Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জঙ্গিদের নেপথ্যে ছিল জামায়াত, পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি

তাপস হালদার
১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২৫

ভয়াবহ ১৭ আগস্ট, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৮ বছর পূর্তি দিবস।দিনটির কথা অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন। আর তরুণ প্রজন্মের তো মনে থাকারই কথা নয়। আরেক শ্রেণির লোক আছে যারা মনে করতে স্মৃতি আওড়াচ্ছেন। কথায় আছে, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। এখন এত শান্তিতে বাস করার পরও সরকারের দোষ খুজতে যারা ব্যস্ত আছেন, তাদের তো মনে থাকার কথাই নয়। তারা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের অনিশ্চয়তার দিনগুলোর কথা ভুলে গেছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের মুন্সীগঞ্জ ছাড়া বাকি ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা করে জামা’আতুল মুজাহীদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। প্রায় পাঁচশ পয়েন্টে বোমা হামলায় ২জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হয়। রাজধানী ঢাকাতেও ৩৪ স্থানে হামলা হয়েছিল। সুপ্রিমকোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বিভিন্ন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি -বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কোথাও বাদ যায়নি। হামলার স্থানগুলোতে যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছিল সেখানে লেখা ছিল- ‘দেশের কর্মরত বিচারকদের প্রতি একটা বিশেষ বার্তা পাঠালাম। দেশে দ্রুত ইসলামী আইন কায়েম করতে হবে। নতুবা কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে জেএমবি।’ ১৭ আগস্টের হামলায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও ব্যাপকতা ছিল অনেক বেশি। এঘটনা তখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও নজর কেড়েছিল। এটা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়, এটা ছিল সুপরিকল্পিত ঘটনা। তাদের শক্তি সামর্থ্য জানানোর কৌশল।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠালগ্নেই ১৯৭২ সালে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ উল্টো পথে যাত্রা শুরু করে, যার নেতৃত্ব দেন জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতা দখল করেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। যার কারণেই ধর্মীয় জঙ্গিবাদের যাত্রা শুরু হয়। আর ১৯৯১ সালে জামায়াতের সমর্থনে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণের পর জঙ্গিবাদের বিস্তার লাভ করে। তখনই জামায়াতের সহযোগিতায় ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ’ আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশে ইসলামী আইন চালুর বিষয়ে জামায়াত জঙ্গি সংগঠন গুলোর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে। আর এদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয় বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটলেও জেএমবি’র বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যার কারণে জঙ্গি সংগঠনটি ধীরে ধীরে শক্তি বাড়তে থাকে। এবং বড় পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটে ১৭ আগস্টের ঘটনা। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছোট বড় পঞ্চাশের অধিক জঙ্গি সংগঠনের উদ্ভব ঘটে। জামায়াত শিবির থেকে বের হয়ে জেএমবি, হুজির মতো সংগঠন তৈরি হয়। এরা মুলত জামায়াতের বি-টীম হিসেবে কাজ করে।

জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে আসে।বাংলাদেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ(জেএমবি) প্রতিষ্ঠা করে।জেএমবি প্রথম হামলা চালিয়ে ২০০১ সালে শায়খের নিজ জেলা জামালপুর ধর্মান্তরিত দুইজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকে জবাই করে।বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের কার্যক্রমে গতি বাড়তে থাকে।২০০২ সালের আগস্টে বাগেরহাটে তারাপদ পোদ্দারকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলা,সেপ্টেম্বরে সাতক্ষীরা জেলার গুডপুকুর মেলার সার্কাসে ও রক্সি সিনেমা হলে হামলা করে অর্ধশতাধিক লোককে আহত ও ৩ জন নিহত হয়।২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরের চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা করে ১৯ জন মানুষকে হত্যা ও শতাধিক মানুষকে আহত করা হয়।তৎকালীন বিএনপি সরকার জঙ্গিদের না ধরে বিরোধী দল দমনের নামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করে।গ্রেফতার করা হয় ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে।রাজশাহীর বাগমারা,নওগাঁর রানী নগর ও নাটোরের নলডাঙ্গাকে ঘিরে বিশাল এলাকা নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।পুরো উত্তরবঙ্গে তালেবানি শাসন চালু করে।সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে ভিন্নমতাবলম্বী মানুষদের ধরে এনে,গাছের সাথে উল্টো ভাবে ঝুলিয়ে নির্যাতন করে।নির্যাতনে অনেক মানুষকে হত্যা ও আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব করে দেয়া হয়।তাদের এহেন ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেসময়কার বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রকাশ্যে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে।

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিএনপি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি,কারণ তাদের ভোটের হিসেব।জামায়াতের সাথে বিএনপির নির্বাচনী জোট।স্বাধীনতা বিরোধী,ধর্মান্ধ মৌলবাদী কিংবা সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীরা হয় তাদের দলে কিংবা জোটে আছে।তারেক রহমান ২০০৪ সালে এক বক্তৃতায় তো বলেছিলেন,‘শিবির -ছাত্রদল এক মায়ের পেটের দুই সন্তান’।কথাটা শুধু ছাত্র সংগঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়,এটা বিএনপি ও জামায়াতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।কারণ এই দুইটি দলের একই আদর্শ।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত জেএমবি বাংলাদেশে শক্তিশালী হয়ে ওঠার পেছনে তারেক রহমানের ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী এমপিরা সরাসরি জড়িত ছিল। উত্তরবঙ্গের খালেদা জিয়ার তিন মন্ত্রী,একজন মেয়র ও একধিক সংসদ সদস্য বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে সরাসরি জঙ্গিদের ব্যবহার করতো।তাদের প্রত্যক্ষ মদদে ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল বাংলা ভাই।প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও মন্ত্রী-এমপিদের পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল অসহায়।অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গিদের পাহারাদার হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে।পুরো উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করেছিল।তারেক রহমানের সাথে তাদের এতই গভীর সম্পর্ক ছিল যে,বাংলা ভাই জনসম্মুখে তারেক জিয়াকে মামা সম্বোধন করে ফোন করতো।জঙ্গিদের নেপথ্যে ছিল জামায়াত,পৃষ্ঠপোষকতা দিত বিএনপি।

আজকে যারা ভিসা নীতি নিয়ে লম্ফঝম্প করেছেন, তাদের নেতা তারেক রহমানের কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে মার্কিন ভিসা বন্ধ আছে। উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় বলা হয়েছে, তারেক রহমানের সাথে দেশি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে। সেজন্য তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া যাবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সেসময় বলেছে, জেএমবি সহ জঙ্গি সংগঠনের বিএনপির সংশ্লিষ্টতা আছে। বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে দমন করতে জঙ্গিদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিএনপি। এছাড়া বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে। ছাত্রশিবির তো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন। একথা দিবালোকের মত আজ স্পষ্ট, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় তারেক রহমান সেসময়ও জঙ্গিদের ব্যবহার করেছিল।

২০০৯ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করার কারণে জঙ্গিরা কোনঠাসা হতে থাকে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। কিন্তু সরকার কঠোর হস্তে সুচারুভাবে সে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। আগাছার মতো সারাদেশে বিস্তার লাভ করা জঙ্গি নির্মূল হয়ে গেছে এটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে জঙ্গিদের কোমর ভেঙ্গে গেছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রনে আছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এসবিডিই

জঙ্গিদের নেপথ্যে ছিল জামায়াত- পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি তাপস হালদার মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর