আইভি রহমানের চিকিৎসাতেও বাধা দিয়েছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকার
২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:১৫
“সেই ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে আমরা এক সাথে। মিছিল, মিটিং, ছয় দফা আন্দোলন, শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন, সেই ষাটের দশক থেকেই আমরা একসাথে রাজনীতি করে যাচ্ছি। উনি সবসময় রাজপথে ছিলেন। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং মহিলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট হওয়া স্বত্বেও তিনি কখনো মঞ্চে এসে বসতেন না। বলতেন ‘আমি মেয়েদের সাথেই বসি।বক্তব্য দিয়েই মাটিতে গিয়ে বসতেন।”
একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মৃতিচারনে এভাবেই শহীদ আইভি রহমানকে কর্মীবান্ধব নেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
সময় কত দ্রুত বয়ে যায়। দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১৮ বছর। কর্মীবান্ধব নেত্রী ছিলেন বলেই ১৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা ও ভালাবাসায় তাকে স্মরন করছেন নেতাকর্মীরা।
আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন্নাহার আইভি। ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধি সমাবেশে তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় দেশের সবচেয়ে জঘন্যতম ও নৃশংসতম গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন আইভি রহমান। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট আজন্ম রাজনীতিক আইভি রহমান না-ফেরার দেশে চলে যান। আজ বিএনপি নামক সন্ত্রাসী দলটি গনতন্ত্র আর তাদের দেশি বিদেশি দোসররা মানবাধিকারের কথা বলেন। সেদিন তারা কোথায় ছিলেন? গ্নেনেড হামলায় মৃত্যুপথযাত্রীরা সেদিন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে ও বঞ্চিত হয়েছেন।
শহীদ আইভী রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন মায়ের মৃত্যুর স্মৃতিচারন করে বলেন, “ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে ডাক্তার-নার্স কাউকে দেখতে পাইনি। এ সময় মাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তারপর অনেকটা জোর করে মাকে সিএমএইচে নিয়ে গেলাম। সেখানেও চিকিৎসা বিলম্ব। তৎকালীন বিএনপি সরকার আমার বাবা জিল্লুর রহমানকে দু’দিন দেখতে দেয়নি মাকে। কতটা নির্মম, নিষ্ঠুর আচরণ করেছে তৎকালীন সরকার।”
পৈশাচিক গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ অন্যদের গুরুতর আহত হওয়ার সেই বিভীষিকাময় ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশ গর্জে ওঠে।
১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব শহরের চণ্ডীবের গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এক অভিজাত পরিবারে তার জন্ম। পিতা মরহুম জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন আদর্শ গৃহিণী। আট বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি পঞ্চম।
ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন শান্ত স্বভাবের, তবে প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তার ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের জন্য তাকে বাইরে থেকে খুব কঠিন মনে হলেও, ভেতরে তিনি ছিলেন খুবই মানবদরদি। প্রথম দর্শনেই জেবুন্নাহার আইভিকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে নবম শ্রেণিতে পড়ূয়া আইভির সঙ্গে ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের বিয়ে হলে নামের পরে ‘রহমান’ যুক্ত হয়। এ নামেই তিনি পরিচিতি পান দেশব্যাপী।
শুধু আওয়ামী রাজনীতির জন্য নয়, আইভি রহমান বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে পারিবারিকভাবেও জড়িত ছিলেন। তার বড় বোন শামসুন্নাহার সিদ্দিক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার শাশুড়ি। একমাত্র ছেলে বিসিবি সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, দুই মেয়ে তানিয়া বাখ্ত ও তনিমা রহমান ময়না এবং তাদের ছেলেমেয়ে ও স্বামী জিল্লুর রহমানকে নিয়ে তার পারিবারিক জীবন ছিল খুবই গোছানো। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে আইভি রহমানের মৃত্যুর পর তাই বিষাদভরা কণ্ঠে মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘আইভিকে ছাড়া আমি জীবন্মৃত।’ ভৈরবের বাড়ির ‘গৃহকোণ’ নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘আইভি ভবন’।
এই বাড়িটিতে ভৈরববাসীর সঙ্গে আইভি রহমানের নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আইভি রহমানের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবনের যাত্রা শুরু। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে আইভি রহমান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ভারতে গিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী হন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আইভি রহমান চলে গেছেন ১৮ বছর হলো। কিন্তু ভৈরবে ‘আইভি ভবন’ আছে আগের মতোই। সেখানে বিভিন্ন উপলক্ষে এসে অশ্রু-পুষ্পে ভৈরববাসী স্মরণ করেন তাদের প্রিয় নেত্রী আইভি রহমানকে।
ভৈরবের মাটি আর মানুষের সাথে আইভি রহমানের ছিল আত্মার সম্পর্ক। রক্ত দিয়ে এ ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে ভৈরববাসী। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার নৃশংস ঘটনার পরদিন ২২ আগস্ট ভৈরবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়। ওই দিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি ভৈরব বাজার রেলজংশনের মনমরা রেলসেতুর কাছে পিকেটারদের কবলে পড়ে। উত্তেজিত জনতা ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ আওয়ামী লীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। গুলিতে আবদুল কুদ্দুস নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হন। ঘটনার পর উত্তাল হয়ে পড়ে ভৈরব।
আইভি রহমানের স্মৃতিকে ধারন করে তার জীবনী থেকে শিক্ষা নেয়ার পাশাপাশি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় উচ্চ আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে সোচ্ছার এদেশের শান্তি প্রিয় জনগন।
লেখক: সহ সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য
সারাবাংলা/এসবিডিই
আইভি রহমানের চিকিৎসাতেও বাধা দিয়েছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকার মত-দ্বিমত মানিক লাল ঘোষ