আবারও কি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত
১৫ জুন ২০২৩ ১৪:৩২
দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে এই নির্বাচন। সে লক্ষ্যে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে। বসে নেই ষড়যন্ত্রকারীরাও। নির্বাচন আসলেই শুরু হয় দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। জামায়াত এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির একটি ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছে, যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করতে খোড়া কোন ইস্যুতে রাজপথে সাধারণ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সহিংস ও প্রাণঘাতী হামলা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা ও তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা ইত্যাদি। জামায়াতের রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত করা। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, জামায়াতের সহিংস ও সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ২০১৩-১৪ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করার দাবিতে জামায়াতে সারা দেশে একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের এক বছর পর আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে সন্ত্রাসের রাজত্ব করতে চেয়েছিল তারা। বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, নিজেদের চিরাচরিত স্বভাব কখনোই এরা ত্যাগ করতে পারেনি। যে কারণে আগামী নির্বাচনের আগে জামায়াত আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হঠাৎ করে রাজনীতিতে আবার জামায়াতে ইসলামী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রায় এক যুগ পর সরকারি অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন ঢাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করেছে জামায়াত। এই সমাবেশ থেকে পুরোনো ধারার রাজনীতির পক্ষেই কথা বলেছেন জামায়াত নেতারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-িত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবি করে গরম বক্তৃতা করে জামায়াত কী এই বার্তা দিলো যে তারা আগের মতোই আছে? আবার সমাবেশ করার হঠাৎ অনুমতি দিয়ে সরকার কী নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করল না? নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হলেও দেশের রাজনীতিতে জামায়াত নিষ্ক্রিয় নেই।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা করেও জামায়াত যে রাজনীতিতে এখনো প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি এটা কম বিস্ময়কর নয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও এই দলটি নিয়ে মাঝেমধ্যেই রাজনীতির সদর-অন্দরে কথা বন্ধ হয়নি। নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার পর কোনো নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে না পারলেও বেনামে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত নেই।
গত এক যুগ ধরে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতারা দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন। এমন কথাও বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সেই জামায়াত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ প্রাকাশ্যে সরব হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দলটিকে হঠাৎ প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে প্রশাসনের অনুমতি দেয়ার নেপথ্যে কী?
মনে করা হচ্ছে, যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানে নিবন্ধন না থাকলেও সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা রয়েছে, সেহেতু নিবন্ধন হারানো জামায়াতকে সমাবেশ করতে দিয়ে সরকার দেশ-বিদেশে এই বার্তা দিতে চাইছে যে, সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অবাধে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে। এখানে সরকারের অহেতুক কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে দেয়া সরকারের একটি কৌশলের অংশও হতে পারে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে, নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন মহলের সঙ্গে জামায়াতের একটা সমঝোতা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জামায়াতকে নির্বাচনে এনে দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা যায়। একাধিক নামে নিবন্ধন পাওয়া জামায়াতের বিভিন্ন সংগঠন ভোটের মাঠে লড়তে পারবে। আর তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানো সম্ভব হবে।
জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশই নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে থাকে দলটিকে। এছাড়া জামায়াতকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে যেখানে সরকার গত ১২ বছর যাবৎ প্রকাশ্যে বলে আসছে, সেখানে তাদের প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বন্ধুদেশগুলোকে এটাও বার্তা দেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে বিএনপির সঙ্গে উপরে জামায়াতের সম্পর্ক ছিন্ন হলেও ভেতরে ভেতরে একই পথে চলছে চিরবন্ধু দল দুটি। কারণ জামায়াতের দাবি আর বিএনপির দাবির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে তারা। আর জামায়াতকে মাঠে নামতে আসকারা দিচ্ছে খোদ বিএনপি। ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিষয়টি অন্যভাবে মূল্যায়ন করতে পারে।
লেখক: কবি, সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
আবারও কি মাথা চাড়া দিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত মত-দ্বিমত রনি অধিকারী