Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আকাশছোঁয়ার স্বপ্নকে জয় করে আকাশ ছুঁয়ে ফেলার দিন


১২ মে ২০১৮ ০২:৫৮
। অঞ্জন রায় ।
যে হাত তুলে এক সদ্য তরুণ বা মাঝবয়েসি মুক্তিযোদ্ধা বুলেট বুকে ‘জয় বাংলা’ বলে শহীদ হয়েছিল- স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরোনোর আগেই সেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত পৌঁছে গেল মহাকাশে।
ছোট্ট সবুজ দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই চলেছে কতো ষড়যন্ত্র। বারে বারে দেশটির যাত্রাপথে সামরিক শাসন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের দামে কেনা দেশটিকে স্বীকৃতি দিতেও চলেছে বিভিন্ন কুটচাল। বিশ্বের মোড়লদের অনেকেও স্বাধীনতার পর ক্রমাগত চেষ্টা করেছে-কি ভাবে পিছিয়ে দেওয়া যায় বাংলাদেশের গতি।
এই স্বাধীন দেশেই খুন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে, তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে। দেশটি যে দর্শনকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল- সেই দর্শন থেকে উল্টোপথে ধাবিত করা হয়েছে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরে সদ্যস্বাধীন দেশকে তাচ্ছিল্যভরে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা যুদ্ধে ছিন্নভিন্ন বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাবারের জাহাজ মাঝসমুদ্র থেকে ফিরিয়েও নিয়ে গিয়েছিলো। যা আমাদের জানা ইতিহাস।
আর এবারে রচিত হলো আরেক ইতিহাস। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই মহাকাশে গেল বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার রঙ নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট। এ যেন এক অনন্য স্বপ্নযাত্রা। এই পদক্ষেপের সাথে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের রূপ আরেক মাত্রায় এলো।
আমাদের ছোটবেলার পাঠ্যক্রমে ছিলো কাজী নজরুল ইসলামের সংকল্প কবিতাটি, সেখানে পড়েছিলাম- “থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে, – কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে… “ পড়তে পড়তে কোন সন্ধ্যায় জানালার শিকের বাইরের আকাশের দিকে তাকাতাম। অনেক অনেক আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
কখনো দেখতাম কোনও একটা তারা ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে- তখন মা বলতেন, ওগুলো রকেট। দেখতাম- কোথা থেকে যেন খুব দ্রুত একটা তারা ছুটে আসছে। নেমে আসতো আশেপাশেই- মনে হতো আমার শৈশবের পাবনা শহরকে ভাগ করে দেওয়া ইছামতি নদীর অপর পাশেই সেই আগুন গোলার মতো তারাটি পড়েছে। না। সেই উল্কা কখনোই আশেপাশে পড়তো না। কিন্তু কল্পনায় ছিলো কাছেই।
গত কদিন ধরেই- যখন এগিয়ে আসছে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এর মহাকাশযাত্রার সময়, তখন আমি আমার স্মৃতির সাথে আড্ডা দিয়েছি। মনে করে দেখার চেষ্টা করেছি, কখনো কি আমাদের শৈশবে বা কৈশোরে ভেবেছি- আমাদের দেশের লাল সবুজ পতাকা ধারণ করে মহাকাশে আমাদেরও স্যাটেলাইট উঠবে! না। স্বীকার করছি রেশনের মোটা চাল খেয়ে বড় হওয়া আমার মোটা মাথায়- এতোটা স্বপ্ন দেখার সাহসটুকুও ছিলো না। হ্যাঁ, সত্যিই আমার কাছে বঙ্গবন্ধু-১ এর মহাকাশযাত্রাকে পুরোটাই স্বপ্নযাত্রা বলেই মনে হয়েছে। মনে হয়েছে প্রায় আধাশতকের একটা মানবজীবনে আমি বেশ কয়েকটি ইতিহাসের জন্ম দেখলাম নিজের চোখে- তার অন্যতম এই মহাকাশযাত্রা।
হ্যাঁ, এর আগে অনেকগুলো দেশইতো স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে মহাকাশে- তাহলে কেন এই আবেগ? এমন প্রশ্ন করতেই পারেন। আবেগের কারনটা- দুয়ারের বাইরে দাড়িয়ে অন্যের বাড়ির আলোকসজ্জ্বা দেখা আর নিজের বাড়ীতে আলোর উৎসব দেখার মাঝে বিস্তর ফারাক। এটা অনেকটাই অন্যের জমিতে ভাগচাষি হিসাবে ফসল ফলানো আর নিজের জমিতে ধানশিশুদের বেড়ে ওঠা দেখার মাঝে যে সুখের দূরত্ব তেমনটাই।
আর সত্যি হলো চোখের সামনেই আমরা দেখছি বদলে যাওয়া এক অন্য বাংলাদেশকে। এখন এই বাংলাদেশে পদ্মাসেতুর স্প্যানগুলো মাথা উঁচু করে জানান দেয়-নিজস্ব অর্থায়নের স্বক্ষমতার শক্তি। মহাকাশে ছুটে চলা স্যাটেলাইট জানান দেয়, আমাদের আর অন্যদেশের কাছে স্যাটেলাইটের জন্য নির্ভর করতে হবে না। উল্টো আমরাই বছর বছর গুনবো ভাড়ার টাকা।
বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিতে হতো-নিজস্ব উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর প্রাথমিকভাবে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে। সত্যিই আজকের দিনটি ইতিহাসে এক বাঁক বদলের দিন হিসাবেই চিত্রিত হবে।
আজকের বাংলাদেশ আর গতকালের বাংলাদেশের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে এক বড় দূরত্ব। সেই দূরত্ব স্বক্ষমতার- সেই দূরত্ব, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নকে জয় করে আকাশ ছুঁয়ে ফেলার। এ বড় আনন্দের আর স্বস্তির দিন।
মনে হচ্ছে এই দালানে মোড়া শহরের কোনও একটা ছাদে উঠি আগামী কাল বা পরশু। আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলি- ওই যে বিরাট ওই আকাশটা, সেখানেও আমরা আছি। আমাদের জনকের নাম সেখানে লাল সবুজের নিশানে উজ্বল।
লেখক: সংবাদকর্মী
সারাবাংলা/ এসবি

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর