Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
২৯ জুলাই ২০২৩ ১৩:৪০

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রধান টেরি এল ইসলে। তাদের মতে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভিত্তি নেই। এটি অসাংবিধানিক। সে জন্য এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নেই। রোববার (৩০ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এর আগে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনার ও ইসি সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, জাপান ও চীনের নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। বৈঠকের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের দেশের নির্বাচনী আইনকানুন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বৈঠকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনী আইন ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অবাধ নির্বাচন আয়োজনে ইসি কীভাবে কাজ করে তাও বিস্তারিত জানতে চান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৫ মাস বাকি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এখনো অনড় অবস্থানে। এজন্য রাজপথে বিরামহীন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হচ্ছে না। তারা মনে করেছিল আন্দোলন জোরদার করার পর বিদেশীরা তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে। কিন্তু দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এসে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সমর্থন না করে বিদ্যমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ চার প্রভাবশালী দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক অসাংবিধানিক। আবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির আশা পূরণ হচ্ছে না বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

বিজ্ঞাপন

দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষদের সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম মনে করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ‘আর সম্ভব নয়’। বরং সবার সহযোগিতা নিশ্চিত করে সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা ‘সম্ভব’। ইএমএফ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্ততি ও সাম্প্রতিক নির্বাচন বিষয়ে প্রতিনিধি দলের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জানতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আগামী নির্বাচনে আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে ইসির আইন, বিধি তারা জানতে চেয়েছেন। ইসি আশ্বস্ত করেছে, পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে-পরে আসতে পারবে। কমিশন থেকে কোনো বাধা নেই। ইএমএফ চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা।“তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, সে বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তাদের মতে, সংবিধানে যেটা আছে, তার আলোকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। কমিশনের যে আইন আছে তার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন ইসিকে সাপোর্ট দেয়, এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে এই কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এটা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংবিধানকে যেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষক দল সম্মান দিয়ে মেনে নিল সেখানে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, গণতন্ত্র ও শান্তিতে অবিশ্বাসী বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশের সংবিধানকে অমান্য করে অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সংবিধান বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে তারা দেশের অভ্যন্তরে জ্বালাও-পোড়াও এর মাধ্যমে জনসাধারণের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলার পায়তারা করে যাচ্ছে। তাদের এই কর্মকান্ড একেবারেই অগণতান্ত্রিক এবং অমানবিক যা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এবং গণতন্ত্রকামী জণগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা কখনো।

জনসমর্থনহীন বিএনপি-জামায়াত জোট খুব ভালো করেই জানে যে জণগণ তাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না। তাই তারা জনসমর্থনে গূরত্ব না দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে যাচ্ছে দেশের বিরদ্ধে প্রতিনিয়ত। কিন্তু তাদের এই অপপ্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে প্রকৃত সত্য তুলে ধরলো বিদেশি পর্যবেক্ষক দল। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতে স্বাধীন এই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী গঠিত নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সংঘটনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক দেশের মতো নিজস্ব সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া দরকার। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কখনো সংবিধানের বাহিরে গিয়ে অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।

অন্যদিকে স্বাধীনতার শক্তি , জনসমর্থন ও গণতন্ত্রে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশ সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সংঘটনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী গঠিত নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ভোটার আইডি লিষ্টে ভোটারদের ছবি সংযুক্তকরণসহ নির্বাচনে ডিজিটাল ইবিএম প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেন। আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত বাংলাদেশের উন্নয়নের সরকার। দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ বাঙালি জনগণের পূর্ণ সমর্থনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলে কঠোর প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার। অন্যদিকে দূর্নীতি, লুটপাট, জঙ্গিবাদের মদদ দাতা বিএনপি-জামায়াত জোট স্বাধীনতার সময় থেকে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরোধিতা করে আসছে। দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা সবসময়ই দেশের মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চেয়েছে এবং বর্তমানেও চাচ্ছে। আমার মনে হয় বিএনপি-জামায়াতের এখন সময় এসেছে ভাবার যে তাদের এমন সব সংবিধান বিরোধী কর্মকান্ড দিয়ে জনগণের সমর্থন পাওয়া তো দূরের কথা বরং এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারিয়ে অস্তিত্ব বিলীনের পথে। তাদের উচিত দেশের উন্নয়ন নিয়ে ঈর্ষা থেকে, দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করা থেকে এবং অসাংবিধানিক কর্মকান্ড দিয়ে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক করা থেকে বিরত থেকে শহীদদের রক্তে লিখিত বাংলাদেশের সংবিধানকে মেনে নিয়ে এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সংবিধানের আলোকে গঠিত নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

বিএনপি-জামায়াতের মনে রাখা উচিত যে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্ত ও মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে কখনো অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনসাধারণ কখনো মেনে নিবেনা। কষ্টে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে সংবিধান বিরোধী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অংসাবিধানিক এবং অযুক্তিক দাবী করে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন যা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে তা কোনোভাবেই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়েনা। তাদের উচিত বাংলাদেশের সংবিধানকে মেনে নিয়ে অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে সরকার গঠনের চেষ্টা করা।তা নাহলে তাদের এসব অসাংবিধানিক কর্মকান্ডের খেসরাত দিতে হবে জনসমর্থন হারিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীনের মাধ্যমে।

লেখক: ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর