Friday 16 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুভেচ্ছা তাদের যারা অধিকার আদায়ে সঙ্গী না হয়ে নেতা সেজেছেন

নাজনীন মুন্নী
২ মে ২০২৩ ০১:৫৭ | আপডেট: ২ মে ২০২৩ ০১:৫৯

মিডিয়ার এক সহকর্মী জানালেন আট বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠানে ইনক্রিমেন্ট হয় না। ভাবতে পারেন আট বছর ধরে তার বেতন একই! বেশ পুরনো আর নামী চ্যানেল। বছরের পর বছর ধরে কর্মীদের বেতন বাড়ায় না একটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু কেউ কিছু বলার নেই। তারা একা নয়, শীর্ষ ২/৩টি চ্যানেল বাদে বাকি সব চ্যানেলেরই বেতন বাড়ে তিন থেকে চার বছর পর পর। যে টাকা বাড়ে তা বলতে নিজেরই লজ্জা লাগছে। কিন্তু আমরা জানি মালিকদের লজ্জা হয় না।

বিজ্ঞাপন

কারণ চাকরি করলে কর না করলে যাও…আরও কমে লোক নেব এমন ভাবধারায় থাকেন তারা, নেনও অভিজ্ঞতাহীন, সাংবাদিকতা না জানা যাকেতাকে। যার ফল ভোগ করে সবাই, করছে প্রতিনিয়ত, কিন্তু থামাথামি নেই। কারণ এদের দিয়েই সর্বোচ্চ কাজ করাতে পারেন তারা। তাদের ভাষ্য থাকে, সাংবাদিকতা জানতে হবে না বেতন কম হলেই হলো। সেই কম বেতন কত কম— ধারণা নেই অনেকেরই। নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়া একজন মাস্টার্স পাস করা ছেলে বা মেয়ের বেতন অনেকের ড্রাইভারের বেতনের চেয়ে কম। জ্বি, ঘটনা সত্য। গার্মেন্টসে ন্যূনতম মুজুরি আছে, সাংবাদিকদের নাই।

বিজ্ঞাপন

আইন মেনে আট ঘণ্টা কাজ আদায় করা হয় ঠিকঠাক। কিন্তু আইন অনুযায়ী গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড তো দূর, চাকরির নিশ্চয়তা, নিয়মিত বেতন বৃদ্ধির কথা ভুলে যায় সবাই। সরকারি ছুটির দিন এমনকি ঈদ, পূজা, বড়দিনে অফিস করতে হয়। ছুটির দিনগুলোতে অফিস করার টাকা জোটে না কারো। ঈদ বোনাস কি সেটাও জানে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকরা। এর মধ্যে কয়েকগুণ জিনিসের দাম বেড়েছে। যাদের বেতন বাড়ে তাদেরও খুব অনিয়মিত আর সামান্য। অথচ সপ্তাহে ছয় দিন টানা অফিস ১২ ঘণ্টা কাজ করলে ওভার টাইম নাই। কিন্তু আট ঘণ্টার কম জব করলে বেতন কেটে নেয়ার বিষয় আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে।

বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট, টেলিভিশন অনেক, তার উপর সব বিজ্ঞাপন চলে যায় দেশের বাইরে—এমন খুব এক অজুহাত চলল এক যুগ ধরে। সরকার বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করল। ফলে প্রতিমাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন আমাদের চ্যানেলগুলো পাওয়ার কথা । সেই টাকা কোথায় হাওয়া হলো কে জানে। কারণ সাংবাদিকদের তাতে কোনো পরিবর্তন ঘটল না।

অনেক চ্যানেল, খবরের কাগজ আছে তিন/চার মাস বেতনও দেয় না। বেতন দেওয়ার মতো আয় নাকি তাদের হয় না। তাহলে প্রতিষ্ঠানটা রেখেছেন কেন? কী কী আদায় করেন এইসব প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে আমরা জানি বৈকি। কিন্তু সরকার কি তা জানে না? কাদের এইসব টেলিভিশনের মালিকানা দেওয়া হচ্ছে? সামর্থবান কিনা তারা। একটা টেলিভিশন চালানোর অর্থ তাদের আছে কিনা জেনে কি এইসব লাইসেন্স দিচ্ছেন? প্রতাপশালী অনেক ব্যবসায়ী চ্যানেলগুলোর মালিক। তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের ঠিকঠাক বেতন ভাতা, সুবিধা দিলেও সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তারা কেনো যেন শুকিয়ে যান। হাহাকার করতে থাকেন টাকা নেই বলে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, আসলেই কি তাই? সকল নাগরিকের দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। বছরের পর বছর এমন করে একটা খাত ধ্বংস হতে পারে না। কর্মীর বেতনটাও ঠিকঠাক না দিয়ে যারা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে রাখছেন তারা আসলে কী করছেন সেই হিসাবটা নেওয়াটা কী জরুরি নয়?

সাংবাদিকরা অন্যের উপর অন্যায়ের কথা বলে। কিন্তু নিজের উপর ঘটতে থাকা অন্যায়ে মুখ খোলে না। কোন রোষানলে চাকরিটা যায় এই ভয়ে। কারণ মালিকদের সংগঠন আছে, তারা একাট্টা হতে পারে যে কোনো সিদ্ধান্তে। কিন্তু সাংবাদিকদের ১০০টা সংগঠন থাকলেও একাত্মতা বিরল। আজ আমার চাকরি চলে গেলে নেতারা বলবেন না এটি করা যাবে না। অথচ গার্মেন্টসে চার জনের চাকরি গেলও প্রতিবাদ হয় সজোরে। আমাদের নেতাদের খোঁজ পাওয়া যায় কেবল ভোটের সময়। ভোটে জয়ী হয়ে তারা কী কী করেন আমাদের জন্য— সেই খোঁজ আমরা সাংবাদিকরা পাই না। একজন একজন অর্থনৈতিক টানাপোড়নে যুদ্ধ করতে থাকা সাংবাদিকের কাছে কী আশা করেন আপনারা? রাষ্ট্রের চতুর্থ পিলারের এই নড়বড়ে আর করুণ অবস্থা। ভাঙা পায়া নিয়ে সব তো একদিকে কাত হয়ে থাকবেই।

শ্রমিকরা যা আদায় করতে পারে— আমরা তথাকথিত বিনয়ী আর শিক্ষিত নিম্নমধ্যবিত্তরা তা পারি না। কারণ মেরুদণ্ডের দুর্বলতাকে আমরা ভদ্রতা নাম দিয়েছি।

মে দিবসের শুভেচ্ছা তাদের যারা অধিকার আদায়ে সঙ্গী না হয়েও নেতা সেজেছেন। বাড়ি-গাড়ি বিদেশ ভ্রমণে সাজিয়েছেন জীবন। আপনাদের লাল সেলাম। আপনারই পেরেছেন নিজের অধিকার আদায় করতে।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর