আমাদের দেশে মিলান কুন্ডেরাদের দেখা মিলবে কবে
১৫ জুলাই ২০২৩ ১৫:৪৮
মিলান কুন্ডেরার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ২০২১ সালে। আমার জন্মদিনে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আমাকে কুন্ডেরার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য জোক’ গিফট করেন। সে থেকে মহান এই লেখকের সঙ্গে আমার পরিচয়। স্যার বলেছিলেন, এ বইটি তোমাকে সমাজের আয়না বুঝতে সাহায্য করবে। বইটি পড়ে সেটারই প্রমাণ পেলাম। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি মূলত ডার্ক হিউমার ভিত্তিক। স্বৈরাচারের ভয়াবহতা লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন ঠাট্টার ছলে। এ উপন্যাসে তাই তিনি লিখেছিলেন সেই ঠাট্টার কথা, যা দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকার জীবন ছারখার করে দিয়েছিল নিমিষেই।
এ উপন্যাসে লেখক খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কমিউনিস্ট শাসনের নিষ্ঠুর চিত্র তুলে ধরেন, ঘটনার ভেতরের ঘটানাকে বিদগ্ধ হাতে ফুটিয়ে তোলেন। যে ঘটনার সঙ্গে আমি এদেশের বর্তমান সময়ের কমিউনিস্টদের ক্রিয়াকলাপে মিল দেখতে পাই। মূলত এ উপন্যাসই তাকে শক্তিমান লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এবং এ উপন্যাসের জন্যই তিনি তার নিজ দেশ চেকস্লোভাকিয়া থেকে ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্তও ফ্রান্সে অবস্থান করে ৯৪ বছর বয়সে অনন্তলোকে চলে যান।
‘দ্য জোক বা ঠাট্টা’ পড়ার পর থেকে মিলান কুন্ডেরা আমার মনোজগতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেন। এরপর থেকে তার অন্যসব কালজয়ী গ্রন্থ The Unbearable Lightness of Being, Life Is Elsewhere, Immortality, Ignorance পড়ে ফেলি। কুন্ডেরার চিন্তা ও লেখকশৈলী আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে।
মিলান কুন্ডেরা সবসময়ই গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতেন। তিনি সেটা পছন্দ করতেন না। তিনি সবসময়ই বলতেন, ‘লেখকরা তাদের কাজের মাধ্যমেই সবার সঙ্গে কথা বলেন। অন্য কোনো বিশেষ মাধ্যমে কথা বলা লেখকদের জন্য প্রয়োজনীয় নয়।’
১৯৭৬ সালে ফরাসি দৈনিক লে মন্ডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিলান কুন্ডেরা বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত করে তার লেখার ভার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত তাৎপর্য অস্পষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
এখন পর্যন্ত মিলান কুন্ডেরা নোবেল পুরস্কার পাননি, কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি তিনি নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছেন নোবেল পুরস্কার না পাওয়া কালজয়ী লেখক লিও তলস্তয়, জর্জ অরওয়েল, আন্তন চেখভ, ফ্রানৎস কাফকা, জেমস জয়েস, ডিএইচ লরেন্স ও ফিওদর দস্তয়ভস্কির পাশে।
মিলান কুন্ডেরা ছিলেন স্বতন্ত্রে সমুজ্জ্বল, বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাস তাকে কোনদিনও ভুলবে না। কুন্ডেরা জীবনভর লিখে গেছেন গণমানুষের অধিকারের পক্ষে। স্বৈরাচার, অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরে গেছেন আপসহীনভাবে। লেখনীর জন্য নির্বাসিতও হয়েছিলেন। মিলান কুন্ডেরার মতো আপসহীন লেখকরা আমাদের পথ দেখায়, অনুপ্রাণিত করে। আমাদের দেশে কি মিলান কুন্ডেরাদের দেখা মিলে?
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
আমাদের দেশে কি মিলান কুন্ডেরাদের দেখা মিলে ইমরান ইমন মত-দ্বিমত