৭ নভেম্বর ১৯৭৫: হুদা হত্যার আদ্যপান্ত
২০ মে ২০২৩ ১৩:০১
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা, মেজর হায়দার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী। সম্মুখ সময়ের বীর যোদ্ধা। যে তিন যোদ্ধাকে অত্যন্ত কাপুরুষোচিতভাবে, বর্বরভাবে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে। এই দেশেরই সেনা কর্মকর্তা আর সেনা সদস্যরা অত্যন্ত নির্দয়ভাবে হত্যা করে বাংলা মায়ের এই তিন বীর সন্তানকে। সম্প্রতি কর্নেল হুদার মেয়ে তার বাবার হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছেন। তাই নতুন করে আলোচনায় এসেছে রহস্যজনক এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট।
১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের সামরিক-রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনা প্রবাহের অনেক রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। অনেক সত্য এখনও আটকা পড়ে আছে মিথ্যার মায়াজালে। প্রতি বছর দিনপঞ্জির পাতাতে এই মাসটি আসলেই নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। সংবাদপত্রের পাতা, টেলিভিশনের টক শো’তে জমজমাট আলোচনা হয়। যে আলোচনার পাদপ্রদীপে থাকে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান, নৃসংশ জেল হত্যা, কর্নেল (অব.) তাহের ব্যর্থ বিপ্লব ও জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসার ঘটনা প্রবাহ। খুব কম আলোচিত হয় খালেদ, হায়দার ও হুদার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি।
খন্দকার নাজমুল হুদা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেছিলেন ১৯৬২ সালে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদীপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা পাঞ্জাবি শোষণ আর বঞ্চনার দিকগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন অনেক কাছ থেকে। যা তাঁকে দগ্ধ করতো। ১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি পবিত্র ঈদের দিন পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোটের উগোকি আবাসিক এলাকার সেনা ব্যারাক থেকে গ্রেফতার হন হুদা। পরে জানতে পারেন আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে মামলার এক নম্বর আসামী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই মামলাতে সামরিক-বেসামরিক ও রাজনীতিবিদ মিলে মোট ৩৫ জন আসামী ছিলেন। ইয়াহিয়া খান এই ৩৫ জনকে দেশদ্রোহী হিসেবে ফাঁসিতে ঝুঁলাতে চাইলেও ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় এই ৩৫ জন সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচিত হন। তাঁদের মুক্ত করতে সংগঠিত হয় অভূতপূর্ব এক গণঅভ্যুত্থান। যে অভ্যুত্থানের জোয়াড়ে পতন হয় লৌহমানব ইয়াহিয়া খানের শাসন দূর্গের।
নাজমুল হুদার জীবন সঙ্গী নীলুফার হুদার ভাষ্য অনুযায়ী, এরপরের দিনগুলো হুদার জন্য ছিল অনেক কঠিন। সেনাবাহিনীর চাকুরি নেই, আয় বন্ধ। পরিবারে অর্থ সংকট। সব কিছু মিলিয়ে অনেকটা বিপর্যস্ত ছিলেন হুদা। ঐ সময় সংসার চালাতে খুব ছোট ব্যবসা করেছেন। হাড় ভাঙ্গা খঁটুনি খেটে সংসার চালিয়েছেন। তবে একজন জাতীয়তাবাদী হুদার জীবনে ১৯৭১ আসে ভিন্ন এক বার্তা নিয়ে। হুদা যেন দীর্ঘদিন ধরে এই সময়ের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তিনি জানতেন পাঞ্জাবি অপশাসন বেশি দিন বাঙালি জাতি মানবে না। আর পাকিস্তানিরাও বাঙালি জাতির হাতে কোন অবস্থাতেই ক্ষমতা দেবে না। যুদ্ধ অনিবার্য।
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় হুদা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও বাঙালি সেনা কমর্কতাতের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। হুদার সাথে খালেদ মোশাররফের অনেক নিবিড় যোগাযোগ ছিল। খালেদ মোশাররফ তখন একজন মেজর হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। মধ্য মার্চে খালেদ মোশাররফই হুদাকে ঢাকা ছাড়তে বলেছিলেন। কারণ তিনি ইঙ্গিত পেয়েছিলেন দ্রুতই ভয়াবহ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আর এমন কিছু ঘটলে হুদা হবেন অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। উল্লেখ করা যেতে পারে খালেদ মোশাররফ ঠিকই অনুমান করেছিলেন। কারণ ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞের শুরুতে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীরা পাক সেনাদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। অপারেশান সার্চলাইটের শুরুতেই পাক সেনারা বর্বরভাবে হত্যা করেছিল আগড়তলা মামলার দুই নম্বর আসামী নৌ বাহিনীর লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে (স্মৃতি ১৯৭১:২০১৮)।
উত্তল, অসহযোগ মধ্য মার্চে খালেদের উপদেশ অনুযায়ী হুদা কুষ্টিয়াতে চলে আসেন। ঐ সময় কুষ্টিয়াও উত্তাল। প্রতিদিনই মিছিল মিটিং চলছিল, চারদিকে সর্বাত্মক অসহযোগ। ২৫ মার্চের কালরাতে হুদা কুষ্টিয়া থেকেই পাক সেনাদের বর্বর হত্যাযজ্ঞের খবর পান। ঐ সময় কুষ্টিয়া শহরের চারপাশেও পাক সেনারা ছিল। সেখান থেকে বিপদ সঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই কলকাতা পৌঁছে যান। সেখানে যুক্ত হন সরাসরি মুক্তি সংগ্রামে।
স্বাধীন দেশে হুদার প্রথম দায়িত্ব ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্টে, এরপর ঢাকায়, তারপর কুমিল্লা। আর জীবনের শেষ কর্মস্থল হিসেবে হুদার পোস্টিং ছিল রংপুর ক্যান্টনমেন্টে। রংপুর সেনানিবাসে অবস্থান করার সময়ই হুদা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যাকা-ের খবর পান। হুদার স্ত্রী নীলুফার হুদার ভাষ্য অনুযায়ী, রেডিও’তে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের খবর পেয়ে হুদা খালেদ মোশাররফ ও সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন। তিনি জেনারেল সফিউল্লাহকে ৩২ নম্বরের দিকে ট্রুপস্ মুভ করাতে বলেছিলেন। (হুদা: ২০১৫: পৃষ্ঠা ১০৭)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরই দেশ চলতে শুরু করে উল্টো রথে। ক্ষমতার কেন্দ্র তখন বঙ্গভবন। সেনানিবাসে না ফিরে মোশতাককে সামনে রেখে দেশ চালাচ্ছিলো ফারুক-রশীদ খুনী চক্র। সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা বলতে কিছু ছিল না। সফিউল্লাহকে সরিয়ে সেনা প্রধান হওয়া জেনারেল জিয়াও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন না। ফলে খালেদ মোশাররফ, শাফায়েত জামিলসহ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা নতুন করে কিছু একটা করার পরিকল্পনা শুরু করেন। তাদের যুক্তি ছিল, এভাবে দেশ চলতে পারে না। সেনা কমান্ডকে অবজ্ঞা করে বঙ্গভবন থেকে কয়েকজন মেজর দেশ চালাতে পারে না। এই পরিকল্পনার মধ্যেই ৩০ অক্টোবর রংপুর থেকে ঢাকায় একটা সেনা কনফারেন্সে যোগ দেন হুদা। এদিকে এরইমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যায় নতুন পরিকল্পনা। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয় ৩ নভেম্বর রাতে। ঐ রাতে বঙ্গভবনে খুনীদের পাহারায় নিয়োজিত সেনারা সেনানিবাসে ফিরে আসে। সকালে বঙ্গভবনের উপরে চক্কর দেয় মিগ যুদ্ধ বিমান। সেনা প্রধান জেনারেল জিয়া গৃহবন্দী হন। সিজিএস খালেদ মোশাররফ সেনা প্রধান হিসেবে কমান্ড গ্রহণ করেন। যে ঘোষণা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় ৫ নভেম্বর। (জামিল:২০০৯)
