Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পার্বত্য অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য কমানো জরুরি

সুমিত বণিক
৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:১৬

সকলের জন্য স্বাস্থ্য এমন একটি ধারণা, যা আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জাতি, লিঙ্গ বা অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাপ্যতাকে প্রচার করে। এই ধারণা তত্ত্বটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে, প্রত্যেক মানুষেরই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোতে প্রবেশাধিকার রয়েছে, যার মধ্যে প্রতিরোধমূলক যত্ন, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং রোগের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেই সাথে ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ তত্ত্বটি মূলত স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তিতে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমাতে এবং ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা ভোগের জন্য কাজ করে। এই সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিকারকর্মীরা নিশ্চিত করতে চায় যে, প্রত্যেকেরই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যেটি ভোগের মাধ্যমে একজন মানুষ সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা নির্বাচিত একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বিষয় সম্পর্কে সর্বজনীন সচেতনতা তৈরি করা। এর লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক জনসংখ্যাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এমন উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো তুলে ধরা এবং সরকার, উন্নয়ন সংস্থা এবং ব্যক্তিদেরকে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা। এই দিনটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সর্বজনীন সুস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা এবং এ সংক্রান্ত সহায়ক নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে অ্যাডভোকেসি করার জন্য একটি সুযোগ।

বিজ্ঞাপন

১৯৪৬ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিশন গঠন করা হয়, যার লক্ষ্য ছিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রূপরেখা তৈরী করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডব্লিউএইচও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার দিকগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ডব্লিউএইচও এর প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়। সর্বপ্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা শুরু হয় ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে। সেই ঐতিহাসিক দিনকে মাথায় রেখেই এই তারিখ বেছে নেওয়া। প্রতি বছর বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বিবেচনা করে এবং এটি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য একটি নতুন প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়। ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’। সর্বত্র সচেতনতা বৃদ্ধিতে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) মূলত দিবসটি পালনের মাসাধিক পূর্বে প্রতিপাদ্যটি প্রকাশ করে।

দেশের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণে বৈষম্য একটি প্রধান সমস্যা। কারণ এটি বিভিন্ন প্রত্যন্ত বা গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের জন্য সেবা ভোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করে। গ্রামীণ প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় এই সমস্যাটি আরও প্রকট। সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে কিংবা একই জেলার মধ্যে শহরের তুলনায় প্রত্যন্ত গ্রামে এই সমস্যাটি বেশি দৃশ্যমান। আর তাই সেবাপ্রাপ্তি বা স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রবেশাধিকারে গ্রাম ও শহরের মধ্যে এই বৈষম্য নিরসন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) অঞ্চলে দুর্গম ভূখণ্ড, দীর্ঘায়িত আর্থ-রাজনৈতিক বিরোধপূর্ণ সমস্যা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মীদের স্বল্পতা, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাবের কারণে এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই অঞ্চলের প্রান্তিক এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বাধার সম্মুখীন হয়। সরকার ইতোমধ্যে এই এলাকাসমূহে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ এবং আরও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী নিয়োগ। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্নতার (সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে) কারণে, স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীর বিশেষ চাহিদার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছে। সরকার বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের কাছে আরও উন্নত সেবা পৌঁছে দেবার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কিছু জাতীয় নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। সংক্ষেপে এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১) মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা (MCH) কর্মসূচি: সরকার নারী ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। ২) জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি: সরকার একটি জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি তৈরি করেছে যাতে নারীদের স্বাস্থ্য এবং অধিকার, লিঙ্গ-সংবেদনশীল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৩) কমিউনিটি ক্লিনিক: সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীসহ মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। ৪) পরিবার পরিকল্পনা: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নারীদের গর্ভনিরোধক সেবা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদানের জন্য সরকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ৫) নিরাপদ মাতৃত্ব কর্মসূচি: সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মহিলাদের মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য একটি নিরাপদ মাতৃত্ব প্রচার কর্মসূচিও চলমান রয়েছে। ৭) জেন্ডার সংবেদনশীলতা: সরকার স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং নেতৃত্বের পদে প্রবেশাধিকারসহ স্বাস্থ্যখাতে নারীদের সমান সুযোগগুলো নিশ্চিত করার জন্য লিঙ্গ-সংবেদনশীল নীতি, নির্দেশিকা এবং কৌশলগুলো তৈরির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। সামগ্রিকভাবে, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে এবং স্বাস্থ্যখাতে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন বলে বিভিন্ন প্রকাশনা সূত্রে অবগত আছি।
প্রকাশিত গবেষণা ‘অ্যাকসেস টু মেটারন্যাল হেলথকেয়ার সার্ভিসেস এ্যামং ইন্ডিজেনাস ওমেন ইন দ্যা চিটাগং হিল ট্রাক্টস, বাংলাদেশ: এ্যা ক্রস-সেকশনাল স্টাডি’ প্রতিবেদন সূত্রে অনুসারে জানা যায়; ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের মধ্যে জাতীয় গড় অনুযায়ী মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবা (MHC) পরিষেবাগুলোতে প্রবেশাধিকার করার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। স্থানীয় পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে আরও ভাল স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রবেশাধিকারের মাত্রা উন্নত করা যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্যেও দেখা যায় যে এখনও, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনপদে স্বাস্থ্য পরিষেবায় কিছু সমস্যা বিরাজমান রয়েছে, বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্য। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে রয়েছে: ১) স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে অপর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য পেশাদার কর্মীদের অভাবের মুখোমুখি। দারিদ্র্য, দূরত্ব এবং দুর্গম পরিবহন ব্যবস্থার মতো কারণগুলোর কারণে অনেক নারীকে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা পেতে লড়াই করতে হয়। ২) সচেতনতা এবং শিক্ষার অভাব: পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান রয়েছে, যা মাতৃ মৃত্যু, অপুষ্টি এবং অন্যান্য অবস্থার মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর দিকে ধাবিত করে। ৩) মা ও শিশু মৃত্যুর হার: পার্বত্য চট্টগ্রামে মাতৃমৃত্যুর হার জাতীয় গড় থেকে অনেক বেশি। স্বাস্থ্যসেবার সীমিত প্রবেশাধিকার, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অপর্যাপ্ত এবং প্রসব পরবর্তী যত্ন এবং কিশোরী গর্ভধারণের উচ্চহার মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরহারের পিছনে কিছু কারণ। ৫) ঐতিহ্যবাহী প্রথা: পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রথা, যেমন বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা, মাসিক ব্যবস্থাপনা, গর্ভাবস্থা, সন্তান প্রসব, গর্ভনিরোধ এবং গর্ভপাত সংক্রান্ত অনিরাপদ চর্চা নারীর স্বাস্থ্য ও কল্যাণকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। ৬) অপর্যাপ্ত তহবিল এবং সংস্থান: সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থাগুলো প্রায়ই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়, যা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা প্রদান প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। ৭) ভৌগোলিক বাধা: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলগুলো দুর্গম এবং রয়েছে দুর্বল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা। এই সীমাবদ্ধতাগুলো নারীদের জন্য সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা, ওষুধ এবং সরঞ্জামগুলো পেতে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। ৮) সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণ: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নারীরা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন কারণ অনেক ক্ষেত্রে তারা সাংস্কৃতিক নিয়মের অধীন, যা নারীর প্রতি জেন্ডার বৈষম্য করে। এই সাংস্কৃতিক অভ্যাস এবং বিশ্বাস নারীদের চিকিৎসাসেবা নেওয়ার ক্ষমতাকে বাধা দেয়, তাই তাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ৯) দূর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো অপর্যাপ্ত, এবং এর গুণমান নির্ধারিত আদর্শ মানের সাথে মেলে না। এই অবকাঠামোগত ব্যবধান নারীদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, যেখানে তাদের প্রয়োজন মেটাতে স্বাস্থ্য সুবিধা, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মী এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের সীমিত প্রবেশাধিকার রয়েছে।

একটি আশাবাদের বিষয় হলো, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া কিশোরী ও যুবতী নারীদেরকে সম্পৃক্ত করে ‘আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত এই কর্মসূচির আওতায় পার্বত্য এলাকার ১০-২৫ বছর বয়সী প্রায় ১২ হাজার কিশোরী ও যুব নারী সম্পৃক্ত রয়েছে। তারা প্রকল্প কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কৈশোরবান্ধব সেবার পরিসর ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের প্রতি এক ধরণের বিশেষ চাহিদা ও আকাঙ্খা তৈরি হচ্ছে। যেটিকে স্বার্থক করতে হলে প্রয়োজন, সেবা কেন্দ্রগুলোকে কৈশোরবান্ধব সেবাদানের জন্য নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উপযোগী স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত হয় পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় জনগণের অংশীদারত্ব বেড়েছে। স্থানীয় পার্বত্য জেলা পরিষদ স্থানীয় উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে। তবে পার্বত্য এলাকায় সরকারি হিসেবে যেসব অবকাঠামোগুলো সচল ও সক্রিয় আছে বলে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই বাস্তবে নিষ্ক্রিয় ও সেবামুখী নয়। পাশাপাশি কোন কোন এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে কিন্তু সেবা গ্রহীতার উপস্থিতি খুব নগণ্য। তাছাড়া পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী মানুষসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তা খুব কম।

এই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ও হাম রোগের প্রকোপ সারাদেশের তুলনায় খুব বেশি। প্রায়শই নিরাপদ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগেরও বিস্তার এবং অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ঘটে থাকে। প্রাসঙ্গিক কারণেই পার্বত্য এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক যেগুলো আছে সেগুলোকে সেবামুখী ও আরও সক্রিয় করা প্রয়োজন। সেই সাথে যেসব ইউনিয়নে এখনও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, সেগুলোতে সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর সুবিবেচনা কামনা করছি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

লেখক: জনস্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশিক্ষক

সারাবাংলা/এজেডএস

পার্বত্য অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তি সুমিত বণিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর