অধিকার বনাম সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৮
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতার প্রতি আমাদের আস্থা নেই। তবে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। এর পরও যদি দাবি পূরণ না হয়, তবে তা হবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল, যা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও দেশের অগ্রগতির জন্য শুভ হবে না।
গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সরকারি দলের সংখ্যালঘুবান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্যমোর্চা।
সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনের আগে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পূরণ সম্ভব। তবে সবকিছু নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। না হলে ধরে নেব, আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আশাহত করবেন না।
রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ পরাশক্তিগুলোর কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হওয়ায় আমরা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শঙ্কিত। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ও ভোটের বিষয়টি ঠিক করবে দেশের মানুষ। কিন্তু বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সব পরাশক্তির চাপ দেওয়ার পরিণতি নির্বাচনের আগে ও পরে কী দাঁড়াবে, এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
রানা দাশগুপ্ত একটি সংগঠনের নেতা, তার বক্তব্যের সঙ্গে ওই সংগঠনভুক্তরা একমত পোষণ করলেও যারা ওই সংগঠনের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন, তারা কী সবাই দেশের রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থাহীন? এ প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বা না বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত সব মানুষের মত আমি জানি না। তবে নির্বাচন এলে যে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ-শিশু সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অনিশ্চয়তায় সময় কাটায়, সেটা আমি কিছুটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি। ব্যক্তিগতভাবে আমি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুসারী। ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা আমি মোটেও পছন্দ করি না। কিন্তু এটাও ঠিক যে আমার পছন্দ-অপছন্দের ওপর কিছুই নির্ভর করে না। আমি বা আমার মতো আরও কেউ কেউ না চাইলেও দেশ এখন ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে চরমভাবেই বিভাজিত।
দুই.
মানুষকে সংখ্যা দিয়ে গণনা করে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু হিসেবে বিভাজন করাটা সমীচীন না হলেও এটা বিশ্বব্যাপীই হয়ে আসছে। সংখ্যালঘুরা সব দেশে, সব সমাজেই কিছুটা আলাদা, তাদের অধিকার ও মর্যাদা সব ক্ষেত্রে একরকম নয়। মূলত ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে এটা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে আরও নানাভাবেই এই ভাগ-বিভক্তি করা যায়, করা হয়। ধর্ম ছাড়াও মানুষের বর্ণ (গায়ের রং), বিশ্বাস, চিন্তা ইত্যাদি দিয়েও সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু নিরূপিত হয়ে থাকে। মোটা দাগে পৃথিবীতে ধর্মবিশ্বাসীরা সংখ্যাগুরু আর ধর্মে অবিশ্বাসীরা সংখ্যালঘু। আস্তিক-নাস্তিক লড়াই নতুন নয়। কোথাও সাদা রঙের মানুষ সংখ্যাগুরু, কোথাও কালো রঙের। কোথাও মুসলমান সংখ্যাগুরু, কোথাও হিন্দু, কোথাও খ্রিষ্টান, কোথাও বৌদ্ধ কিংবা অন্য কোনো ধর্ম বিশ্বাসী। এক ধর্মের মানুষের মধ্যেও সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু আছে, থাকতে পারে। যেমন কোথাও শিয়া মুসলমান সংখ্যালঘু, কোথাও-বা সুন্নি। খ্রিষ্টানদের মধ্যে ক্যাথলিক প্রটেস্টান আছে। হিন্দুদের বর্ণ বিভাজন তো মারাত্মক।
বিশ্বাস এবং চিন্তার ক্ষেত্রেও সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু আছে। তবে আমরা বাংলাদেশে প্রধানত ধর্মের ভিত্তিতেই সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু নির্ধারণ করে থাকি। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগুরু আর সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা সংখ্যালঘু। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যখন একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দুই খণ্ড হয়ে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল, তখন স্বভাবতই আশা করা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আর পাকিস্তানি মন্দ উত্তরাধিকার কিংবা ধারা বহন করবে না। পাকিস্তান ছিল ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকবে না। রাষ্ট্রটি হবে অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চরিত্রের। ধর্ম হবে মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আচরণ ও পালনের বিষয়। রাষ্ট্র হবে সবার, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান- সব মানুষের। এমনকি ‘গরিবের নিঃস্বের ফকিরের’ও। রাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। বিত্তবান এবং বিত্তহীনদের যে বৈষম্য অর্থাৎ ধনবৈষম্য কমিয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছিল বাহাত্তরের সংবিধানে। কিন্তু বাস্তবে সে রকম হলো না। দেশ স্বাধীনতা হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের মনোভূমির রং বদলাতে লাগল। আজ তা উজ্জ্বলতা হারিয়ে প্রায় ফ্যাকাসে।
গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজয় ছিনিয়ে আনার পর ভারত যেদিন স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সেদিন ভারতীয় পার্লামেন্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একটি আবেগময় ভাষণ দিয়েছিলেন। তার জবাবে তৎকালীন বিরোধী নেতা জনসংঘের নেতা (এই জনসংঘের পরিবর্তিত নাম- বিজেপি, ভারতীয় জনতা পার্টি) অটল বিহারি বাজপেয়ি বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে স্বাগত জানিয়ে একটু বিদ্রূপের সুরে ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশে বলেছিলেন, আপনার বাবা (জওহরলাল নেহরু) একটি পাকিস্তান তৈরি করতে সহযোগিতা করেছিলেন, আপনি (ইন্দিরা গান্ধী) দুটি পাকিস্তান তৈরিতে সহযোগিতা করলেন, আপনাকে অভিনন্দন! সেদিন অটল বিহারি বাজপেয়ির বক্তব্য অনেকের ভালো লাগেনি। তিনি একটি সাম্প্রদায়িক দলের নেতা বলেই অমন বিদ্বিষ্ট মন্তব্য করেছিলেন বলে আমাদের মনে হয়েছিল। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত রক্তস্রোত সাঁতরে যে দেশ স্বাধীন হলো, সে দেশ আবার পাকিস্তানমুখী হবে- সেটা ছিল আমাদের তখনকার চিন্তার বাইরে! জাতি হিসেবে আমরা একটু আবেগপ্রবণ। যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা, নতুন দেশ, নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীত পাওয়ার উত্তেজনায় আমরা তখন আবেগ-উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছিলাম। কিছুটা যুক্তিরহিত আচরণ করেছিলাম। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন যে রাতারাতি হয় না, সেটা যে ধারাবাহিক চর্চা ও সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়- তা আমরা তখন ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি।
তিন.
অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার প্রত্যয় থেকে আমরা কীভাবে সরে এলাম, নিজেদের মানুষ হিসেবে না ভেবে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিচিত করার প্রবণতা কীভাবে আমাদের পেয়ে বসল- সে বিষয়গুলো আমাদের গভীর পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা দাবি করে। বাংলাদেশকে বলা হয়ে থাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ক্ষমতাসীনরা এই কথাটা বেশি উচ্চারণ করে থাকেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতেও এই আপ্তবাক্য উচ্চারিত হয়েছে। বাংলাদেশে ধর্ম পরিচয় নির্বিশেষে সব মানুষ সমান সুযোগ ও অধিকার ভোগ করে থাকে বলে যে দাবি করা হয়, তা যথার্থ নয়। এটা ঠিক যে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশে তা দীর্ঘদিন ধরেই হয়নি বা হয় না। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নেই। একসময় হয়তো কিছুটা প্রচ্ছন্ন ছিল, এখন তা প্রকট ও প্রকাশ্য হয়েছে। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার পরিবর্তে তাকে তার ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে বিচার করার প্রবণতা এখন প্রবল।
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের একটি অন্যতম মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কি ব্যক্তিজীবনে, কি রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থায় ‘ধর্ম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেই থেকে যায়। সাধারণ মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনার জন্য যে রকম প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন ছিল, শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার অনুকূলে যে রকম মজবুত গাঁথুনি তৈরি করা দরকার ছিল, তার কোনো কিছুই পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, পাকিস্তানের পরাজয় মানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিজয়। যে মানুষ ২৫ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত পাকিস্তানের ভৌগোলিক কাঠামোয় এবং রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী ছিল, রাতারাতি তার মধ্যে আদর্শিক পরিবর্তন ঘটার কোনো স্বাভাবিক কারণ ছিল না। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হয় ধীরে ধীরে, ক্রমাগত উন্নত বা অগ্রগামী দর্শনচর্চার মধ্য দিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কোনো সময় একটি দৃঢ় আদর্শভিত্তিক একশিলা দল ছিল না। এটা ছিল মূলত বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের একটি বৃহত্তর জাতীয় প্ল্যাটফর্ম। এই দলের পতাকাতলে যারা সমবেত হয়েছিলেন, তারা সবাই এক মত, এক পথের ছিলেন না। এমনকি দলের নেতৃত্বের মধ্যেও চিন্তার পার্থক্য ছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যে একাধিক ধারা সক্রিয় ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উদার, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ধারাটি এক সময় প্রধান হয়ে উঠলেও তার বিরোধী একটি ধারা দুর্বল হলেও সক্রিয় ছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনা যেমন আওয়ামী লীগে ছিল, তেমনি ধর্ম নিয়ে দুর্বলতাও ছিল। আমাদের দেশে সমাজ-রাজনীতি, মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় মনস্তত্ত্ব নিয়ে সিরিয়াস কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। কতগুলো সস্তা জনপ্রিয় ধারণাকে ভিত্তি করেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
চার.
বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র যে আজ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতে পারছে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাংলাদেশে ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা যে আজ এক চরম অন্তর্জ্বালা নিয়ে বসবাস করছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে অতীতের দিকে চোখ দিয়েই। ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ বলে বিলাপসংগীত গেয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়া যাবে না। সেটা গড়তে হলে ঐতিহাসিকভাবে যে ভুলভ্রান্তি আমরা করে এসেছি, তা স্বীকার করে ফাঁকফোকর মেরামত করে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
এক ধর্মের মানুষ যদি অন্য ধর্মের মানুষ সম্পর্কে সম্যকভাবে ওয়াকিবহাল থাকেন, তাহলে পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কম হতে পারে। সব থেকে বড় কথা হলো, যে যে ধর্মবিশ্বাসী তাকে সেই ধর্ম পালনের অধিকার দিতে হবে। মুসলমান নামাজ-রোজা, ইবাদত-বন্দেগি করার অধিকার পাবে, হিন্দুও তার পূজা-পার্বণ, আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে অনায়াসে, অবাধে। অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এমন অবস্থা যখন বাধাগ্রস্ত হয়, এক পক্ষ যখন অন্য পক্ষের বিশ্বাস নিয়ে কৌতুক-তামাশা করে কিংবা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ-উপহাস করে, তখনই বিষয়টি আর সহনীয় থাকে না। গোলমাল বাধে, বেধে যায় দাঙ্গা-হাঙ্গামাও। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা এখন বহুল আলোচিত বিষয়। দেশের বাইরে টাকা পাচার যারা করেন তারা কারা? তারা সবাই কি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ? কিন্তু সাধারণভাবে প্রচারণাটা কী? হিন্দুরা এ দেশে বসবাস করে, আয়-উপার্জন করে, আর টাকা পাচার করে ভারতে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ ভারতে টাকা পাচার করে না, সেখানে বাড়িঘর বানায়নি, তা নয়। প্রশ্ন হলো, ভারত ছাড়া অন্য দেশে অর্থ পাচার করা, বাড়ি বানানো বা ফ্ল্যাট কেনা যদি দোষের না হয়, তাহলে ভারতের বেলায় সেটা দোষের হবে কেন? ভারত যেমন বিদেশ, তেমনি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান বা অন্য কোনো দেশও বিদেশই। ওসব দেশে সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের অর্থ পাচার বা বসবাস যদি দোষের না হয়, তাহলে ভারতের বেলায় সেটা হবে কেন? ভারত ‘হিন্দু’ রাষ্ট্র বলেই কি ভারতের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সন্দেহ, অবিশ্বাস ও বিদ্বেষ বেশি? অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসার অভাব মানুষ হিসেবেই কি আমাদের ছোট করে দেয় না?
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্নেষক
সারাবাংলা/এজেডএস