ও মিঠাপানির আধার বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল। কৃষিজ ও প্রাণিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল এটি। প্রায় ১২ হাজার বর্গমাইল ভূ-খণ্ডের প্রায় ৩০ লাখ একর আবাদযোগ্য জমি, নদী, জলমহাল, জলাশয় ও হাওর-বাওড়ের বিশাল জলরাশি এবং দু’কোটি মানুষ এখানকার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। হাওরের মাটি, পানি এবং মানবসম্পদ- এই তিন সম্পদের সমন্বিত ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি।
হাওর অঞ্চল কৃষিজ উৎপাদনে ও কৃষিজ দ্রব্যাদির শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাসহ অতিরিক্ত মৎস্য ও মৎস্যজাত সামগ্রী রফতানি এবং বিভিন্ন খামার, উপযোগী শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এলাকা। সরকারের দক্ষ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি ও মৎস্য বিষয়ক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথাপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানো গেলে শুধু ধান ও মৎস্য খাত থেকেই দেশের মোট খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মেটানো সম্ভব হতে পারে। গবাদিপশুর উন্নয়নসহ কৃষিজ ও প্রাণিজ সম্পদের ব্যাপক পরিধির দৃশ্য ও অদৃশ্যমান সমস্ত খাত থেকেই জাতীয় সার্বিক উন্নয়নে সরকারি যে কোনো ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে ব্যয়ের তুলনায় আয়ের বিস্তর সুযোগ রয়েছে এখানে। কিন্তু এ জনপদটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ন্যায় এখনও পশ্চাৎপদ ও তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিত। এহেন অবস্থানে তিরস্কার করা হয়ে থাকে ‘ভাইট্টা গাবর উত্তইরা ভুত’ বলে।
হাওরাঞ্চল রক্ষা ও উন্নয়নে প্রস্তাবনা
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাওরে শুভাগমন উপলক্ষে কিছু উন্নয়ন প্রস্তাব তুলে ধরা হলো-
১. দুর্যোগ মোকাবেলা, হাওর রক্ষা ও হাওরের মানুষের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতীয় পর্যায়ে ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ড’ পুনরুজ্জীবিত করে হাওরবাসীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ বিবেচনায় এনে বিশেষ কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করতে পৃথক ‘হাওর মন্ত্রণালয়’ গঠন করা জরুরি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) জাতীয় সংসদদের এমপি থাকাকালীন সর্বপ্রথম বিগত ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সুচিন্তিত এ দাবি পেশ করেছিলেন- যা আজ সময়েরও দাবি।
২. রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠপুত্র তিনবারের নির্বাচিত এমপি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ডাক-টেলি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ কৃষক লীগের উপদেষ্টা প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে মন্ত্রীত্ব দেওয়া।
৩. একটি জাতীয় সুবিন্যস্ত হাওর উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা। এর মাধ্যমে হাওরের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।
৪. নদীর নাব্যতা ও গতিশীলতা আনতে এবং অকাল বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিকল্পনা নিয়ে সরকারি শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনায় আওতায় এনে মিঠাপানির উৎস ভরাট নদী-নালা, খাল-বিল-ঝিল, হাওর, পুকুর, দীঘি, জলাশয় ও জলমহাল পুনঃখনন করা, বাঁধ-বেড়িবাঁধ, জলাধার, স্লুইসগেট, রেগুলেটর ব্যারেজ ইত্যাদি নির্মাণ করা এবং নদী সোজাকরণ (লুপকাট) অপরিহার্য। এক্ষেত্রে ড্রেজিং এর মাটি দিয়ে বর্ষার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া বা বিধ্বস্ত গ্রামগুলো ভরাট ও গৃহনির্মাণ করে পুনর্বাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
৫. হাওরাঞ্চলে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ তথা আফালের ফলে সৃষ্ট ভূমিক্ষয়রোধ ও ভূমি পুনরুদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হাওরের ভূমিক্ষয় ও ভাঙনরোধে তথা নদীর তীরবর্তী গ্রাম, নদী ভাঙন ও বর্ষার উত্তাল ঢেউ-বান বা আফাল থেকে স্থায়ী সুরক্ষার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে রিটেইনিং ওয়াল ও পাইলিং রিটেইনিং ওয়াল দেওয়া।
৭. হাওরের প্রতিটি গ্রাম ও পাড়ায় ড্রেজারের মাটি ফেলে প্রশস্ত করে পাকা প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা। এতে বারো মাসই বাণিজ্যিক ও পারিবারিক উদ্যান ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৮. অধিক ব্যয়বহুল হলেও পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে শহরের সঙ্গে হাওরের ‘অদিন-সুদিন’ বারো মাসই নৌ ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা। এতে বিভিন্ন খামার, কুটির শিল্প ও শিল্পকারখানা স্থাপন, কৃষি উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন, কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী বাজারজাতকরণ, যাতায়াত ও পরিবহন, বনজ সম্পদের সংগ্রহ ইত্যাদি ত্বরান্বিত হবে এবং নতুন নতুন ব্যবসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ ভারত ও ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু অধিক বেগবান হবে।
৯. হাওরাঞ্চলে দুটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল নির্ধারণ করা এবং সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলা। এ সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি-উন্নয়ন, কুটির শিল্প স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা সুযোগ সৃষ্টি করা।
১০. কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রের আধুনিকায়নে হাওরাঞ্চলের ভূমিব্যবস্থাপনা এবং কৃষি ও মৎস্যনীতি ঘোষণা করা। তাছাড়া আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি-যন্ত্রপাতির ব্যবহার সুলভ ও সম্প্রসারিত করা।
১১. কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
১২. ব্যাপক পরিমাণে হাওরে সরকারি খাদ্যগুদামে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে বোরো ধান সংগ্রহ করা।
১৩. ‘কৃষিবীমা’ চালু করা এবং বর্ষাশেষে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ ও পর্যাপ্ত কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা।
১৪. মৎস্য উৎপাদন টেকসই করতে নতুন উদ্যোক্তাদের কমসুদে ঋণ দেওয়া।
১৫. অধিক উৎপাদনের লক্ষে হাওরসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ ও শস্যের এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা।
১৬. প্রতিটি গ্রামে ও পাড়ায় এবং সেচ প্রকল্পে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা। এতে সেচ খরচ কমবে এবং হাওরবাসী আধুনিক জীবন পাবে।
১৭. হাওর ও ফসলি মাঠ থেকে পানি নিষ্কাশন এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পর্যাপ্ত স্লুইসগেট ও কালভার্ট নির্মাণ করা।
১৮. কৃষকের কাটা ধান ও শস্য-পণ্যসামগ্রী পরিবহনকল্পে ফসলি মাঠাভ্যন্তর দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি করা।
১৯. বন্যাকবলিত ধানের পচনরোধে হাওরের বিভিন্ন উঁচুস্থানে পাকা মাড়াইকেন্দ্র তৈরি করা এবং ধান শুকানো ও উড়ানোর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা- যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুহুর্তে অনায়াসে ধান তোলা যায়।
২০. আবাদী জমির পাশাপাশি সমস্ত অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় আনা এবং সবজি ফসলে গুরুত্ব দিয়ে এক ফসলি হাওরাঞ্চলকে বহুমুখী উৎপাদনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এতে দেশের মোট খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মেটানো সম্ভব হতে পারে।
২১. হাওরাঞ্চলের জলমহালগুলোর লীজব্যবস্থা বাতিল করে প্রভাবশালী ওয়াটার-লর্ডদের বা ইজারাদারদের কব্জামুক্ত করে প্রকৃত জেলে ও সাধারণদের মাঝে উম্মুক্তভাবে ছেড়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে উপজেলাগুলোর মৎস্য বিভাগ নদী, জলমহাল ও জলাশয়গুলো এবং বর্ষাকালে হাওরের বিশাল জলরাশিতে মাছের পোনা ছাড়ার পদক্ষেপ নেওয়া। এতে মৎস্য মজুদ ও উৎপাদন বাড়াতে ফলদায়ক হবে।
২২. ব্যক্তি উদ্যোগে হাওর, পুকুর, দীঘি, বিল-ঝিল ও জলাশয়ে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা। এতে দেশের আমিষ চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করার দ্বার অবারিত হবে। ফলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
২৩. বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণ সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে গৃহীত ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরীন ফিশারীজ প্রজেক্ট’ – এর ন্যায় ব্লু ইকোনমির সুফল পেতে হাওরাঞ্চলেও একটি পৃথক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা।
২৪. আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে কার্যকরী ব্যাপক ‘ওয়ার্কস প্রোগ্রাম’ চালু করা।
২৫. শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হাওরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় আয় বণ্টনের ব্যবস্থা করা।
২৬. আন্তঃযোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে হাওরবাসীদের অংশীদার করা। তাছাড়া অধিক ফসল ফলানোর লক্ষ্যে লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি বিষয়ক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার কৌশলের সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করার প্রয়াস নেওয়া।
২৭. বেসরকারি ছাড়াও চাষীদের মাধ্যমে সমন্বিত ধান খেতে মাছ চাষ প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া।
২৮. কৃষি বনায়ন ও সামাজিক বনায়নসহ হাওরে বনায়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা কার্যকর করা।
২৯. এরিয়াল সার্ভেভিত্তিক কৃষি ফসল উৎপাদনে শস্যক্রম ও শস্য আবর্তন এবং ফলদ বৃক্ষরোপণ এলাকা নির্ধারণ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
৩০. ওয়ার্ড শুধু নয়, গ্রাম পর্যায়ে বন্যাশ্রয় কেন্দ্র এবং অ-ডুবন্ত কবরস্থান নির্মাণ করা।
৩১. হাওরাঞ্চলে তেল, গ্যাস, কয়লা, পাথর, শামুক-ঝিনুকের মুক্তাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধানপূর্বক এর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩২. হাওরে পানি দূষণরোধে ও জ্বালানি সংকট নিরসনে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা।
৩৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ন্যায় হাওরাঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশ ও জলবায়ু, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবন-জীবিকা, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি বর্ণনা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা।
৩৪. কয়েকবছর মেয়াদি বিশেষ ‘কৃষি সারচার্জ’ চালু করা। যা কৃষিতে বিভিন্ন স্থায়ী উন্নয়নমুখী কার্যক্রমে ব্যয় করতে হবে।
৩৫. কৃষি অফিস উপজেলা সদর থেকে সম্প্রসারণপূর্বক প্রতি উপজেলাকে বেশ কয়েকটি অঞ্চল ও উপ-অঞ্চলে বিভক্ত করা। দুর্বল উৎপাদনশীল এলাকাগুলো উপ-অঞ্চল হবে। প্রতিটি অঞ্চলে গরু-ছাগল ও পোল্ট্রির সরকারি খামার গড়ে তোলা। যা খাদ্যের নিরাপত্তার অংশ বাড়াবে এবং জৈব কৃষিকে এগিয়ে নেবে।
৩৬. হাওরাঞ্চলে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা।
৩৭. হাওরাঞ্চলের সমাজ কাঠামোর সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় করে উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পথ উম্মুক্ত করে পর্যাপ্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
৩৮. হাওরাঞ্চলে বিদ্যমান ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা। এতে পর্যটকরা শুধু সমুদ্র সৈকতে নয়, রূপসী হাওরবাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে এ অঞ্চলেও ছুটে আসবে। আসছেও। ফলে সৃষ্টি হবে রাজস্ব আয়ের নতুন খাত।
৩৯. হাওরাঞ্চল রক্ষা এবং হাওরের মানুষের জীবনমান ও ভাগ্যোন্নয়নে ‘ন্যাশনাল হাওর অ্যালায়েন্স’ নামে একটি জাতীয় প্লাটফর্ম গড়ে তোলা। এতে সমমনা উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন সংগঠন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক, সাংবাদিক, উদ্যোক্তা, নারী ও কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে এই জোট।
৪০. প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার দেশের হাওরাঞ্চল রক্ষা ও অধিকার বঞ্চিত হাওরবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে সঠিক দিক নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
৪১. হাওরে জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকার সহায়তা ও বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে অভিযোজন সক্ষমতা গড়ে তোলার সরকারি উদ্যোগ নেওয়া।
৪২. উপকূলীয় অঞ্চলে নদী-শাসনের মাধ্যমে বন্যা প্রতিরোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ‘ফ্যাপ’ (ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান) প্রকল্পের ন্যায় হাওরাঞ্চলেও গ্রহণ করা।
৪৩. চাকরিতে হাওরকোটা বরাদ্দ এবং হাওরভাতা ও ঝুঁকিভাতা চালু করা। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ১৬টি উপজেলায় হাওরভাতা সরকারিভাবে চালু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধুবাদপ্রাপ্য। কিন্তু এতে বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা বঞ্চিত রয়ে গেছেন। তাদেরকেও এর আওতায় আনা।
৪৪. হাওরাঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বলে সরকার কর্তৃক জাতিসংঘের মানবিক বিষয়সংক্রান্ত বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
৪৫. হাওরাঞ্চলের সমস্যা, রক্ষা ও উন্নয়নে বহুল প্রচারে গণমাধ্যম ও গৌণ গণমাধ্যমের এগিয়ে আসা খুব জরুরি। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবেদন ও নিবন্ধন প্রকাশসহ টিভিতে ‘হাওর রক্ষা ও উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর শুধু লাখ লাখ মেট্রিক টন বিনষ্ট হয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও ফসলহানি এবং নদী আর হাওরের প্রলয়ঙ্করী ঢেউয়ে গ্রামের পর গ্রাম ভাঙন কেবল নয়; যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের ক্ষেত্রেও হাওরবাসী পিছিয়ে ও কমবেশি উপেক্ষিত।
বিএনপির ‘হাওয়া যুগ’ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার স্বর্ণযুগে প্রবেশ করেছে। দেশ আজ অবস্থান করছে তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ ও উন্নয়নের মহাসড়কে। দৃশ্যমান এই উন্নয়নের ঢেউ হাওরাঞ্চলেও বইছে।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা
সারাবাংলা/এসবিডিই
মত-দ্বিমত রফিকুল ইসলাম রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের হাওর সফর এবং ৪৫টি প্রস্তাবনা