নীলুফার হুদার ভাষ্য অনুযায়ী ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ কর্নেল হুদা টেলিফোনে ঢাকার সাথে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছিলেন। এই যোগাযোগের মধ্যে তিনি টেলিফোনে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে বারবার বলেছেন, জেনারেল জিয়াকে যাতে সম্মানে রাখা হয়। (হুদা: ২০১৫: পৃষ্ঠা: ১১৩)
৪ নভেম্বর রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন কর্নেল হুদা। তার সাথে ছিলেন জাফর ইমাম নামের অপর এক সেনা কর্মকর্তা। জাফর ইমাম ৫ তারিখে রংপুর ফিরে আসেন। কিন্তু হুদা আর ফিরতে পারেননি। ৪-৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সময়ে খালেদ-শাফায়াত-হুদা-হায়দাররা পরিস্থিতিকে তাদের অনুকূলে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্তু মাঝখানে ঘটে যাওয়া জেল হত্যা, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য হওয়া শোক মিছিল (যাতে খালেদ মোশাররফের মা ও ভাই অংশ নিয়েছিলেন), ভারতীয় হস্তক্ষেপের গুজব এবং জাসদের তৎপরতায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে অভ্যুত্থানের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকেন খালেদ মোশাররফ। এছাড়া সেনাবাহিনীতে ফারুক-রশীদের অনুগত ইউনিট ও জিয়ার অনুসারীরাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সবশেষ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের বিপ্লবী সেনা সংস্থার মাধ্যমে সংগঠিত হয় এক পাল্টা অভ্যুত্থান। যার নেতৃত্বে ছিল সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আবু তাহের। এই পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ পুরো পরিস্থিতির উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
এই ঘটনা প্রবাহের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় ৩ নভেম্বর অভুত্থানের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিলের জবানীতে। তিনি তার একাত্তর মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর বইয়ে তাদের অভ্যুত্থান নসাৎ হওয়ার প্রেক্ষাপটে লিখেছেন, ‘রাত দশটার দিকে খালেদ মোশাররফের ফোন পেলাম। ফোনে তিনি আমাকে বঙ্গভবনে যেতে বললেন। বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠছি, তখন ব্রিগেড মেজর হাফিজ আমাকে বললো, স্যার প্রথম বেঙ্গলের একজন প্রবীণ জেসিও বলেছে, ঐদিন রাত বারোটায় সিপাহীরা বিদ্রোহ করবে। জাসদ ও সৈনিক সংস্থার আহ্বানেই তারা এটা করবে। খালেদ ও আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশও সৈনিকদের দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেসিওটি।’ (জামিল: ২০০৯: পৃষ্ঠা: ১৪৩)
এরপরের ঘটনা সবার জানা। ঐ রাত ১২টাতেই শুরু হয় বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার বিপ্লব। ৩ নভেম্বর খালেদের অভ্যুত্থান অস্বাভাবিক রকমের রক্তপাতহীন থাকলেও এই পাল্টা অভ্যুত্থান আর রক্তপাতহীন থাকেনি। সিপাহীদের বিপ্লব শুরু হওয়ার পর বঙ্গভবন থেকে হুদা ও হায়দারকে নিয়ে বের হয়ে যান খালেদ। বঙ্গভবনে থেকে যান শাফায়াত জামিল। বিদ্রোহীরা বঙ্গভনের দিকে এগিয়ে আসলে বঙ্গভবন ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন শাফায়াতও। এদিকে খালেদ-হুদা ও হায়দার আশ্রয় নেন দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টে। যে রেজিমেন্টেকে খালেদই রংপুর থেকে ঢাকায় এনেছিলেন। খালেদের আশা ছিল কোন বিপদে এই রেজিমেন্ট তাকে রক্ষা করবে। কিন্তু সেই শেষ রক্ষা আর হয়নি। বিশ্বস্ত দশম বেঙ্গলেই কয়েকজন সেনা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে খালেদ-হুদা ও হায়দারকে। কর্নেল হুদার মেয়ের দায়ের করা মামলার তথ্য অনুযায়ী. মেজর জলিল নামের একজন অফিসার এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন আরও একজন তরুণ অফিসার ও কিছু উত্তেজিত সেনা।
নাজমুল হুদার মৃত্যুর খবর ৯ নভেম্বর জানতে পারেন তার স্ত্রী নীলুফার হুদা। ঢাকা তখন উত্তাল, চারদিকে চাপা উত্তেজনা, উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। সন্ধ্যার পরই ঢাকা সেনানিবাস ও পুরো শহরে অজানা আতঙ্ক। এমন এক পরিবেশেই স্বামীর মরদেহ গ্রহণ করেন। হুদাকে দাফন করা হয় বনানী কবরস্থানে। হুদার মরদেহ গ্রহণ থেকে শুরু করে ঐ সময়ে জেনারেল জিয়াসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নীলুফার হুদা। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হুদার মরদেহ একটা জাতীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখা হয়নি। একজন বীর বিক্রমের কফিনে দেওয়া হয়নি একখ- লাল সবুজের কাপড়। হুদার মতোই খালেদ মোশাররফ ও হায়দারের দাফন সম্পন্ন হয় অনেকটা নিভৃতে, অজানা আতঙ্কের মধ্যে।
খালেদ-হুদা-হায়দারকে কে বা কারা হত্যা করলো? হুদার স্ত্রী নীলুফার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বহু বছর ধরে। তবে ঐ সময়ের ঘটনাপ্রবাহে যুক্ত থাকা অনেক সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে নীলুফার হুদা এই তিন বীর যোদ্ধা হত্যার জন্য কর্নেল (অব.) তাহের ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এ সময়ের লে.কর্নেল আমিন আহম্মেদ চৌধুরির এক বর্ণনা অনুযায়ী, ৭ নভেম্বর সকালে দ্বিতীয় আর্টিলারি রেজিমেন্টে জেনারেল জিয়ার সাথে কর্নেল তাহেরও ছিলেন। সেই সময়ই দশম বেঙ্গল থেকে ফোনে জানানো হয় খালেদ-হুদা-হায়দারের অবস্থান। যে আলোচনা তাহের শুনেছিলেন এবং তিনি তখন ঐ ঘর থেকে বের হয়ে যান। ১৫ মিনিট পর তাহের আবার ঐ ঘরে ফিরেছিলেন। এরইমধ্যেই এক প্লাটুন সেনা দশম বেঙ্গলে গিয়ে খালেদ-হুদা-হায়দারকে হত্যা করে। আধা ঘন্টা পর জেনারেল জিয়ার কাছে খবর আসে খালেদ-হুদা-হায়দারকে হত্যা করা হয়েছে। (হুদা: ২০১৫)
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের সক্রিয় সদস্য মেজর হাফি। তিনি তার সদ্য প্রকাশিত সৈনিক জীবন গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পঁচাত্তর গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। তাতে তিনি উল্লেখ দাবি করেছেন, ক্যাপ্টেন জলিল একদল উত্তেজিত সেনাকে নেতৃত্ব দিয়ে এই তিন বীর যোদ্ধাকে হত্যা করেন। বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, সেনানিবাস থেকে একজন অফিসার ফোন করে সেনাদের উত্তেজিত করেছিলেন। মেজর হাফিজ জিয়াউর রহমানের আস্থাভাজন সেনা কর্মকর্তা মীর শওকতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। মেজর হাফিজ উদ্দীন আহমদ বীর বিক্রম খালেদ-হুদা-হায়দার নিয়ে যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা অনেক নতুন, ইঙ্গিতবহ। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তে নিশ্চয় এই তথ্যগুলো আমলে নেওয়া হবে। আর দ্রুতই খুলবে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট।
সহায়ক গ্রন্থ:
১. হুদা, নীলুফার (২০১৫)। কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ, ঢাকা: প্রথমা।
২. স্মৃতি:১৯৭১, দ্বিতীয় খণ্ড, (২০১৮)। সম্পাদনা: রশীদ হায়দার ঢাকা: বাংলা একাডেমি।
৩. জামিল, কর্নেল (অব.) শাফায়াত (২০০৯) একাত্তর মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
৭ নভেম্বর ১৯৭৫: হুদা হত্যার আদ্যপান্ত মত-দ্বিমত রাহাত মিনহাজ