Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মার্কিন ভিসানীতি: বিএনপির অলীক স্বপ্নের গুড়ে বালি

তাপস হালদার
২৬ মে ২০২৩ ১৬:৩০

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে আলাদা ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন এক টুইটে বলেছেন,বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা বাধা প্রদানের জন্য দায়ী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে স্পষ্ট করে বলেছেন,যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করছে না।দেশটি একমাত্র সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকাকেই সমর্থন করবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদি মনে করে যে বা যারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে।সেটা যে-ই হোক।যদি বিরোধীদলীয় কোনো ব্যক্তি বা দল নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সহিংসতায় জড়িত,ভোটারদের ভয় ভীতি প্রদর্শনে জড়িত তাদেরকেও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না।একই ভাবে সরকারি কোনো সদস্য,আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ভোটারদের ভয় ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, সহিংসতায় জড়িত,মুক্ত মত প্রকাশে বাধাদান করছেন তাদেরকেও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না।যা স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। নতুন ভিসা নীতির মাধ্যমে দেশটির সরকার,সুশীল সমাজ,অন্য সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।এ সিন্ধান্ত মোটেও কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়।

বিজ্ঞাপন

এই ঘোষণার পর পক্ষে বিপক্ষে তুমুল আলোচনা চলছে। কার ক্ষতি,কার লাভ এই হিসেব নিকাশ চলছে।তবে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলেছেন,যারা গণতান্ত্রিক প্রকৃয়া ব্যাহত করবে তারাই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে।একটু পিছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরের ইতিহাসে যে কয়বার গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হয়েছে তার জন্য দায়ী কারা? পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন এবং সেনা আইন ভঙ্গ করে ক্ষমতা দখল করার পর একদিকে সেনাপ্রধান তারপর আবার স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি।এবং ক্ষমতায় থেকেই দল গঠন করেন।জিয়াউর রহমানের আমলে ‘৭৭ সালে হ্যাঁ -না ভোট, ’৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ’৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচন,খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।বাংলাদেশে বিএনপিই একমাত্র যারা বারবার দেশের গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি ক্ষমতায় থেকেও যেমন গনতন্ত্রকে বিকশিত হতে দেয়নি,আবার বিরোধী দলে থেকেও গণতান্ত্রিক প্রকৃয়া বাধাগ্রস্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচনকে প্রতিহত করতে আন্দোলনের নামে সারা দেশে সহিংসতা চালায় বিএনপি-জামায়াত জোট।তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য সহ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে। শুধুমাত্র নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করেছে এবং সারাদেশে ভোটকেন্দ্র ছিলো এমন ৫৮২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে।এতসব বাধা স্বত্বেও সেদিন দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে তাদের আমানত ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে,মানবতাবিরোধী রায় ও নির্বাচন কেন্দ্রিক সংহিসতায় ২০১৩ সালে মারা যান ৫০৭ জন এবং আহত হন ২২ হাজার ৪০৭ জন।সহিংসতার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,স্কুল-কলেজ,বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ বহু প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে।মন্দির,গির্জা,প্যাগোডা, এমনি কি মসজিদেও হামলা চালিয়েছে।

বিএনপি শুধুমাত্র নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতেই সহিংসতা করে তা নয়,বরং ক্ষমতায় গিয়েও তাদের যারা ভোট দেননি বলে সন্দেহ হয়েছে তাদের উপরও ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করেছে।এবিষয়ে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদনে বলা হয়,বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওযার পর তাদেরকে ভোট না দেওয়ার কারণেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পর হামলা,সম্পত্তি লুট,নারীদের ধর্ষণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করার মতো ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে।এসব হামলার ঘটনা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্তৃক হিন্দুদের ওপর সহিংস আচরণ করা হয়েছে,কারণ ঐতিহ্যগতভাবেই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।প্রতিবেদনে হত্যা, ধর্ষণ, লুট ও নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।

বিএনপিকে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে খুব খুশি খুশি ভাব দেখা যাচ্ছে,অচিরেই খুশি বিষাদে পরিনত হবে।তাদের দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান নিজেই মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আছেন।আরো অনেকেই নিষেধাজ্ঞায় পড়বে।কারণ বিএনপি শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়,আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি সন্ত্রাসী দল।উইকিলিকসের তথ্য থেকে জানা যায়,২০০৮ সালে গোপন এক তার বার্তায় ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তাদের দেশকে বলেছেন,‘বিএনটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের কুখ্যাত বড় ছেলে এবং মায়ের উত্তরসূরি।ভয়ংকর রাজনীতিক এবং দুর্নীতি ও চুরির মানসিকতাসম্পন্ন সরকারের প্রতীক।’তার কোটি কোটি ডলারের সরকারি অর্থ চুরি এই মডারেট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করছে।বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার শক্তিশালী করার মার্কিন উদ্যোগ গুলোকে দুর্বল করেছে।তাছাড়া তারেকের যথেচ্ছ দুর্নীতি মার্কিন মিশনের লক্ষ্যমাত্রার প্রতিও ভয়াবহ হুমকি।তার বার্তায় আরো বলা হয়,বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের গণতন্ত্র,উন্নয়ন ও বাংলাদেশের আকাশ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে না দেওয়া এই তিনটি মূল অগ্রাধিকার রয়েছে।কিন্তু তারেকের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ড এই তিনটি কর্মসূচিকেই ব্যাহত করছে।তাই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ভিসা দেওয়া যাবে না।তারপর থেকে তারেক রহমান নিষেধাজ্ঞায় আছেন।তারেক রহমান আইনগত ভাবে পলাতক থাকায় বিষয়টি সেভাবে সামনে আসেনি।

২০১৭ সালে কানাডার ফেডারেল আদালত বিবিসি, এএফপি,কমনওয়েলথ স্টাডিজ ইনস্টিটিউট,ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন,ইকোনমিস্ট, সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াসের প্রতিবেদন তুলে ধরে এক রায়ে বলেছে,প্রকৃত পক্ষে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সশস্ত্র ও সহিংসতার আশ্রয় নেয়।রায়ে আরো বলা হয়েছে,তারা হাতবোমা, পিস্তল ও অস্ত্র ব্যবহার করে নেতৃস্থানীয় এবং জনগণের উপর হামলা চালায়।এমনকি অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটায়,যা সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বিএনপির হরতাল,অগ্নিসংযোগে মানুষের মৃত্যু ঘটানো,ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা,ভোট কেন্দ্রে হামলা,পথশিশুদের বিস্ফোরক পদার্থ ও পেট্রোল বোমা ছোঁড়ার কাজে ব্যবহার করে দলটি।

বিএনপির দাবি ছিল কি?নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।কিন্তু মার্কিন নতুন ভিসা নীতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারের উপরই আস্থা রেখেছে।বরং বিএনপির আন্দোলনের নামে ধংসাত্মক কার্যক্রম উপর এক প্রকার হুমকি দেয়া হয়েছে।নতুন ভিসা নীতি বিএনপিকে আরো বেকাদায় ফেলবে।মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন,বাংলাদেশের সরকার,প্রধানমন্ত্রী ও জনগণকে সহায়তা করার জন্যই এই ভিসা নীতি।অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচনে বর্তমান সরকারের উপরই আস্থা রাখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।বিএনপি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে অলীক স্বপ্ন দেখেছিল সে গুড়ে বালি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার করেছেন,নতুন ভিসা নীতিতে সেই অঙ্গীকারকেই মান্যতা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এজেডএস

তাপস হালদার বিএনপির অলীক স্বপ্নের গুড়ে বালি মার্কিন নতুন ভিসা নীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর