নির্বাচনি ভিসানীতি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৪
অবশেষে কার্যকর হলো বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসানীতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে এই ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হল। কিন্তু দৃশ্যত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও মার্কিন ভিসানীতির ‘বাগাড়ম্বর’ বেশী মনে হচ্ছে! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল গত ২৪ মে ২০২৩ তারিখে। ঘোষিত সেই নীতি গত শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুন্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে।’ অর্থাৎ সরকারি এবং বিরোধী উভয় পক্ষের সদস্য এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন। মার্কিন ভিসা নীতি কী স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের জন্য হুমকি হিসাবে গণ্য হতে পারে তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা ও প্রয়োগ করছে। এর ভিতরে ও বাইরে কোন কারণ কাজ করছে? অন্যান্য অঞ্চলের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার প্রভাব বলয় বজায় রাখার প্রচেষ্টা এর অন্যতম একটা দিক। পাশাপাশি এটিও মনে রাখা দরকার যে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মধ্যে সংযোগকারী হিসাবে ভূ-রাজনৈতিক স্ট্রাটেজির দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র।
দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব চর্চা বজায় রাখার ইতিহাসের সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোতে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘মিথস এন্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার: হাউ ইন্ডিয়া, ইউএস, চায়না এন্ড ইউএসএসআর শেপড দ্য আউটকাম’ শিরোনামে বি জেড খসরুর গবেষণাগ্রন্থের বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। বইটিতে, লেখক ১৯৭১ সালের দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধকে ঘিরে রহস্য উন্মোচন করেছেন। বিস্তৃত গবেষণা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে, লেখক বর্ণনা করেছেন যুদ্ধের কারণ কী, কীভাবে এটি পরিচালিত হয়েছিল এবং কীভাবে বিশ্ব শক্তিগুলি এর ফলাফলকে রূপ দিয়েছে। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে রূপদানকারী ঘটনাগুলির ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও, বইটি এমন একটি ঐতিহাসিক কাহিনী বর্ণনা করে যা ১৯৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে উপমহাদেশে আমেরিকার আক্রমণকে স্পর্শ করে। এটি এমন একটি সময় ছিল যখন অনেক লোক ভেবেছিল জাপান (নেতাজী সুভাষ বোসের আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা স্মর্তব্য) ভারত দখল করবে। অনেক ভারতীয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের পরাজয় আশা করেছিল এবং যুদ্ধ উৎপাদনের জন্য মানব সম্পদ এবং কাঁচামালের বিশাল আধার ভারতে জাপানের প্রবেশাধিকার ঠেকিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমেরিকার প্রয়াস আশা করছিল। কারণ তখন ভারতীয়রা হারাকিরি (জাপানি) জাতির প্রেমে পড়া বন্ধ করার উপায় খুঁজছিল।
শুরু থেকেই, আমেরিকানরা ভারতীয়দের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কৌশল তৈরি করার জন্য অধ্যবসায়ীভাবে পরিশ্রম করছিল, কিন্তু তাদের আগ্রহগুলি ভিন্ন গতিপথে পরিচালিত হচ্ছিল। এভাবে এই বিষয়গুলো এই অঞ্চলের কূটনৈতিক ইতিহাসে গত শতাব্দীর দ্বিতীয় পর্বে একটি আকর্ষণীয় অধ্যায় তৈরি করেছিল। অ্যাক্টরগণ একে অপরের মন বোঝার এবং সঠিক পন্থা খুঁজে বের করার সুক্ষ্ম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি এই ইতিহাসকে চিহ্নিত করেছে।’
পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় এখন জাপান আমেরিকার প্রভাব বলয়ের মধ্যেই আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার প্রভাব চর্চার হুমকি রয়েই গেছে। এই হুমকি চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকে। আমরা দেখেছি ভারতের নেতৃত্বে দিল্লীতে সদ্য সমাপ্ত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ প্রায় ২৮ টি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও চীনের শি জিন পিং এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন আসেন নাই। না আসার যে কারণই প্রকাশ্যে বলা হোক না কেন, নিঃসন্দেহে এটি প্রভাব বিস্তারের সংঘাত সম্পর্কিত একটি বিষয়। প্রভাব বিস্তারের সংঘাত সম্পর্কিত বিষয় রাজনীতির একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মত বাংলাদেশে মার্কিন ভিসানীতি সেই প্রভাব চর্চারই একটি অংশ।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। ‘আমি এটুকু বলতে পারি যে এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।’ লু আরও বলেন, ভিসানীতির উদ্দেশ্য হলো, সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো কর্মকান্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া।
ডোনাল্ড লু’র এই বক্তব্য বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কারণ আমরা অতীতে দেখেছি এবং বর্তমানেও দেখছি। জামায়াত-শিবির বিএনপির সাথে মিলে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের নামে সারাদেশে সন্ত্রাস চালায়, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা হামলাসহ ২০১৪ সালের নৃশংসতার মতো মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। ২০০১ সালেও বিএনপি-জামায়াত এই রূপ ঘটনা ঘটিয়েছিল।
ডোনাল্ড লু আরও বলেন, এই নীতি শুধুমাত্র নির্বাচনের দিনের জন্য নয়, বরং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য। আমরা নির্বাচনের সঠিক তারিখ জানি না, তবে এটা স্পষ্ট যে নির্বাচনি প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। বাংলাদেশিরা যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। ডোনাল্ড লু’র এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভারসাম্যমূলক।
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেশের জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এ মূহুর্তে এধরনের ঘোষণা দেয়ার কারণ কি? বোঝা যাচ্ছে ঘোষণাটি সতর্কতামূলক এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য অগ্রিম পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার ফলে জনগণের মধ্যে মার্কিন বিরোধী মনোভাব বিশেষ করে সরকার সমর্থকদের মধ্যে এধরনের আমেরিকা বিরোধী মনোভাবের উদ্ভব ঘটতে দেখা যায়। লিবিয়া, ইরাক, এবং দক্ষিণ আমেরিকা এভাবে মার্কিন বিরোধী মনোভাবের উদ্ভব ঘটেছে।
ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী একজন প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয়/গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলাফল সব সময় ইতিবাচক হয় না, উদাহরণ: তুরস্ক (এরদোয়ান) এবং ভারত (নরেন্দ্র মোদি)। পরবর্তীকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আবার ভারতের রাজধানী দিল্লীতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অংশগ্রহণ করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি এবং এরদোয়ান উভয়েই মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলেন এবং পরে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন।
বিএনপি নির্বাচনে আসা না আসা এই ভিসানীতির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে না তবে বিএনপি আসলে নির্বাচনের পরবর্তীতে ভিসা নীতি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োগের বিষয়টি সামনে আসবে। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে এবং অতীতের মত নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দেয়ার জন্য হিংসাত্মক পথ বেছে নেয় তাহলে তারা আবার মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় চলে আসবে।
বাংলাদেশে মার্কিন ভিসানীতি কি একটা গ্রুপকে আরো আগ্রাসী/উৎসাহী/অনমনীয় করে তুলবে? যা হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে চীনাপন্থী ও রাশিয়াপন্থী ব্যক্তিবর্গ উৎসাহিত হতে পারে। উপরে উল্লেখিত বি জেড খসরুর গবেষণা গ্রন্থের বিষয়টি এখানে আবার স্মরণ করা যেতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য ভিসানীতি কতটুকু প্রভাব ফেলবে? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাব ফেলবে না। আমেরিকা সবসময় তার কার্যক্রম দিয়ে সফলতা পায় না, সামগ্রিক সফলতা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সংকট ডেকে নিয়ে এসেছে। উদাহরণ: আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, ইরান।
বাংলাদেশের জনগণের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ আমেরিকার ভিসা পেতে আগ্রহী থাকে। বিষয়টি তাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। বরং মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মার্কিন বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। সার্বিক মূল্যায়নে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আশানুরূপ ফল বয়ে আনে নাই। ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ফল হয়নি এমন কয়েকটি দেশ হলো-কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, হাইতি, আফগানিস্তান, বেলারুশ, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশগুলোতে নির্বাচন হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তবে দেশটি বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে জাতীয় নির্বাচনের অন্তত তিনমাস আগে। এ কারণে বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কী প্রভাব পড়তে পারে সেটি এখনই বলতে পারছেন না কেউ।
এ বছরের মে মাসে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, উগান্ডা এবং সোমালিয়ার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশগুলোতে নির্বাচনের পর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এসব দেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কতটা কার্যকর হয়েছে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এর কারণ হলো রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, খরা, দারিদ্রতা ও জঙ্গিবাদসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। দেশটির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো তারা কখনোই সময়মত নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে না। জাতিগত সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাসহ নানা কারণে নির্বাচন বারবার পিছিয়ে যায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। একবছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তা হয়নি। এ কারণে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ার জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। দ্রুত এবং সঠিকভাবে নির্বাচন না হওয়ায় দেশটির কিছু কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তাদের নাম প্রকাশ করেনি আমেরিকা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, সোমালিয়ায় আমেরিকার যথেষ্ট প্রভাব আছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা রাজনীতিবিদদের জন্য একটা ধাক্কা ছিল। কারণ সোমালিয়াকে পশ্চিমা সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাজনীতিবিদদের অনেকের আমেরিকান পাসপোর্ট আছে, তাদের পরিবার সেখানে থাকে। দেশটিতে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
সোমালিয়ার নাগরিকরা এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বা নির্বাচন কমিশন রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তিশালী নয়। দেশটির সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জ করার এবং জবাবদিহি করার একটা সুযোগ চেয়েছিল। আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা সোমালিয়ার নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। এতে দেশটির সব সমস্যার সমাধান হয়েছে বলা যায় না। গত মে মাসে দেশটির স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে সোমালি জনগণ।
এছাড়াও উত্তর কোরিয়া, ইরান, চীন ও রাশিয়ার অসংখ্য নাগরিকের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে। এ দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তার ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ওয়াকিবহাল মহলে আরও কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। এগুলো হলো, মার্কিন ভিসানীতি ভিসা নীতি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের জন্য হুমকি নয় কি! ভিসানীতির আড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কি না! বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভিসানীতি কিভাবে গ্রহন করা উচিত? ইতিহাসে ইউএস ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেজিম চেইঞ্জ করতে পারেনি।
ইউএস-এর কূট তৎপরতায় রেজিম চেইঞ্জ এর কুফল ভোগ করছে লিবিয়া ইরাকের জনগণ।
রাজনৈতিক দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মার্কিন ভিসানীতিতে শীঘ্রই গণমাধ্যমের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ তথ্য জানিয়েছেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর এক সাক্ষাৎকারে পিটার হাস উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশের মিডিয়াকে মার্কিন ভিসা নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গণমাধ্যমের ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা বাকস্বাধীনতার জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
বি জেড খসরু গ্রন্থের বিষয়বস্তুর আলোকে উপসংহারে বলা যায়, ভিসানীতি ঘোষণা ও কার্যকর করার কথা বলা সত্ত্বেও আমেরিকানরা বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কৌশল তৈরি করার জন্য অধ্যবসায়ীভাবে পরিশ্রম করছেন। কিন্তু তাদের আগ্রহগুলি ভিন্ন গতিপথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। এভাবে এই ভিসানীতির কার্যকর করার বিষয়গুলো এই অঞ্চলের কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি আকর্ষণীয় অধ্যায় তৈরি করছে। অ্যাক্টরগণ একে অপরের মন বোঝার এবং সঠিক পন্থা খুঁজে বের করার সুক্ষ্ম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি এই ঘটনাবলীকে চিহ্নিত করছে।
লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ
সারাবাংলা/এসবিডিই