Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফুটবলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার এখনই সময়

টি ইসলাম তারিক
২৭ জুলাই ২০২৩ ১৯:১১

মোহামেডান আবাহনী নাম দুটো শুনলেই সমর্থকেরা যেন নড়েচড়ে বসেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াংগনে এ দুটি নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আবাহনী লীগ বা টুর্নামেন্টে শিরোপা রেষে থাকলেও মোহামেডান যেন ট্রফি জয় করা ভুলতে বসেছিলো। যে ক্লাবটি জন্মের পর থেকে শিরোপা ছাড়া কিছু ভাবতো না সে ক্লাব মাঝ পথে রেলিগেশন শঙ্কায় দিন কাটিয়েছে। মোহামেডানের ঝুলিতে আগাখান গোল্ডকাপ তিনবার, লীগ উনিশ বার, ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ দুইবার, ফেডারেশন কাপ এইবার সহ এগার বার, সুপার কাপ দুইবার, ডামফা কাপ দুইবার দেশের বাইরে থেকেও ট্রফি জয়ের ইতিহাস রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মোহামেডানের এত সাফল্য তবুও হারিয়ে যেতে বসেছিলো মোহামেডান! দীর্ঘদিন লীগ বা টুর্নামেন্টে কোন ট্রফি না পাওয়া মোহামেডান যেন ম্লান হয়ে যেতে বসেছিল । মোহামেডান শেষ কোন ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছে ২০১৪ সালে। সেটা স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে । লীগ বা অন্যান্য টুর্নামেন্টের বিষয়ে সবাই অবগত আছেন। একে একে সমর্থকেরাও পিছুটান দেয় প্রিয় দলের হতাশা জনক ফলাফলে।

সেন লি দুর্বল দল নিয়ে কোন রকমে টিকে ছিলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর হাল ধরেন পরীক্ষিত কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক! ফলাফল ভরাডুবি! তাইতো মাঝ পথেই বিদায় হতে হয় মানিককে। দায়িত্ব কাধে পড়ে আলফাজের উপর, আলফাজের সহকারী হিসেবে ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম সেন্টু এবং গোলরক্ষক কোচ হিসেবে মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার সাইদ হাসান কানন। গোলরক্ষকদের নিয়ে কাননের দক্ষ অনুশীলন তাদের আস্থাশীল করে তোলে। গোলরক্ষকদের অসাধারণ কিছু সেভ এবং দু একটা খেলোয়াড় পরিবর্তন আর আলফাজ টনিকে মোহামেডান যেন ঝলসে উঠে!

লীগের ফলাফল শুরুতে যা ধারণা করা হয়েছিলো তার চাইতে কিছুটা উন্নতি চোখে পড়লেও ফেডারেশন কাপে যেন পুরোটাই চালকের আসনে। সেমিতে লীগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে পরাজিত করে ফাইনালে! ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর সাথে মোকাবেলার খবর সবাই জানে । এই একটি জয়েই সারা দেশের ঝিমিয়ে পড়া সমর্থকেরা জেগে উঠে। ক্লাব পাড়াতেও সাজ সাজ রব।

১৯৮৬ সালে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে মোহামেডান আবাহনী সেমিফাইনাল ম্যাচটা যারা দেখেছেন তারা অনেকটাই সে ম্যাচের রিপ্লেকা বলতে পারেন! সে ম্যাচে আবাহনী শুরুতেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। এরপর মোহামেডান ৩-১ গোলের লিড নেয়। আবাহনী একটি গোল পরিশোধ করলে মোহামেডান আবারও ৪-২ গোলে এগিয়ে যায়। মনু এবং কায়সার হামিদ দুটি করে গোল করেন। কিন্তু সে লিড ধরে রাখতে পারে নি মোহামেডান। নির্ধারিত সময়ে ৪-৪ গোলে ড্র হয়। উত্তেজনাপুর্ন ম্যাচে টাইব্রেকারে আবাহনী জয়লাভ করে। বাড়তি পাওনা আবাহনীর প্রেম লালের হ্যাট্রিক। সেই হ্যাট্রিকের বদলা নেয় মোহামেডান ২০০০ সালের লীগে। আবাহনী ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর মোহামেডান ৪-৩ গোলে জয়লাভ করে। মোহামেডানের নকীব হ্যাট্রিক করে বদলা নেন ১৯৮৬ সালের প্রেমলালের।

বিজ্ঞাপন

মোহামেডানও ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে পরাজয়ের স্বীকার হয়েছে আবাহনীর কাছে। সেটা ২০১২ সালে দ্বিতীয় সুপার কাপ ফাইনালে। মোহামেডান ২-০ গোলে এগিয়ে গেলে মোহামেডানের গোলরক্ষক লাল কার্ড খেয়ে মাঠত্যাগ করলে গোলবার অরক্ষিত হয়ে যায়। সে সুযোগে আবাহনী ম্যাচটি ২-২ গোলে সমতা ফেরায়, টাইব্রেকারে ম্যাচ আবাহনীর নিয়ন্ত্রনে চলে যায়।

এ দুইদলের ম্যাচ মানেই উত্তেজনায় ঠাঁসা। বর্তমানে যাদের বয়স ২০ এর কোঠায় তারা এই দুই দলের দ্বৈরথ সম্পর্ক্যে আসলে কিছুই জানে না, ২০২৩-এর ৩০ মে’র ফাইনাল যেন ফুটবলের জয় হয়েছে। নতুন প্রজন্ম এতদিন শুনে এসেছে মোহামেডান আবাহনী দ্বৈরথের কথা, পুরনো সমর্থকদের কাছে শুধু এ দুই দলের গল্পই শুনেছে! বাস্তবে মোহামেডান আবাহনী’র মোকাবেলা দেখার সুযোগ হয়েছিল ৩০ মে ফেডারেশন কাপ ফাইনাল। এক ম্যাচেই যেন পুরনো সব উঠে এসছে। সারাদেশে আলোচনার শীর্ষে ছিল এই ম্যাচকে ঘিরে। দেশের ফুটবলকে ঘিরে এত আলোচনা গত কয়েক বছরে আর হয়নি। ২০২৩ সালে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে আবাহনী ২-০ গোলের লিড নিয়েও সে ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে এবং অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪ গোলে ড্র হয়। টাইব্রেকারে মোহামেডান জয়ী! মোহামেডানের সুলেমান দিয়াবাতে হ্যাট্রিকসহ আবাহনীর বিরুদ্ধে চার গোল করে নতুন রেকর্ডের সুচনা করেন। টাইব্রেকারে আরও একটি গোল করেন সুলেমান।

একটি জয় যখন মোহামেডান ক্লাবকে নড়েচড়ে বসার সুযোগ দিয়েছে তখন ক্লাব কর্তাদের উচিৎ পুনরায় ক্লাবকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। সমর্থকদের এই উচ্ছ্বাস উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে যারা মোহামেডান থেকে বিমুখ হয়ে ছিলেন তাদের ক্লাব মুখি করা। সবার সহযোগিতা নিয়ে আগামী লীগের জন্য শক্তিশালী দল গঠন করা। নিশ্চয়ই ক্লাব কর্তারা বিচক্ষন, বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়েই ধ্বংস্তূপ থেকে বের করে মোহামেডানকে দীর্ঘদিন পর চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরিয়েছেন! সমর্থকদের আস্থা ক্লাব কর্তাদের প্রতি আছে, তারা আশা করে ক্লাব কর্তারা লক্ষ কোটি সমর্থকদের বিমুখ করবেন না, তবে এ ক্লাবকে আবারও ঐতিহ্যের ধারায় ফিরিয়ে আনতে কিছু করার এখনই সময়।

লেখক: ক্রীড়ালেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

টি ইসলাম তারিক ফুটবলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার এখনই সময় মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর