ঢাকার জন্য অশনিসংকেত
১৯ জুন ২০২৩ ১৪:১৪
গ্যাস নেই, পানি নেই, বিদ্যুত নেই – গেল মাসজুড়ে রাজধানীর এই খবর শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সংকট কেটে গেছে, এখন হয়তো ভোগান্তির কথা ভুলতে বসেছি আমরা। কারণ বাঙ্গালী নগদে বিশ্বাসী। চট জলদি ভুলে যায় অতীত। আর বাঙ্গালীর এই ভোলা রোগ এই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেও দেখা যায়। ভাবখানা এমন, যে ভোগান্তি একবার চলে গেছে, তা যেন আর ফিরে আসবে না এই শহরে। আসলে কি তাই? চলুন তো একটু ভেবে দেখি।
তার আগে পাঠকদের প্রশ্ন করতে চাই, গরম, বর্ষা বা শীতকাল- কোনো একটি সময়েও কি ঢাকা ভোগান্তিমুক্ত? গরমের কষ্ট তো এখনো দগদগে স্মৃতি। সামনে আসছে বর্ষাকাল, জলজটসহ তীব্র যানজটের মহাউৎসব শুরু হবে। আর শীতকালে ধূলা-বালুর অত্যাচার। এই সময় বারবার ঢাকা দূষিত শহর হিসেবে বিশ্বে খবরের শিরোনাম হয়। চিন্তা করে বলুন তো, এই শহরে শান্তি আছে কোন ঋতুতে? উত্তরে অধিকাংশ নগরবাসীই বলবেন এই শহরের সুখের মা মইরা গেছে। তাই ভোগান্তি এখন এখানকার নিত্য সঙ্গী।
বর্ষাকাল এসে গেছে। জলজট নামক ভোগান্তি ঘাঁড়ের কাছে শ্বাস নিচ্ছে। অথচ পরিবেশবাদীদের কথা এই জাতি মেনে নিলে জলজটকে চিনতেই না এই শহরের মানুষ। কারণ এই শহরের চার পাশেই নদী ছিলো। শহরের মাঝ দিয়ে জীবন্ত খাল দিলো শতাধীক। পৃথিবীর খুব কম রাজধানীতেই এমন নদী আর খালের দেখা মিলবে। কিন্তু আজ সেই নদী-খাল কই? আসলে কুত্তার পেটে ঘি সয় না। গ্রামাঞ্চলে একটা লোক কথা আছে, গরীবের কথা বাসি হইলে ফলে। এই শহরের নানা অসংগতি নিয়ে পরিবেশবাদীরা কয়েক যুগ ধরে কথা বলছে। নদী-খালগুলোকে উদ্ধারে প্রতিবাদী নানা কর্মসূচী পালন করছে। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যাক্তিরাও এ সব কথায় গুরুত্ব দেয়নি, এখনো দিচ্ছে না। উল্টো বিরোধীতা করেছে। এ কারণে নদী-খালগুলোকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। মদদ দিয়েছে বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল।
হাতিরঝিল থেকে বনশ্রীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির নাম ছিলো নড়াই নদী। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে এই নদীকে মেরে খাল বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু পরিবেশবাদীরাই এই সব বিষয়ে খোঁজ রাখে। প্রতিবাদ করে। নড়াই নদী নিয়ে সুমন সামশ এর নোঙর নামক সংগঠণটি প্রতি বছর বনশ্রীতে নদীটির স্মরণে প্রতিবাদী অনুষ্ঠান করে। ভাবছেন এগুলো শুনে আপনার কি লাভ? এই শহরে শান্তিতে বসবাস করতে চাইলে এগুলো সবাইকে শুনতে হবে, জানতে হবে। অন্যদেরকেও জানাতে হবে। হারানো নদী-খাল পুরুদ্ধার করা গেলে এখনো ঢাকাকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু শুধু পরিবেশবাদীরাই মাঠে নামুক-এমন চিন্তা করলে এই শহর থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিন। এটি আমার কথা না। বিশ্বের নানা গবেষণাগুলোই বলছে এই শহর বাস অযোগ্য হয়ে গেছে। আমাদের নীরবতাই এর জন্য দায়ী।
বিশ্বের বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় বারবার খবরের শিরোনাম হচ্ছে। পৃথিবীর বড় বড় গবেষণায় নোংরা শহরের তালিকায় ঢাকার নাম উঠে আসছে। জাতিগতভাবে এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। দেশি-বিদেশী নানা গবেষণায় বলছে, বছরে গড়ে প্রতি ১০ দিনে এক দিন ঢাকা বিশ্বের সেরা দূষনের শহর হয়।
মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেস বা সরকারের আরও বড় বড় প্রকল্পে আমরা খুশি হই। কিন্তু এ সব উন্নয়নের খবর বিশ্ববাসী কতটুকু জানে? তারা জানে ঢাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দূষনের শহর। আমেরিকা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই- এর প্রতিবেদনের খবর সারা পৃথিবীর মানুষ রাখে। তারা জানে, ঢাকা অনেক আগেই বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ পরিবেশ নিয়ে স্বোচ্চার। অথচ আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত প্রজন্ম পরিবেশের ব্যাপারে থেকে যাচ্ছে অজ্ঞ। ঢাকা বাঁচাও আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। তাদের জানা দরকার, ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থানায় কী বেহলা দশা!
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) গেল কয়েক বছর আগে এক গবেষনা প্রতিবেদনে জানিয়েছে এই শহরে প্রতিদিন ১০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরী হয়। কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশন মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করতে পারে। বাকি ৪ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য দৈনিক ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকে। যা শুকিয়ে, গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ধুলায় পরিনত হয়। এই দূষিত ধুলাই এই শহরকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই ধুলায় শ্বাস নেওয়ার সময় আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। যে কারনে ঢাকায় রোগ-বালাই বেশি। ঢাকার বাইরে একজন চিকিৎসক রোগীই পান না আর ঢাকায় রমরমা ব্যবসা।
ঢাকা নিয়ে আরও দু:সংবাদ দিয়েছে ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টের বায়ু নিয়ে গবেষণা চালিয়ে ধুলায় ৮ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল। এগুলোর কারণে এই শহরের মানুষের পেটের পীড়া, ফুসফুসে আক্রান্ত হওয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত নানা অসুখ দেখা দেবে। গবেষণাটি হয় ২০২১ সালে।
এছাড়াও আছে বৈধ-অবৈধ ইটের ভাটার দূষণ। গাড়ির কালো ধোয়া, কলকারখানার দূষণ। চারদিকে শুধু দুষণ আর দূষণ। এর মাঝেও থেমে নেই গাছ কাটা। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর আগেই গাছ কাটা যেন ফরজ কাজ! এমন একটা ভাব মেঘা প্রজেক্ট বোঝাতে হলে গাছ কাটার বিকল্প নেই। সেই সাথে এই শহরের প্রাকৃতিক জলাধার কমতে কমতে প্রায় শূণ্যের কোটায় চলে এসেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে দূষণের ফলে ঢাকা থেকে ষড়ঋতু হারিয়ে গেছে। বহু আগেই এখানকার প্রকৃতির ইকো–সিস্টেম ধ্বংস হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা ঢাকা নিয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে। সেই গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও যুক্ত ছিলো। গবেষক দল বলছে, ঢাকার ১৩ টি এলাকার বাতাসে প্রাণীঘাতি বিষাক্ত প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিস্তারিত জানতে সেটি দেখে নিতে পারেন। সেখানে বলা হয়, ঢাকার বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ধুলার সঙ্গে ভাসছে বিষাক্ত অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। নিশ্বাসের সঙ্গে তা শরীরে প্রবেশ করছে। এতে