Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ মুজিব উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা নন

বিভুরঞ্জন সরকার
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১২:২৮

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু হত্যা- পরবর্তী কয়েকবছর তার মৃত্যুদিনটি স্বাভাবিকভাবে পালন করা যায়নি শাসকগোষ্ঠীর বাধার কারণে। এমনকি মুজিব অনুরাগীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসবভবনে গিয়ে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগও পায়নি পুলিশের তাড়ায়।

এখন পরিস্থিতি বদলেছে। এখন বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে । বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন হয়ে থাকে অনেক বেশি।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ সংশিষ্টতার প্রমাণ না থাকলেও তিনি যে বিষয়টি জানতেন এবং ঘাতকদের প্রতি তার প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি ছিল সে ব্যাপারেও সন্দেহে প্রকাশের সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সময় নানাভাবে জিয়াউর রহমানের নাম এসেছে।

সবচেয়ে বড় কথা, বঙ্গবন্ধু নিহত না হলে জিয়াউর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সামান্যতম সুযোগ-সম্ভাবনাও ঘটতো না। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি। সম্ভবত চক্ষুলজ্জার কারণেই জিয়াউর রহমান নিজে কখনো
ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কটূক্তি বা অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেননি। আবার তার মৃত্যু দিনটিকে জাতীয়ভাবে পালন তো করেনইনি বরং তার আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এগুলো সব পুরনো কথা। অনেকেরই জানা। যাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বিএনপির জন্ম দেওয়া হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তারা ভেবেছিলেন জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে। বড় করা সম্ভব না হলেও অন্তত তার সমমাপের একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, না হলে বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যেমন অসম্ভব হবে, তেমনি রাজনীতির আসরে জাঁকিয়ে বসাও সহজ হবে না।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অন্য যার নামই আসুক না কেন, জিয়াউর রহমানের নাম কোনোভাবেই আসতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তার মধ্যে জিয়াউর রহমানের ছিটেফোটা অবদানও নেই; বঙ্গবন্ধু ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার যা আছে। একাত্তরে আরো অসংখ্য বাঙালি যোদ্ধার মতো জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সত্যি, তাই বলে তিনি কোনোভাবেই এই যুদ্ধের বা যুদ্ধপ্রস্তুতির ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হওয়ার মতো নয়। জিয়াউর রহমানের এক বেতার ঘোষণাকে পুঁজি করে যারা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন, অত্যাচার-নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করার বিরাট অধ্যায়কে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে চান, তাদের মূঢ়তাকে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে?

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর এক বেতার ঘোষণা দিয়ে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন। আর শেখ মুজিব? সেই কৈশোর থেকে শুরু করে আমৃত্যু মানুষের পাশে থেকেছেন, তাদের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে শেখ মুজিব উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। শেখ মুজিব সম্পর্কে ১৯৫৪ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের কাছে একান্ত গোপন যে নোট পাঠিয়েছিলে, সেখানে লিখেছেন- শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার জেলে গেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে একজন ভালো সংগঠক। অত্যন্ত সাহসী। রাজনীতির ব্যাপারে আপসহীন মনোভাবের মানুষ। একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ এজিটেটর। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঝড় তোলার মতো মানুষ। জেলখানাতেই এই ভদ্রলোককে অধিক মানায়।

যারা জিয়াউর রহমানকে শেখ মুজিবের প্যারালাল নেতা হিসেবে দাঁড় করাতে চান তারা ইস্কান্দার মির্জার এই বক্তব্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে হয়তো বলবেন, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করেছেন, সেজন্য তাকে একবারও জেল খাটতে হয়নি, বরং অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকে তিনি জেল খাটিয়েছেন। প্রিয় সহযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছেন। তাহলে শেখ মুজিবের চেয়ে তিনি বড় মাপের নেতা হলেন না!

আজকাল একশ্রেণির পণ্ডিত-গবেষকও এ কথা বলে থাকেন যে, শেখ মুজিব নাকি বাঙালি জাতিকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়ে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন আর জিয়াউর রহমান জাতির সামনে মুক্তিদূত হিসেবে হাজির হন এবং জাতিকে নেতৃত্ব দেন। অর্থাৎ এমনভাবে বলা হয় যেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস কী বলে?

একাত্তর সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান (পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা ঐতিহাসিক ব্যঙ্গচিত্রের জন্য বাঙালি জাতির কাছে জানোয়ার হিসেবেই পরিচিত) বেতার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেননি।

ইয়াহিয়া খান স্পষ্ট করেই বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিবুর রহমান কর্তক শুরু করা অসহযোগ আন্দোলন (মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শেখ মুজিবের ডাকে শুরু হয়েছিলো অসহযোগ আন্দোলন) রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তিনি এবং তাঁর দল গত তিন সপ্তাহ ধরে আইনসিদ্ধ কর্তৃপক্ষকে অস্বীকার করে চলেছে। তারা পাকিস্তানের পতাকা এবং জাতির পিতার (জিন্নাহ) ছবিকে অসম্মান করেছে। তারা একটি সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করেছে। …এই লোকটি (শেখ মুজিব) এবং তাঁর দল (আওয়ামী লীগ) পাকিস্তানের শত্রু এবং তারা দেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তান অংশটুকু ভেঙে সম্পূর্ণ আলাদা করতে চায়। তারা দেশের ঐক্য ও সংহতির উপর আঘাত হেনেছে। এই অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে।

ইয়াহিয়া তো জিয়ার নাম উচ্চারণ করেননি! জিয়ার ঘোষণাতেই যদি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধেই তো ইয়াহিয়া খানের সব আক্রোশ প্রকাশ করা ছিল স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত। তাছাড়া যদি এটা দেশবাসীকে বিশ্বাস করতে বলা হয় যে, জিয়ার নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, তাহলেও প্রশ্ন আসে, যুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে তিনি একজন সেক্টর কমান্ডার কিংবা জেড ফোর্সের অধিনায়ক থাকলেন কেন?

প্রবাসী সরকারের প্রধান না হোক, মুক্তিবাহিনীর প্রধান তো তারই হওয়ার কথা । জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন? মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার আইনগত ও বৈধ কর্তৃত্ব ছিল বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগেরই।

ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশ্বখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশে এসে তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তাদের সবাইকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন- ‘সর্বদা চিন্তা করবে আমাকে যেন মানুষ মনে রাখে। কিন্তু মানুষ কেন মনে রাখবে, সেটি ঠিক করতে হবে। এই যে চারপাশে এতো আলো দেখছো, বাতি দেখছো, বলোতো এই বাতি দেখলেই প্রথমে কার কথা মনে পড়ে? ঠিক, টমাস আলভা এডিসন। এই যোগাযোগের জন্য টেলিফোন, এটা দেখলে কার কথা মনে পড়ে? আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। একইভাবে এই বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই কার কথা মাথায় আসে বলতো? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবাই তাকে মনে রেখেছে। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর নাম এক ও অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে। এটা যারা অস্বীকার করে তাদের অবস্থান ইতিহাসের বিপরীত দিকেই।

বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক আগেই লিখে গেছেন— ‘আসলে আমরা (বাঙালিরা) অক্ষম, দুর্বল ও হীনের যা ধর্ম, তাই অবলম্বন করি। সব বড়কেই, সব মহানকেই টেনে ধুলোয় নামিয়ে ধূলিস্যাৎ করলেই আমাদের আনন্দ। সবাইকে অবিশ্বাস ও হেয় প্রমাণ করতে পারলেই আমাদে উল্লাস। এ দুর্ভাগা দেশে কোনোদিক দিয়ে যারা বড় হয়েছেন, যেমন করেই হোক, তাদের ছোট প্রমাণ করতে না পারলে আমাদের স্বস্তি নেই।’

অক্ষম-দুর্বল ও হীনের ধর্ম অনুসরণ করে যারা ক্রমাগত শেখ মুজিবকে ছোট করার অপচেষ্টা করে চলেছেন বা ভবিষ্যতেও করবেন, তারা কেউ তাঁর চেয়ে বড় হতে পারবেন না। কাজেই এই অপচেষ্টায় সময় নষ্ট না করে বরং এখন উচিত শেখ মুজিবের অবদান স্বীকার করে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে সমঝোতার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করা ।
বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। তবে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর গঠিত কিন্তু দেশের অন্যতম একটি বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ১৫ আগস্ট শোক দিবস হিসেবে পালন করে না, এমনকি বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বলেও স্বীকার করে না। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টে কেক কেটে সাড়ম্বরে নিজের জন্মদিন পালন করা শুরু করেন। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কখনোই শোনা যায়নি যে, ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন।

আমাদের দেশে অনেকেই আছেন, যাদের মধ্যে জ্ঞানী-গুণী মানুষের সংখ্যাও কম নয়, যারা বেগম জিয়াকে রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে তার রুচি, তার সৌজন্য, কথাবার্তায় তার পরিমিতিবোধ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন- তারা কী এটা অস্বীকার করতে পারবেন যে, জন্মদিন নিয়ে তিনি যে শঠতার আশ্রয় নিয়েছেন সেজন্য অন্য যেকোনো সভ্য দেশে তার রাজনৈতিক অপমৃত্যু ঘটতো, তাকে চরমভাবে ঘৃণা করা হতো! পরম শত্রুর মৃত্যু দিনেও কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষ জেনেশুনে উৎসব আয়োজন করে না। অথচ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁর করুণ মৃত্যুর দিনটিতেই একটি ভূয়া জন্মদিন পালন করেন এই দেশেরই একজন অন্যতম রাজনৈতিক নেত্রী। এর চেয়ে বড় লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে! বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক সমঝোতা বা ঐকমত্যের কথা যারা বলেন, তারা ১৫ আগস্ট সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান নিয়ে কোনো কথা বলেন না।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিএনপি যতদিন ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ না করবে ততদিন দেশের রাজনীতিতে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হওয়া সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিভুরঞ্জন সরকার মত-দ্বিমত শেখ মুজিব উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা নন

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর