Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী পাঁচ প্রস্তাব

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
২৮ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৩৩

২০১০ সালে পূর্বসূরি BRIC- এ দক্ষিণ আফ্রিকার সংযোজন দ্বারা ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত , চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ব অর্থনীতির একটি গ্রুপ হিসেবে গঠিত হয়। BRIC আনুষ্ঠানিক আন্তঃসরকারি সংস্থা ছিল না, মূলত বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এটি চিহ্নিত করা হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে সরকারের বার্ষিক বৈঠক এবং বহুপাক্ষিক নীতিগুলি সমন্বয় করার মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে আরও সমন্বিত ভূ-রাজনৈতিক ব্লকে গঠিত হয়েছে। BRIC-এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মূলত অ-হস্তক্ষেপ, সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার আমন্ত্রনে সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে গমন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নারীদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। মধ্যাহ্নভোজে ভাষণদান কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথে, আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি ৫ অর্জনের জন্য আমাদের সকলের হাতে হাত রেখে চলা উচিত।’ কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম প্রস্তাবে বলেন, আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। বিশ্বে অনেক দেশে মেয়েরা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়।শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একটি সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরীর কথা উল্লেখ করে চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি লিঙ্গ সমতার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিতে সত্যিই অনুপ্রাণিত বোধ করছি।’

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে এবং প্রতিক্রিয়ার সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হতে হবে। তাঁর মতে এই বহুমুখী বিশ্বে ব্রিকসকে একটি বাতিঘর হিসাবে প্রয়োজন। আমরা আশা করি- এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে আবির্ভূত হবে। শিশু ও যুবকদের কাছে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে- জাতিগুলো সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু কখনই পরাজিত হবে না। গ্লোবাল সাউথ-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা উচিত। সার্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে সব ধরনের হুমকি, উস্কানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে একসাথে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য প্রত্যেকের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং জলবায়ু, ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি এবং ঋণ স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বমঞ্চে আরও একবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাসুলভ ভূমিকা রাখলেন। তার বক্তব্যে বিশ্ববাসীর কল্যাণে প্রকাশিত শুভবার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব অর্থনীতির এক- চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী জোট ব্রিকসকে ‘বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর’ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা এবং বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী এই জোটকে সময়ের প্রয়োজন মেটাতে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম’ হয়ে উঠতে হবে। ব্রিকস সম্মেলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগে (ব্রিকস- আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্বে নারী-পুরুষর সংখ্যা প্রায় সমান হলেও নারীরা দেশে দেশে বৈষম্যের শিকার। বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ নারীবিদ্বেষী । কয়েক বছর আগে জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে নারীদের চেয়ে পুরুষদের ওপরই বেশি ভরসা করেন। এখনো বিশ্বের ৯০ শতাংশ নারী-পুরুষ মনে করেন, নারীরা দুর্বল। বিশ্বকে প্রকৃতিসম্মত ও প্রগতিশীল রাখতে হলে নারীর জীবন ঝুঁকিহীন করা চাই। সমুন্নত রাখা চাই নারীর মর্যাদা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নারীর অগ্রযাত্রার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকেন। ব্রিকস সম্মেলনে গিয়েও বিশ্বনেতাদের সামনে বিষয়টি উত্থাপনে তিনি বিলম্ব করেননি। প্রদত্ত ভাষণে তিনি নারীসমাজকে পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অর্থবহ পাঁচটি প্রস্তাব পেশ করেন। নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো প্রথম শর্ত, যা তিনি প্রস্তাবনার শুরুতেই উল্লেখ করেন। তথ্যপ্রযুক্তির দারুণ অগ্রযাত্রায় নারীরা এখনো সাইবার আক্রমণের শিকার। সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষা দিতে সমাজ রাষ্ট্রের বিশেষ করণীয় রয়েছে। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। তাদের লাভজনক কর্মসংস্থান ও শালীন কাজের সুযোগ করে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য তিনি নারীর পথ সুগম ও লেভেল পেন্ডিং ফিল্ড তৈরির কথা বলেন।

সব মিলিয়ে তাঁর কণ্ঠে ছিল একজন মানবতাবাদী নারী-পুরুষের সমতা বিধানে সুপ্রতিজ্ঞ একজন বিশ্বনেতার দৃঢ়তা। যা বাংলাদেশকে একটি সভ্যসমাজ গঠনে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদারনৈতিক যুগোপযোগী চিন্তাধারার কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি পড়ায় ভূমিকা রাখবে। ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের নেতা পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতির অগ্রসরমানতায়ও বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন চার দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে। ব্রাজিল, মোজাম্বিক, তানজিনিয়া ও ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে দেশগুলো থেকে ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। সার্বক্ষণিকভাবে দেশের কল্যাণচিন্তা যার ভাবনায় কাজ করে, এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের পক্ষেই এ জাতীয় সক্রিয় উদ্যোগ সম্ভবপর।

লেখক: ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী পাঁচ প্রস্তাব মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূসের ৬ মামলা বাতিল
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩১

আরো

সম্পর্কিত খবর