ক্যানসার, শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ তৈরি হচ্ছে, যা ওষুধেও দূর হবে না বলে আশঙ্কা করেছেন চিকিৎসকেরা। ফলে এর উৎস নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন পরিবেশ ধ্বংস করে কোন উন্নয়ন নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা সেই বক্তব্যের মিল খুঁজে পাই না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী গাছগুলোকেও উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটা এখনো চলছে এই শহরে। যেখানে উন্নয়ন সেখানেই গাছ কাটা। সরকারী বা বেসরকারী সব কাজেই পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেল কিন্তু এই শহরে মানুষই থাকতে পারলো না। তাই টেকসই উন্নয়ন জরুরি।
ঢাকা ওয়াসার সবশেষ (মে-২০২৩) তথ্য বলছে, গরমের কারণে রাজধানীতে এখন দৈনিক পানির চাহিদা ৩০০ কোটি লিটার। ওয়াসা উৎপাদন করতে পারে ২৮০ কোটি লিটার। প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে ২০ কোটি লিটার। ফলে রাধানীতে পানি পাচেছন না অনেক এলাকায়। এটি এখন প্রতিদিনের ঘটনা বিধায় গণমাধ্যমে আর বড় করে নিউজও হয় না। তাছাড়া মানুষ অসচেতন হওয়ায় দৈনিক ২০ শতাংশ পানি নষ্ট হয় বলে জানাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বিদ্যুতের মিটারের মতো ঢাকার প্রতিটা বাসা-বাড়িতে নিজেস্ব পানির মিটার লাগানো দরকার। তাতে পানির অপচয় কিছুটা কমবে। আর জলবায়ুর প্রভাবে ঢাকার পরিবেশ এলোমেলো আচরণ করছে। আষাঢ়-শ্রাবণ পুরো বর্ষাকাল। অথচ এই সময়েও ঢাকায় তীব্র গরম অনুভুত হয়। বৃষ্টির দেখা নেই। শহরের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এটি একটি আলামত। ওয়াসা বলছে, সমস্যা দিন দিন পানির সমস্যা আরও তীব্র হবে। কারণ ওয়াসার উৎপাদিত মোট পানির প্রায় ৬৭ শতাংশই আসে ভূগর্ভস্থ থেকে। কিন্তু এই উৎসই এখন ঝুঁকির মুখে। পুকুর বা জলাশয় ধ্বংস হয়ে গেছে এই শহরে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির মুজত কমে যাচ্ছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, একটি বাসযোগ্য শহরের জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা মুক্ত থাকা জরুরি। যেখানে মাটি উন্মুক্ত থাকবে যাতে বৃষ্টির পানি ভুগর্ভস্থ ধরে রাখতে পারে। কিন্তু ঢাকার অধিকাংশ জায়গাতেই পাকা বা পিচঢালাই হওয়ায় মাটি পানি ধরে রাখার সুযোগ কম পায়। যতটুকু পায় সারাবছরের পানির চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। ফলে প্রতিবছর ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নামছে। গত মে মাসে টানা কয়েকটা দিন ঢাকার ৩৫ টি এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। বিদ্যুৎ অনিয়মিত হওয়ার কারণে এই প্রকট দেখা দেয়।
প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনের ৭ জুনের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল ৫ ও ৬ জুন ঢাকার ৩৫ টি জায়গায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে পানির সংকট প্রতিবছর বাড়তেই থাকবে। এক সময় শুধু বিশুদ্ধ পানির অভাবেই এই শহর অকেজ হয়ে পড়বে। মানুষ এই শহর থেকে পালাতে বাধ্য হবে। নগরবিদদের দীর্ঘ দিনের দাবি ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তা নিয়ে অতীতের কোন সরকারই কার্যকরি উদ্যোগ নেয়নি। ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হবে মানুষ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, পরিবেশ বাচাও আন্দোলন-পবাসহ দেশের বড় বড় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই শহর রক্ষায় পুকুর বা জলাশয় ভরাটে আপত্তি জানিয়ে আসছে। কিন্তু রাজউকের ঘুষ খোর কিছু কর্মকর্তা পুকুর বা জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েই যাচ্ছে। তবে বর্তমান ডিটেল এ্যারিয়া প্ল্যান-ড্যাপের নতুন আইনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। শহর ধ্বংসের প্রায় সব আয়োজন শেষে ড্যাপের এই আইন আমি মনে করি লোক দেখানো বা শিশু ভোলানোর মতো।
এতো কিছুর পরও একটা ভালো সংবাদ আছে। পুরাণ ঢাকার গেন্ডারিয়ার শত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী পুকুরকে রক্ষা করা গেছে। কলাবাগানের তেঁতুলতলার মতো এলাকার কিছু সাহসী যুবক এই কাজে রাজপথে নেমেছিল। তাদের জন্য রইল লাল সালাম। সেই সাথে ধন্যবাদ দেই ‘বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)’ নামক পরিবেশবাদী জোটকে। জোটের আহ্বায়ক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা-এর যুগ্ম সম্পাদক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। সদস্য সচিব, সেভ আওয়ার সি-এর মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক পুকুরটি রক্ষায় সর্বোচ্চটা করেছেন। ইস্যুটি নিয়ে সবার আগে মাঠে নামের তারা।
হতাশার দিক হচ্ছে এই শহরের মানুষ এখনো পুকুর বা জলাশয় ভরাটকে অপরাধ মনে করে না। এর ফলে ঢাকা শহর কত বড় ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে সে ব্যাপারে অনেকেই জানে না। তবে গেল রমযান মাস গুলিস্তান মার্কেটে আগুন লাগার পর পুকুরের প্রয়োজনীয়তা এই শহরবাসী হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচেছ সরকারের বড় বড় মন্ত্রীরাও পরিবেশের ব্যাপারে অজ্ঞ। সুউচ্চ ভবন নির্মাণকেই তারা উন্নত রাষ্ট্রের প্রতীক মনে করছেন। আমি মনে করি, ঢাকা শহর ধ্বংসের জন্য অতীতের সব সরকার-ই দায়ি। আর প্রশাসনে থাকা মাথা মোটা আমলাদের অধিকাংশও মনে করেন উন্নয়ণ আগে, পরিবেশ রক্ষা পরে। তারা শুধু মাথা মোটাই নন, বরং জ্ঞানপাপীও। বিশ্বের উন্নত দেশের সব খবরই তারা রাখেন। পরিবেশ সুরক্ষায় সেই সব দেশ কী কী করছে, সরকারি খরচে বিদেশ সফরে যেয়ে নিজ চোখে তা দেখেও এসেছেন অনেকে। তারপরও দেশে এসে সরকারকে তেল মারতে উল্টা-পাল্টা জ্ঞান দেন। সহমত পোষণই তাদের ধর্ম। কারণ তেলবাজিতেই মেলে তাদের পদোন্নতি। বড় চেয়ার। দেশের বারোটা বাজলেও নিজের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত তারা। সবুজ–শ্যামল ও তিলোত্তমা ঢাকা নিয়ে ভাববার সময় নেই তাদের।
শীত, বর্ষা বা গরমে শান্তি নেই এখানে। নানা জরিপ বলছে ছোট এই শহরে প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ কাজের সন্ধানে আসছে। এভাবে শহরের উপর বোঝা বাড়ছেই। তারপরও টনক নড়েনি অতীতের কোন সরকারেরই। ঢাকাকে বাঁচাতে বিকেন্দ্রীকরণের কোন উদ্যোগ কেউ নেয়নি। নির্বাচনের ইশতেহারও থাকেনা এ সব কথা। কারণ মানুষের পক্ষ থেকে সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর এ সব নিয়ে কোন চাপ নেই। শুধু পরিবেশবাদীরাই চিৎকার করে এই শহরকে বাঁচাতে। হুঁশ ফিরছে না শহরের কর্তাদেরও। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিরাও উদাসীন। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পুরাপুরি থমকে যাবে ঢাকা।
লেখক: পবিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই