Thursday 16 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিটিজেন সাইন্টিস্ট ও ব্লু-গার্ড: ২টি যুগান্তকারী সংযোজন

ড. মো. জলিলুর রহমান
২৭ জুলাই ২০২৩ ১৭:১১ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৯

টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সঠিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বিজ্ঞানভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা করা, দ্বিতীয়ত, জলজ পরিবেশের স্বাস্থ্য উন্নত রাখা। এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, ইউএসএআইডি (USAID) এর আর্থিক সহায়তায়, ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ইকোফিশ-২ প্রকল্প সিটিজেন সাইন্টিস্ট ও ব্লু-গার্ড নিযুক্ত করে যুগান্তকারী কাজ করে যাচ্ছে।

সিটিজেন সাইন্টিস্ট কারা?
সিটিজেন সাইন্টিস্ট হলো, সাধারণ সিটিজেন বা জনগণ যারা তাদের নিজেদের স্ৱাভাবিক পেশাগত কার্যক্রমের পাশাপাশি, পেশাদার গবেষকদের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে, বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য প্রদান বা তথ্য উদঘাটনমূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকেন তারা। আর যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিটিজেন সাইন্টিস্টদের সংযুক্ত করে বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, তাকে সিটিজেন সাইন্স এ্যাপ্রোস বা কার্যক্রম বলা হয়। ইকোফিশ-২ প্রকল্পের সিটিজেন সাইন্টিস্ট বলতে, সেসকল নৌকার মাঝিদেরকে বুঝানো হবে যারা প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচিত ও প্রশিক্ষিত হয়ে, স্মার্টফোন ও এ্যাপ্স এর মাধ্যমে তাদের স্ৱ স্ৱ মৎস্য আহরণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। বর্তমানে কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও সেন্ট মার্টিন এলাকায় ৪০ জন ও নিঝুম দ্বীপ এমপিএ অঞ্চলে ১০ জন মিলে সর্বমোট ৫০ জন সিটিজেন সাইন্টিস্ট কর্মরত আছেন। এ ছাড়াও, সিটিজেন সাইন্টিস্টগণ, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথেও নিজেদের সম্পৃক্ত রাখেন। বিশেষকরে, সামুদ্রিক বড় প্রাণী (মেগাফনা) যেমন, তিমি, ডলফিন, কচ্ছপ, হাঙ্গর, শাপলাপাতা, ইত্যাদি যেন নিজে ইচ্ছা করে না ধরেন, আর অনিচ্ছকৃতভাবে জালে আটকা পড়লে জীবিত ছেড়ে দেন। ফিশিং নিষিদ্ধ সময়ে এ বিষয়ে জেলেদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন। আর এ ধরনের ঘটনা নিজে দেখলে স্ৱপ্রণোদিত হয়ে প্রাণীটিকে জীবিত ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

বিজ্ঞাপন

ব্লু-গার্ড বা সুনীল-প্রহরী কারা?
সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে, সাগরের সামুদ্রিক মৎস্য ও জীবকূলের জন্য স্বাস্থ্যকর সুনীল পরিবেশ রক্ষার জন্যে ইকোফিশ-২ প্রকল্পের সহায়ক হিসেবে কাজ করার ব্রত নিয়ে সৃষ্ঠ স্থানীয় যুব-সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবক দলই হলো ব্লু-গার্ড বা সুনীল-প্রহরী।

বর্তমানে কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও সেন্ট মার্টিন এলাকায় ৪০ জন ও নিঝুম দ্বীপ এমপিএ অঞ্চলে ১০ জন মিলে সর্বমোট ৫০ জন সিটিজেন সাইন্টিস্ট কর্মরত আছেন

বর্তমানে কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও সেন্ট মার্টিন এলাকায় ৪০ জন ও নিঝুম দ্বীপ এমপিএ অঞ্চলে ১০ জন মিলে সর্বমোট ৫০ জন সিটিজেন সাইন্টিস্ট কর্মরত আছেন

সাগরের দূষণ কমিয়ে সামুদ্রিক মৎস্য ও জীবকূলের জন্য স্বাস্থ্যকর সুনীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ব্লু-গার্ড বা সুনীল-প্রহরীগণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যাবে। সুনির্দিষ্টভাবে, সুনীল-প্রহরীগণ নিম্নলিখিত ৪টি উদ্দেশ্যে কাজ করে:
• সমুদ্র সৈকত ও মৎস্য নৌযান থেকে প্লাস্টিক দূষণ কমানো
• পরিত্যাক্ত জাল থেকে জীববৈচিত্রের ক্ষতির পরিমাণ কমানো
• পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক ও জাল থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করা
• ব্লু-গার্ড কার্যক্রমকে স্বেচ্ছাসেবী অভিযান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা

একদিকে, সিটিজেন সাইন্টিস্টগণ তাৎক্ষণিকভাবে মৎস্য আহরণ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করার মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনায় তথা সুনীল অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্ৱেচ্ছাসেবা ভিত্তিক এ কাজের দীর্ঘস্থায়ীত্ৱের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভবিষ্যতে, সিটিজেন সাইন্টিস্টগণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া আরও উন্নত হবে ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে, নির্ভরযোগ্যভাবে মৎস্য আহরণ সংক্রান্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তির বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে এবং মৎস্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
অন্যদিকে, সাগরের দূষণ কমিয়ে প্রাণীকূলের জন্য স্বাস্থ্যকর সুনীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার কাজে ব্লু-গার্ড বা সুনীল-প্রহরীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিক এ কাজের স্থায়ীত্বশীলতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা ও সহযোগীতা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভবিষ্যতে প্লাস্টিক ও নেট সামগ্রী রি-সাইকেল প্রক্রিয়া আরও উন্নত হবে ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিক সমস্যার সমাধান হবে এবং এ ক্ষেত্রে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে মর্মে প্রত্যাশা করা যায়।

সিটিজেন সাইন্টিস্টগণের মাধ্যমে, নির্ভরযোগ্যভাবে মৎস্য আহরণ সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করে এবং সুনীল-প্রহরীদের মাধ্যমে, স্বাস্থ্যকর সুনীল পরিবেশ সৃষ্টি করে, টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে, প্রকৃতপক্ষে সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা তথা সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

লেখক: বিজ্ঞানী

সারাবাংলা/এসবিডিই