সংস্কৃতির কথা ও দায়
২৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৪৪
সংস্কৃতি আসলে একটা জনগোষ্ঠীর প্রতিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের উপায়। তাই যে মানুষটা পাহাড়ে থাকে সে একধরনের সংস্কৃতিতে বিকশিত হবে। যে সমুদ্র উপকূলে কিংবা মরুভূমিতে- সে আরেক সংস্কৃতিতে। সংস্কৃতি একদিনে গড়ে উঠেনি। একদিনে বাঙালি লুঙ্গি আর পানতা খাওয়া শিখে নি। দীর্ঘদিন জলবায়ু পর্যবেক্ষণ করে এই দুটো উপকরণে স্বস্তি পেয়েছে বলে সেখানে থিতু হয়েছে বাঙালি।
গ্রামীণ অঞ্চলে দেখবেন স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তরের রাস্তাগুলো কেমন আঁকাবাঁকা হয়। মনে হয় সোজা করে দিলেই তো হয়। এক প্রকৌশলীকে প্রশ্ন করতে তিনি বলেছিলেন এসব আমরা সরল করতে চাই না। কারণ এটা ন্যাচারেললি ক্রিয়েট হয়েছে। একই সত্য নদীর ক্ষেত্রে খাটে। এ দেশে রেল স্থাপনের সময় খরচ বাচানোর জন্য সোজা সোজা রেললাইন পাতা শুরু হয়। এর ফলাফল এ অঞ্চলে বন্যা জলাবদ্ধতা ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি। সংস্কৃতিকেও তার প্রাকৃতিক পথে যেতে দিতে হয়। বাধা দিলে বিপদ।
প্রশ্ন করতেই পারেন, তাহলে কী সংস্কৃতি একটি অচলায়তনে পড়ে থাকবে। না না, এটা সংস্কৃতির ধর্ম নয়। সংস্কৃতি সদা পরিবর্তনশীল। কিন্তু পরিবর্তনের পরিবর্তে প্রতিস্থাপন করলে বিপদ। সংশ্লেষের পরিবর্তে সংহার করলে সর্বনাশ। বিকাশের পরিবর্তে বিকৃতি ঘটালে বিপত্তি।
কিন্তু মানুষ যদি চায় প্রতিস্থাপন বা বিকৃতি? গণ মানুষের চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। কিন্তু সংস্কৃতির শর্ত নয়। কারণ সকল মানুষ সংস্কৃতির প্রমিত মান ধরে রাখে না। তাহলে সংস্কৃতি কী মানুষের উপর স্বৈরাচারী আচরণ করবে? নাহ, সেটা করাও সম্ভব নয়। এখানেই সংস্কৃতিকর্মীর দায়। তাদের দায় গণমানুষকে প্রগতির পক্ষে চালিত করা। প্রতিস্থাপন ও বিকৃতির প্রতি সচেতন করা। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষার দাবি উঠেছিল। কিন্তু আন্দোলন বেগবান হয়েনি কেন জানেন, বেশির ভাগ মানুষ উর্দুর পক্ষে ছিল। এদেরকে ছাত্র শিক্ষক লেখকরা ধীরে ধীরে বাংলার পক্ষে এনেছে। ৪৭-এ যে বাঙালি দাঙ্গা করে পাকিস্তান আদায় করেছে, সেই বাঙালি কোন ম্যাজিকে পাকিস্তান কনসেপ্টের বিরুদ্ধে ৭১-এ যুদ্ধে নামে? এই গণ সমাজকে প্রগ্রতির পথে নিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকর্মীদের কাজ। আর যদি গণকে গণের প্রবৃত্তিতে চলতে দেয়া হয় তাহলে সে দেশের অবস্থা সুদান সোমালিয়ার মতো হয়। ফলে সংস্কৃত চিন্তাশীল মানুষের সংখ্যা বড়ো বিষয় নয়, এদের সক্রিয়তা বড়ো বিষয়।
এ গেল সংস্কৃতিকর্মীর দায়। সংস্কৃতিকর্মীরা হলো সংস্কৃতি আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। কিন্তু তার পেছনে থাকবে সমাজ ও রাষ্ট্রের ইন্ধন। সমাজকে নিজ স্বার্থে সংস্কৃতিকে ধারণ করতে হবে। রাষ্ট্রকে দিতে হবে পৃষ্ঠপোষকতা। সমাজের কী স্বার্থ?
এখন বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে সংস্কৃতি চর্চা প্রায় বন্ধের পথে। এতে কী হচ্ছে? কোন কিছু তো আর শূন্য থাকে না। যার গান বাজনা নাটক করার ঠিকই করছে। তবে সংস্কৃত পথে নয়। তারা ঢুকে পড়ছে ভাইরাল সংস্কৃতিতে। এর ফলাফল কিশোর গ্যাং। এর ফলাফল যৌন হয়রানি। মাদক। মানুষের সহজাত বিনোদন উপভোগের প্রবৃত্তিকে সঠিক পথে রাখা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়। সমাজে ঐক্য শৃঙ্খলা ও সুস্থিতির জন্য।
প্রথা ভাঙার নামে সংস্কৃতিতে মাঝে মাঝে আলোড়ন ওঠে। ষাট ও সত্তরের দশকে হিপ্পি সংস্কৃতির কথা আমরা বলতে পারি। কিন্তু শক্তিশালী মূলধারা ছিল বলে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের মূল সংস্কৃতি হয়ে যায়নি। কিন্তু মূলধারা দুর্বল হয়ে পড়লে বেনোজলে সমাজ ভেসে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাম দলগুলোর নেতারা প্রায় বলতেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথা। বাম ছাত্রদলগুলোকে অনেকে উপহাস করে বলত হারমোনিয়াম পার্টি। তারা বলত সংস্কৃতির একটা শক্তি আছে। যে শক্তি সমাজের প্রায় সবকিছু ধারণ করে। তখন বিষয়টি টের পাইনি। দুই দশক পর সংস্কৃতির শক্তি টের পাচ্ছি। এখন তাই আক্রমণের প্রথম লক্ষ্য সংস্কৃতি তথা সংস্কৃতিকর্মী।
সম্প্রতি নাট্যজন মামুনুর রশীদের একটি মন্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব আলোড়ন উঠেছে। তিনি এক ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ী কাম ভার্চুয়াল প্লাটফরমের কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গে বলেছেন, দেশে রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে।
এতে অনেকে রে রে করে তেড়ে এসেছে। বলা হচ্ছে রুচির দুর্ভিক্ষ সমাজের নয়, সংস্কৃতিকর্মীদের। অদ্ভুত একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, ভাইরালনির্ভর সুযোগসন্ধানী এক ব্যক্তিকে শ্রেণিসংগ্রামের প্রতিভূ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এক লেখক লিখেছেন, ‘হিরো আলম আমাদের সময়ে বিনোদনের বিবেচনায় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানের চেয়ে বেশি কিছু। প্রাচীন রোমে হিংস্র পশু কিংবা হিংস্রতম কোনো অপরাধীর সঙ্গে দাস, প্রান্তিক কিংবা অন্যায় সাজাপ্রাপ্ত কোনো গ্ল্যাডিয়েটরকে লড়তে লড়তে মরতে দেখে মানুষ যে আনন্দ পেত, হিরো আলম আমাদের এখনকার মানুষের কাছে সেই আনন্দের মতো। ওই গ্ল্যাডিয়েটরের প্রতি যে সহানুভূতি ও করুণা থাকত দর্শকদের, আজকের হিরো আলমের প্রতিও তাঁদের আছে সেই সহানুভূতি ও করুণা’। আর এসব কথা ছাপানো হচ্ছে দেশের নেতৃস্থানীয় পত্রিকায়। যারা একসময় মামুনুর রশীদদেরই প্রমোট করত।
বিন্দুমাত্র চর্চা সাধনা ছাড়া একজন অভিনেতা, কবি ও গায়ক হয়ে যাওয়া ব্যক্তির প্রতি কতটা সহমর্মিতা থাকলে এমন লেখা লেখা যায়। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে অনেক শিল্পী আছেন সারা জীবন সংস্কৃতি চর্চা করেও দুবেলা দুমুঠো খাবার পায় না। অথচ একজন ক্যাবল টিভির ব্যবসায়ী নর্দন কুর্দন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা মনিটাইজেশনের মাধ্যমে কামাই করছে। তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকে ভিউ বাড়ানোর উদ্দেশ্য। সেই কিনা শ্রেণিসংগ্রামী হয়ে গেল আমাদের রোমান্টিক বিপ্লবীদের কাছে। আর সংস্কৃতিকর্মীরা রীতিমতো বনে গেল খল। তাদের দোষ তারা এই সংস্কৃতি চর্চাকে সাধনা হিসেবে নিয়েছে। যেহেতু পুরো কমিউনিটিকে আক্রমণ করা যায় না, তাই কমিউনিটির সুবিধাভোগী অংশকে লক্ষ করে আক্রমণের তীর ছোড়া হচ্ছে।
সংস্কৃতিকর্মীদের হাজার গন্ডা দোষ ধরা হচ্ছে। কথা হচ্ছে এই সমাজে দোষ কার নেই। সংস্কৃতিকর্মীরা কি মিটারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেয় রাস্তায়? খাবারের বিষ মেশায়? ৮০ টাকা খেজুর ১৬০০ টাকায় বিক্রি করে? অফিসে অফিসে ঘুষ খায়?
তাহলে সাধুদের দেশে কী এমন গুরু পাপ করে বসল সংস্কৃতিকর্মীরা। হ্যাঁ, সংস্কৃতিকর্মীরা সরকারি আনুকূল্যের জন্য উদগ্রীব থাকে। অনেক ভালো ভালো সুযোগও নেয়।
আচ্ছা সংস্কৃতিকর্মীদেরকে কি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের বিধান আছে? তাদেরও ঘর সংসার আছে। তাদেরও মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাসা বাঁধে। তাদের যদি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকে, তারা যাবে কোথায়? আর সুযোগ সুবিধা এই কমিউনিটির কয় শতাংশ মানুষ পাচ্ছে সেটাও তো বিবেচনায় আনতে হবে। কেউ যদি এর অপব্যবহার করেও থাকে তার জন্য পুরো কমিউনিটিকে তো দোষারাপ করা যায় না।
বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে হিরো আলমকে ডিফেন্ড করা হচ্ছে। সে নাকি সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির নায়ক। তারা নাকি তাকে পছন্দ করে। আমাদের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নাকি তাকে আমরা দেখতে পারি না। নায়ক আর বিদূষকের মধ্যে পার্থক্য না বুঝলে তো সমস্যা। বরং তার অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে গাত্রদাহের কারণ। তার উচ্চতা ও গায়ের রং কখনোই ফ্যাক্ট নয়। আমাদের দেশে স্বল্প উচ্চতা ও কৃষ্ণকায় বহু গুণী শিল্পী আছেন। তারা শ্রোতা দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছেন। হ্যাঁ, আঞ্চলিক উচ্চারণ নিয়ে কথা বলাই যায়। এটা উত্তোরণের চেষ্টা করার সুযোগ ছিল তার। সুযোগ ছিল গান নৃত্য বা অভিনয় শেখার। সেসবে না গিয়ে সে যে লাইক শেয়ার ভিত্তিক সংস্কৃতির জন্ম দিল তাতেই আমাদের আপত্তি। সাধনাবিহীন পথে সাফল্য পাওয়ার এ নজির সমাজে বিকৃত সংস্কৃতিচর্চাকে উদ্বুদ্ধ করে।
এবার আসা যাক সংস্কৃতিচর্চার দায় নিয়ে। সংস্কৃতিচর্চা চালিয়ে যাওয়া কি কেবল সংস্কৃতিকর্মীদের দায়?
মুক্তগাছার জমিদার বাড়িতে দেখেছিলাম ঘুর্ণায়মান নাট্যমঞ্চের কাঠামো। সে আমলে ৭ লাখ টাকা দিয়ে ইউরোপ থেকে আনা হয়েছিল। বিশাল পাঠাগার। অবশ্য বই ছিল না যখন আমি যাই। পুরনো সব জমিদার বাড়িতে নাট্যমঞ্চ ও পাঠাগার দেখা যায়। সে আমলে রাজা বাদশাহ জমিদাররা শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। লাক্ষনৌ কিংবা ত্রিপুরার রাজার কাহিনি আমরা জানি। ত্রিপুরার রাজা প্রথম রবীন্দ্রনাথকে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেকালে ধনী ব্যক্তিরা সংস্কৃতিমনা ছিলেন। আজকে সেই ধনীগোষ্ঠী কই? সংস্কৃতিমোদী মধ্যবিত্ত কই? যাত্রাপালা নাটক সিনেমা দেখা মধ্যবিত্ত?
এখন কথা হলো সবাই যখন সংস্কৃতিবিমুখ, তখন সংস্কৃতি সংস্কৃতি করে কী হবে? সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করে দিলেই হয়। চর্চা ছাড়া যা হবে তাতেই আমরা হাসি ঠাট্টা করে বিনোদিত হব। যেমনটা হিরো আলমকে দেখে বিনোদিত হই। অনেকটা সেই পথেই হাঁটছি আমরা। অর্থাৎ সংস্কৃতির সং থাকুক, কৃতির দরকার নেই। সং-রা বেড়ে উঠুক বিনা সাধনা ও চর্চায়। তাদের নর্দন কুর্দনে আমরা বিনোদিত হই। বিনোদনই যখন মুখ্য উদ্দেশ্য।
আসলে সংস্কৃতি চর্চার পেছনে একটা নিগূঢ় উদ্দশ্য আছে। সংস্কৃতি সমাজের ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। জনগণকে সুস্থ বিনোদন দিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করে। তাই শাসক ও পুঁজিপতি দুই শ্রেণিই সংস্কৃতিচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করে। রাষ্ট্র করে সংহতির জন্য, পুঁজিপতিরা বাজার ও শ্রমশক্তি সৃষ্টির জন্য।
অনেকেই সংস্কৃতিচর্চাকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চান। কিন্তু ধর্ম ও সংস্কৃতির কর্মক্ষেত্র ভিন্ন। মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধে বিষয়টি দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ধর্ম চায় মানুষকে পাপ থেকে, পতন থেকে রক্ষা করতে, মানুষকে বিকশিত করতে নয়। জীবনের গোলাপ ফোটানোর দিকে তার নজর নেই, চক্ষুটিকে নিষ্কণ্টক রাখাই তার উদ্দেশ্য। অপরপক্ষে কালচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনের বিকাশ, পতন পাপ থেকে রক্ষা নয়। গোলাপের সঙ্গে যদি দু-একটা কাটা এসেই যায় তো আসুক না, তাতে ক্ষতি নেই, দেখতে হবে শুধু ফুল ফুটল কি-না- এ-ই কালচারের অভিমত’।
এতো কথা বলার একটাই কারণ। গত ৬ মার্চ (২০২৩) সারাদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখছি নিতা মুকেশ আম্বানি কালচারাল সেন্টার উদ্বোধনের খবর। ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী নিতার নামে এই সেন্টারটি করেছেন মুম্বাইর বান্দ্রে এলাকায়। এখানে থাকছে গান নাচ সিনেমা চিত্রকলাসহ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিটি বিষয়কে উপস্থাপনের ব্যবস্থা। আছে ২০০০ আসন বিশিষ্ট গ্র্যান্ড থিয়েটার। তাছাড়া থাকবে স্টুডিও থিয়েটার, আর্ট গ্যালারি, কিউব নামের নতুন সম্ভাবনাময়দের পারফরম করার স্পেস। ১৬০০০ স্কয়ার ফুট জায়গা থাকছে এই সেন্টারে। নিতার ভাষণ শুনলাম ইউটিউবে। তারা এ সেন্টারের মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চান। তাই এটা শুধু সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রই হবে না। হবে বিনোদন ও পর্যটনের কেন্দ্র। সংস্কৃতি সেবার পাশাপাশি ভোক্তা ও বাজার সৃষ্টি করছেন তারা। এ ধরনের প্রাগ্রসর চিন্তা আমাদের কজন ধনীর মাথায় আছে?
সংস্কৃতিচর্চার দায় সমাজকেই নিতে হবে। সমাজের সুস্বাস্থ্যের জন্য। নইলে বিকৃত অসংস্কৃত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। সংস্কৃতিকর্মীরা যোদ্ধা। যোদ্ধাদের রসদ ও নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব সমাজের। সমাজ সেটা না নিলে সংস্কৃতিকর্মীদের যুদ্ধের ময়দান চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।
সংস্কৃতির দায় নিয়ে সেদিন কথা হচ্ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্তের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সাংস্কৃতি কর্মীদের ভূমিকা এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের তৎপরতার একটি উদাহরণ দেন। ১৯৬৬ সালের মার্চে ঢাকার হোটেল ইডেনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ষষ্ঠ সম্মেলন হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধু সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সানজিদা খাতুনকে দিয়ে উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়ান। সেই গানের মাধ্যমেই তিনি যা ম্যাসেজ দেয়ার দিয়ে দিয়েছিলেন। আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে বিরোধিতা করলেও বঙ্গবন্ধু সবসময় একে পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন। মজার ব্যাপার ইত্তেফাকের মতো পত্রিকা প্রথম দিকে রমনার বটমূলের অনুষ্ঠনের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন বাঙালির সংস্কৃতির শক্তি ছাড়া আর অন্যকিছু দ্বারা সবাইকে এক করা যাবে না।
লেখক: শিক্ষক
সারাবাংলা/এসবিডিই