Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজান না রামাদান?

শান্তা তাওহিদা
২৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:১৩

বাঙালিসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমরা প্রায় আবহমানকাল থেকেই রোজার মাসকে ‘রমজান’ বলে এসেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও শুভেচ্ছা বার্তায় ‘রামাদান’ বলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে!

রমজান না রামাদান কোনটি সঠিক তা বলতে গেলে এ আলোচনা কেবল বাংলাদেশের বাংলায় সীমাবদ্ধ রাখা রাখা যাবে না। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যান্য ভাষা প্রসঙ্গ এখানে আলোচনায় আসবে!

বিজ্ঞাপন

রমজান শব্দটির অর্থগত দিক নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। তাই এই আলোচনা কেবল শব্দ ও উচ্চারণে সীমাবদ্ধ রাখছি!

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের মূল স্রোত যখন প্রথম আসে, তখন তা পারস্য ভাবধারায় প্রভাবিত ছিল! ফার্সিতে যেহেতু শব্দটা রমজান – যেখানে /জ/ য়ের উচ্চারণটা /Z/ র মতো! রমজান বা রামাদান আরবিতে : رمضان‎‎ রামাদ্বান্ (সূরা বাকারা: ১৮৫) উল্লেখ করা আছে ‌; ফার্সিতে যা : رمضان র‍্যাম্‌জ্‌ন‌ ! বাংলায় /Z/ উচ্চারণটা নেই বলে বাঙালি মুসলিম রমজান উচ্চারণ করত।

কিন্তু গত এক-দেড়শো বছর ধরেই উপমহাদেশের ইসলামে আরবিকরণের একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরবিতে /জ/উচ্চারণটা নেই, তার জায়গায় /ধ/ আর /Z/ র মাঝামাঝি উচ্চারণ করা হত- আর সেটা অনুসরণ করে ইদানীং রামাদান বলা হয়।

ভারত ও পাকিস্তানের উর্দু ভাষী মুসলিমরা রামাদানের বদলে ‘রমজান’ বলা উচিত এটা আবার কারো কারো যুক্তি! কারণ উর্দুতে মূল শব্দটা রমজান। কিছুতেই রামাদান নয়।

তাহলে রমজান না কি রামাদান – মুসলিমদের জন্য কোনটা সঠিক/ বেশি সঠিক?

কেউ কেউ মত দিয়েছেন, কোরানে তো রামাদান-ই বলা আছে, কাজেই ওটাই ঠিক মানতে হয়। সাধারণত ইসলামে শিক্ষিত লোকজন রামাদানই বলেন! তবে রমজান না বলে রামাদান বলাটা ক্রমবর্ধমান আরবি প্রভাবের চেয়ে বরং একটা ‘শুদ্ধিকরণের প্রবণতা’! আসলে আরবি ভাষায় /জ/ শব্দটাই নেই – ওই জায়গায় তারা যেটা বলে সেটা অনেকটা /ধ/ এর কাছাকাছি!

বিজ্ঞাপন

বাঙালিরা যেভাবে রমজান বলে সেখানে /জ/ য়ের উচ্চারণ হওয়া উচিত /Z/ র মতো, যে কারণে অনেকে আবার রমযান লেখেন। তবে শুদ্ধ আরবিতে বলতে গেলে ‘রামাধান’-ই বলা উচিত, কারণ ওটাই সবচেয়ে কাছাকাছি উচ্চারণ!

আরেকটি মত হল- আরবিতে সোয়াদ এর /দ/- /দ/ উচ্চারণ নয় আবার /য/ এরও নয়, মাঝামাঝি একটি উচ্চারণ রয়েছে! বিতর্কিত উচ্চারণের উদাহরণ দেই- দোয়ল্লিন ও যোয়াল্লিন দুটিই উচ্চারণ ( /দ/ /য/ নরম করে উচ্চারণ) করা হয়, যা বাংলায় মাঝামাঝি উচ্চারণ!

অনুরূপ রমযান এর আরবি /দ/ নরম করে /দ/ ও /য/ এর মাঝামাঝি উচ্চারণ হয়!

গন্ডগোলের আরো একটা জায়গা আছে- ইংরেজিতে Ramadan শব্দটা লেখা হলেও বাংলায় ‘রামাদান’ শুদ্ধ নয়। কারণ আরবিতে /আ/ র কোনও বালাই নেই, যারা রামাদান লিখছে তারা ইংরেজি বানান অনুসরণ করে লিখলে সেটা সঠিক হয় না!

তবে বিদেশি উৎস ভাষার উচ্চারণের বাইরে সাধারণ মানুষের একটা নিজস্ব ভাষা মুখে মুখে তৈরি হয়ে যায়, তাতে যে ভাষার ব্যাকরণগত শুদ্ধতা সব সময় থাকে তা নয়। বাংলা ভাষার পরিভাষা তৈরিতে রমযান/রমজান শব্দটাও সেভাবেই সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে!

উচ্চারণের দিক থেকে বাংলায় রমযান ও রমজান এক হলেও বানানে গিয়ে আবার /জ/ ও /য/ দুটি হরফ দিয়েই লেখার চল আছে! তবে সম্ভবত রমজান /জ/ দিয়ে লেখার চলটা জাতীয় কবি কাজী নজরুলের “রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে! এই গানের /ঈদ/ /ই/ দিয়ে হবে নাকি /ঈ/ হবে তা আপাতত বাদ রাখলাম!

সুতারাং রমজান, রমযান, রামাদান, রামাধান কোনটিই ভুল নয়!

আপনাকে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষায় মাহে রমজানের শুভেচ্ছা! সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই তার বান্দার ভাষা বুঝেন!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

মত-দ্বিমত রমজান না রামাদান? শান্তা তাওহিদা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর